বোনের স্বামীর সহায়তায় শিশুটিকে ধর্ষণ করেন শ্বশুর, মামলার এজাহারে অভিযোগ
Published: 8th, March 2025 GMT
মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করেছেন শিশুটির মা। মামলার এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তাঁর বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাশুর জানতেন। তাঁরা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান।
আজ শনিবার সকালে বড় বোন ও বাবাকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান শিশুটির মা। সেই অনুযায়ী বেলা তিনটার দিকে মামলা রেকর্ড হয়। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪) এর ক/ ৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন।
আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা, বোনের স্বামী-শ্বশুরসহ গ্রেপ্তার ৪৩ ঘণ্টা আগেবিষয়টি নিশ্চিত করে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শিশুটির বড় বোনের সঙ্গে মাগুরা পৌরসভার নিজনান্দুয়ালী মাঠপাড়ার হিটু শেখের (৪২) ছোট ছেলে সজীব শেখের (১৮) বিয়ে হয় চার মাস আগে। ওই বাড়িতে হিটু শেখ, তাঁর স্ত্রী জাহেদা খাতুন (৪৫), বড় ছেলে রাতুল শেখ (২০) ও ছোট ছেলে সজীব শেখ থাকতেন। বিয়ের পর থেকে বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তাঁর শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ১ মার্চ নিজনান্দুয়ালীতে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় আট বছরের শিশুটি।
আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক, শরীরে পাশবিক নির্যাতনের ক্ষত: চিকিৎসক৭ ঘণ্টা আগেএজাহারে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাদী উল্লেখ করেন, গত বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় শিশুটি। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন শিশুটি বড় বোনকে জানায়, তার যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। কিন্তু বড় বোন মনে করে, শিশুটি ঘুমের মধ্যে আবোলতাবোল বকছে। এরপর সকাল ছয়টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়ার কথা বলে। কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাই (সজীব) দরজা খুলে দিলে তাঁর বাবা (হিটু শেখ) তার মুখ চেপে ধরে তাঁর কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়।
এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনা জানার পর শিশুটির বড় বোন তাঁর মাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানাতে গেলে তাঁর স্বামী সজীব শেখ মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাঁকে মারধর করেন। এ কথা কাউকে বললে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেন এবং তাদের দুই বোনকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকে রাখেন। সকালে জোহরা নামের এক নারী প্রতিবেশী বাড়িতে এলে বোনের ভাশুর রাতুল শেখ দরজা খুলে দেন। তখন শিশুটির মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করানোর চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বোনের শাশুড়ি অন্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে জিনে ধরেছে বলে চিকিৎসকদের জানান। তবে চিকিৎসক ও অন্যরা বিষয়টি টের পেলে শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরে বাদী হাসপাতালে যান।
আরও পড়ুনবোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে শিশু ‘ধর্ষণের’ শিকার, ২৪ ঘণ্টা পরও জ্ঞান ফেরেনি ০৭ মার্চ ২০২৫মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ভাশুর কেউই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি। তাঁরা অসংলগ্ন ও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ায় ভুক্তভোগীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
শিশুটির বড় বোন সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০ দিনের মতো আগে আমার সঙ্গে একটা ঘটনা ঘটে। সেদিন সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ ছিল না। আমি ঘরে আলো জ্বালিয়ে টয়লেটে যাই। টয়লেট থেকে ফিরে দেখি ঘরে আলো বন্ধ। হঠাৎ করে একজন আমার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আমি উচ্চতা ও অন্যান্য বিষয় দেখে বুঝতে পারি, সে আমার শ্বশুর। বিষয়টি আমার স্বামীকে জানালে সে উল্টো আমাকে আজেবাজে কথা বলে। আমি আমার বাড়িতেও এ কথা জানাই। বাড়িতে গিয়ে আর শ্বশুর বাড়ি ফিরতে চাই নাই। কিন্তু বাড়ি থেকে আমাকে বুঝিয়ে আবার পাঠানো হয়। আমার ভেতর সব সময় ভয় কাজ করত, যদি ওই ঘটনার চেয়ে খারাপ কিছু ঘটে। এ কারণে আমার সঙ্গে আমার ছোট বোনকে পাঠায়।’ তিনি বলেন, তিনি এলাকার লোকজনের কাছে শুনেছেন, এর আগেও দুইটা মেয়ের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল তাঁর শ্বশুর।
আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটি এখন লাইফ সাপোর্টে ১৮ ঘণ্টা আগেপুলিশ ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, শিশুটির বাড়ি জেলার শ্রীপুর উপজেলায়। কয়েক দিন আগে বড় বোনের (শ্বশুর) বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল শুক্রবার রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আজ বুধবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুকে সিএমএইচে নেওয়া হলো১ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বড় ব ন অবস থ ঘটন য় ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদের বিভিন্ন স্থানে বরফ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা
চাঁদের পৃষ্ঠে পানির অস্তিত্ব অনুসন্ধানে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এবার চাঁদে অবতরণকরা চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের সংগ্রহ করা তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চাঁদের মেরু এলাকার বেশ কিছু স্থানে বরফ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর পাঠানো চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযান ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করে। মহাকাশটিতে থাকা বিক্রম ল্যান্ডারের চেসট নামের প্রোবের মাধ্যমে চাঁদের পৃষ্ঠের ১০ সেন্টিমিটার গভীরের তাপমাত্রা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী দুর্গা প্রসাদ করণম জানিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের পৃষ্ঠে বরফ জমা হয়েছিল। গবেষণার তথ্য সেই বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে। চাঁদে বরফের অস্তিত্ব নিয়ে একটি গবেষণাপত্র কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, চন্দ্রযান-৩–এর বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের প্রান্তে প্রায় ৬৯ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে অবতরণ করে। এই অবতরণ স্থানের ছয় ডিগ্রি কোণে সূর্যের দিকে মুখ করা একটি ঢালু জায়গা রয়েছে। সেখানকার তাপমাত্রা দিনে প্রায় ৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে মাইনাস ১৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বিক্রম ল্যান্ডারের অবতরণ স্থানের মাত্র এক মিটার দূরে থাকা একটি সমতল পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস; অর্থাৎ সামান্য একটি ঢালের কারণে আগের স্থানের তাপমাত্রার কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।
চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের সংগ্রহ করা তথ্য কাজে লাগিয়ে একটি মডেল তৈরির পাশাপাশি চাঁদের ঢালু স্থান কীভাবে তাপমাত্রা প্রভাবিত করতে পারে, তা জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। সেই মডেলের তথ্যমতে, ১৪ ডিগ্রির বেশি কোণে ঝুঁকে থাকা ঢালু স্থানটির পৃষ্ঠের কাছাকাছি বরফ জমা হওয়ার জন্য যথেষ্ট ঠান্ডা তাপমাত্রা রয়েছে। আর তাই এই ঢালু স্থানটিতে বরফ থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, চাঁদে বরফ পাওয়া গেলে পৃথিবী থেকে চাঁদে পানি পরিবহনের খরচ ও সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। ফলে চাঁদে মানুষের ঘাঁটি স্থাপনের পাশাপাশি মঙ্গল গ্রহ বা মহাকাশ গবেষণার কাজও সহজ হবে।
সূত্র: এনডিটিভি