পবিত্র রমজান মাসেও মাজার ও ওরসে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট থেমে নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসবের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে। এসব চলছে প্রকাশ্যেই, কোনো লুকোছাপা নেই। নেত্রকোনায় গত বুধবার একটি মাজারে ওরস হওয়ার কথা ছিল। ৬৪ বছর ধরে ওরসটি হয়ে আসছে। রমজান মাসের কারণে ওরসের আয়োজনও সীমিত করে শুধু দোয়া–মাহফিলের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এরপরও স্থানীয় কথিত গোষ্ঠীর মন গলেনি। হামলা চালিয়ে সবকিছু ভণ্ডুল করে দিয়েছে। 

 আর দিনাজপুরে ঘোড়াঘাট উপজেলায় এক মাজারে যা ঘটে গেল, তা তাণ্ডব ছাড়া কিছুই নয়। পবিত্র রমজান শুরুর দুদিন আগে শত শত মানুষ ঢুকে মাজারটি ভাঙচুর করে আর কিছু অবশিষ্ট রাখেনি বললে চলে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে সত্যিই শঙ্কিত হতে হয়। মূল মাজারে আগুন ধরিয়ে দেওয়াসহ ওরসের জন্য আনা আসবাবপত্র, অনেকগুলো গরু–ছাগল সব লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

প্রতিবছরের মতো এবারও ২ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত বার্ষিক ওরস আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল মাজার কর্তৃপক্ষ। এ জন্য জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়। সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের ব্যানারে মিছিল থেকে বের হয়ে উত্তেজিত জনতা মাজারটিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ঘোড়াঘাটের মাজারে হামলার ঘটনার দৃশ্য ফেসবুকে আলোড়ন তুলেছে। মাজারে আগুন দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ দাউ দাউ করে জ্বলছে মাজার, সেটি সামনে রেখে হামলাকারীরা নামাজ পড়ছেন। এ দৃশ্য দেখে অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষও ক্ষোভ প্রকাশ ও সমালোচনা করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে কি চলতেই থাকবে? 

ইনক্লুসিভ সমাজ তৈরির ফুটো বেলুন

লাল জুলাইয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই আমরা দেখছি, অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো বিভক্ত হয়ে গেছে। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের মতো একটি বৈপ্লবিক ঘটনায় যে জাতীয় ও সামাজিক ঐক্য আমাদের তৈরি হওয়ার কথা ছিল, সেটি তো ঘটেইনি, বরং সমাজে আগের যে অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনা ছিল, সেটিতেই ভাঙন ধরেছে। চব্বিশের ৫ আগস্টের পর থেকে ‘ইনক্লুসিভ’ শব্দটি বেশি চর্চিত হয়। অথচ সমাজে যে জায়গায় দল–মত–ধর্ম–জাতি–শ্রেণিনির্বিশেষে সবার ঠাঁই হয়। সেই ইনক্লুসিভ জায়গা মাজার–দরগাহগুলো আজকে আক্রান্ত।

 আমাদের আপামর সমাজে ধর্মীয়ভাবে নানা ধারা আছে, বিষয়টি নতুন নয়। ইসলামি গোষ্ঠীগুলো ওয়াজ–মাহফিলে একে ওপরের সমালোচনা করে, একেক ধর্মীয় সমাজ যার যার মতো করে মসজিদ–মাদ্রাসা তৈরি করে নেয়। কিন্তু ক্ষমতাচর্চার মধ্য দিয়ে একে–অপরকে ঘায়েল করা বা দমন করার চেষ্টা সেই অর্থে দেখা যায়নি। গত ১৫ বছরে ধীরে ধীরে সেটির প্রকাশ ঘটতে দেখেছি আমরা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এর ব্যাপকতা প্রকাশ পেল। ৫ আগস্টের পর মাজার ভাঙা শুরু হয়ে একপর্যায়ে থেমেও গিয়েছিল। পরে সেটি আবারও ‘জোশের’ সঙ্গে ‘চাঙা’ হয়। 

