আ.লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার নিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষ
Published: 8th, March 2025 GMT
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করানোর চেষ্টার জেরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। শুক্রবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে। এসময় কয়েকটি হাত বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় তিনটি মোটরসাইকেল।
এদিকে, সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের নগর বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) একজন সদস্যসহ চারজন আহত হয়েছেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।”
আরো পড়ুন:
হবিগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ১
দুই সংগঠনের তথ্য: গণপিটুনির ঘটনা ও নারীবিদ্বেষ বেড়েছে
আহতরা হলেন- রাজশাহী নগরের দড়িখড়বোনা এলাকার মহিলা দলের নেত্রী লাভলী খাতুন, তার আড়াই বছর বয়সী শিশু লামিয়া, সিটিএসবি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন ও রেলওয়ের কর্মচারী মো.
পথচারী রনি ও সিটিএসবির সদস্য তোফাজ্জল ইটের আঘাতে আহত হন। মহিলা দলের নেত্রী লাভলীর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এতে কন্যাশিশুসহ আহত হন তিনি। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মেয়েকে নিয়ে বাসায় চলে যান মহানগর মহিলা দলের সহ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক লাভলী।
আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া তিনটি মোটরসাইকেলের মধ্যে একটি আজকের পত্রিকার রাজশাহীর মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার জাহিদ হাসান সাব্বিরের। তিনি ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মহিলা দল নেত্রী লাভলীসহ তার অনুসারীরা কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বহুতল ভবন ঘেরাও করেন। ওই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে পরিবারসহ থাকেন নগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বাবু ওরফে ব্যাটারি বাবু। আওয়ামী সরকারের পতনের পর ব্যাটারি বাবু ও তার ভাই সাব্বির বাবুর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়।
ওই ভবনের সামনে লাভলী দাবি করেন, তারা ভবনের ভেতরে আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ বাবুকে ঢুকতে দেখেছেন। তারা ভবনটি ঘিরে রাখলে যৌথবাহিনী অভিযানে আসে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে অভিযান চালিয়ে ওই ভবনে মোস্তাককে পাওয়া যায়নি। যদিও ভবনের নিরাপত্তা প্রহরীর খাতায় প্রবেশকারী হিসেবে মোস্তাকের নাম দেখা যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও মোস্তাককে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ভবনে ঢুকতে দেখা যায়।
মোস্তাক আহমেদকে না পেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভবনটি ঘিরে রাখে। পরে সেখান থেকে মোস্তাক আহমেদের ভাই সাব্বির বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্থানীয় সূত্র বলছে, মোস্তাক আহমেদ বাবুকে না পাওয়ার জন্য মহিলা দল নেত্রী লাভলী সাবেক যুবদল নেতা মারুফ হোসেন জীবনকে দায়ী করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মারুফের লোকজন শুক্রবার সন্ধ্যায় দড়িখড়বোনা এলাকায় লাভলীর বাড়িতে হামলা করেন। তারা বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে চলে গেলে লাভলীর অনুসারীরা দড়িখড়বোনা রেল লাইনের পাশে মারুফের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করে। এরপর দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে দড়িখড়বোনা, উপশহর মোড়, রেলগেট, সপুরা ও শালবাগান এলাকায়। এসময় কয়েকটি হাতবোমারও বিস্ফোরণ ঘটে।
ঘটনার পর রাত সাড়ে ১১টায় নগরের মিয়াপাড়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন মহিলা দল নেত্রী লাভলী। সেখানে তিনি জানান, আওয়ামী লীগের অত্যাচারে আগে তারা বাড়িতে থাকতে পারেননি। এখন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ বাবুকে তার ফ্ল্যাটে উঠতে দেখে ভবন ঘেরাও করা এবং তার ভাই সাব্বিরকে পুলিশে তুলে দেওয়ায় বিএনপির লোকজনই তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।
