নভেম্বর মাস। আবদুল লতিফসহ মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র কাঁধে এগিয়ে যেতে থাকেন তাঁদের লক্ষ্যস্থল অভিমুখে। নিঃশব্দে সমবেত হন তাঁরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানের অদূরে। লক্ষ্য—পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে সমূলে তাদের উচ্ছেদ করা।

পাকিস্তানি ঘাঁটির তিন দিকে ছিল নদী। সে কারণে আবদুল লতিফ ও তাঁর সহযোদ্ধারা ছিলেন সুবিধাজনক অবস্থায়। মূল আক্রমণকারী দলের মুক্তিযোদ্ধাদের এক পর্যায়ে নদী অতিক্রম করতে হয়। আবদুল লতিফ ছিলেন মূল আক্রমণে।

নদীর ঘাটপাড়ে ছিল পাকিস্তানিদের কয়েকটি বাংকার। আবদুল লতিফ ও তাঁর সহযোদ্ধারা নদী অতিক্রম করে ওই সব বাংকার লক্ষ্য করে অসংখ্য গ্রেনেড ছোড়েন। পাকিস্তানি সেনারা হতভম্ব হয়ে পড়ে। কারণ, ঘাট এলাকা হয়ে পশ্চিম দিক থেকে এই আক্রমণ ছিল তাদের জন্য কল্পনাতীত। এ জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিল না।

তীব্র আক্রমণে ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি সেনারা নদীর তীরের অবস্থান ছেড়ে পেছনে গিয়ে ত্বরিত সমবেত হয়। সেখানে ছিল পাকা গুদামঘর। তারা দ্রুত গুদামের ছাদে উঠে মেশিনগান ও এলএমজি স্থাপন করে। নল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অসংখ্য গুলিবর্ষণ করে। তখন ভোর আনুমানিক পাঁচটা।

আবদুল লতিফ ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের প্রচণ্ড গোলাগুলি উপেক্ষা করে নদীর পাড়ে উঠে পড়েন। সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে দুঃসাহসী আবদুল লতিফ গুদামঘরের কাছে যান। ছাদ লক্ষ্য করে কয়েকটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। হতাহত হয় কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। এ সময় পাকিস্তানিদের গুলিতে শহীদ হন তিনি। তুমুল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। মুক্ত হয় বিরাট এলাকা। তবে এ বিজয় আবদুল লতিফ দেখে যেতে পারেননি। পরে সহযোদ্ধারা তাঁকে সেখানেই সমাহিত করেন। এ ঘটনা ঘটে সিলেট জেলার গোয়াইন ঘাটে ১৯৭১ সালের ৩ নভেম্বর।

এর আগে ২৪ অক্টোবর আবদুল লতিফ ও তাঁর সহযোদ্ধারা সেখানে আক্রমণ করেছিলেন; কিন্তু সেদিন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার ও পাকিস্তানিদের তাড়া খেয়ে তাঁদের পিছে হটে যেতে হয়েছিল। পাকিস্তানিরা তাঁর অনেক আহত সহযোদ্ধাকে যুদ্ধক্ষেত্রের আশপাশ থেকে খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করে।

আবদুল লতিফ চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল সৈয়দপুরে। তখন তাঁর পদবি ছিল ল্যান্সনায়েক। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে তিনি ভারতে যান। পরে জেড ফোর্সের অধীন বাহাদুরাবাদ ঘাট, রাধানগর, ছোটখেলসহ কয়েক স্থানে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

# আবদুল লতিফ মণ্ডল, বীর উত্তম

গ্রাম: চরেরহাট, ইউনিয়ন: পবনাপুর, উপজেলা: পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা। বাবা: তোরাপ আলী, মা: বালি বেগম। অবিবাহিত। খেতাবের সনদ নম্বর ৩৮।  গেজেটে নাম আবদুল লতিফ। শহীদ ৩ নভেম্বর ১৯৭১।


সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা। দ্বিতীয় খণ্ড। প্রথমা প্রকাশন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র সহয দ ধ র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় গণহত্যা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে থেমে নেই প্রতিবাদ

ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান বর্বরতার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সোমবার (৭ এপ্রিল) দিনব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে তাদের এ প্রতিবাদী কর্মসূচি থেমে নেই।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকাল থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে নানা প্রতিবাদী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত-

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) 

ইসরাইলের লাগাতার বর্বর আগ্রাসন, গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে এবং নির্যাতিত গাজাবাসীর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে মুখে কালো পতাকা বেধে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে রাবি শাখা ছাত্রদল। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তারা এ কর্মসূচি পালন করে।

সর্দার জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী, যুগ্ম আহ্বায়ক এস.এম মিঠু, কর্মী মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাবি শিক্ষক সমিতি। 

এতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ এবং উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। 

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুর রব, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সোহেল রানা, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আইরিন আক্তার প্রমুখ।

অন্যদিকে, একই দাবিতে বেলা ১১টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন জাবি শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। 

শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিকের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন, শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, যুগ্ম-আহ্বায়ক রায়হান হোসেন মিল্টন,সদস্য তানজিলা বৈশাখী, 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।

প্রধান ফটকের সামনে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শেখ বাজার প্রদক্ষিণ করে তারা। পরে শেখপাড়া বাজার হয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এসে ফিলিস্তিনিদের দোয়া ও মোনাজাত করেন তারা।

এ কর্মসূচিতে ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাসুদ রুমী মিথুনের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন, ইবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, যুগ্ম-সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, রিপন হোসেন, বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ, আহসান হাবীব, আনারুল ইসলাম, রোকন উদ্দিন, সদস্য সাব্বির হোসেন, রাফিজ আহমেদ, নুর উদ্দিন, উল্লাস, রোকন, সাক্ষর, সাবিক, রিয়াজ, আলিনুর প্রমুখ।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)

দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে গাজায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রবিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শাবিপ্রবি শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানান।

শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন, সভাপতি রাহাত জামান, সাধারণ সম্পাদক নাঈম সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান আশিক, সহ সাধারণ সম্পাদক আবু আফসার মোজাম্মেল, ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক রিমকাতুল রাশেদ অথৈ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান চাঁদ প্রমুখ।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ‘স্টপ জেনোসাইড, সেভ গাজা’ প্রতিপাদ্যে মানববন্ধন করেছেন নোবিপ্রবি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় তারা ‘ফ্রম দ্যা রিভার টু দ্যা সি, ফিলিস্তিন উইল বি ফ্রি’, ‘আমেরিকার আগ্রাসন, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ইসরাইল নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্ত পাক’ ইত্যা স্লোগান দিতে থাকেন।

মানববন্ধনে অন্যদের মাঝে বক্তব্য দেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল, উপ-উপাচার্য ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.  মোহাম্মদ হানিফ, আইন বিভাগের চেয়ারম্যান মো: জামশেদুল ইসলাম প্রমুখ।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)

সোমবার (৭ এপ্রিল) রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল প্রাঙ্গণ ইসরাইল কর্তৃক আগ্রাসন ও বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে সিকৃবি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের মুল সড়ক প্রদক্ষিণ করে টিএসসির সামনে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া করেন।

মিছিলে তারা ‘নারায়ে তাকবীর’, ’আল্লাহু আকবার’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি’, ’প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘ফ্রি ফ্রি গাজা’ প্রভৃতি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটির (আইএসইউ)

ইসরায়েলি আগ্রাসন, নিপীড়ন ও গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির মহাখালী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন আইএসইউ এর শিক্ষার্থীরা। 

ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে আইএসইউ শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচিতে যোগদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল আউয়াল খান।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম, আইকিউএসি পরিচালক অধ্যাপক মো. একরামুল হক, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, রেজিস্ট্রার মো. ফাইজুল্লাহ কৌশিক প্রমুখ।

মহাখালী ক্যাম্পাসে আয়োজিত সমাবেশ শেষে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গুলশান ১ প্রদক্ষিণ করে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। মিছিলে শিক্ষার্থীদের হাতে ইসরাইলের আগ্রাসনবিরোধী নানা স্লোগান, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার দেখা যায়।

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