নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে তনুশ্রীর অভিযোগ ৮ বছর পর খারিজ
Published: 8th, March 2025 GMT
২০১৮ সালে ‘মি টু’ আন্দোলনে সরব হন বলিউড তনুশ্রী দত্ত। অভিযোগের তীর ছোঁড়েন বি-টাউনের গুণী অভিনেতা নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে। ভারতীয় আদালতে দায়ের করেন মামলা। এবার সেই মামলা খারিজ করে দিলেন আদালত।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ ছবির সেটে নানা ছাড়াও আরও তিন জনের বিরুদ্ধে অশ্লীল আচরণের অভিযোগ ছিল তনুশ্রীর।
শুক্রবার বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (আন্ধেরি) এনভি বনশল জানান, অভিযোগের সময়সীমা অতিক্রান্ত। তনুশ্রীর অভিযোগ তাই খারিজ।
বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আরও জানান, আইনের চোখে একটি ঘটনার ১০ বছর পর অভিযোগ দায়েরের সারবত্তা নেই। তনুশ্রী ২০০৮-য় ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০১৮-য় ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩৫৪ এবং ৫০৯-এ অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি কর্মপদ্ধতি (সিআরপিসি)-র নিয়ম অনুসারে তিন বছরের সময়সীমা রয়েছে।
ম্যাজিস্ট্রেটের মতে, সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার নেপথ্য কারণ, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি। তার পরেও সাত বছর পেরিয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে বিলম্বের নির্দিষ্ট কারণ জানানো হয়নি। এই মামলা চালানো বা ধরে রাখা তাই নিরর্থক।
২৩ মার্চ, ২০০৮ তারিখে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার জন্য ২০১৮ সালে এফআইআর দায়ের করেন তনুশ্রী। সেসময় বিষয়টি নিয়ে প্রায় রোজই সংবাদের শিরোনাম হতেন তনু। অভিযুক্তের খাতায় নানার নাম দেখে অবাক হয়েছিলেন অনেকে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কারের আগে নির্বাচনে জোর দেওয়া ছিল ১/১১ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভুল
১৯৯০ সালে কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। আর গণতন্ত্রের উল্টোপথে যাত্রা ঠেকাতে প্রয়োজন ছিল কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্কার। সে সময় সংস্কারে জোর না দিয়ে নির্বাচন ও নির্বাচনের সময়সীমায় গুরুত্ব দেওয়া ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভুল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপ–রাষ্ট্রদূত জন এফ ড্যানিলোভিচ।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) বিআইআইএসএস’এ ‘নতুন ভোরের পথে ঢাকা: গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন গতিপথ’ শীর্ষক ওই আলোচনার আয়োজন করে। সিজিএস আয়োজিত সংলাপে অংশ নেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপ রাষ্ট্রদূত জন এফ ড্যানিলোভিচ। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার চেয়ারম্যান মুনিরা খান। এরপর সঞ্চালকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সাবেক দুই জ্যেষ্ঠ মার্কিন কূটনীতিক। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে অতিথিদের প্রশ্নের উত্তর দেন তারা।
সাবেক দুই জ্যেষ্ঠ মার্কিন কূটনীতিক বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতি তাদের দেশের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতি নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন। তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সমর্থন করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ভূমিকা এবং নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন বিদেশি মিশনের কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, আন্তর্জাতিক, উন্নয়ন সংস্থা, নাগরিক সমাজের সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে প্রশ্ন করলে জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, অবশ্যই ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভুল পক্ষে ছিল। তবে এরপর থেকে একটি ধারাবাহিক নীতি নিয়ে চলেছে।
২০০৭–০৮ যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা জটিল ভূমিকা পালন করেছিল, সে সময়ে কূটনীতিকরা কিভাবে কাজ করে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ২০০৭–০৮ সালে বড় ভুল করেছিল। আমি সে সময়ে বাংলাদেশে দায়িত্বে ছিলাম না। তবে আমি এটি বলতে পারি তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বা অন্য কোনো মার্কিন কূটনীতিক ১/১১ এর পেছনে দায়ী নয়। আর কোনো গোপন কফি গ্রুপে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউ বাংলাদেশিদের নির্দেশনা দেয়নি কি করতে হবে।
জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, তবে সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের গতিপথ নিয়ে অনেক উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিল, যে প্রত্যাশা তৎকালীন সরকার, সামরিক বাহিনী এবং সুশীল সমাজের ছিল।
তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি ছিল, তা লাইন বিচ্যুত হয়েছিল। আর বাংলাদেশকে সঠিক পথে আনতে কিছু মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। আমরা সংস্কারকে সহযোগিতা করেছিলাম। আমরা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করেছিলাম। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলাম।
১/১১-এর বিশ্লেষণে জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, পরিস্থিতির কারণে আমাদের বোঝাপড়ার ঘাটতি ছিল। আমাদের অনেকের কথা শোনার দরকার ছিল। কিন্তু আমরা তাদের কথা শুনিনি। বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকে আর্মির জেনারেল ও ব্রিগেডিয়ারদের কথায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ কি চেয়েছিল, তাতে গুরুত্ব দেয়নি। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে কথা বললেও আর্মিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এ কারণেই হয়তো যুক্তরাষ্ট্র যে রকম প্রত্যাশা করেছিল বাংলাদেশ সে ধারায় যেতে পারেনি।
তিনি বলেন, আরও একটি ভুল ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। সেটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নির্বাচন ও নির্বাচনের সময়সীমাতে বেশি জোর দিয়েছিল। নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যে সরকার নির্বাচিত নয়, এমন সরকার দীর্ঘ সময় শাসন করতে পারে না। তবে সে সময়ে উল্লেখযোগ্য সংস্কার প্রয়োজন ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অগ্রাধিকার সংস্কারের চেষ্টা করেছিল। তবে যখন এটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে সে সরকারের এডেন্ডা হচ্ছে নির্বাচন এবং ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর থেকে প্রভাব হাড়িয়েছে।
জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সে সরকারের চুক্তি হয়েছিল গোপনে। ফলে আমরা জানি না সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কি দরকষাকষি হয়েছিল। তখন আমরা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আমাদের ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা তাদের শিক্ষা পেয়েছেন এবং সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজগুলোকে এগিয়ে নেবে। তবে আমাদের ধারণা ভুল ছিল এবং যা বলেছিল তা বিশ্বাস করেছিলাম। আর বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে অবনতি হতে দেখেছি, যার ফলে ২০২৪ এর জুলাই–আগস্ট হয়েছে। এ সময়ে অতীতের ভুল থেকে ভবিষ্যতের শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।