■ জানুয়ারিতে বিশ্ব সুফি সংস্থা সংগঠনের দাবি, বিগত ছয় মাসে ৮০টি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটে।  ■ মাজার-ওরসে হামলার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকার হুঁশিয়ারি দিলেও কোনো কাজে আসছে না। ■ সরকার যদি শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর কাছেই তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে চায়, তাহলে বলতে হয় তারা ভুল পথে হাঁটছে।

শীতকাল ও এর আগে–পরে দেশের পীর–ফকির–অলি–দরবেশদের বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ জন্য এ সময়টায় মাজারে হামলার একের পর এক ঘটনা ঘটল। একটি ওরসকে ঘিরে শত শত দোকানপাট বসে। স্থানীয় ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর সামগ্রিক অবদান গুরুত্ববহ। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শুধু শীতকালের জন্য অপেক্ষা করেন এবং ওরসে ওরসে ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করেন। হাজারো পরিবার সেই ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। এখন ওরস বন্ধ করে দিলে পথে বসে এসব ব্যবসাও। 

শুধু তা–ই নয়, এসব ওরসকে ঘিরে কাওয়ালিসহ মাজারভিত্তিক গানের আসর বসে। কাওয়ালি, মাইজভান্ডারি গানসহ মাজারকে কেন্দ্র করে গানের ধারা তো এখানকার সাংস্কৃতিক একটি ঐতিহ্যও বটে। এসব গানের শিল্পীরা এ মৌসুমটির জন্য অপেক্ষা করেন সারা বছর। দেশজুড়ে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ওরসে গান করেন, এর আয় দিয়ে সারা বছর চলেন। শিল্পীদের সঙ্গে আছেন অসংখ্য বাজনদারও। করোনা মহামারির পর এবার মৌসুমে ওরসকেন্দ্রিক এ পুরো অর্থনীতি ও সংস্কৃতিচর্চার চরম ধস নেমেছে বলা যায়।  

যে ক্ষতি দীর্ঘস্থায়ী ও অমোচনীয়

কারা মাজার–ওরসে হামলা চালাচ্ছে? সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় কথিত ‘তৌহিদি জনতা’ বলে তাদের পরিচিত পাওয়া যাচ্ছে। তাদের নিজেদের বক্তব্যেও সেটি সরাসরি প্রকাশ পেয়েছে। স্থানীয় মানুষজন, মাদ্রাসার শিক্ষক–শিক্ষার্থী, মুসল্লি সমাজ—গত এক দশকে যারা এ শব্দবন্ধ দিয়ে পরিচিত হয়ে উঠেছে মূলত। 

‘তৌহিদি জনতা’ শব্দবন্ধের মাধ্যমে মূলত ধর্মের শুদ্ধতা রক্ষায় স্থানীয়ভাবে সব ধরনের মানুষই এক হয়ে যায়, থাকে সব ধরনের রাজনীতি ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও। সমাজ, রাজনীতি এমনকি ধর্মীয়ভাবেও তাঁদের মধ্যে নানা মতপার্থক্য থাকলেও তাঁদের তখন একটাই পরিচয় হয়ে ওঠে ‘মাজারবিরোধী’। 

কথা হচ্ছে, মাজারবিরোধী হওয়াটা কোনোভাবে দোষের কিছু নয়, উল্টো দিকে মাজার অনুসারী হওয়াও। কোনো কিছুর বিরোধিতা বা অনুসারী হওয়া ব্যক্তির মজ্জাগত বৈশিষ্ট্যেরই অংশ, সেই সঙ্গে তার গণতান্ত্রিক চরিত্রেরই অংশ। সেখানে যদি বলপ্রয়োগ, দমন ও ফৌজদারি অপরাধ যুক্ত হয়ে যায়, তখন আপত্তির বিষয় ওঠে। কারণ, এখানে সমাজে অরাজকতা তৈরি ও শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্ন হওয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় বিশ্বাস পোষণ এবং আচার পালন নিয়ে একপ্রকার ভীতিকর মনোভাবও তৈরি হওয়ার শঙ্কা থাকে। ফৌজদারি অপরাধের চেয়ে এসব ক্ষতিই বরং দীর্ঘস্থায়ী এবং অনেকটা অমোচনীয়।

সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী ক্ষমতাচর্চার জোশ

ময়মনসিংহে জানুয়ারি মাসে মাজার ভাঙচুরসহ কয়েকটি ওরস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কয়েক শ বছর ধরে ওরসগুলো চলে আসছে। এত বছর ধরে মাজারগুলোতে ওরস আয়োজন নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। এবারই প্রথম তৌহিদি জনতা হামলা করে কিংবা তাদের হামলার আশঙ্কায় প্রশাসন ওরসগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। 

কিছুদিন আগে দেখা গেল, রাজধানীর কারওয়ান বাজার সড়ক ধরে ‘মুসলিম নাগরিক সমাজ ও ইমাম খতিব উলামা পরিষদ’ ব্যানারে একটি মিছিল যাচ্ছে। সেই মিছিল গিয়ে ফার্মগেট এলাকায় একটি মাজারের ওরসের আয়োজনে ভাঙচুর চালায়। ‘তৌহিদি জনতা’ বর্গের কথা উচ্চারণ করেই একজন ধর্মীয় ব্যক্তি সেখানে বক্তব্য দেন। 

তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ভাঙচুরে বিশ্বাসী নই। আমরা নিজেদের হাতে কেন ভাঙব? আমরা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে যাব। আমরা শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী, শান্তিতে বিশ্বাসী, অশান্তিতে বিশ্বাসী নই।’ কিন্তু আমরা দেখলাম, সেখানে ভাঙচুরই চালানো হয়েছে। এমনকি ওরস উপলক্ষে থাকা গরু–ছাগলও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে সেখানকার ওরসটি বন্ধ হয়ে যায়।

এখন কে ‘বাতিল’, কে ‘ভণ্ড’—তা নিয়ে তর্কবিতর্ক হতে পারে। এমন বিতর্ক এ সমাজে নতুন নয়। কিন্তু এভাবে হামলা চালানোর ঘটনা কেন ঘটবে? 

মাজার নিয়ে জায়গাজমি বা স্থানীয় কোনো বিরোধ থাকলে এর সমাধান আইনি বা প্রশাসনিকভাবে করার সুযোগ আছে; সেটি গ্রহণ না করে কথিত গোষ্ঠীটি যা করছে, তা একপ্রকার সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী ক্ষমতাচর্চাই বলতে হয়। এত দিন তারা সেই সুযোগ পায়নি, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তারা নিজেদের অতি ক্ষমতায়িত মনে করছে। অথচ একসময় এই তৌহিদি জনতার অনেকেই শেখ হাসিনা সরকারের জুলুমের শিকার হয়েছিল। সেটি তারা এখন ভুলে গেছে। 

কেউ ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দিলেও তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। কুমিল্লায় মাজার অনুসারী এক ধর্মীয় নেতাকে ‘ভণ্ড পীর’ আখ্যা দিয়ে তাঁর অনেকগুলো খানকা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়া সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধেই কিন্তু একসময় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারও করেছিল। কিন্তু তৌহিদি জনতা এবার সেই পথে না গিয়ে সরাসরি হামলার পথকেই বেছে নিয়েছে।

চট্টগ্রামে বড় হতে গিয়ে একটি জিনিস দেখেছি, সেখানে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, পটিয়া—এসব উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মাজার এবং বড় বড় ও পুরোনো মাদ্রাসাও সেখানে। উভয় গোষ্ঠীই পক্ষে–বিপক্ষে বিষোদ্‌গার করে বক্তব্য দেয়, ওয়াজ–মাহফিল করে। কিন্তু পরস্পরের ওপরের হামলার ঘটনা ঘটে না।

