মেয়েকে ফ্রিল্যান্সিং শেখাতে গিয়ে নিজেই সফল প্রযুক্তি পেশাজীবী হয়েছেন ফেরদৌস জাহান
Published: 8th, March 2025 GMT
২০১৯ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি গৃহিণী ফেরদৌস জাহান খান প্রথম আলোতে বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং কর্মশালার একটি সংবাদ দেখতে পান। সংবাদটি পড়ে ঘরে বসে অবসর সময়ে ফ্রিল্যান্স কাজ করতে আগ্রহী হন তিনি। কিন্তু নিজে কম্পিউটার ব্যবহার করতে না পারায় মেয়েকে ফ্রিল্যান্স কাজ শেখানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরপর দেরি না করে বিনা মূল্যে কর্মশালায় অংশ নিতে মা-মেয়ে দুজনই উপস্থিত হন ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট আয়োজিত বিনা মূল্যের ফিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কর্মশালায়।
কর্মশালায় অংশ নিয়ে বেশ অবাক হন তিনি। দেখেন তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি ৬০ থেকে ৬৫ বছরের অনেকেই কর্মশালায় উপস্থিত রয়েছেন। কেউ আবার ছোট সন্তান নিয়ে অংশ নিয়েছেন। আর তাই মনে একটু সাহস পান তিনি। নিজে কম্পিউটার ব্যবহার করতে না পারায় কর্মশালা শেষে মেয়েকে ফ্রিল্যান্স প্রশিক্ষণে ভর্তি করান। কিন্তু ফ্রিল্যান্স কাজের প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখে ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান, আপনিও ফ্রিল্যান্স কাজ শুরু করতে পারবেন। আপনার মতো অনেকেই ফ্রিল্যান্স কাজ করছেন। সবার উৎসাহ পেয়ে তিনিও গ্রাফিক ডিজাইন কোর্সে ভর্তি হন। শুরু করেন নিয়মিত ক্লাস।
ফ্রিল্যান্সিং কাজের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরপরই দেশে শুরু হয় করোনা মহামারি। সে সময় বাসায় পুরো পরিবার অনলাইনে শিখতে থাকেন ফ্রিল্যান্স কাজ। এভাবে ধীরে ধীরে ক্যালেন্ডার, বিজনেস কার্ড, লোগো ব্যান্ডিংয়ের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পেতে থাকে ফেরদৌস জাহানের। অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটরের কাজগুলোও আনন্দের সঙ্গে করতেন তিনি। প্রথমে তিনি ফাইভআর মার্কেটপ্লেসে (অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ দেওয়া–নেওয়ার ওয়েবসাইট) শুরু করলেও পরে স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতে থাকেন। একই সঙ্গে ফেরদৌস জাহান অ্যাডবি স্টক, সাটার স্টকে বিভিন্ন কাজ জমা দেন। কাজগুলো জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ফ্রিল্যান্সিং কাজ ভালোভাবেই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এরপর তিন বছর ধরে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন ফেরদৌস জাহান। প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র, ব্যানার থেকে শুরু করে গ্রাফিক ডিজাইনের বিভিন্ন কাজও করেন তিনি।
নিজের ফ্রিল্যান্স প্রশিক্ষণের শুরুর দিনগুলোর কথা তুলে ধরে ফেরদৌস জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেন্টর যখন কম্পিউটার রিফ্রেশ দিচ্ছিলেন, তখন আমি ভেবেছিলাম মেন্টর কিছু একটা করেছেন, যেটা আমি বারবার বুঝতে পারছি না। আমিও মেন্টরকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, এটা কী করলেন আমি তো মিস করছি। মেন্টর হেসে জানান, “কই কিছুই তো করিনি। যেটা আপনি মিস করবেন।” তারপর মেন্টর বললেন, “ও, এটা তো রিফ্রেশ।” তখন আমি বুঝতে পারি বিষয়টা।’
ফেরদৌস জাহান খান গ্রাফিক ডিজাইন, করপোরেট ইংলিশ ও মোশনের ওপরে দক্ষতা অর্জন করেছেন। শুধু তা–ই নয়, নিজে শিখে মেয়ে নোওরিন খানকেও শিখিয়েছেন। বর্তমানে নোওরিন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে পড়ালেখা করছেন।
ফেরদৌস জাহান খানের কাছ থেকে ফ্রিল্যান্স কাজ শিখেছেন তাঁর স্বামী রিয়াজ খানও।
ফেরদৌস জাহানের স্বামী রিয়াজ খান প্রথম আলোকে বলেন,‘এক্সেল গ্রাফিক ডিজাইন ও ওয়েব ডিজাইন শিখেছি। আসলে শেখার ব্যাপারটা আমরা আনন্দ নিয়েই করতাম। অনলাইনে শিখতাম কিন্তু ফেরদৌস জাহান এই বিষয়ে সাহায্য করতেন। আমরা তিনজন তিন রুমে ক্লাস করতাম। করোনার দিনগুলো এভাবে কেটেছে। আমাদের যে কাজ বা দক্ষতা বাড়িয়েছি, সেটা আমাদের চাকরিতে খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি, যা কাজের ক্ষেত্রকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র ফ ক ড জ ইন করছ ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বছরেও শেষ হয়নি ৩৭ মিটার সেতুর কাজ
ধর্মপাশা উপজেলা সদরের মধ্যবাজারে অবস্থিত মাত্র ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের শয়তানখালী সেতুর পুনর্নির্মাণ কাজ দুই বছরেরও শেষ হয়নি। নির্মাণকাজে অবহেলা ও ধীরগতির কারণে ঠিকাদারের ওপর অসন্তুষ্ট থাকলেও এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত সময়ে সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রায় ১৫-২০টি গ্রামের মানুষকে।
জানা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অর্ধশত বছরের পুরোনো শয়তানখালী সেতুটি দেবে যেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সেতুটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন সেতুটির ওপর দিয়ে পথচারী ও যান চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। দেবে যাওয়া পুরোনো সেতুর পরিবর্তে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০২৩ সালে এলজিইডির হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শয়তানখালী সেতু নির্মাণসহ ধর্মপাশা থানার সামনে থেকে বাহুটিয়াকান্দা পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ মিটার সড়ক ও একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার ৪৮০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ কাজ বাস্তবায়নে সুনামগঞ্জের মাহবুব এন্টারপ্রাইজকে ঠিকাদার নিযুক্ত করে ওই বছরের ২৬ মার্চ কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। একই বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সেতু ও সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। কাজে ধীরগতির অভিযোগ এনে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ধর্মপাশা বাজারের ব্যবসায়ীরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু এতেও কোনো হেলদোল নেই ঠিকাদারের। ঠিকাদার আগের মতোই ধীরগতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ধর্মপাশা বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, শয়তানখালী সেতুটি দ্রুত নির্মাণ না হওয়ায় মধ্যবাজারের ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
আরেক ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ বলেন, শয়তানখালী সেতুটির কারণে দীর্ঘ চার বছর ধরে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করা হলে মধ্যবাজারে ব্যবসায় গতি ফিরে আসবে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল মহসিন মো. মাহবুবের ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। প্রকল্প সাইটে ঠিকাদারের নিযুক্ত ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি রাজধানীর হাতিরঝিলের সেতুর আদলে তৈরি হচ্ছে। শুরুর দিকে মিস্ত্রি পাওয়া যাচ্ছিল না এবং গত বর্ষায় কাজ করতে না পারায় কাজ পিছিয়েছে। মাস দুয়েকের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বলেন, অত্যন্ত ধীরগতিতে সেতুটির নির্মাণকাজ চলতে থাকায় প্রকল্প পরিচালক কার্যাদেশ বাতিল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে কাজটি আরও পিছিয়ে যেতে পারে– এমন ভাবনা থেকে তা করা হয়নি। তাই ঠিকাদারকে সতর্ক করে দিয়ে আগামী ২৫ জুনের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে কার্যাদেশ বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।