মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা একজন অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মতো
Published: 8th, March 2025 GMT
‘মুক্তিযুদ্ধে নারী’ শিরোনামের কবিতায় দেলওয়ার হোসেন শিকদার লিখেছেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধে নারী কীর্তি কভূ তুল্য নহে; বৈরিতে সম্ভ্রম নাশে গোটা যুদ্ধ জুড়ে/নরসম নারীগণে যুদ্ধক্ষেত্রে রহে’’।
মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা একজন অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মতো। একজন মা সন্তানকে দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে থাকেন- মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস নারীরা পুরো দেশটাকে গর্ভে ধারণ করে ছিলেন। তারা পাশবিকতার শিকার হয়েছেন, লাঞ্ছিত হয়েছেন, আবার হাসি মুখে স্বামী, সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, খাবার, আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন, খবর আদান প্রদান করেছেন, সেবা দিয়েছেন,মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প পাহারা দিয়েছেন,কন্ঠ দিয়ে, শব্দ দিয়ে, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। কোথায় ছিল না নারীর ভূমিকা?
সন্তান প্রসবের পর মা যেমন সন্তানের মুখ দেখে প্রসব বেদনা ভুলে যান- ঠিক তেমনি স্বাধীনতার পর নারীরা সব কষ্ট ভুলে হাসি মুখে দেশটাকে বরণ করে নিয়েছেন। যুদ্ধ শেষে কোন প্রাপ্য চাননি। রাষ্ট্র তাদের মর্যাদা দিতে পারেনি। মা মেয়ের ভূমিকা দেখা হয়, ‘২/৩/৫ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে, নয়তো ইজ্জতের বিনিময়ে দেশ।’’ হিসেবে।
‘কবির কবিতায় ও’ বৈরিতে সম্ভ্রম নাশে গোটা যুদ্ধ জুড়ে’। আমি এ বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করি। ইজ্জত বা সম্ভ্রম নারীর যায়নি, ইজ্জত গেছে ধর্ষক পাকি হানাদার বাহিনীর, ধর্ষক ধর্ষিত হয়েছে। নারীরা দৈহিক অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। পুরুষ ইজ্জত না হারালে নারী কেন ইজ্জত হারাবে?
মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ বা গণযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে সেই গণ মানুষের কথা উঠে আসেনি। আমি সেই একজন সাধারণ নারীর ভূমিকা দিয়ে শুরু করছি। ঢাকার অদূরে সাভারে ছিল মুক্তিযোদ্ধা ‘সজীববাহিনীর’ ক্যাম্প। একদিন পাক আর্মি সেই ক্যাম্প ঘিরে ফেলে। তাদের বাঁচতে হলে ক্যাম্পের কাছাকাছি নদী পার হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু পাক বাহিনীর ভয়ে, আতঙ্কে মাঝিরা কেউ নৌকা ছাড়তে রাজি হয়নি। এক মাঝির জীবনসঙ্গী দা হাতে রুদ্র মূর্তি ধারণ করে নিজ ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। মাঝিকে উদ্দেশ্য করে বলেন- ‘বৈঠা ধরুন, নৌকা ছাড়ুন, নতুবা এই দা এর আঘাতে টুকরা টুকরা করে ফেলব।’ মাঝি বাধ্য হয়ে নৌকা ছাড়লেন। সেদিন ওই নারীর ভূমিকায় প্রায় ২০ জন মুক্তিযোদ্ধার জীবন রক্ষা পেয়েছিল। এই নারীর ভূমিকা অস্ত্র হাতে যোদ্ধার ভূমিকার চাইতে কোন অংশে কম নয়। তার এই ভূমিকা ছোট করে দেখার অবকাশ আছে কি?