মাদ্রাসার সামনে দিয়ে বাদ্য বাজিয়ে গরু–মহিষ নিয়ে যাওয়া হয় মাজারের ওরসে, মাইক বাজিয়ে যায় মুরিদ–অনুসারীভর্তি বাস। কখনো বাধাপ্রাপ্ত হয় বলে শুনিনি। পাহাড় কিংবা নির্জন এলাকায় কোনো মাজার বা খানকায়ও হামলার ঘটনা ঘটে না। কারণ কী?

 সামাজিক ও ধর্মীয় সহনশীলতা–সহিষ্ণুতার বাইরেও সেখানে আছে যার যার শক্তিশালী সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান। ফলে এখানে তখন সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী ধর্মীয় ‘জোশ’ আসলে কাজ করে না। যার কারণে ‘বারো আউলিয়ার চট্টগ্রামে’ মাজার ভাঙচুর ও ওরস বন্ধ করা সম্ভব নয়। সেখানে নির্বিঘ্নে একের পর এক ওরস অনুষ্ঠিত হয়েছে এই মৌসুমেও। শুরুতে কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও সিলেটেও এ মৌসুমে ওরস হয়েছে নির্বিঘ্নে। চট্টগ্রাম–সিলেটের বাইরে এর প্রবণতা বেশি; কারণ, মাজার–দরগাহর গণ্ডি বা এলাকার বাইরে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক শক্তি অতটা জোরদার নয়। ফলে সেসব জায়গায় শক্তি ও ক্ষমতাচর্চার বাড়াবাড়ি আমরা দেখতে পাচ্ছি। 

রাজনৈতিক দল ও সরকারের দায় কী?

সরকার এখানে কী করছে? একপ্রকার চুপ মেরে থেকে ঘটনাগুলো একের পর এক ঘটতে দিচ্ছে। অনেক জায়গায় প্রশাসন যা করছে, তা বরং নিজেদের ক্ষমতাবান মনে করা ওই সব গোষ্ঠীর পক্ষেই যায়। তারা এসে হামলা করে, ভয় দেখায়, হুমকি দেয়। তখন প্রশাসন গিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার স্বার্থে ওরস বন্ধ করে দেয়। 

১৮ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং জানায়, গত সাড়ে পাঁচ মাসে মাজার–দরগাহে ৪৪টি হামলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সব ঘটনার ক্ষেত্রেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনি ব্যবস্থা বলতে কী রকম? থানায় মামলা বা জিডি হয়েছে। আর গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র ২৩ জন। কয়েক দিন পর বিশ্ব সুফি সংস্থা নামের একটি সংগঠনের দাবি, গত ছয় মাসে ৮০টি মাজার ও দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বলতেই হয়, সরকার যে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে কিন্তু এসব ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। প্রেস উইংয়ের বক্তব্যের পরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এখনো ঘটছে। 

এখানে সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্ন করা যায়। সরকার চাইলে সব মাদ্রাসা বোর্ডের প্রতিনিধি, ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি, সম্মানিত ও প্রভাবশালী ধর্মীয় ব্যক্তি ও খতিবদের নিয়ে এ বিষয়ে একটি আলোচনায় বসতে পারত। এ সংকট কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার একটা সমাধান খুঁজতে পারত এবং সেই সঙ্গে তাদের একপ্রকার নির্দেশনাও দিতে পারত। আইনজীবী সাইফুল হত্যাকাণ্ড, ইসকন নেতা চিন্ময়ের গ্রেপ্তার এবং ভারতীয় অপপ্রচার ইস্যুতে সরকার কিন্তু এ ধরনের বৈঠক করেছিল। তাহলে এখন কেন নয়? 

সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা শুরু থেকে মাজার–দরগাহর ওপর হামলার বিরোধিতা করে আসছেন, এমনকি দেওয়া হয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারিও। কিন্তু ঢাকায় বসে এসব বিবৃতি ও হুঁশিয়ারি কোনো কাজে আসছে না, তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। একের পর এক মাজার–ওরস আক্রান্ত হচ্ছে, একজন উপদেষ্টাকেও দেখা গেল না, ঘটনাস্থলে গিয়ে হাজির হতে বা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে। 

ওরসে রাজনৈতিক নেতা বা সরকারের ব্যক্তিদের হাজির হওয়া তো নতুন কিছু নয়, এটিও তো একটি জনসংযোগ বা নাগরিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ। সেটিও আমরা গ্রহণ করতে দেখি না অন্তর্বর্তী সরকার বা অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর কাউকে। সরকার কেন বুঝতে পারছে না, বাংলাদেশ উগ্রপন্থীদের দখল চলে যাচ্ছে বলে আওয়ামী ও ভারতীয় যে বয়ানের ছড়াছড়ি, সেগুলোকেই একপ্রকার ‘বৈধতা’ দেয় তৌহিদি জনতার এসব কর্মকাণ্ড? সরকার যদি মনে করে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর কাছেই শুধু তার জনপ্রিয় ধরে রাখা দরকার, তাহলে বলতেই হয় তারা ভুল পথে হাঁটছে।

রাফসান গালিব প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী। ই–মেইল: [email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম জ র দরগ হ এক র পর এক ম জ র ওরস ব যবস থ সরক র র র জন ত অন স র হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

ভোলায় ইন্ট্রাকো কোম্পানির চারটি গাড়ি আটকে দিয়েছে ছাত্র-জনতা

ভোলা থেকে সিএনজি আকারে ঢাকার কলকারখানায় দেওয়ার গ্যাস পরিবহনের দায়িত্বে থাকা ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং কোম্পানির আরও চারটি গাড়ি আটকে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। শনিবার বিকেলে ভোলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা তিনটি গাড়ি আটকে দিয়ে সড়কে বিক্ষোভ করেছে। এর আগে শুক্রবার রাতে আরেকটি গাড়ি আটকে দেয় তারা।

সদরের ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান ও সদর থানার ওসি আবু শাহাদৎ মো. হাচনাইন পারভেজ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। ইউএনও আন্দোলনকারীদের অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করে তাদের দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে সমাধানের আশ্বাস দেন। এই গ্যাস ভোলায় ব্যবহার এবং ঘরে ঘরে সংযোগের দাবি না মানা পর্যন্ত ভোলা থেকে গ্যাস নিতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

ভোলার গ্যাস অন্যত্র নেওয়া বন্ধ করে ভোলায় গ্যাসভিত্তিক কলকারখানা স্থাপন, ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে ছাত্র- জনতার ব্যানারে আন্দোলন চলছে।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গ্যাস পরিবহনের একটি গাড়ি ঢাকা যাওয়ার পথে বাস টার্মিনাল এলাকা আটকে দেয় ছাত্র-জনতা। তারা এ সময় ভোলার গ্যাস দিয়ে ভোলায় কলকারখানা স্থাপন ও ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহের দাবিতে স্লোগান দেয়।

এর আগে শুক্রবার সকালে ভোলায় গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন, ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ ও গ্যাস পাচার বন্ধ করাসহ ৫ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল করে বদ্বীপ ছাত্রকল্যাণ সংসদ।

এ বিষয়ে ইন্ট্রাকো কোম্পানির স্থানীয় কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন জানান, ছাত্র-জনতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিলিন্ডার পরিবহন করা গাড়ি ঢাকা যাওয়া সাময়িক বন্ধ রয়েছে।

২০২৩ সালের মে মাসে ভোলার গ্যাস সিলিন্ডার করে ঢাকার কলকারখানায় সরবরাহের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যায়ে দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঢাকার ১৮টি কারখানায় সরবরাহ করছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং কোম্পানি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