মোগল শাহজাদার মসজিদ, এখন চলে ‘গরিবের দানে’
Published: 8th, March 2025 GMT
যার–তার মসজিদ নয়। শাহজাদার মসজিদ। যেনতেন প্রকারের শাহজাদা তিনি নন, ভারত সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র মোহাম্মদ আজম, মসজিদটি তৈরি করেছিলেন তিনি। প্রায় ৩৫০ বছরের পুরোনো এই শাহজাদার মসজিদে এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন আমজনতা। প্রতিবছরের মতো এবারেও খতম তারাবিহর জামাত হচ্ছে। প্রায় দেড় হাজার মুসল্লি তারাবিহর জামাতে অংশ নিচ্ছেন। মসজিদটি ‘লালবাগ মসজিদ’ নামে পরিচিত।
মোগল যুগের ঢাকার বিখ্যাত স্থাপনা— যাকে ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতীকও বলা যেতে পারে, সেই লালবাগ কেল্লার ভেতরে মসজিদটির অবস্থান। লালবাগ কেল্লার ইতিহাস অনেকেরই জানা। সুবাদার শায়েস্তা খানের প্রথম দফা সুবাদারির পর সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁর তৃতীয় পুত্র শাহজাদা মোহাম্মদ আজমকে বাংলার সুবাদার করে পাঠান।
মুনতাসীর মামুন তাঁর ‘ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’ বইতে লিখেছেন, শাহজাদা ঢাকা এসেছিলেন ১৬৭৮ সালের ২৯ জুলাই। তবে বাংলাপিডিয়ার মতে ২০ জুলাই। ঢাকায় তিনি বেশিকাল কাটাননি। ১৬৭৯ সালে তিনি চলে যান। তবে এই সময়ের মধ্যেই তিনি ঢাকার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে গেলেন এক অনন্য স্থাপনার জন্য। সেটি ‘কিল্লা আওরঙ্গবাদ’। পরে এই কিল্লা বা দুর্গটি এলাকার নামানুসারে ‘লালবাগ কেল্লা’ নামেই পরিচিত হয়ে ওঠে।
শাহজাদা আজম পিতার নামানুসারে এই দুর্গ নির্মাণ শুরু করলেও শেষ করতে পারেননি। তবে মসজিদটি তাঁর সময়ে নির্মিত হয়েছিল। শাহজাদা চলে যাওয়ার পরে শায়েস্তা খান ১৬৭৯ সালে দ্বিতীয় দফায় সুবাদার হয়ে ঢাকায় আসেন। তিনি এখানেই বসবাস ও তাঁর বিচারকাজ পরিচালনা করলেও দুর্গটির নির্মাণকাজ শেষ করেননি। এর পেছনের করুণ কাহিনিও অনেকের জানা। সুবাদারের পরমাসুন্দরী কন্যা ‘ইরান দুখত’ তথা বিবি পরীর বিয়ের ঠিকঠাক ছিল শাহজাদা আজমের সঙ্গে। কিন্তু দুর্গ নির্মাণকালেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। অনেকের অনুমান এ কারণে দুর্গটিকে সুবাদার শায়েস্তা খান ‘অপয়া’ মনে করতেন বলে এটি আর শেষ করা করেনি।
মোগলরীতি অনুসারে দুর্গ মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট। মাঝেরটি বড় আর পাশের দুটি একটু ছোট সম–আকারের। চার কোণে চারটি বুরুজ। গম্বুজগুলো মসজিদের ভেতরে অষ্টকৌণিক ড্রামের আকারে নির্মিতচন্দনের দরজা, সোনার গম্বুজসুবাদার শায়েস্তা খান লালবাগ দুর্গের কাজ শেষ করেননি বটে, কিন্তু প্রিয় কন্যার কবরের ওপর মোগলরীতির এক অনিন্দ্যসুন্দর সৌধ নির্মাণ করেন—যেটি এখন ‘পরী বিবির মাজার’ নামে পরিচিত। সৌধটি নির্মাণের জন্য সুবাদার সুদূর জয়পুর থেকে সাদা মার্বেল পাথর, রাজমহল থেকে বিশেষ ধরনের পাথর ও বর্তমান উত্তর প্রদেশের চুনার থেকে বেলে পাথর আনিয়েছিলেন। এর দরজা ছিল চন্দনকাঠের আর গম্বুজটি ছিল সোনায় মোড়ানো, সেসব বহু আগেই লুটপাট হয়ে গেছে।
