জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারতের সংসদের আসন বাড়ানোর সম্ভাবনা রুখতে দেশের সাত মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকেও। সবাইকে অনুরোধ করেছেন, আগামী ২২ মার্চ চেন্নাইয়ের সভায় উপস্থিত থাকতে। সেখানে দাক্ষিণাত্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের ‘গণতান্ত্রিক অবিচারের’ প্রতিবাদে দেশব্যাপী জনমত গড়ার চেষ্টা হবে। 

মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন গত শুক্রবার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন দক্ষিণের চার রাজ্য কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, তেলেঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডি ও অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুকে। পাশাপাশি চিঠি লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পাঞ্জাবের ভগবন্ত সিং মান ও বিজেপি শাসিত ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝিকেও। এই সঙ্গে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁরা হলেন চন্দ্রশেখর রাও (তেলেঙ্গানা), জগনমোহন রেড্ডি (অন্ধ্র প্রদেশ) ও নবীনচন্দ্র পট্টনায়েক (ওডিশা)। প্রত্যেক নেতাকে তিনি লিখেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণের মাধ্যমে লোকসভার আসন বৃদ্ধি করতে চাইছে তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি মারাত্মক আঘাত। কেন্দ্রীয় ফর্মুলায় তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সাফল্যের সঙ্গে রূপায়ণ করে সুশাসনের নজির সৃষ্টি করেছে।

আসন বৃদ্ধির এই সম্ভাবনা রুখতে স্ট্যালিন ইতিমধ্যেই তাঁর রাজ্যে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন গত ৫ মার্চ। বিজেপি ও তার সহযোগী স্থানীয় দল তামিল মানিলা কংগ্রেস ও এনটিকে সেই বৈঠকে যোগ দেয়নি। বৈঠকে দুটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। একটিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হয়েছে, লোকসভার আসন বৃদ্ধি আরও ৩০ বছর স্থগিত রাখা হোক। এই সময়ের মধ্যে সরকার সর্বত্র জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সফল করুক, যাতে সংসদে প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে কোনো রাজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে না হয়।

দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল, এই নিয়ে দেশব্যাপী জনমত গড়ে তুলতে এক যৌথ অ্যাকশন কমিটি গঠন করা হবে। ২২ মার্চের বৈঠকের উদ্দেশ্য সবাইকে নিয়ে সেই কমিটি গড়ে তোলা।

শুধু মুখ্যমন্ত্রীদেরই নয়, ২২ মার্চের বৈঠকে বিজেপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকেও স্ট্যালিন আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সে জন্য চিঠি লিখেছেন কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিএম, এআইএমআইএম, জেডিএস, অকালি দল, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, টিডিপি, বিআরএস, জন সেনা, আপ ও তৃণমূল কংগ্রেসকে। কেরালা, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র প্রদেশ, পাঞ্জাব, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির রাজ্য শাখার নেতাদেরও তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

ত্রিভাষা নীতি জবরদস্তি চাপিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে হিন্দি আগ্রাসন রোখা এবং সংসদের আসন বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দাক্ষিণাত্যের রাজ্যগুলোকে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার বিরুদ্ধে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে জোটবদ্ধ করতে চাইছেন। হিন্দি ভাষা শিক্ষার নামে কেন্দ্রীয় সরকার তামিলনাড়ুকে ব্ল্যাকমেল করছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। স্ট্যালিন বলেছেন, রাজ্যের প্রাপ্য বরাদ্দ কেন্দ্র দিচ্ছে না। আগামী বছর তামিলনাড়ু বিধানসভার নির্বাচনের আগে এই দুই বিষয়কে হাতিয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন তামিল জাত্যভিমান জাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন, যাতে বিজেপির চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে আরও পাঁচ বছর ক্ষমতাসীন থাকতে পারেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ম খ যমন ত র ম খ যমন ত র ক র আসন ব দ ধ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ বিদেশি হস্তক্ষেপ!

কানাডায় আসন্ন ৪৫তম নির্বাচন ২৮ এপ্রিল। নির্বাচন নিয়ে কানাডিয়ানদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। দেশটির নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য সরকারের ইন্টেলিজেন্স টাস্কফোর্স গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তারা বলছে, ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি’র পক্ষে চাইনিজ একটি গ্রুপ নানাভাবে প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচন কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চাইনিজ সোসাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ‘উইচ্যাট’ এর মাধ্যমে চাইনিজরা প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে তাঁর আসনে তাঁকে ভোট দেওয়ার জন্য নানা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। উইচ্যাট এর প্রভাব বিস্তারকারী সোসাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট হলো ‘ইঊলি ইউমিয়া’।

