শামিমা আক্তার; ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের (ইউবিএল) কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস এবং কমিউনিকেশনস পরিচালক। ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উপলক্ষে নারীর অধিকার, ক্ষমতায়ন, সমতা, উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সেখানে তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলার নানা বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহেরীন আরাফাত

নারীর অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়নকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
এই বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন; নারী ও কন্যার উন্নয়ন’। জাতিসংঘের মতে, টেকসই উন্নয়ন উন্নয়ন তখনই নিশ্চিত হবে যখন রাজনীতি ও সমাজের প্রতিটি পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক খাতগুলোর সমীক্ষা নিলেই আমরা বুঝতে পারব, নেতৃত্বের এই সমতা আমরা কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি। এমনকি যেসব প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ পদে নারী আছেন, সেখানেও তা সম্ভব হয়নি।

আমাদের অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপক। গার্মেন্টসসহ নানা খাতে তাদের অবদান অনেক। তবে, নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্বের জায়গায় আমরা এখনো পিছিয়ে। যত উপরের স্তরে যাবেন, তত নারীদের সংখ্যা কমে যাবে। এর কারণ হলো– সমতার জায়গায় সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের অভাব। এটি অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও একটি বড় সংকট। নারীরা আয় করলেও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত ও ক্ষমতায়ন হয়নি।

নারীর ক্ষমতায়নকে শুধু চ্যারিটি হিসেবে দেখা উচিত নয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। নারীর ক্ষমতায়ন একদিকে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করে; অন্যদিকে এটি মানবাধিকারও নিশ্চিত করে। দেশের অর্ধেক জনগণ নারী। এখানে নারীর ক্ষমতায়ন না হলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

কর্মক্ষেত্রে নারীর সফলতার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি?
কর্মক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানে নীতিমালা বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তবে নারীদের প্রতি সমাজের পক্ষপাত বা অজানা পক্ষপাত সরিয়ে ফেলাও জরুরি। ইউনিলিভারে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন। নারীর জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে প্রতি প্রান্তিকেই আমরা কর্মকৌশল যাচাই করি।

কর্পোরেট ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন ও সমতা ত্বরান্বিত করতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নীতিগত অবস্থান থাকা ও এর যথাযথ প্রয়োগ অপরিহার্য। একটি কার্যকরী পশ কমিটি কর্মক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন ও যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে পারে। এটি নারীকে কর্মক্ষেত্রে অনেকাংশেই নিরাপদ ও কার্যকর রাখবে।

ইউনিলিভারের ডিএন্ডআই (ডাইভার্সিটি ও ইনক্লুসন) কমিটি তৈরি করা হয় লিডারশিপ টিম ও সব বিভাগের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে। এ কমিটি কোন পদক্ষেপগুলো নিলে নারীর সাম্যতাকে নিশ্চিত করা সম্ভব তা পর্যালোচনা করে বছর জুড়ে কাজ নিশ্চিত করে। যেমন– নারীর প্রতি অজানা পক্ষপাতমূলক ব্যবহারকে কীভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব, মনস্তাত্ত্বিক নিরাপত্তা কীভাবে বাড়ানো সম্ভব এবং কোন কোন নীতি নারীকে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য ছাড়া বিকশিত করতে সহযোগিতা করবে, সেগুলো নিয়ে কাজ করে।    

লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিত করতে পুরুষদের সক্রিয় ভূমিকা থাকা জরুরি এটি আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। পুরুষ সহকর্মীদের নারীদের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য উৎসাহিত করা হয়। তারা যেন সমাজের পুরুষতান্ত্রিক অভ্যস্ততা থেকে বের হয়ে কর্মক্ষেত্রে লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিতে কাজ করে, সেটি নিশ্চিত করতে ইউনিলিভার নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও ইউনিলিভার মাতৃত্বকালীন ও পিতৃত্বকালীন ছুটি বাস্তবায়ন করে, যা পরিবার ও কর্মক্ষেত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি নারীদের কর্মজীবনে উন্নতি সাধনে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে, ট্যালেন্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে নেতৃত্বের জন্য তাদের প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং প্রযুক্তি, বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও নারীদের অন্তর্ভুক্তির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

