জৌলুস ফিরলেও অরক্ষিত শিলাইদহের কাচারি বাড়ি
Published: 8th, March 2025 GMT
কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়ির পাশাপাশি রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য আরেকটি মর্যাদাপূর্ণ স্থাপনা খাজনা আদায়ের কাচারি বাড়ি। ঐতিহ্যগতভাবে এই কাচারি বাড়িটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করলেও অযত্ন-অবহেলায় যুগের পর যুগ তা ছিল ভগ্নদশায়।
সম্প্রতি সরকারি অর্থায়নে জরাজীর্ণ কাচারি বাড়িটি সংস্কারের পর জৌলুস ফিরে পেলেও তা এখনো অরক্ষিত। এ কারণে ভ্রমণ পিপাসু ও রবীন্দ্র অনুরাগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এলাকাবাসী জানান, জমিদারি পরিচালনা করতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষরা পদ্মা-গড়াই বেষ্টিত নিভৃত পল্লী শিলাইদহে এই কাচারি বাড়িটি নির্মাণ করেন। এখানে প্রজাদের কাছ থকে খাজনা আদায় করা হত। ছয় কক্ষবিশিষ্ট দ্বিতল ভবনের এই কাচারি বাড়ির নির্মাণ শৈলী মনোমুগ্ধকর ও দৃষ্টিনন্দন।
আরো পড়ুন:
‘গানটা না থাকলে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য কতটা উঁচু হতো আমার ধারণা নেই’
রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে ‘অশালীন অঙ্গভঙ্গি’, ক্ষুব্ধ শ্রীজাত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৯ সাল থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর এই বাড়িতে বসেই খাজনা আদায় করেতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি এস্টেট পরিচালনার দায়িত্ব ছেড়ে শিলাইদহ ত্যাগের পর থেকে কাচারি বাড়িটি অযত্ন-অবহেলার শিকার হয়। কালক্রমে বাড়িটি ভগ্নদশায় পরিণত হয়।
সম্প্রতি সরকারি অর্থায়নে কাচারি বাড়ির অবকাঠামোগত সংস্কারসহ লালচে রং ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এতে জৌলুস ফিরে পেলেও কাচারি বাড়িটি এখনো অরক্ষিত। সুরক্ষা প্রাচীর নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ ও জনবল পদায়ন না হওয়ায় কাচারি বাড়িটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে না। পুরো কার্যক্রম বাস্তবায়ন না হওয়ায় কাচারি বাড়িতে এখন বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা ও ভুতূড়ে পরিবেশ। কাচারি বাড়ির কয়েক বিঘা খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ওই সম্পত্তি এখনো কাচারি বাড়ির অনুকূলে হস্তান্তর করেনি।
রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির প্রায় কোয়াটার কিলোমিটার দূরত্বে কাচারি বাড়ির অবস্থান। দক্ষিণমুখী দ্বিতল এই ভবনটির পূর্ব-পশ্চিমে দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট ও প্রস্থ ২৯ ফুট। ভবনটির নিচতলা ও দোতলার সমানে ৮ ফুট ৬ ইঞ্চি চওড়া দুটি বারান্দা রয়েছে। শাল কাঠের চওড়া বর্গার ওপর ঠালি ও চুন-সুড়কির সমন্বয়ে নির্মিত ভবনের ছাদ। দোতলায় উঠতে ও নামতে ভবনের শেষ প্রান্তের পশ্চিমকোণে রয়েছে ঘোরানো-প্যাঁচানো লোহার সিঁড়ি। ভবনের সামনে রয়েছে ১১ জোড়া থাম বা পিলার।
প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে পুরো ভবনের ছাদ নতুনভাবে নির্মাণ ও সংস্কারসহ লালচে রংয়ের আঁচড়ে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কাচারি বাড়ি। সংস্কারে ২২/২৩ অর্থ বছরে ৩২ লাখ ও ২৩/২৪ অর্থ বছরে ৬১ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৯২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান কুঠিবাড়ি কাস্টোডিয়ান মো.
