জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে ৩০০ প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হবে, হবে জাদুঘরও
Published: 8th, March 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহের ধারণ করা অডিও ও ভিজ্যুয়াল ফুটেজ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করবে অন্তর্বর্তী সরকার। তৈরি করা হবে ওই সময়ের আন্দোলনে যুক্ত সমন্বয়ক, ছাত্র-জনতা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকারভিত্তিক ৩০০ প্রামাণ্যচিত্র। শহীদদের ছবি ও ব্যবহৃত পোশাক দিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে একটি জাদুঘরও করা হবে।
জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। ‘দেশি-বিদেশি উৎস হতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, ২০২৪–এর অডিও ভিজ্যুয়াল দলিল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ’ শিরোনামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৭ কোটি টাকা। সরকারি তহবিল থেকে এ অর্থের জোগান দেওয়া হবে।
গত ৩ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্মতি দেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ৫০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এটি পাঠাতে হবে না। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ নিজ ক্ষমতাবলে এটি অনুমোদন করতে পারবেন।
আগামী এপ্রিল কিংবা মে মাস থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণে এটিই প্রথম প্রকল্প। এ অভ্যুত্থান নিয়ে আরও কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, যেগুলো চলতি বছর অনুমোদন পাওয়ার কথা রয়েছে।আগামী এপ্রিল কিংবা মে মাস থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণে এটিই প্রথম প্রকল্প। এ অভ্যুত্থান নিয়ে আরও কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, যেগুলো চলতি বছর অনুমোদন পাওয়ার কথা রয়েছে।
এ ছাড়া গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি ও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত অন্যায়-অবিচারের নমুনা সংরক্ষণ করা হবে এখানে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানের ওপর অডিও ভিজ্যুয়াল দলিল (ফুটেজ) সংগ্রহে খরচ হবে ১৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যাদের কাছে জুলাই অভ্যুত্থানের ফুটেজ রয়েছে, তাদের কাছ থেকে এসব দলিল কেনা হবে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স থেকেও দলিল সংগ্রহ করা হবে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) ১০০টি লটে সংগ্রহ করা হবে এসব দলিল।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অনেক ফুটেজ দেশে ও দেশের বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে। আমরা তাদের কাছ থেকে সেসব ফুটেজ কিনে সংরক্ষণ করব।—ইয়াকুব আলী, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের প্রকল্প পরিচালকশহীদ পরিবারের সদস্য, ছাত্র-জনতার সাক্ষাৎকারভিত্তিক ৩০০টি প্রামাণ্যচিত্র তৈরিতে খরচ হবে সাড়ে ৬ কোটি টাকা। আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ভবনের তৃতীয় তলায় একটি জাদুঘর বানাতে খরচ হবে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। শহীদদের ছবি ও ব্যবহৃত পোশাক সংরক্ষণ করা হবে জাদুঘরে। এসব কাজ বাস্তবায়নে দুই পরামর্শক নিয়োগ বাবদ খরচ হবে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কম্পিউটার ও আসবাব কেনাকাটায় খরচ হবে আরও ১ কোটি টাকা।
জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে প্রকল্প গ্রহণ করার পাশাপাশি শহীদ পরিবারগুলোকে সহায়তা, আহতদের পুনর্বাসনে ‘জুলাই অধিদপ্তর’ করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এ অধিদপ্তরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য এ মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে ৬৩৮ কোটি টাকা সহায়তা দেবে, যা বিতরণ হবে ওই অধিদপ্তরের মাধ্যমে।জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের প্রকল্প পরিচালক ইয়াকুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অনেক ফুটেজ দেশে ও দেশের বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে। আমরা তাদের কাছ থেকে সেসব ফুটেজ কিনে সংরক্ষণ করব।’ এসব কাজের জন্য পরামর্শক দরকার কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের কারিগরি ও বড় কাজ তুলে আনতে পরামর্শকের প্রয়োজন হয়। তাই দুজন পরামর্শক রাখা হয়েছে।
এদিকে অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে প্রকল্প গ্রহণ করার পাশাপাশি শহীদ পরিবারগুলোকে সহায়তা, আহতদের পুনর্বাসনে ‘জুলাই অধিদপ্তর’ করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এ অধিদপ্তরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য এ মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে ৬৩৮ কোটি টাকা সহায়তা দেবে, যা বিতরণ হবে ওই অধিদপ্তরের মাধ্যমে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত প রকল প আহতদ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তায় বরাদ্দ আগামী অর্থবছরে আড়াই গুণ বেড়ে ৫৯৩ কোটি টাকা হচ্ছে। অর্থবছরের শুরু থেকেই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা দেওয়ার পাশাপাশি এককালীন অর্থ এবং চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ খাতে বরাদ্দের বিষয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে শহীদ পরিবারের জন্য এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে মোট ২৪৮ কোটি টাকা, আহত ব্যক্তিদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা, অনুদান ও পুনর্বাসনে ৩৯০ কোটি টাকাসহ মোট ৬৩৯ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হয়। অর্থ বিভাগ জানায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাকি ৪০৫ কোটি টাকা আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেওয়া হবে। তবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় পরে জানায়, এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে আগামী অর্থবছরে সর্বমোট ৫৯৩ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাড়তি বরাদ্দের এ প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরীর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বর্তমানে এককালীন কিছু নগদ অর্থ এবং চিকিৎসায় অনুদান দেওয়া হচ্ছে। নতুন বাজেটে এর পাশাপাশি মাসিক সম্মানী ভাতা দেওয়া হবে। এসব কারণেই বাড়তি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের কাজ এখনও শুরু হয়নি। তাদের চাকরি দেওয়ার পরিবর্তে অন্য কর্মসংস্থানের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ছাড়াও বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার আহত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছে। পুনর্বাসনের কাজে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহতদের মাসিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাসিক সম্মানী ভাতা, এককালীন নগদ সহায়তা-সংক্রান্ত হওয়ায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার নীতিগত অনুমোদন প্রয়োজন।
এতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত ও শহীদদের বিষয়ে সব ধরনের কাজ পরিচালনার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ অধিদপ্তর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করবে।
অর্থ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গেজেটভুক্ত জুলাই শহীদ পরিবার ৮৩৪টি। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর ৮২৬ পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে এককালীন সহায়তা দেওয়ার জন্য বাজেটে ৮২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আট পরিবারকে সমান হারে সহায়তা দিতে আরও ৮০ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এসব পরিবারকে এককালীন আরও ২০ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। এ জন্য নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ থাকছে ১৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
চলতি বাজেটে প্রায় ২০ হাজার আহত ছাত্র ও গণমানুষের এককালীন চিকিৎসা সহায়তা বাবদ অনুদান খাতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। নতুন বাজেটে এ খাতে আরও প্রায় ১৪০ কোটি টাকা রাখা হবে। চলতি বাজেটে শহীদ পরিবারের জন্য মাসিক সম্মানী ভাতা বাবদ কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ জন্য ৮৩৪ পরিবারের জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২০ কোটি টাকা। প্রতি পরিবারকে মাসিক দেওয়া হবে ২০ হাজার টাকা করে।
আহতদের জন্য মাসিক সম্মানী বাবদ কোনো অর্থ চলতি বাজেটে রাখা হয়নি। তবে আগামী বাজেটে এ খাতে মোট ১৫৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ৪৯৩ জনকে মাসিক সম্মানী দেওয়া হবে ২০ হাজার টাকা করে। যারা পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বা শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন, তাদের অতি গুরুতর বা ‘এ’ ক্যাটেগারি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ‘বি’ ক্যাটেগরির ৯০৮ জনকে দেওয়া হবে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে। একই সঙ্গে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে পাবেন ‘সি’ ক্যাটেগরির ১০ হাজার ৬৪৮ জন।
এ ছাড়া ২ হাজার ৪১৬ জন আহতের ক্যাটেগরিভিত্তিক তালিকা না পাওয়ায় তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশকে এ ক্যাটেগরি বিবেচনায় এককালীন ৩ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। এতে ব্যয় হবে ৩৬ কোটি টাকা। বাকি অর্ধেক ‘বি’ ক্যাটেগরি বিবেচনায় এককালীন ২ লাখ টাকা করে দেওয়ার জন্য ব্যয় হবে ২৪ কোটি টাকা। একইভাবে ‘এ’ ক্যাটেগরি বিবেচনায় প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা এবং ‘বি’ ক্যাটেগরি বিবেচনায় ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে ক্যাটেগরিবিহীন ২ হাজার ৪১৬ আহত যোদ্ধার জন্য আগামী বাজেটে ব্যয় হবে ১১১ কোটি টাকার কিছু বেশি।