ট্রাম্প ২.০ জমানার শুরু। এর সঙ্গে আবারও শুরু হয়েছে বাণিজ্যযুদ্ধ। ইতিমধ্যে চীনের পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। মেক্সিকো ও কানাডার সব পণ্যেও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই দেশগুলোও বসে নেই, তারা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে।

কিন্তু ট্রাম্পের এই ‘ট্যারিফোনমিক্স’ কি এত সহজ হবে? শুল্ক বাড়লে আমদানি করা জিনিসের দামও বাড়বে। সেই কারণে লোকে বিদেশি পণ্য কেনা তাৎপর্যপূর্ণ হারে কমালে শুল্ক বাবদ রাজস্ব কমেও যেতে পারে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া এখনকার দিনে অর্থনীতি ও উৎপাদনপ্রক্রিয়া এমনভাবে পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে এক দেশের পক্ষে আরেক দেশকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

বাণিজ্যযুদ্ধ কী

বাণিজ্যযুদ্ধ বলতে মূলত বোঝানো হয় এমন এক অবস্থাকে, যেখানে একটি দেশ আরেকটি দেশের ক্ষতি করতে পণ্যের ওপর বিভিন্ন শুল্ক আরোপ ও কোটা সীমাবদ্ধতা প্রয়োগ করে। ফলে একসময় শুরু হয় রাজনৈতিক টানাপোড়েন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, একটি দেশ প্রথমে অন্য আরেকটি দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে। তারপর সেই দেশ শুল্ক আরোপ করা দেশটির পণ্যেও একই ধরনের শুল্ক আরোপ করে—এভাবেই ‘ইটের বদলে পাটকেল নীতি’র বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাণিজ্যযুদ্ধ। মূলত বাণিজ্যযুদ্ধের উদ্দেশ্য অনেক রকম হতে পারে। যেমন কোনো দেশ অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে বা শত্রুরাষ্ট্রের অর্থনীতির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে কোনো রাষ্ট্র আরেকটি রাষ্ট্রের সঙ্গে এই যুদ্ধের সূচনা করতে পারে।

শিল্পবিপ্লবের পর থেকে যতই সময় অতিবাহিত হয়েছে, ততই অস্ত্র আর বোমার বিধ্বংসী শক্তিকে পরাস্ত করে পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের নানা প্রান্তের দেশগুলো মনোযোগ দিয়েছে শিল্প-বাণিজ্যভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশে। একটি বিষয় সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছে। সেটা হলো, যে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি যত শক্তিশালী, পৃথিবীজুড়ে তার প্রভাবও তত বেশি। বর্তমান যুগে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে তার অর্থনীতির উত্থান ঠেকিয়ে দেওয়ার চেয়ে বড় হাতিয়ার আর কিছুই হতে পারে না। এ ছাড়া যুদ্ধ হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় উভয় পক্ষকে। সেই তুলনায় সামরিক যুদ্ধে না জড়িয়ে শত্রুরাষ্ট্রকে শায়েস্তা করার অন্যতম কার্যকর মাধ্যম হচ্ছে বাণিজ্যযুদ্ধ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে বন্দর আব্বাসের বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪০

ইরানের বন্দর আব্বাসের কাছে শহীদ রাজয়ি বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও ১০০০ জন। 

সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা বিবিসি।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনা জানিয়েছে, শহীদ রাজয়ি বন্দর ইরানের রাজধানী তেহরানের দক্ষিণে এক হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরে অবস্থিত। এটি ইরানের সবচেয়ে উন্নত কনটেইনার বন্দর। বন্দর আব্বাস শহরের ২৩ কিলোমিটার পশ্চিমে ও হরমুজ প্রণালির উত্তরে অবস্থিত এই কনটেইনার বন্দর। এ প্রণালি দিয়ে বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ তেল পরিবহন করা হয়।

শনিবার ওই বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা পরও রাষ্ট্রীয় টিভিতে সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, বন্দর এলাকা থেকে ঘন কালো ধোঁয়া উড়ছে এবং সেখানে জ্বলতে থাকা বহু কনটেইনারের আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের সংকট ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র হোসেইন জাফরি শহীদ রাজয়িতে থাকা কনটেইনারগুলোয় রাসায়নিকের অনিরাপদ মজুত বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন। স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের কারণ কনটেইনারের ভেতরে থাকা রাসায়নিক।’

হোসেইন জাফরি আরও বলেন, এর আগেও সংকট ব্যবস্থাপনা সংস্থার মহাপরিচালক পরিদর্শনের সময় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিলেন, সম্ভাব্য বিপদের কথা বলেছিলেন।

অন্যদিকে ইরানের সরকারি মুখপাত্র বলেন, বিস্ফোরণের পেছনের কারণ হতে পারে রাসায়নিক। তবে সুনির্দিষ্ট কারণ এখনই বলা সম্ভব নয়।

বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসকান্দার মোমেনিকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগুন নেভানো ও অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