বছর ঘুরে আরেকটি পবিত্র ঈদুল ফিতর আসন্ন। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করতে কয়েক দিনের জন্য মানুষ ঘরে ফিরে যান। বড় শহরগুলো অনেকটা ফাঁকা থাকে সে কয় দিন। এই ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে ট্রেনের ওপরে। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এবার বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা অর্ধেক কমানো হয়েছে। ফলে এবারের ঈদযাত্রায় মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক। 

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় ২০টি বিশেষ ট্রেন চালানো হয়েছিল। কিন্তু এবার চলবে মাত্র ১০টি ট্রেন। এর মধ্যে একটি রুটে বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা কমানো হয়েছে এবং চারটি রুটে কোনো বিশেষ ট্রেন দেওয়া হচ্ছে না। চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে বেশি চাহিদা থাকলেও দুই জোড়ার পরিবর্তে এক জোড়া ট্রেন চলবে। গত বছর চলাচল করলেও এবার পার্বতীপুর-দিনাজপুর রুট, ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর রুট, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুট এবং চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে কোনো বিশেষ ট্রেন চলবে না।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বক্তব্য, ইঞ্জিন ও কোচের সংকটের পাশাপাশি চাহিদাও কমেছে বিশেষ ট্রেনের। তাই বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা কমানো হয়েছে। ট্রেন কমলেও যাত্রীদের সমস্যা হবে না। 

ইঞ্জিন ও কোচ–সংকটের যুক্তি না হয় মানা যায়, কিন্তু চাহিদা কমার বিষয়টি কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। তা ছাড়া ট্রেন কমলেও যাত্রীদের সমস্যা হবে না, এমন ধারণা অপরিণামদর্শিতা ছাড়া কিছুই নয়। রেলওয়ে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন বক্তব্য কোনোভাবে আশা করা যায় না। ট্রেনের বাড়তি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করার পরও সড়কে ও নৌপথে কী পরিমাণ ভিড় ও ভোগান্তি হয়, তা তো তঁাদের না জানার কথা নয়।

দেশের সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে মানুষ সড়কপথের পরিবর্তে ট্রেনে করে ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। আবার ঈদের সময় সড়কপথে বাড়তি ভাতা ও যানজট নিয়ে অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়। পাশাপাশি ঈদযাত্রায় সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে বেশি। এ জন্য নিরাপদে বাড়ি ফিরতে ট্রেন বেছে নেন যাত্রীরা। ফলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যে সময় বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত, সেখানে কমানোর ঘটনা জন-আকাঙ্ক্ষার বিপরীত। রেলের উচিত হবে আগের মতো বিশেষ ট্রেন চালু রাখা।

ইঞ্জিন ও কোচ–সংকটের বিষয়টি নতুন নয়। বিগত সরকার রেলওয়েতে অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন করলেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর দিকে নজর দেয়নি। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ সংকট নিরসন করবে। তবে আসন্ন ঈদ সামনে রেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। কীভাবে বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো যায়, সে প্রচেষ্টা চালাবে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রেল উপদেষ্টা ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি আস্থা রাখতে চাই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র লওয়

এছাড়াও পড়ুন:

২১ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে বিএসইসির আদেশ জারি

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ২১ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে আদেশ জারি করেছে। বরখাস্ত করা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৪ জন মামলার আসামি রয়েছেন।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত এ আদেশ জারি করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) কমিশন সভায় কর্মকর্তাদের এ বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

যে কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে, তাদের বিষয়ে আলাদা আলাদা অফিস আদেশ জারি করেছে বিএসইসি। এদের মধ্যে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নির্বাহী পরিচালক পর্যন্ত আছেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কর্মচারী বিধিমাল, ২০২১ এবং সরকারী চাকরি (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিভিন্ন বিধি লংঘনের অভিযোগ এনে এ বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়।

গত ৫ মার্চ বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে দাবি আদায়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে দিন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মামলার আসামি বরখাস্তকৃত ১৪ কর্মকর্তা হলেন- রেজাউল করিম, পরিচালক আবু রায়হান মো. মোহতাছিন বিল্লা, অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম, যুগ্ম পরিচালক রাশেদুল ইসলাম, উপ-পরিচালক বনী ইয়ামিন, আল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও তৌহিদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক জনি হোসেন, রায়হান কবীর, সাজ্জাদ হোসেন ও আব্দুল বাতেন, লাইব্রেরিয়ান মো. সেলিম রেজা বাপ্পী এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু ইউসুফ।

এছাড়া মামলাবিহীন বরখাস্তকৃত ৭ কর্মকর্তা হলেন- পরিচালক আবুল হাসান, পরিচালক ফখরুল ইসলাম, উপপরিচালক নানু ভূইয়া, অতিরিক্ত পরিচালক মিরাজুন সুন্নাহ, সহকারী পরিচালক তরিকুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক আমিনুল হক খান ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সমীর ঘোষ।

এর আগে গত ৪ মার্চ বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কমিশন। এতে বিএসইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়। ওই ঘটনার জেরে ৫ মার্চ বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করেন সেখানকার কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। 

একপর্যায়ে তারা কমিশনের মূল ফটকে তালা দেন, সিসি ক্যামেরা, ওয়াই-ফাই, লিফট বন্ধ করে দেন এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে মারাত্মক অরাজকতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গুরুতর জখমের প্রচেষ্টা করেন। পরে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের উদ্ধার করেন।

তবে পরের দিন ৬ মার্চ সেনা ও কোস্টগার্ড সদস্যদের নিরাপত্তায় মধ্যে দিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ওই দিন বিকেল ৫টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের গানম্যান (পুলিশ সদস্য) মো. আশিকুর রহমান।

মামলার আসামিরা হলেন-বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম ও রেজাউল করিম, পরিচালক আবু রায়হান মো. মোহতাছিন বিল্লা, অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম, যুগ্ম পরিচালক রাশেদুল ইসলাম, উপ-পরিচালক বনী ইয়ামিন, আল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও তৌহিদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক জনি হোসেন, রায়হান কবীর, সাজ্জাদ হোসেন ও আব্দুল বাতেন, লাইব্রেরিয়ান মো. সেলিম রেজা বাপ্পী এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু ইউসুফ।

তবে এর মধ্যে সাইফুর রহমানকে আগেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আরেক নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম পদত্যাগ করেছেন। বাকি ১৪ জন কর্মকর্তা জামিন নিয়ে কাজে ফিরেছিলেন। গত ২১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় সেই মামলায় কর্মকর্তাদের জামিনও হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে ১৪ জনসহ আরো ৭ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন রাশেদ মাকসুদের কমিশন।

ঢাকা/এনটি/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