মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুটির মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা শিশুটির চিকিৎসা ও তার সঙ্গে হওয়া অপরাধের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলামের (নয়ন) মুঠোফোনে শিশুটির মায়ের সঙ্গে কথা বলেন তারেক রহমান। ফোনালাপে তারেক রহমান ওই নারীর কাছে তাঁর শিশুসন্তানের শারীরিক অবস্থা জানতে চান।

আরও পড়ুনবোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে শিশু ‘ধর্ষণের’ শিকার, ২৪ ঘণ্টা পরও জ্ঞান ফেরেনি ০৭ মার্চ ২০২৫

শিশুটির মা বলেন, তাঁর মেয়ের শরীর ভালো না। রক্ত দেওয়া হচ্ছে। এরপর তারেক রহমানকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের ওখানে যেসব নেতা-কর্মী আছেন, তাঁদের আমি বলেছি। বিশেষ করে নয়ন আছে, এ ছাড়া মাগুরায় আমাদের যেসব নেতা-কর্মী আছেন, তাঁদের বলেছি, তাঁরা (শিশুটির) পাশে থাকবেন, যাতে সে ন্যায়বিচার পায়। শিশুটির সাথে যারা অন্যায় করেছে, তারা যাতে শাস্তি পায়। এর জন্য আমাদের অবস্থান থেকে আমরা চেষ্টা করব, যতটুকু সম্ভব আমরা চেষ্টা করব। যাতে দেশের আইন অনুযায়ী আপনারা ন্যায়বিচার পান।’

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটি এখন লাইফ সাপোর্টে ১৪ ঘণ্টা আগে

তারেক রহমান শিশুটির মাকে আরও বলেন, ‘আমি নয়নকে বলেছি, শিশুটির চিকিৎসার জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সেগুলো যাতে নেওয়া হয়। চিন্তা করবেন না, আমরা আছি, দেশের মানুষ আপনাদের পাশে আছে।’

এ সময় শিশুটির মা তারেক রহমানকে বলেন, ‘আপনি যদি দেখতেন, আমার ছোট মনিডার সাথে কী করা হইছে। আপনার কাছে অনুরোধ, আপনি দোয়া করবেন, যাতে আমি আমার মনিডার ফেরত পাই। আর যারা এই কাজ করেছে, তাদের যেন শাস্তি হয়।’

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক, শরীরে পাশবিক নির্যাতনের ক্ষত: চিকিৎসক৩ ঘণ্টা আগে

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলামের বাড়ি মাগুরায়। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুটি বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসার পর থেকেই সার্বক্ষণিকভাবে আমরা পরিবারটির পাশে আছি। চিকিৎসার যাবতীয় খোঁজখবর রাখছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পরিবারটির যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা সবাই শিশুটির পাশে আছি।’

পুলিশ ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, শিশুটির বাড়ি জেলার শ্রীপুর উপজেলায়। কয়েক দিন আগে তাঁর বড় বোনের (শ্বশুর) বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুরুতর আহত শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে আনা হয়। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ত র ক রহম ন পর ব র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ডিলারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ব্যবসা গুটিয়েছেন ৫১ বিক্রেতা

সাদুল্লাপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ফলন আসার আগ পর্যন্ত জমিতে তিনবার ইউরিয়া সার দিতে হবে। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্বে সার পেতে বেগ পেতে হচ্ছে এ কৃষককে। 

জাহিদুল ইসলাম জানান, ৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ডিলারের কাছ থেকে ইউরিয়া সার কিনতে হয়। এতে বাড়তি পরিবহন খরচ ও সময়ের অপচয় হয়। 
জাহিদুল ইসলামের মতো সার কিনতে অনেক কৃষককে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এলাকাভিত্তিক খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থার জন্য তারা ডিলারদের অসহযোগিতার কথা বলছেন। 

খুচরা ইউরিয়া সার বিক্রেতা বড় জামালপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম মিঠু ও নলডাঙ্গার দশলিয়া বাজারের বিপুল হোসেন জানান, এ ব্যবসায় প্রাপ্য সম্মানটুকু নেই। তাদের প্রতিপক্ষ মনে করেন বিসিআইসি ডিলাররা। তারা কমিশন দিতে টালবাহানা করেন। নানা ছুতোয় সার দিতে দেরি করেন। নানা ঝক্কি পোহানোর পর সার নিয়ে নির্ধারিত পয়েন্টে পৌঁছাতে পরিবহন খরচ দিতে হয়। এতে লাভ থাকে না। 

অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভাতগ্রাম ইউনিয়নের নুরুজ্জামান মণ্ডলসহ কয়েকজন ডিলার। তাদের ভাষ্য, খুচরা বিক্রেতারা বাকিতে সার নেওয়ার আশায় থাকেন। বিনা পয়সায় সার নিয়ে মজুত করে রাখেন। সুযোগমতো দাম বাড়িয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। তাদের এ সুযোগ না দেওয়ায় অনেকে ব্যবসায় টিকতে পারেননি। এসব কারণে আমরাও কৃষকের কাছে সরাসরি সার বিক্রি করতে আগ্রহী। 

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণ হয়েছে। এসব জমির জন্য চলতি মৌসুমে ইউরিয়া সার প্রয়োজন হবে ৪ হাজার ৫০০ টন। উপজেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত ১৮ জন ডিলার আছে। তারা এগারো ইউনিয়নের নির্ধারিত স্থানে সার বিক্রি করেন। বরাদ্দ সারের ৭৫ ভাগ থাকবে ডিলারের কাছে। ২৫ ভাগ পাবেন খুচরা বিক্রেতারা। কৃষকদের সুবিধার জন্য এখানে ৯৯ জন খুচরা সার বিক্রেতা (সাব ডিলার) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারা কৃষি বিভাগের অনুমতি নিয়ে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ জামানত রেখে ডিলারদের কাছ থেকে কমিশনে ইউরিয়া নেন। সেই সার নির্ধারিত পয়েন্টে নিয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। ডিলারদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা ছেড়ে জামানত ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে উপজেলাজুড়ে মাত্র ৪৮ জন খুচরা বিক্রেতা আছেন। তারাও ব্যবসা ছেড়ে জামানতের টাকা ফেরত নিতে চাচ্ছেন। এসব কারণে কৃষকের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। 

কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, কৃষকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে সার বিক্রির বিধান রাখা হয়েছে। এখানে ডিলারের সঙ্গে খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্ব প্রকট। তাদের ঝামেলায় কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সারের জন্য দূরে যেতে হচ্ছে কৃষকদের।

জামালপুর ইউনিয়নের বড় জামালপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ইউনিয়নটি বড় এলাকাজুড়ে। অথচ এখানে সার বিক্রির জন্য ডিলার মাত্র একজন। তিনি দোকান খুলে বসেন নির্ধারিত একটি বাজারে। দূরের গ্রামের অনেক কৃষক ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সার নিতে আসেন। এখানে সার বিক্রির জন্য খুচরা বিক্রেতা বাড়ানো প্রয়োজন।

কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া জানান, সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ইউরিয়া সারের সরবরাহ আছে। ডিলার আর খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে সমন্বয় থাকলে কৃষক পর্যায়ে সহজে সার পৌঁছানো যেত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