স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্র নাথ বলেন, “প্রাচীর নির্মাণের অভাবে কাচারি বাড়ির আঙ্গিনা এখন উন্মুক্ত। ফলে প্রতিদিন এখানে বসে মাদকাসক্ত ও বখাটেদের আড্ডা। প্রাচীর নির্মাণ ও জনবল পদায়নসহ কাচারি বাড়িটি রবীন্দ্র ভক্ত ও ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য উন্মুক্তের দাবি জানাচ্ছি।”
ইনতাজ আলী নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “ এই বাড়িটি যুগের পর যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। নতুন করে সংস্কার করায় বাড়িটি দেখার জন্য এখন দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসছেন। আমরা এলাকাবাসী অনেক আনন্দিত।”
ঐতিহাসিক স্থাপনায় কাছারি বাড়িটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক সরওয়ার মুর্শেদ। তিনি বলেন, “কাচারি বাড়িটি সংস্কার শেষে রং করার কারণে দেখতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। সত্যিই আনন্দ লাগছে।”
কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান মো. আল-আমিন বলেন, “প্রথম ধাপের বরাদ্দ অর্থে শুধুমাত্র কাচারি বাড়িটি পুরোপুরি সংস্কার সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাচীর নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ এখনো পাওয়া যায়নি। অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রাচীর নির্মাণসহ কাচারি বাড়িটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।”
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, “কাচারি বাড়ি সংলগ্ন জমি বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুতই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ রমণ রব ন দ র শ ল ইদহ র জন য বর দ দ ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
তৃতীয় পক্ষের অ্যাপে মোবাইল প্যাকেজ ওভার চার্জিং
বিকাশের মতো তৃতীয় পক্ষের প্ল্যাটফর্মে উচ্চ মূল্যে মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ বিক্রির অভিযোগ এসেছে। ‘মোবাইল প্যাকেজ ওভার চার্জিং: এ কল ফর রেগুলেটরি অডিট অ্যান্ড কনজিউমার প্রোটেকশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে মোবাইল অপারেটর অ্যাপে তালিকাভুক্ত দাম এবং বাহ্যিক চ্যানেলের মাধ্যমে চার্জ করা মূল্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব এ তথ্য ফেসবুকে জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্যাকেজগুলো অনুমোদিত মূল্যের চেয়ে ২০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি হারে বিক্রি হয়েছিল। মোবাইল অপারেটরের নিজস্ব অ্যাপে ৩০ দিনের ৪৫ জিবি ডেটা প্যাকের দাম ছিল ৪৯৭ টাকা, কিন্তু একই প্যাকটি বিকাশের মাধ্যমে ৫৯৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি।
১৯৮ টাকায় তালিকাভুক্ত একটি ৭ দিনের ২৫ জিবি প্যাক বিকাশের মাধ্যমে একই দামে ২০ জিবি প্যাক হিসাবে বিক্রি হয়েছিল, যা ৮০ শতাংশ ওভারচার্জ।
২২৭ টাকা মূল্যের একটি সাত দিনের ৪০ জিবি প্যাক বিকাশে একই মূল্যের জন্য ৩৫ জিবি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিত্তি মূল্যের তুলনায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি।
৭ দিনের ১০ জিবি এবং ৩-দিনের ৫ জিবি বিকল্পগুলোসহ অন্যান্য প্যাকেজগুলোও ৫৫ শতাংশ থেকে ৫৮ শতাংশ অতিরিক্ত চার্জে বিক্রি হয়েছে।
ফয়েজ আহমেদ লেখেন, বিটিআরসিতে সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের অধীনে একটি সুষ্পষ্ট প্রাইসিং রেগুলেশন রয়েছে। তার তোয়াক্কা না করে ২০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত প্রাক্কলন অতিরিক্ত মূল্য আদায় গ্রাহকস্বার্থ ও রাষ্ট্রের সার্বিক স্বার্থবিরোধী বলেই বিবেচিত হওয়া উচিত। বিষয়টি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের রেগুলেটরি শাস্তির মুখোমুখি করা দরকার বলে।