তিনি জানান, সাব্বিরকে তুলে দেওয়ার পর মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব মারুফ হোসেন জীবন তাকে প্রস্তাব দেন যে, তাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে, তিনি যেন এটা নিয়ে ঝামেলা না করেন। তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার বাসায় একই প্রস্তাব আনা হয়েছিল। সেটি ফিরিয়ে দেওয়ার পর বাসায় হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন লাভলী।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মারুফ হোসেন জীবনের মোবাইল ফোনে কল করা হয়। মারুফের ছোটভাই পরিচয় দিয়ে সনি নামের এক ব্যক্তি ফোনটি ধরেন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “লাভলীর ভাই তাঁতী লীগ আর ছেলে যুবলীগ করত। তাদের ধরার জন্য ছাত্রদলের ছেলেরা গিয়েছিল। তারপর মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ বাবুকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটেনি।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ ব এনপ আহত ম স ত ক আহম দ ব ব ক ব এনপ র স ঘর ষ দল ন ত এল ক য় সদস য আওয় ম র ঘটন ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
হজযাত্রীর পদচারণায় মুখর ক্যাম্প, প্রথম দুই ফ্লাইটে যাত্রী ৪৩৮ জন
হজযাত্রীর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন আশকোনার হজক্যাম্প। সোমবার ভোর থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নারী-পুরুষ হজক্যাম্পে অবস্থান করছেন। সন্ধ্যা ৭টায় হজযাত্রা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। পরে রাত ২টায় সৌদির একটি বিমানে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে ৪১৯ জনের। এছাড়া রাত ৩টায় সরকারি ব্যবস্থপনায় বিমানের প্রথম ফ্লাইট একই সংখ্যক যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাবে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এদেশের হজযাত্রীরা যাতে যৌক্তিক খরচে হজ পালন করতে পারেন, সে বিষয়ে আমরা তৎপর আছি। হাজীদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে সব প্রক্রিয়া কীভাবে আরও সহজ করা যায়, তা নিয়েও আমরা কাজ করছি। পরে ধর্ম উপদেষ্টা হজযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, সচিব নাসরীন জাহান, বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আবদুল আজিজ ফাহাদ এম আল ইব্রাহিম, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবির ভূইয়া, হাবের সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে হজ কার্যক্রমের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
হজ অফিসের কর্মকর্তারা জানান, হজযাত্রা উদ্বোধন শেষে যাত্রীরা বাসে চড়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে যাবেন। জানা যায়, এ বছর ধীর গতিতে ভিসা হচ্ছে হজযাত্রীদের। সৌদির ভিসা সার্ভার সমস্যার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভিসা থেকে বাদ পড়ার কোনো শঙ্কা নেই জানান কর্মকর্তারা।
আজ হজক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, হজ গমনেচ্ছুরা দোয়া-দরুদ পড়ে যার যার মতো ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছেন। কেউ নামাজ পড়ছেন, তাসবিহ তাহলিল করছেন। আবার কেউ পরিবার-পরিজনকে বিদায় জানাচ্ছেন। বিগত বছরগুলোতে হজযাত্রীরা নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হলেও চলতি বছরে নির্বিঘ্নে হজে যেতে পারছেন বলে জানান প্রথম ফ্লাইটের অপেক্ষায় থাকা কয়েক যাত্রী।
কুষ্টিয়া থেকে আসা হজযাত্রী শরীফুল ইসলাম সন্ধ্যায় জানান, রাত ৩টায় বিমানের প্রথম ফ্লাইটে যাত্রা করবেন তিনি। ভিসাসহ সবকিছু প্রস্তুত আছে তার। আশরাফুল ইসলামসহ কয়েক যাত্রী জানান, হজক্যাম্প সড়কে নির্মাণকাজ চলছে। এজন্য হজক্যাম্প এলাকায় চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
হজ ক্যাম্পের পরিচালক লোকমান হোসেন সমকালকে জানান, হজযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। এ বছর সরকারি–বেসরকারি ব্যবস্থপনায় মোট হজযাত্রী ৮৭ হাজার ১০০ জন। তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছেন ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১ হাজার ৯০০ জন।