কর্মজীবী মায়েদের সবচেয়ে বড় সংকট কী?
আমার কর্মজীবনের শুরুর দিকে মাতৃত্বকালীন ছুটির পর অনেক কষ্ট পেতে হয়েছিল, কারণ তখন ব্রেস্টফিডিং কর্নার বা ডে কেয়ার সুবিধা ছিল না। কিন্তু এখন ইউনিলিভারসহ অনেক বড় প্রতিষ্ঠানে আধুনিক ডে কেয়ার সুবিধা রয়েছে, যা কর্মজীবী মায়েদের জন্য একটি বড় স্বস্তি। এটি এমন একটি ব্যবস্থা, যা শুধুমাত্র মায়েদের নয়, পুরো কর্মসংস্কৃতিকে শক্তিশালী করে। একজন কর্মজীবী মা যখন তার সন্তানের কাছে থাকেন, তখন তার কাজের প্রতি মনোযোগ ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

নারীর ক্ষমতায়নে কর্মক্ষেত্র কেমন ভূমিকা রাখতে পারে?
নারীর ক্ষমতায়ন এককভাবে সম্ভব নয়। এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনের অংশ। ইউনিলিভার বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে, যেমন ভূমিজ ফাউন্ডেশন, যারা যৌথভাবে নারীদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধা তৈরি করছে।

আবার ইউনিলিভার ৫০/৫০ গ্লোবাল টার্গেট সফলভাবে বাস্তবায়ন করছে, যা নারীদের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছে। নাইট শিফটে নারীর অংশগ্রহণ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরির মাধ্যমে ইউনিলিভার ইতোমধ্যে নারীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্যানুসারে, সমতা অর্জনে ২১৫৮ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। নারী নেতৃত্বের বিকাশে বিনিয়োগ করতে হবে এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি তৈরি করার দিকে আরও মনোযোগী হওয়া। এ ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও নারীদের সমর্থন প্রদান সমতা অর্জনে সাহায্য করবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউন ল ভ র ব ল দ শ ন শ চ ত কর ইউন ল ভ র পদক ষ প র জন য গ রহণ ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ রিটেইল কংগ্রেসে সেরা ই–কমার্স পুরস্কার পেয়েছে শপআপ

বাংলাদেশ রিটেইল কংগ্রেস ২০২৪–এ সেরা ই–কমার্স (বিটুবি) বিভাগে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছে দেশের অন্যতম বিজনেস টু বিজনেস ব্যবসা প্ল্যাটফর্ম শপআপ। বাংলাদেশের রিটেইল ইকোসিস্টেমের রূপান্তরে অবদান রাখায় শপআপের বিটুবি কমার্স প্ল্যাটফর্ম ‘মোকামকে’ এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

সম্প্রতি রাজধানীর হোটেল লো মেরিডিয়েনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে শপআপ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শপআপের বিটুবি প্ল্যাটফর্ম মোকাম ছোট খুচরা বিক্রেতাদের কারখানা (মিল) ও উৎপাদকের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতে সরবরাহব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে।

বাংলাদেশে ৪৫ লাখের বেশি খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছেন উল্লেখ করে শপআপ জানায়, এই খুচরা ব্যবসায়ীদের সরবরাহের সমস্যাগুলো সমাধান করা, লাভ বাড়ানো এবং ভোক্তাদের জন্য স্থিতিশীল ও সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য নিশ্চিতে মোকাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

শপআপের ডিরেক্টর শাবাব দীন শরেক বলেন, ‘এই পুরস্কার আসলে ছোট মুদিদোকানদারদের অবদান। এই দোকানিরা, যাঁরা আমাদের সমাজে অসাধারণ প্রভাব ফেললেও অনেক সময় উপেক্ষিত থেকে যান। মোকামের সাফল্যের পেছনে প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে তাঁদের ধৈর্য ও কঠোর পরিশ্রম। আমরা তাঁদের ব্যবসা বৃদ্ধি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ধারাবাহিকভাবে সমর্থন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানে মোকাম ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টারগুলো (এমডিসি) অবস্থিত। পণ্যের চাহিদা একত্র করে ছোট খুচরা বিক্রেতাদের সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সংগ্রহের সুযোগ করে দেয় মোকাম। এতে ক্ষুদ্র বিক্রেতাদের লাভ বৃদ্ধি পায় এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর নির্ভরতা কমে। উন্নত প্রযুক্তি অবকাঠামো ও তথ্যভিত্তিক চাহিদা পূর্বাভাসের মাধ্যমে মোকাম বাংলাদেশের খুচরা বাজারে ক্রমাগত বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে।

শপআপ আরও জানায়, ২০২৩ সালে ৩ কোটি ১ লাখ মানুষ শপআপ নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত মুদিদোকান থেকে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করেছেন। এ সময়ে কোম্পানিটি ১০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য স্থানান্তর করেছে, যা ইতিবাচকভাবে ছোট খুচরা বিক্রেতাদের ও বৃহত্তর অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