নিউজিল্যান্ড নিয়ে এক-দুটি প্রশ্নই হলো। বাকি সব ভারত আর ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে। ভারতীয় দলের সংবাদ সম্মেলন অবশ্য এ রকমই হয় সব সময়। এক দলেই এত তারকা, প্রশ্ন করার এত উপজীব্য বিষয়; প্রতিপক্ষ নিয়ে কথা বলার সময় কই! হোক সে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনালের প্রতিপক্ষ।

ফাইনালের আগে আজ দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়ক শুবমান গিলের সংবাদ সম্মেলনও অনেকটা সেরকমই হলো। সহ-অধিনায়ক হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন, বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাকে নিয়ে প্রশ্ন, ভারতের ব্যাটিং গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগের ম্যাচগুলো নিয়ে প্রশ্ন, আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে ভারতের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন। এসব নিয়েও গিলের কথায় বাড়তি কিছু ছিল না, অনেকটা যেন ভারতীয় দল সম্পর্কে একটা লিখিত রচনা পড়ে যাওয়া।

কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের একেবারে শেষ প্রশ্নে গিলের উত্তরের রেশ থেকে গেল সংবাদ সম্মেলনের পরেও। গিলকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শোনা যাচ্ছে কাল ফাইনালের পর ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলতে পারেন রোহিত শর্মা। ড্রেসিংরুমে এ নিয়ে কোনো আলোচনা আছে কি না, বা রোহিত ড্রেসিংরুমে এ নিয়ে কিছু বলেছেন কিনা।

শুবমান গিল এতক্ষণ যেরকম চোখে-মুখে স্বাভাবিক অভিব্যক্তি নিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসছিলেন, এমন চাঞ্চল্য জাগানো প্রশ্নেও তার ব্যতিক্রম হলো না। সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সবাই নড়েচড়ে বসলেও গিল একই রকমভাবেই বলে গেলেন, ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমে এ নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। রোহিত শর্মাও এ নিয়ে ড্রেসিংরুমে কোনো কথা বলেননি। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে বলা এই কথাটারই শেষ দিকে তিনি এমন এক ক্লু দিয়ে গেলেন, যেটার অর্থ হতে পারে অনেক কিছু। সম্মেলন ওখানেই শেষ হয়ে গেলেও তার রেশ তাই থেকে গেল পরেও।

ওই প্রশ্নে গিলের হুবহু উত্তর ছিল এ রকম, ‘এখন পর্যন্ত তো আমাদের সব আলোচনা আমাদের ম্যাচ জয় এবং চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয় নিয়েই হয়েছে। এ রকম কিছু বা এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে দলের সঙ্গে বা আমাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। আমার মনে হয় না রোহিত ভাইও এটা নিয়ে এখন খুব একটা ভাবছেন। আমাদের কালকের ম্যাচ শেষ হলে হয়তো তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। দলের মধ্যে এটা নিয়ে কোনো আলোচনা নেই।’

শেষ বাক্যের আগের বাক্যটাকে মনে হতেই পারে, কাল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল শেষে রোহিত শর্মা ওয়ানডে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেও নিতে পারেন। তিনি এটা নিয়ে তখন ভাববেন। কিন্তু গিল নাকি কথাটা ওভাবে বলেননি, বা বলতে চাননি। সংবাদ সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যে কোনো কারণেই হোক চৈতন্য ফেরায় তিনি আবার ফিরে আসেন সেখানে, স্পষ্ট করেন তাঁর বক্তব্য। ‘এক্সপাঞ্জ’ করে নেন তাঁর বলা ‘আমাদের কালকের ম্যাচ শেষ হলে হয়তো তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন’ কথাটা।’

ততক্ষণে বেশির ভাগ সাংবাদিক প্রেস বক্সে ফিরে আসায় গিলের সেই বার্তা নিয়ে প্রেসবক্সে ছুটে আসেন আইসিসির এক মিডিয়া কর্মী। বক্তব্যের শেষ অংশটা সবাইকে শুধরে নিতে অনুরোধ করে তিনি বললেন, গিল এটা বোঝাতে চাননি যে কাল ফাইনালের পর রোহিত ওয়ানডে থেকে অবসর নেবেন বা সেরকম কোনো কিছু ভাবছেন। এই বক্তব্য যেহেতু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে পারে, কেউ যেন গিলের বক্তব্যের ওই অংশটুকু না লেখেন।
অর্থাৎ, রোহিত শর্মার অবসর নিয়ে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে কোনো আলোচনা আছে কিনা প্রশ্নে গিলের সংশোধিত উত্তরটা হবে এ রকম, ‘এখন পর্যন্ত তো আমাদের সব আলোচনা আমাদের ম্যাচ জয় এবং চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয় নিয়েই হয়েছে। এ রকম কিছু বা এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে দলের সঙ্গে বা আমাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। আমার মনে হয় না রোহিত ভাইও এটা নিয়ে এখন খুব একটা ভাবছেন। দলের মধ্যে এটা নিয়ে কোনো আলোচনা নেই।’

বাকিটা বোঝা যাবে কাল ফাইনাল শেষেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ইন ল র আম দ র দল র স এ রকম

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণে দীর্ঘসূত্রতা!