৫২ ভাষা আন্দোলন থেকে প্রতিটি আন্দোলনে, নারীর রাজপথে প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। ৭১ এর উত্তাল মার্চে ১ লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত রাজপথে, মাঠে- ময়দানে, মিটিং, মিছিলসহ প্রতিটি কর্মসূচীতে নারীরা উপস্থিত ছিলেন। ৬৯ গণ আন্দোলন শহীদ আসাদের মৃত্যুর পর তার মা শিবপুর থেকে ছাত্রনেতাদের বানী পাঠিয়েছিলেন- ‘‘আমার আসাদের মৃত্যু হয়নি। আমার আসাদ বলত- ‘মা আগামী দশ বছরের মধ্যে এই মাতৃভূমি নতুন জীবন পাবে।’আসাদের স্বপ্ন তোমরা স্বার্থক কর।’’-(দৈনিক আজাদ ২৬ জানুয়ারি)
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ রুমির মা জাহানারা ইমাম, শহীদ আজাদের মা সাফিয়া বেগমের মত মায়েরা অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। কর্নেল তাহেরের মা আশরাফুন্নেসা নিজের পাঁচ ছেলে এবং এক কন্যাকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। যুদ্ধে পাঠিয়ে খ্যান্ত হননি, রাতভর রান্না করে মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়াতেন। শুকনা খাবার পুটলি বেঁধে দিয়ে দিতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পালানোর পথ দেখিয়ে দিতেন। তার বড় কন্যা লন্ডনে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন। তার মেজো মেয়ে ডালিয়া অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। সীমান্তবর্তী জায়গায় ‘রেকি’ করা, ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে ও বাংকারে বিভিন্ন নির্দেশনা পৌঁছে দিতেন।
প্রত্যক্ষ যুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ
৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষনের পর নারীদের ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডামি রাইফেল নিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবনে ছাত্রলীগের মেয়েদের প্রশিক্ষণ হয় কলা ভবনের ছাদে, ছাত্র ইউনিয়নের মেয়েদের প্রশিক্ষণ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলার মাঠে।
মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে নারী যোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- খালেদা খানম, তারামন বিবি, রিজিয়া চৌধুরী, মিতিল। বরিশালের করুণা বেগম, পোড়ারানী,বিথিকা বিশ্বাস, শিশির কণা, সাহানা, গোপালগঞ্জের আশালতা বৈদ্য, পটুয়াখালীর মনোয়ারা বেগম, যশোরের সালেহা বেগম, সুনামগঞ্জের পেয়ারা চাঁদ প্রমুখ। বাঙালি নারী শুধু নয়, অনেক আদিবাসী নারী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।দেশের বাইরে থাকা নারীরা যার যার অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়েছেন।
সুরাইয়া খানম তখন বিবিসিতে কাজ করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে লন্ডনে যে কজন বাঙালি কাজ করেছেন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। তারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে জনমত গড়ে তোলেন।১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশে এর আনুষ্ঠানিক অভ্যুদয়ের পর লন্ডন ট্রাফালগার স্কয়ারে বাঙালিদের বিজয় অনুষ্ঠানে লাল সবুজের পতাকা তিনি তুলে ধরেছিলেন।বিদেশি সাংবাদিকরা আবেগ আপ্লুত হয়ে তাকে মাথার উপর তুলে ধরেছিলেন।তাঁর লেখা 'পতাকা 'শিরোনামে এক অনবদ্য কবিতা আছে।
নূরজাহান মুরশিদ ৭০ এর নির্বাচনে এম এন এ (বাংলাদেশের পার্লামেন্ট সদস্য) ছিলেন। তিনি বোম্বে, দিল্লি, মাদ্রাজ,লাক্ষ্ণৌ, সফর করে পার্লামেন্ট সদস্যদের সাথে মত বিনিময় করেন। পাকিস্তান বাহিনীর অত্যাচারের তথা তুলে ধরেন। স্বাধীন বাংলাদেশের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রতিনিধি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর পরিচালনায় ভারতের গোবর ক্যাম্পে, বিএলএফ ক্যাম্পে তিন চারশো নারীকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।নারীদের প্রশিক্ষণে সিভিল ডিফেন্স, ও নার্সিং অন্তর্ভুক্ত ছিল। নয় জন মেয়ে কে গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল আগরতলা ‘মহিলা স্কোয়াড ট্রেনিং’ নামে। প্রশিক্ষক ছিলেন মেজর উবান। ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করেন: শামসুন্নাহার ইকো, মমতাজ বেগম, সাকি, ফোরকান, আলেয়া, আমেনা সুলতানা বকুল, ঝুনু ও স্বপ্না।
মুক্তিযুদ্ধে শহরাঞ্চল থেকে ঘর ছেড়ে যাওয়া মানুষকে গ্রামাঞ্চলের মায়েরা নিজ ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন। গ্রামাঞ্চলে রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরে আশ্রয় দিয়ে, খাবারের ব্যবস্থা করেছেন,তাদের পরিধানের কাপড় চোপড় ধুয়ে গভীর রাতে মেলে শুকিয়ে দিয়েছেন। শাহজাদপুরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাঝে মাঝে গভীর রাতে বাড়িতে আসতেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে। অভূক্ত ক্ষুধার্ত, পাঁচ সাত দিন গোসল নেই যোদ্ধাদের, ঘরের নারীরা কুয়া থেকে পানি তুলে গোসলের ব্যবস্থা করে দিতেন।অস্ত্র গোলাবারুদ গরুর খড়ের পালার নিচে লুকিয়ে সারারাত পাহারা দিতেন। ভোর রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে শস্য ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে, রাস্তা চিনিয়ে তাদের গন্তব্য পৌঁছে দিতেন।
মুক্তিযুদ্ধের ন' মাস ঢাকা ছিল পাক সেনাদের দ্বারা অবরুদ্ধ, বন্দীশিবির, প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর হাতছানি। সেই অবস্থায় গেরিলা যোদ্ধাদের ঝুঁকি নিয়ে
মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত নারীরা তাদের আশ্রয়, খাবার, অর্থ সাহায্য, অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, সব রকমের সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
কাজী নুরুজ্জামান তখন তিনি খুব অসুস্থ, তার বই প্রকাশনা উৎসবে বক্তব্য রাখতে যেয়ে কেঁদে ফেলেন।বলেন' আমিতো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বলতে যেয়ে আসল কথা তো বললাম না। এ দেশে মুক্তিযুদ্ধে যাদের সবচেয়ে বেশি অবদান, মায়েদের এবং নারীদের তাঁদের কথা তো লিখে গেলাম না। এটা আমার জীবনের বড় আক্ষেপ রয়ে গেলো। আমাদের যারা শেল্টার দিয়েছে, গ্রামে বলেন আর শহরে বলেন, একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলছি—তাঁরা অনেক টাকা তুলেছেন,কাপড় সেলাই করেছেন,কাপড় যোগাড় করেছেন, শুধু তাই নয়, ঢাকা শহরে জাহানারা ইমাম, মিনি কাদের,গাড়িতে করে অস্ত্র নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে গেছেন। আমাদের গাড়ি করে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন।এর চাইতে বড় অবদান কি হতে পারে। আমাদের আরেকটা ব্যপার ছিল যাকে বলা হত "ভিত্তি বাহিনী। এর ছিল সেই ভিত্তি বাহিনী। '
মুক্তিযুদ্ধে আমি ছিলাম দশম শ্রেণির ছাত্রী। শিরীন আখতার, এইচ এসসি পরীক্ষার্থী, আমরা দুজন ঢাকার আজিমপুর কলোনীর বাসিন্দা ছিলাম।স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে আমরা অল্প বযসে সম্পৃক্ত হযে পড়ি। আমাদের ইচ্ছা ছিল মুক্তিযুদ্ধে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার।কিন্তু সে সুযোগ হয়নি। আমরা বসে থাকিনি, নিজ উদ্যেগে দল গঠন করে কলোনির পাকিস্তান মনোভাবাপন্ন লোকদের বাসায় লাল চিঠি দিয়েছি,দালালি না করার জন্য। লিফলেট বিলি করেছি বাড়ি বাড়ি। আজীমপুর কলোনির সীমানার বাইরে পোস্টারিং করেছি। ঈদ উদযাপন না করার জন্য বাড়ি বাড়ি গোপনে চিঠি বিলি করেছি। আমাদের সেই চিঠি ২ নম্বর সেক্টরের সহযোগিতায় সারা ঢাকা শহরে বিলি হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিদিন পাক আর্মি ঢাকার স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে ঢাকার খবর পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠাতেন।তাঁ দের সেই গোপন রিপোর্টে আজিমপুর কলোনির সীমানা প্রাচীরে ১৪ আগষ্ট পোস্টারিং এর তথ্য গিয়েছিল। আমাদের সহযোগিতায় ছিল ২ নং সেক্টরের সানু ভাই। এছাড়া আমরা সজীব বাহিনীর সাথে কাজ করেছি। আমাদের বাহিনীতে ছিল ফৌজিয়া খালা, নীলু,বেবী,মলি।
অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের নার্সিং সেবা দান করেন নারীরা। মুক্তাঞ্চল, সীমান্তবর্তী যেসব অস্থায়ী হাসপাতাল করা হয়েছিল, সেখানে নারীরা কাজ করতেন। জুন মাসে ক্যাপ্টেন ডাক্তার আখতার সোনামুড়া স্থানে ছোট্ট একটি হাসপাতাল খোলেন। হাসপাতালটি ছিল খালেদ মোশাররফের তত্বাবধানে, নারী চিকিৎসক ক্যাপ্টেন ডাঃ সেতারা বেগম ও অন্যান্যদের পরিশ্রমে সেই হাসপাতাল হাবলু ব্যানার্জির লিচু বাগানে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট ঐতিহাসিক বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়। ওই হাসপাতালে নার্সদের সাথে সেবা প্রদান করেছেন নারীরা। তাদের ট্রেনিং ছিল না। কিন্তু দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা রোগীদের সেবা দিতেন। এদের মধ্যে ছিলেন খুকু,লুলু,টুলু,শিমুল বিল্লাহ,ডারিয়া, পদ্মা,নীলিমা,অনুপমা,আসমা, রেশমা,মিনু বিল্লাহসহ অনেকে।
ডাঃ মাখদুমা নার্গিস রত্না শরণার্থী শিবির ও প্রশিক্ষণ শিবিরে চিকিৎসাসেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন। এ ছাড়া মেয়েদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের উপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।মুজিব নগর সরকার একটি নার্সিং পরিচালনা বোর্ড গঠন করেন। পরিচালনা বোর্ডের সদস্য ছিলেন বেগম বদরুন্নেসা চৌধুরী।
একাত্তর রূপকথা নয়, একাত্তর এক জলজ্যান্ত বাস্তবতা। একাত্তর আমাদের গৌরব ও বেদনার ইতিহাস। একাত্তর অলৌকিক সময়ে আমাদের পরিচয় মূখ্য ছিল শুধুই ‘মানুষ’ হিসাবে। স্বাধীনতা অর্জনের সোপান পেরোবার পরিক্রমায় আমাদের পূর্বপুরুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বিভাজনের সবটুকু লেশ মুছে।
মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান কতটুকু স্বীকার করেছি আমরা? ১৬ খণ্ডের একটিতে নারীর অবদানের কথা লিখে আমরা কি দাবি করতে পারি, মুক্তিযুদ্ধে নারী কতোটা গভীর ও বিস্তৃত ভূমিকা পালন করেছিল!
