সিরিয়ায় অভিযানে আলাউইত সম্প্রদায়ের ১৬২ জন নিহত, অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান শারার
Published: 8th, March 2025 GMT
সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের নিজ সম্প্রদায় আলাউইতের বিদ্রোহীদের অস্ত্র জমা ও আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির নতুন শাসকদের ওপর বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটার পর এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, গতকাল শুক্রবার সিরীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে আলাউইত সম্প্রদায়ের ১৬২ জন নিহত হয়েছেন। এর আগের দিন আলাউইত সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত এলাকাগুলোতে আসাদের প্রতি অনুগত বন্দুকধারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে শারা বলেন, ‘আপনারা সব সিরীয় নাগরিককে আক্রমণ এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। প্রতিশোধ নিতে গেলে আপনারা তা সহ্য করতে পারেননি। আপনাদের অস্ত্রগুলো জমা দিন এবং দেরি হওয়ার আগেই আত্মসমর্পণ করুন।’
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে শারার বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে প্রচার করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সিরিয়ার পশ্চিম উপকূলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পর এ পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
গত ডিসেম্বরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের জোট বাশার আল–আসাদ সরকারকে উৎখাত করে। এ জোটকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শারা। তাঁর নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষের সামনে এখন যে জটিল কাজগুলো আছে, তার একটি দেশে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা।
আরও পড়ুনসিরিয়ায় আসাদের অনুসারীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ, ৭০ জনের বেশি নিহত০৭ মার্চ ২০২৫শুক্রবারের ভাষণে শারা ‘একচেটিয়াভাবে রাষ্ট্রের হাতে অস্ত্র রাখার’ লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আর কোনো অস্ত্র থাকবে না।’
সিরিয়ান অবজারভেটরি জানিয়েছে, শুক্রবার সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে পাঁচটি পৃথক ঘটনায় ১৬২ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ও অধিকার কর্মীদের প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, একটি বাড়ির বাইরে বেসামরিক পোশাক পরা বেশ কয়েকটি মৃতদেহকে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কাছাকাছি রক্তের দাগ এবং নারীদের কাঁদতে দেখা গেছে।
অন্য ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, সামরিক পোশাক পরা মানুষেরা কাছ থেকে মানুষকে গুলি করছেন।
এএফপি স্বতন্ত্রভাবে ছবিগুলোর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
গত বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের পর কর্তৃপক্ষ ব্যাপক নিরাপত্তা অভিযান শুরু করেছে।
সিরিয়ার উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়া ও তারতুসে আজ শনিবার পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। এ এলাকাগুলোকে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আসাদের নিজ গোষ্ঠী আলাউইত সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়। শুক্রবার কর্তৃপক্ষ এই দুই প্রদেশের মধ্যবর্তী জাবলেহ এলাকায় নিরাপত্তা অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, লাতাকিয়া প্রদেশের বেশির ভাগ জায়গায় বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের ঘটনাটি নাশকতা।
সিরিয়ার হোমস শহরেও কারফিউ জারি করা হয়েছে।
এক কর্মকর্তার বরাতে সানা জানিয়েছে, আসাদের অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকদের লক্ষ্য করে নিরাপত্তা অভিযান চালানো হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বেসামরিক নাগরিকদের তাঁদের বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলেন আওয়ামীপন্থী ৯৩ আইনজীবী
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে হামলা, ভাংচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আওয়ামী লীগের ৯৩ আইনজীবী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছেন। রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তারা। আজকে দুপুর ২টায় এ বিষয়ে শুনানি হবে।
জামিন আবেদনকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান মানিক, গাজী শাহ আলম, মাহবুবুর রহমান, আবু সাইদ সাগর, আসাদুর রহমান রচি, সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিপি নজরুল ইসলাম শামিম ও মোরশেদ হোসেন শাহীন।
মামলার আসামি আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আমি আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মীর আইনজীবী হেসেবে মামলা পরিচালনা করেছি। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে এ মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এটা আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ৪ আগস্ট আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা, চেম্বার ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আওয়ামী লীগপন্থি ১৪৪ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু। এ ঘটনায় হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন নিয়েছিলেন ১১৫ জন। সোমবার অন্তর্বতীকালীন জামিনের মেয়াদ শেষ হবে।
এ মামলার আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, ঢাকা মহানগর আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আব্দুল্লাহ আবু, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বাদল, মো. সাইদুর রহমান মানিক, মো. মিজানুর রহমান মামুন, আব্দুর রহমান হাওলাদার, গাজী মো. শাহ আলম, আব্দুল বাতেন, মাহবুবুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জুবায়ের, মোহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাৎ শাওন, মো. ফিরোজুর রহমান মন্টু, মো. আসাদুজ্জামান খান রচি ও সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে আসামিরা ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় ভুক্তভোগী আইনজীবী মামলা শুনানি শেষ করে ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে আসেন। তখন আসামি আনোয়ার শাহাদাত শাওন হেলমেট পরে পিস্তল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র তাক করেন।