জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়া যৌক্তিক বলে এক সভায় মত দিয়েছেন একাধিক আলোচক। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারকাজ শেষ করা এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনার ওপর জোর দেন তাঁরা।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনবিষয়ক সংলাপ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব পরামর্শ দেন। সেন্টার ফর পলিসি অ্যানালাইসিস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি (সিপিএএ) নামের একটি সংগঠন ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক শাফিউল ইসলাম। ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজন করাটা যৌক্তিক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, দুটি সংস্কার কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার কথা বলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত জনমত জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ আগে স্থানীয় নির্বাচন চান।

আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে শাফিউল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনপ্রতিনিধি না থাকায় মানুষ সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে শিক্ষিত ও যোগ্য ব্যক্তিরা জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য এগিয়ে আসবেন। দলীয় সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচন হলে প্রার্থী কেনা-বেচা হয়, এর বাইরে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা নিজের ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান। তাঁদের বিজয়ী করতে দলীয় ও প্রশাসনিক প্রভাব বিস্তার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্যও আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। কারণ, স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সহজ হয়। আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা যাচাই করারও সুযোগ হবে। রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তিনি আশা করেন। তিনি শুধু এবার নয়, সব সময় নির্দলীয় সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার দাবি জানান।

আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়ে সাবেক সচিব মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ূম বলেন, নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এখনো পুলিশ নিষ্ক্রিয়। প্রশাসনেও সমস্যা আছে। প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ করবে, তা আশা করা যায় না।

নিরাপদ সড়ক চাই–এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে অনেক উপকার হবে। তবে সবার আগে রাজনীতিবিদদের মধ্যে পরিবর্তন প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, রাজনীতিবিদদের মধ্যে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে? নতুন রাজনৈতিক দল যাঁরা করেছেন, তাঁদের মধ্যে কি পরিবর্তন এসেছে?

বেশির ভাগ আলোচক আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে মত দিলেও আগে জাতীয় নির্বাচন করা প্রয়োজন বলে মত দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান। তিনি বলেন, সব নির্বাচনই অপরিহার্য। জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য নির্বাচন প্রয়োজন, ৫৩ বছরে সেটা হয়নি। অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র না হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে সেটা হবে না। তিনি বলেন, অতীতে দেখা গেছে, অনির্বাচিত যেসব সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা আগে স্থানীয় নির্বাচন দিয়ে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক অভিলাষ না থাকলে আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হওয়ার কথা নয় বলে তিনি মনে করেন।

এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান বলেন, ১৬ বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করে আসছে। অন্যদিকে তরুণদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানের পর কোনো দেয়াললিখনে তিনি দেখতে পাননি যে তারা নির্বাচন চায়। তারা নতুন বাংলাদেশ চায়। সরকারকে পুরো দেশকে ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, যাঁরা নতুন বন্দোবস্ত চেয়েছিলেন, তাঁরাই ইতিমধ্যে পুরোনো বন্দোবস্তে ঢুকে গেছেন।

রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে সংস্কার প্রয়োজন উল্লেখ করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী বলেন, তিনি নির্বাচনের বিপক্ষে নন। কিন্তু আগে সংস্কার হতে হবে। এখন ছাত্রদের দলও সেভাবে সংস্কারের কথা বলছে না। প্রথমে ছিল নির্বাচন না সংস্কার—এই প্রশ্ন। এখন সেটা হয়ে গেছে আগে স্থানীয় নির্বাচন, নাকি জাতীয় নির্বাচন। তিনি বলেন, মানুষের ভোগান্তি কমাতে নির্বাচন ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ করা হলে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন সিপিএএর সভাপতি অধ্যাপক মো.