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক জ কর হয় ছ ল আম দ র কর ছ ন হয় ছ ন কল ন র অবদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শিশুর জন্য গ্রোথ হরমোন কেন, কখন
একটি শিশুর লম্বা হওয়ার জন্য শরীরে যে হরমোন বিশেষ ভূমিকা রাখে, সেটির নাম গ্রোথ হরমোন। গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি হলে শিশু খর্ব হতে পারে। অনেকে মনে করেন, গ্রোথ হরমোন দিয়ে সব খাটো শিশুকে লম্বা বানানো সম্ভব। ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে, কিছু অভিভাবক তাঁদের শিশুকে লম্বা করার জন্য গ্রোথ হরমোন দেওয়ার আরজি নিয়ে আসছেন, যা যুক্তিসংগত নয়।
লম্বা হওয়ার জন্য গ্রোথ হরমোন এককভাবে দায়ী নয়। একটি শিশু কতটা উচ্চতা লাভ করবে, তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। গ্রোথ হরমোন ছাড়াও শিশুর ঠিকভাবে লম্বা হওয়ার জন্য যে বিষয়গুলো দায়ী, তা হলো গর্ভাবস্থায় শিশুর স্বাস্থ্য (যা আবার মায়ের সার্বিক সুস্বাস্থ্যের ওপর নির্ভরশীল), নবজাতকের ওজন ও সুস্থতা (জন্মগত রোগ ও জন্মপরবর্তী পুষ্টির কোনো সমস্যা থাকলে উচ্চতা কমে যেতে পারে), গড় পারিবারিক উচ্চতা (জাতিগত, বংশগত বৈশিষ্ট্য), দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টি ও বিভিন্ন সময়ে আক্রান্ত দীর্গমেয়াদি রোগ-ব্যাধির যথাযথ চিকিৎসা না হওয়া। সেই সঙ্গে লম্বা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনের (থাইরয়েড ও গ্রোথ হরমোন) অভাব বা অকার্যকারিতা উল্লেখযোগ্য। একজন শিশু হরমোন–রোগবিশেষজ্ঞ শিশুর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে লম্বা হওয়ার অন্তরায় অন্যান্য কারণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গ্রোথ হরমোন থেরাপি লাগবে কি না, তা ঠিক করে থাকেন।
যেসব ক্ষেত্রে গ্রোথ হরমোন দিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তা হলো—
● শরীরে গ্রোথ হরমোনের অভাব বা ঘাটতি যদি প্রমাণিত হয়;
● প্রাডার উইলি সিনড্রোম নামক বিশেষ রোগ;
● জন্মগত স্বল্প ওজনের শিশু, যারা পরেও ঠিকভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়নি; ৪. যেসব ক্ষেত্রে খাটো হওয়ার কারণ জানা যায়নি; ৫. টারনার সিনড্রোম;
● শক্স জিন হাপ্লো–ইনসাফিশিয়েনসি;
● নুনান সিনড্রোম;
● দীর্ঘমেয়াদি কিডনি বিকলজনিত রোগ।
গ্রোথ হরমোন অনেক ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং দুষ্প্রাপ্যও বটে। তা ছাড়া শিশু একটু খাটো মানেই গ্রোথ হরমোনের অভাব, তা–ও নয়। তাই যদি মনে হয়, শিশু যথাযথ বাড়ছে না, তাহলে পুরো বিষয়টি অনুধাবন করার জন্য একজন শিশু হরমোন–রোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
অধ্যাপক ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট