একসময় ক্যানসারকে দুরারোগ্য ব্যাধি হিসেবেই ধরা হতো, তবে আজকাল চিকিৎসা-পদ্ধতির অগ্রগতির কারণে কিছুটা হলেও এর প্রতিকার সম্ভব হয়েছে। তবু বিশ্বজুড়ে ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তাই এর প্রতিকারের পাশাপাশি প্রতিরোধের দিকেও মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সচেতনতা ও প্রতিরোধই হতে পারে এর সবচেয়ে কার্যকর উপায়। ২০১৪ সাল থেকে ফেব্রুয়ারিকে ক্যানসার প্রতিরোধ মাস হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিজুড়ে আয়োজিত হয় নানা সতর্কতামূলক আলোচনা, সেমিনার, গবেষণা ইত্যাদি।

সবার মাঝে ক্যানসারবিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে এসকেএফ অনকোলোজি আয়োজন করে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার-চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা। এটি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলোজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।

নাসিহা তাহসিনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক এবং সাবেক অধ্যাপক ডা.

শেখ গোলাম মোস্তফা। এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘রোজায় ক্যানসার-রোগীদের সুস্থতা’। বাংলাদেশে ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, ডায়াগনোসিস, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা, সচেতনতা, প্রতিরোধব্যবস্থা এবং রমজানে মাসে ক্যানসার-রোগীদের সুস্থতায় করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা।

শুরুতেই উপস্থাপক জানতে চান, ক্যানসার আসলে কেন হয়ে থাকে?

উত্তরে ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ক্যানসার কারণ মূলত দুটি—জেনেটিক এবং পরিবেশগত। মা-বাবার জিনে যদি ক্যানসারের কোষ থাকে, সেই জিন দিয়ে যদি ফার্টিলাজেশন হয় এবং সন্তান জন্ম নেয়, তাদের ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে। যেমন দেখবেন অনেক শিশুর চোখ, কিডনি এবং লিভারে ক্যানসার হয়ে থাকে। পরিবেশগত কারণে নয়, মূলত জেনেটিক মিউটেশনের কারণেই তাদের এই ক্যানসার হয়ে থাকে। আর পরিবেশগত কারণে যে ক্যানসারগুলো হয়ে থাকে সেগুলোর হারই বেশি। জেনেটিক কারণে হয় ২২ থেকে ৩০ শতাংশ, পরিবেশগত কারণই মূলত ক্যানসারের সবচেয়ে বড় কারণ। ধূমপান, আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও ভাইরাস ইনফেকশন ইত্যাদির কারণেই মূলত ক্যানসার বেশি হয়।’

বিশ্ব ক্যানসার দিবস, বাংলাদেশে ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা ও চিকিৎসাপদ্ধতি এবং রোগ নির্ণয়ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন অধ্যাপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তাফা

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিষ দিয়ে তিনটি গরুকে মেরে ফেলার অভিযোগ

মাটির দেয়ালে জং ধরা টিনের চাল। সেই চালের এক পাশে পোষা তিনটি গাভি, আরেক পাশে স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে বসবাস। গাভির দুধ বিক্রি করে চলত সংসার। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন গাভি তিনটি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন দিনমজুর আজিজুল ইসলাম।

আজিজুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁর গরু তিনটিকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি প্রতিবেশী মজনু মিয়ার নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মজনু মিয়া বলেন, ‘আমি কেন গরু মারতে যাব! আমাকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা তথ্য রটানো হচ্ছে।’

আজিজুল ইসলামের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামে। গতকাল শনিবার রাতে তাঁর ঘরে থাকা গাভি তিনটি মারা যায়। প্রাণিসম্পদ বিভাগ মারা যাওয়া গরু তিনটির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে ময়নাতদন্ত করছে।

আজিজুলের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বসতভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। দরিদ্র হওয়ায় আজিজুল ইসলামের শ্বশুর মহির উদ্দিন ১০ বছর আগে একটি ফ্রিজিয়ান জাতের বকনা বাছুর দেন। সেই বাছুর লালন–পালন করার পর পূর্ণবয়স্ক হয়ে অনেকগুলো বাছুর জন্ম দেয়। এর মধ্যে তিনটি বকনা বাছুর পালন করে গাভিতে পরিণত করেন আজিজুল। সেই গাভির দুধ বিক্রি করে পাঁচ সদস্যের সংসার চলত। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বাড়ির অদূরেই বাঁশঝাড়ে গাভি তিনটি বেঁধে রাখার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়। এরপর গতকাল শনিবার রাতে তিনটি গাভি মারা যায়। তিনটি গাভির মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা।

রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, একসঙ্গে তিনটি গরু মারা যাওয়া আজিজুল ইসলামের বাড়িতে স্থানীয় লোকজনের ভিড়। উঠানের সামনে ময়নাতদন্ত করছে প্রাণিসম্পদের দল।

বাড়ির বারান্দায় বসে কাঁদছিলেন আজিজুলের স্ত্রী স্বপনা বেগম। এ সময় আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘হামার গ্রামের মজনুর সাথে মোর ঝগড়া চলছে। মজনু ২০ দিন আগোত হুমকি দিছিল, মোক নিঃস্ব করি দিবে, মোর সংসার ফকির করতে যা করা লাগে করবে। মজনু ওর কথা পালন করছে, মোক ফকির বানাইল। এ্যালা মুই নিঃস্ব। ওয় মোর গরু বিষ দিয়ে মারি ফেলাইছে। গরুগুলার কী দোষ? ওয় মোক মারত। মুই ওর বিচারের জন্যে থানায় অভিযোগ দিছি। মুই সঠিক বিচার চাই।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম ইফতেখায়ের বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর টিম নিয়ে আজিজুল ইসলামের বাড়িতে যাই। গাভিগুলোর প্রকৃত মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, তিনটি গরু মারা যাওয়ার ঘটনায় মালিক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