‘ইউলি ইউমিয়া’ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রচার: কানাডিয়ান গোয়েন্দাদের নজরদারিতে বলা হয়েছে ‘ইউলি ইউমিয়া’ নামের একটি পপুলার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে এই ধরনের প্রচার চালানো হচ্ছে। যেটি কানাডায় বসবাসরত চাইনিজদের মার্ক কার্নির প্রচারণার পক্ষে কাজ করছে। গোয়েন্দারা অনুসন্ধান করে দেখেছে, ইউলি ইউমিয়া নামের অ্যাকাউন্টটি আসলে চাইনিজ কম্যুনিস্ট পার্টির সেন্ট্রাল পলিটিক্যল অ্যান্ড লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স কমিশনের একটি অ্যাকাউন্ট। অর্থাৎ চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি কানাডায় চীনা বংশোদ্ভূত কানাডিয়ানদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে লিবারেল পার্টি এবং মার্ক কার্নির পক্ষে তারা ভোট দেয়।

ইন্টেলিজেন্স টাস্কফোর্স জানিয়েছে, এই বিষয়টি তাঁরা মার্ক কার্নিকে অবহিত করেছেন। তাঁরা উইচ্যাটের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। উইচ্যাট আশ্বস্ত করেছে এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে প্রভাবিত করে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে গোয়েন্দারা নিশ্চিত করতে চায়, কোনোভাবেই যেন বাইরের কোনো পক্ষ কানাডার ফেডারেল নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে।

কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়লিয়েভকে ভারতের সমর্থন!
অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টির পিয়েরে পয়লিয়েভ যখন দলটির নেতা নির্বাচিত হন, অর্থাৎ পার্টির নির্বাচনে লিডারশিপ দৌড়ে অংশগ্রহণ করেন তখন ভারত তাঁর পক্ষে জনমত ও তহবিল সংগ্রহসহ নানা ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে। যদিও পিয়েরে পয়লিয়েভ সরাসরি সেটি অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি তাঁর যোগ্যতায় কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের সমর্থনে নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু গোয়েন্দাদের তথ্য ছিল- তাঁর পক্ষে ইন্ডিয়ান নানা গ্রুপ, ইন্ডিয়ান সরকারি সংস্থা কানাডার ভেতরে তাঁর পক্ষে তহবিল সংগ্রহ ও জনমত সংগ্রহ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইন্টেলিজেন্স টাস্কফোর্স আরও বলছে- এই বিষয়গুলো তারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন, যাতে কোনোভাবেই নির্বাচনী প্রচারণার কোনো প্রক্রিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপ না হয়। কানাডার বাইরের কেউ নির্বাচনকে যাতে প্রভাবিত করতে না পারে।

জনমত জরিপে এগিয়ে লিবারেল পার্টি: এদিকে টরোন্টো স্টারের সিগন্যালের ব্যবস্থাপনায় কানাডার নির্বাচনের সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, ‘যদি আজ ভোট হয়’ তাহলে মার্ক কার্নির লিবারেল পার্টির ৪২.৩ শতাংশ ভোট এবং পিয়েরে পয়লিয়েভের কনজারভেটিভ পার্টি ৪০ শতাংশ সমর্থন বা ভোট পাবেন, যা গতকালের তুলনায় ব্যবধান অনেক কমে এসেছে।

আসন সংখ্যায় মার্ক কার্নি এখনও এগিয়ে রয়েছে। জনমত জরিপে তাঁর দলের ১৭৭টি আসনে জয়ের আভাস ডাওয়া যাচ্ছে যেখানে ৩৪৩টি আসনের মধ্যে মধ্যে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হলে ১৭২টি আসন দরকার। জনমত জরিপে কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে ১৩২টি আসন মিলতে পারে। ফলে আসন ও সমর্থনের দিক থেকে লিবারেল পার্টি অনেক এগিয়ে রয়েছে।

উল্লেখ্য, কানাডার নির্বাচনী প্রচারণায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়ায় কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থন বেড়ে চলেছে। কেননা কানাডার বর্তমান অর্থনীতির পরিস্থিতিতে কানাডা ও আমেরিকার মধ্যে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাতে কানাডিয়ানরা ট্রাম্পকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছে না। যে কারণে যে পার্টির নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কথা বলছেন কানাডিয়ানরা তাঁদের বেশি সমর্থন করছেন।

সবকিছু মিলে কানাডিয়ানরা বর্তমানে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে কানাডার অর্থনীতির মার্কেটে স্টক মার্কেট নিম্নমুখী হয়েছে এবং হচ্ছে। কানাডার অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে খুব শিগগির কানাডায় অর্থনৈতিক মন্দা আসতে পারে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ বিদেশি হস্তক্ষেপ!