বড় ভাইদের কারণে সিলিকন ভ্যালিতে নারীর প্রতি বৈষম্য বাড়ছে না তো
Published: 8th, March 2025 GMT
২০২৪ সালে মার্কিন সাংবাদিক জো শিফার এ বিষয়ে একটি বই লেখেন—‘এক্সট্রিমলি হার্ডকোর: ইনসাইড ইলন মাস্কস টুইটার’। শিফার নিউজ সাইট প্ল্যাটফর্মারের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। জো শিফার তাঁর বইয়ে ইলন মাস্কের বিভিন্ন আচরণ সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেন। মাস্ক যেভাবে নিজের প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের ইউনিয়ন করতে দেন না, তা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেন। ইলনের ‘উইক মাইন্ড (দুর্বল মন)’ ভাইরাস রয়েছে বলে মনে করেন জো শিফার। ইলন টুইটারের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করাতে চেয়েছিলেন। ইলন মাস্ক যেভাবে সিলিকন ভ্যালি ও মার্কিন রাজনীতিতে ‘ব্রোলিগার্কি’র ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করেছেন, তা নিয়ে মার্কিন সাংবাদিক জো শিফারের বেশ লেখালেখি দেখা যায়। ২০২২ সালে ইলন মাস্ক আগের মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার (বর্তমান নাম এক্স) অধিগ্রহণ করেন। ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর ইলন টুইটার কেনার পরে লিখেছিলেন, পাখি মুক্ত হয়েছে। ইলন মাস্ক টুইটার অধিগ্রহণে ব্যয় করেন ৪ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। নানা ধরনের আইনি লড়াই আর আলোচনার মধ্য দিয়ে টুইটার অধিগ্রহণ করেন ইলন মাস্ক।
জো শিফার সম্প্রতি আল–জাজিরায় ইলন মাস্কের আচরণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছেন। এ সময়ে প্রযুক্তি খাতে নারীদের টিকে থাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, সিলিকন ভ্যালিতে শীর্ষ পদে নারীর উপস্থিতি একেবারেই কম। নারীদের এখানে আসার পথে অনেক বাধা রয়েছে। সবাইকে নিয়ে একটি সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করতে হবে। এই খাতকে সবার জন্য নিরাপদ করা প্রয়োজন। ইলন মাস্কসহ অন্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের আচরণকে ব্রোলিগার্কি হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।
ব্রোলিগার্কি শব্দটি দুই বছর ধরে প্রযুক্তির দুনিয়ায় বেশ আলোচনায় আসছে। অতিধনী পুরুষদের একটি ছোট গোষ্ঠীর সদস্যদের এই নামে ডাকা হচ্ছে। প্রযুক্তি খাতের প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন ব্যক্তি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খাতে কয়েক বছর ধরেই প্রভাব তৈরি করছে। তাঁদের এই দলে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ভাইয়ের ইংরেজি শব্দ ব্রাদারের সংক্ষিপ্ত রূপ থেকে ব্রো শব্দটি এসেছে। আর অলিগার্কি শব্দটি সমাজে শক্তিশালী কয়েকজন ব্যক্তির শাসনকে প্রকাশ করা হয়। ব্রোলিগার্ক নামের বড় ভাইদের কারণে অনেক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ব্রোলিগার্কি ধারণাটি এই শতকের প্রথম দিকে দেখা যায়। কয়েকজন মিলে যখন একটি ছোট দল তৈরি করে সার্ফিং স্পটে আধিপত্য বিস্তার করে, তখন এই শব্দ ব্যবহার করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শব্দটি সামাজিক বিষয় থেকে প্রযুক্তি দুনিয়ার শীর্ষ ধনীদের প্রভাবকে প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে কন্ডা ন্যাস্ট নামের একটি গণমাধ্যমের সম্পাদক লুক জালেস্কি ইলন মাস্ককে বিশ্বের প্রথম ব্রোলিগার্ক হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি এই শব্দকে মূলধারার বক্তৃতায় প্রথম প্রবর্তন করেন।
টেক ব্রোলিগার্কদের উত্থান সম্পর্কে এই শব্দ ব্যবহার করা হয়। ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ব্রোলিগার্কির প্রাধান্য দেখা যায়। প্রযুক্তি দুনিয়ার আলোচিত ব্যক্তিত্বরা মার্কিন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সেই ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে বেশ ভালোই। স্পেসএক্সের ইলন মাস্ক, অ্যামাজনের জেফ বেজোস, ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ আর গুগলের সুন্দর পিচাইয়ের মতো বিলিওনিয়ার ব্যক্তিরা প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানের মঞ্চে চমক তৈরি করেন। তাঁরা নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্ভাব্য মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের সামনে অবস্থান করেন। মার্কিন নির্বাচনে ও ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের উত্থানে প্রযুক্তি দুনিয়ার যথেষ্ট পরিমাণ অর্থের কথা শোনা যায়। এসব অতিধনী প্রযুক্তি উদ্যোক্তা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনাকে প্রভাবিত করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাস্তবে অনেক প্রমাণ দেখা যাচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসনে মন্ত্রিসভার সদস্য নিয়োগে তাঁদের প্রভাব দেখা যায়। ইলন মাস্ক, বায়োটেক উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামীসহ ১৩ জন বিলিয়নিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ট্রাম্পের নতুন প্রতিষ্ঠিত সরকারি দক্ষতা বিভাগ, যা ডজ নামে পরিচিত, এই বিভাগ তৈরির পেছনে টেক ব্রোলিগার্কদের ভূমিকা আছে। প্রযুক্তি খাতে ধনী ও অভিজাতদের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার কারণে গণতান্ত্রিক নীতি হুমকির মুখে পড়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। ধনী প্রযুক্তিবিদেরা তাঁদের স্বার্থের কারণে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে গুরুত্ব দেবে না বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রোলিগার্কির প্রভাব সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালকে ইয়ার অব ব্রো বা ভাইদের বছর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ব্রোদের উত্থানকে বেশ দুশ্চিন্তার সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
সূত্র: আল–জাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ান
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক ২০২৪ স ল ট ইট র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
মার্চে রপ্তানি হয়েছে ৪২৪ কোটি ডলারের পণ্য
বাংলাদেশ থেকে গত মার্চ মাসে ৪২৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, দেশীয় মুদ্রায় যা ৫১ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতি মাসের শুরুতে পণ্য রপ্তানি আয়ের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে থাকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। কিন্তু সংস্থাটি গতকাল রোববার পর্যন্ত গত মাসের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেনি।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মার্চ মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৩৮১ কোটি ২২ লাখ ডলারের পণ্য। আর এনবিআরের হিসাবে, গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪২৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি। সেই হিসাবে গত বছরের মার্চ মাসের তুলনায় এবার রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, সাধারণত ঈদের ছুটির আগে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়। ঈদে ৭ থেকে ১০ দিনের দীর্ঘ ছুটি থাকে। ফলে ছুটির মধ্যে ও তার পরপর যেসব ক্রয়াদেশের পণ্য জাহাজীকরণের বাধ্যবাধকতা থাকে, সেগুলো ছুটির আগেই শেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ঈদের ছুটি শেষে কারখানাগুলো যখন খুলছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের পাল্টা শুল্ক নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। ট্রাম্প বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যাঁরা পণ্য রপ্তানি করেন, তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন। প্রতিযোগী দেশ ভারতের ওপর এই শুল্কের হার ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ২৯ শতাংশ; যদিও চীনকে দিতে হবে ৩৪ শতাংশ (মোট শুল্ক ৫৪) ও ভিয়েতনামকে দিতে হবে ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। সেই হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬১৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক। আর সেই পোশাক রপ্তানির একক বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছরের বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের ১৮ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। পোশাকের পাশাপাশি এই বাজারে যাঁরা জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও হিমায়িত খাদ্য পণ্য রপ্তানি করেন, তাঁরাও উদ্বেগে আছেন।
তৈরি পোশাক, চামড়াসহ বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকেরা গতকাল প্রথম আলোকে জানান, পাল্টা শুল্কের কারণে ইতিমধ্যে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে। বাড়তি শুল্কের ক্ষতি পোষাতে মূল্যছাড় দাবি করছে তারা। আগামী দু-এক দিনে এমন ঘটনা আরও বাড়বে বলেই তাঁদের শঙ্কা।
ইপিবির প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে, অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ২৯৪ কোটি ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৮০ কোটি ডলার। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসের রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়েছে।