শরিফুল আলম। অন্যদের মধ্যে সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব খন্দকার রাশেদুল হক, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল লতিফ, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক অন ষ ঠ ন ল ইসল ম সরক র র ন র জন

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গুমের ঢেউ, বেড়েছে রহস্যজনক মৃত্যু

শওকত আহমেদের মৃতদেহ যখন পাওয়া গেল, তখন তাঁর চোখ দুটি ছিল রক্তাক্ত। তাঁর চুল খসে পড়ছে। ১৮ বছর বয়সী এ যুবকের হাত-পায়ের চামড়া উঠে যাচ্ছিল। তাঁর বাবা মোহাম্মদ সাদিক এসব তথ্য জানান। ঘটনাটি গত ১৬ মার্চের। এর তিন দিন পরই সাদিক জানতে পারেন তাঁর বড় ছেলে রিয়াজও (২৫) মারা গেছেন। তারা দু’জনই এক মাস আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন। 

ভারত শাসিত কাশ্মীরের গুজ্জার সম্প্রদায়ের মানুষ তারা। স্থানীয় আইন প্রয়োগ সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, শওকত ও রিয়াজ কাশ্মীরের কুলগাম অঞ্চলের একটি নালায় ডুবে গিয়েছিলেন, যা তাদের বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। তাদের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ‘সম্ভাব্য আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়। 
কিন্তু সাদিক ও গুজ্জার সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ বয়ান মানতে নারাজ। সাদিক জানেন না তাঁর দুই ছেলের গুম হওয়া ও পরে মারা যাওয়ার আসল কারণ কী; এটি নিরাপত্তা বাহিনী করেছে, নাকি সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, তাদের নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

সরকারি বাহিনী এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বয়ানের ওপর গভীর অবিশ্বাস রয়েছে ওই অঞ্চলের মানুষের, যেখানে সম্প্রতি ব্যাপক হারে বেড়েছে গুম। এসব গুমের কিছুদিন পরই মিলছে মৃতদেহ। মুখতার আহমদ আওয়ান নামে ২৪ বছরের আরেক যুবক নিখোঁজ রয়েছেন, যার খোঁজ এখনও মেলেনি। তারা বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বের হয়ে আর ফেরেননি। 

সরকারের ওপর অনাস্থা কাশ্মীরের ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত। অ্যাসোসিয়েশন অব প্যারেন্টস অব ডিসঅ্যাপিয়ার্ড পারসন্সের (এপিডিপি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালে ভারত শাসিত এলাকাটিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হলে এ পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ হাজার কাশ্মীরি নিখোঁজ হয়েছেন।

কেবল এ তিনজনই নয়, কাশ্মীরে যেন গুমের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। গত ৫ মার্চ কুলগামের পাশের কাঠুয়া জেলা থেকে যুগেশ সিং (৩২), দর্শন সিং (৪০) ও ১৫ বছরের বরুণ সিং নিখোঁজ হন। তারা বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলেন। তিন দিন পর তাদের মরদেহ পাওয়া যায়। কয়েকদিন পর কাঠুয়া থেকেই মোহাম্মদ দিন ও রহমান আলি নামে আরও দুই কিশোর গুম হয়। এক মাস পার হলেও এখনও তাদের খোঁজ মেলেনি। 

২০২০ সালে ভারতের এক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজৌরি জেলায় গুজ্জার সম্প্রদায়ের তিন তরুণকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ ওঠে। পরে পুলিশ এ ঘটনায় ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠন করে। এতে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজানোর অভিযোগ আনা হয়। কোর্ট মার্শালে ওই কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত হন। তবে পরে তিনি জামিন পেয়ে যান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান, সরিয়ে দিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
  • রূপগঞ্জে শ্রমিক অসন্তোষ, সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষ
  • মব ঠেকাতেই হবে
  • গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ১৭ এপ্রিল সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ
  • রূপগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ : আহত শতাধিক 
  • রূপগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহ
  • ঈদযাত্রায় নিহত ৩৫২, দুর্ঘটনা ও হতাহত গত বছরের তুলনায় কম: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
  • ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গুমের ঢেউ, বেড়েছে রহস্যজনক মৃত্যু
  • প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে ভাঙচুর মন্দ বার্তা দেয়
  • প্রশাসনের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই