আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতিবছর ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন’। ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। নারী অধিকার রক্ষায় এ দিনটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতি বছর উদযাপিত হয়।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারী-পুরুষের সম-অধিকার নিশ্চিত করা, নারীর কাজের স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য উদ্যাপনের উদ্দেশ্যে নানা আয়োজনে বিশ্বব্যাপী দিনটি পালিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি নানা অনুষ্ঠান ও সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন ও সংস্থা দিবসটি পালনে যথাযথ কর্মসূচি নিয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো.
বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “নারীদের সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতাকে উৎপাদনমুখী কাজে সম্পৃক্ত করে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নারী সমাজের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষায় ছাত্র-শ্রমিক-জনতা যে অভ্যুত্থান সংগঠিত করেছিল গত জুলাই-আগস্টে তার সম্মুখসারিতে ছিল নারী। লাখ লাখ ছাত্রী বিভিন্ন ক্যাম্পাসে দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়েছে। একাধিক নারী এ গণ অভ্যুত্থানে শাহাদাতবরণ করেছেন। আমি এ গণ অভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি এবং জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের অদম্য মেয়েরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বমহিমায় এগিয়ে যাচ্ছেন। নারীর অর্জনকে স্বীকৃতি দিতে ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ ও ‘বেগম রোকেয়া পদক’ প্রদানসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।”
দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সব নারীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের অব্যাহত সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী উদযাপন উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এক আলোচনাসভা আজ সকাল ১১টায় ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ।
বাংলাদেশ লিগ্যালএইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর বনানী এলাকার বেলতলা থেকে কড়াইল মাঠ পর্যন্ত রিকশা শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
সকাল ১১টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হবে। শোভাযাত্রাটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে কাকরাইল মোড় হয়ে পুনরায় বিএনপি অফিসের সামনে এসে শেষ হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান এবং প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
দিনটি উদযাপন উপলক্ষে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে (৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফরম) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ, সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যালির আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনের দাবিতে জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ আয়োজন করেছে মানববন্ধন। আজ সকাল সাড়ে দশটায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হবে এই মানববন্ধন।
সকাল এগারোটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের আয়োজনে। সমমর্যাদা, সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি খুন, ধর্ষণ, নিপীড়ন, সাইবার বুলিং, মব ভায়োলেন্স বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবি থাকবে এই সমাবেশে।
‘সারাদেশে অব্যাহত নারী শিশু ধর্ষণ বন্ধ কর’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আজ সকাল ১০টায় ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া নারী সংহতির আয়োজনে ‘নারীমুক্তির আকাঙ্ক্ষা: গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা আয়োজিত হবে সকাল দশটায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে।
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র উপলক ষ র স মন সরক র দ বসট
এছাড়াও পড়ুন:
সংবিধান অর্থবহ করতে বিচার আরও সহজলভ্য করতে হবে: প্রধান বিচারপতি
দেশ-জাতি নির্বিশেষে সাধারণ নাগরিকের জীবনে সংবিধানকে আরও কার্যকর ও অর্থবহ করে তুলতে হলে বিচার প্রক্রিয়াকে আরও সহজলভ্য, স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
শুক্রবার ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত তুরস্কের সাংবিধানিক আদালতের ৬৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ অধিবেশনে এ কথা বলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে তুরস্কের সাংবিধানিক আদালতকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, তুরস্কের সাংবিধানিক আদালতের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই আয়োজন শুধু একটি ঐতিহাসিক উপলক্ষ নয়, বরং এটি সাংবিধানিক আদর্শ ও ন্যায়বিচার রক্ষার প্রতিশ্রুতির একটি প্রতীকী উদযাপন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের সাংবিধানিক পথচলা ভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠলেও দুই দেশের অভিন্ন লক্ষ্য ন্যায়বিচার, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধান বিচারপ্রতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের উচ্চ আদালত বিভিন্ন স্বপ্রণোদিত উদ্যোগের পাশাপাশি জনস্বার্থ মামলার মাধ্যমে যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে, তা বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তিনি বলেন, বর্তমান যুগে সাধারণ মানুষের অধিকারের সুরক্ষায় সাংবিধানিক আদালতগুলোর আরও বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, জলবায়ু ন্যায়বিচার, ডিজিটাল অধিকার ও তথ্য সুরক্ষা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আন্তঃদেশীয় বৈষম্য মোকাবিলায় বিশ্বের প্রতিটি দেশে এমন একটি ন্যায়বিচার কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা জরুরি- যা একদিকে নিজস্ব বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, তেমনই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়ও প্রাসঙ্গিক ভূমিকা পালন করবে।
প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যে তুরস্কের সাংবিধানিক আদালতের প্রতি আমন্ত্রণ ও আতিথেয়তার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও গভীর করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।