শাহজাদার মসজিদলালবাগ দুর্গের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর ভেতরের প্রধান তিনটি স্থাপনা মাঝখানে একই সরল রেখা বরাবর। পূর্ব প্রান্তে দ্বিতল দিওয়ান ও হাম্মামখানা, মাঝখানে পরী বিবির মাজার ও পশ্চিম প্রান্তে দুর্গ মসজিদ। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া তাঁর বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ বইতে উল্লেখ করেছেন শাহজাদা আজম বাংলার সুবাদার থাকাকালে ১৬৭৮-৭৯ খ্রিষ্টাব্দে এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন বলে বলা হয়ে থাকে। তবে এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এ এইচ দানি তাঁর ‘কালের সাক্ষী: ঢাকা’ বইয়ে লিখেছেন, কথিত আছে শাহজাদা মোহাম্মদ আজম এই মসজিদ তৈরি করেছিলেন। মসজিদের নির্মাণ কৌশল থেকে এ সত্য প্রমাণিত হয়। বাংলাপিডিয়াতেও বলা হয়েছে, শাহজাদা আজম দুর্গ অভ্যন্তরে দু–একটি সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যমোগলরীতি অনুসারে দুর্গ মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট। মাঝেরটি বড় আর পাশের দুটি একটু ছোট সম–আকারের। চার কোণে চারটি বুরুজ। গম্বুজগুলো মসজিদের ভেতরে অষ্টকৌণিক ড্রামের আকারে নির্মিত। ভেতরে পাতার নকশা করা। দেয়ালগুলোতে খিলান এবং আয়ত ও বর্গক্ষেত্রের নকশায় অলংকৃত। পশ্চিমে দেয়ালে তিনটি মেহরাব। উত্তর ও দক্ষিণের দরজা দুটি নকশা করা লোহার জাল দিয়ে এখন বন্ধ করা। পূর্বদিকে তিনটি দরজা। বড় দরজাটি মূল মেহরাব বরাবর। দরজা ও মেহরাব নকশা করা খিলানযুক্ত অর্ধগম্বুজ আকারের। পূর্ব ও পশ্চিমের দেয়ালে তিনটি করে রয়েছে ছয়টি কুলুঙ্গি। পুরো মসজিদের সামনে এবং দুই পাশের দেয়াল ‘বন্ধ খিলান’ নকশায় অলংকৃত।
লালবাগ মসজিদের ভেতরের একাংশ। উত্তর ও দক্ষিণের দরজা দুটি নকশা করা লোহার জাল দিয়ে এখন বন্ধ করা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ কর ছ ল ন মসজ দ র গ মসজ দ গম ব জ শ ষ কর র দরজ
এছাড়াও পড়ুন:
উইলিয়ামস-ওয়েলচের জুটিতে পঞ্চাশ, জুটি ভাঙতে মরিয়া বাংলাদেশ
মধ্যাহ্ন বিরতির পর শতরান পেরিয়ে এগোচ্ছে জিম্বাবুয়ে। ওয়েলচ-উইলিয়ামস জুটিও ইতোমধ্যে পঞ্চাশ পেরিয়েছে। ওয়েলচ ৪৬ ও উইলিয়ামস ২৯ রানে ব্যাট করছেন। ৪৩ ওভার শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১২৬ রান। বাংলাদেশ জুটি ভাঙতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
প্রথম সেশনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি দুই উইকেট