নারীদের ওপর হামলা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের সম্পূর্ণ বিপরীত: প্রধান উপদেষ্টা
Published: 8th, March 2025 GMT
নারীদের ওপর সম্প্রতি যে জঘন্য হামলার খবর আসছে, তা গভীর উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ এর যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, তার সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা এ নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা আমাদের সব শক্তি প্রয়োগ করে এ অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ শনিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৫ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশের মেয়েরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। শত বাধা পেরিয়ে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, কয়েক দিন আগে তারুণ্যের শক্তিকে উজ্জীবিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশজুড়ে আয়োজিত ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ এ রেকর্ডসংখ্যক নারী ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়েছেন। এ উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৭ লাখ ৪০ হাজার মেয়ে প্রায় ৩ হাজার খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। সর্বস্তরের মানুষ দর্শকসারিতে বসে তাঁদের উৎসাহ জুগিয়েছেন। হাজার হাজার দর্শকের এমন উপস্থিতিই প্রমাণ করে, বাংলাদেশের সমাজে নারীর অধিকার ও অংশগ্রহণ প্রতিষ্ঠায় পুরুষদেরও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন রয়েছে।
নারীবিরোধী যে শক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে, তা দেশের সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে অবশ্যই মোকাবিলা করা হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে এখনো এমন বহু মানুষ আছেন, যাঁরা নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর বদলে তাঁদের খাটো করে দেখেন, অবজ্ঞার চোখে দেখেন। অথচ নারীর প্রতি সহিংসতা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে, বৈষম্যহীন, সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে নারীর পাশে দাঁড়ানোর, তাঁদের সমর্থন জানানোর কোনো বিকল্প নেই।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারীকে খাটো করে দেখার এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে, তা না হলে আমরা জাতি হিসেবে এগোতে পারব না।’
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে অদম্য নারী পুরস্কার তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
পুরস্কার পাওয়া নারীরা হলেন, অর্থনীতিতে শরিফা সুলতানা, শিক্ষা ও চাকরিতে হালিমা বেগম, সফল জননী মেরিনা বেসরা, জীবন সংগ্রামে জয়ী লিপি বেগম, সমাজ উন্নয়নে মো.
মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন আম দ র ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের পর শুরু হোক আদর্শ ডায়েট
পবিত্র রমজান মাসে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে বড় পরিবর্তন ঘটে। শরীর ক্রমেই এ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। এরপর আসে ঈদ। ঈদের দুই–তিন দিন খাবারের বেলায় বেশি বিধিনিষেধ মানা হয় না। এত কিছুর পর এবার স্বাভাবিক লাইফস্টাইলে ফিরে আসার সময় হয়েছে। শরীরকে আবার রোজকার আদর্শ খাদ্যাভ্যাসে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। রোজা শেষে নিয়মিত খাবারের ধরনে ফেরার সময় হজমে অস্বস্তি ও বিপাকীয় ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। এমনকি শরীরের ওজনও বাড়তে পারে।
লক্ষ রাখুন
পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার দিয়ে শুরু করুন। গরম পড়েছে, তাই ভারী খাবার কমিয়ে দিন। বাড়তি খাওয়া এড়ানোর চেষ্টা করুন।
ভারী ব্যায়াম শুরু করার আগে হাঁটার মতো হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন।
ফল, শাকসবজি ও শস্যের মতো খাবারগুলো অগ্রাধিকার দিন। শর্করা, আমিষ, ভালো চর্বি ও ভিটামিন–মিনারেলসমৃদ্ধ সুষম খাবারে
অভ্যস্ত হোন।
খাদ্যতালিকায় রাখুন
ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট পেতে ফলমূল ও শাকসবজি।
লাল আটার রুটি, ওটস বা লাল চালের ভাতের মতো শস্যজাতীয় খাবার।
মুরগি, গরুর মাংস, মাছ বা ডিমের মতো উৎস থেকে খাবারে প্রোটিন যোগ করুন। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার রাখুন।
হজমে সহায়তা করার জন্য বেশ খানিকটা ফাইবারজাতীয় (আঁশ) খাবার রাখবেন।
কিছু পরামর্শ
উৎসব পেরিয়ে গেলে খাবারের মধ্যে সালাদ, শাকসবজি ও স্যুপ রাখুন, যা হজমে সাহায্য করবে এবং শরীরকে বেশি চাপ দেবে না। প্রচুর তাজা ফলমূল খান।
প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা জরুরি। পানি শরীরের টক্সিন বের করতে সহায়ক। পাশাপাশি বাড়িতে তৈরি ফলের রস, দইয়ের লাচ্ছি, ডাবের পানি পান করতে পারেন এ গরমে।
ঈদের পর কাজের চাপে শরীর একটু ক্লান্ত ও ভারী অনুভূত হতে পারে। এর মানে এ নয় যে শারীরিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। ঈদের পর হালকা ব্যায়াম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে শরীরের মেটাবলিজম ঠিক থাকে, খাবার ভালোভাবে হজম হয় ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ঈদে কেক, পায়েস, সেমাই, জিলাপি ও অন্যান্য মিষ্টান্ন খাবার বেশি খাওয়া হয়। অতিরিক্ত মিষ্টি গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খেলে শরীরে ও যকৃতে চর্বি জমতে পারে, রক্তে শর্করা বাড়তে পারে। তাই ঈদের পর মিষ্টি খাবারের পরিমাণ কমিয়ে প্রাকৃতিক বা অর্গানিক উৎস থেকে শর্করা গ্রহণ করুন, যেমন ফলমূল বা জটিল শর্করা।
উৎসবে ভারী খাবার থেকে ফিরে আসার জন্য প্রাকৃতিক ও সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ দুধ, দই, বাদাম, ওটস, চিয়া সিডস ইত্যাদি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
উৎসব ও রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্য পরিচিত সমস্যা। এটি থেকে বাঁচতে আঁশযুক্ত খাবার খান। প্রচুর পানি পান করুন।
মনে রাখবেন, রোজায় খাবারের সূচি পাল্টে যায়। রোজার পর আবার তা পরিবর্তন হয়। তাই সকালে স্বাস্থ্যকর নাশতা জরুরি। দুপুরে মাছ, ডাল, সবজি রাখুন। রাতে হালকা খাবার। তাহলে ধীরে ধীরে শরীর স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসে ফিরতে পারবে।
লাজিনা ইসলাম চৌধুরী: পুষ্টিবিদ পিপলস হাসপাতাল, খিলগাঁও, ঢাকা