কলেজ ও মাধ্যমিক স্কুল মিলে ২০১৬ সাল থেকে উপজেলা স্তরের অন্তত সাড়ে ৬০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ প্রক্রিয়ায় আনা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান ‘কাঠখড় পুড়িয়ে’ দীর্ঘদিনে শিক্ষক-কর্মচারীদের পদায়নসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হলেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নানা কারণ ও অজুহাতে এখনও অনেক পিছে পড়ে রয়েছে।   

মন্ত্রণালয়-দপ্তর-বিভাগ; এ টেবিল-ও টেবিল; বড় কর্তা-মাঝারি কর্তা-ছোট কর্তা– সবার মন রক্ষা করা কঠিন হলেও তা করার জন্য সাধ্যানুসারে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রক্রিয়াটি ৮-৯ বছরেও সম্পন্ন করা গেল না! তাহলে কী লাভ হলো এমন সরকারীকরণে? এ দীর্ঘ সময়ে সরকারীকরণের কোনো সুবিধা না পেয়েই অনেকে অবসরে চলে গেছেন। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। 

অনেক প্রতিষ্ঠানে এক বা দেড়-দুই বছর আগে অর্ধেক সংখ্যক (প্রতিষ্ঠানভেদে কম-বেশি হতে পারে) শিক্ষক-কর্মচারীর পদায়ন হয়েছে, বাকিগুলো ঝুলন্ত। 
না সরকারি-না বেসরকারি অবস্থায় তাদের রীতিমতো গলদ্ঘর্ম হতে হচ্ছে।
পদায়নকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্টদের মাঝে ভিন্ন রকমের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। জীবনপ্রদীপ নিভে যাওয়া কিংবা অবসরে গিয়েও শিক্ষক-কর্মচারীরা ‘ম্যানেজ সংস্কৃতি’ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এ যেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সঙ্গে বসবাস! তা ছাড়া এটি যে কতটা মানসিক পীড়ার কারণ, তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কারও পক্ষে অনুমান করা কঠিন। 
সেই ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে কতবার যে মূল সনদপত্র এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও নথিপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এর কোনো হিসাব নেই। শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত; আমার মতো অনেকে অবসরে গেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কারও রেহাই নেই। ফটোকপি আর ফটোকপি। চরম অস্বস্তিকর এক ব্যাপার।
একটি দপ্তরে (তা না হলে দুই জায়গায়) মূল সনদ ও নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হলে বাকিগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী কিংবা প্রতিষ্ঠানকে না ডেকে ‘আন্তঃদাপ্তরিক যোগাযোগ’-এর মাধ্যমে তা সম্পন্ন করা উচিত ছিল।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে বলতে গেলে ভেঙে পড়ার উপক্রম, এর একটি বড় কারণ অপরিকল্পিতভাবে এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের সরকারীকরণ।
সরকারি হওয়া তিন-সাড়ে তিনশ কলেজের মধ্যে কমপক্ষে দুইশ কলেজে নিয়মিত অধ্যক্ষ নেই। কোনোটি তিন বছর, কোনোটি আবার পাঁচ-সাত বছর, এমনকি আট-দশ বছর ধরে অধ্যক্ষশূন্য। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ভারে কলেজগুলো বলতে গেলে ন্যুব্জ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে কলেজগুলোয় চলা ভিন্ন রকমের খেলা এখনও শেষ হয়নি। অবসরে গেছেন কিংবা মৃত্যু হয়েছে, এমন শিক্ষকের স্থলে গত সাত-আট বছরে বিষয়ভিত্তিক কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
দীর্ঘদিন অধ্যক্ষহীন সরকারি হওয়া কোনো কোনো কলেজে শিক্ষা ক্যাডার থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিলেও মাত্র দুই-চার মাস কিংবা বড়জোর এক বছরের মধ্যেই তিনি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন– এমন উদাহরণ এক-দুটি নয়, অনেক। এক কথায়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা লাটে উঠতে বড় বেশি বাকি বলে মনে হয় না। 
সবচেয়ে ভয়াবহ ও দুর্ভাবনার বিষয় হলো, সংশ্লিষ্টদের উপেক্ষা ও অবহেলা। এভাবেই পার হয়েছে অন্তত আটটি বছর। এ নিয়ে ভালো কোনো আলোচনা নেই। দেশে এখন রাজনীতি, নির্বাচন আর গদি ছাড়া যেন আর কোনো বিষয়ই নেই আলোচনার।
মেঘে মেঘে বেলা অনেক হয়ে গেছে। শুধু হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী নন, তাদের পরিবার ও নিকটজনও এ নিয়ে স্বস্তিতে নেই। দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও বিড়ম্বনার নিরসন না হলে এমন সরকারীকরণের সার্থকতা কোথায়?   

বিমল সরকার: কলাম লেখক, অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণে দীর্ঘসূত্রতা!
  • কনকাশন সমস্যায় মাত্র ২৭ বছর বয়সে অবসরে পুকোভস্কি
  • বারবার মাথায় আঘাত, ২৭ বছরেই ক্রিকেট ছাড়লেন সেই পুকোভস্কি
  • কনকাশনের কাছে হার মেনে ২৭ বছরেই ক্রিকেট ছাড়লেন সেই পুকোভস্কি