রাজশাহীতে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তিনটি মোটরসাইকেল। এ ঘটনায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একজন সদস্যসহ চারজন আহত হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে মহানগর যুব মহিলা দলের সহ–ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক লাভলীসহ তাঁর অনুসারীরা কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বহুতল ভবন ঘেরাও করেন। ভবনটির একটি ফ্ল্যাটে নগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বাবু ওরফে ব্যাটারি বাবু পরিবারসহ থাকেন। আওয়ামী সরকারের পতনের পর ব্যাটারি বাবু ও তাঁর ভাই সাব্বির বাবুর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

লাভলীর দাবি, তাঁরা ভবনটি ঘিরে রাখলে যৌথ বাহিনী অভিযানে আসে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে অভিযান চালিয়ে ভবনে মোস্তাককে পাওয়া যায়নি। যদিও ভবনের নিরাপত্তা প্রহরীর খাতায় প্রবেশকারী হিসেবে মোস্তাকের নাম দেখা গেছে। এছাড়া সিসিটিভির ফুটেজেও মোস্তাককে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ভবনে ঢুকতে দেখা গেছে।

মোস্তাক আহমেদকে না পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভবনটি ঘিরে রাখে। পরে সেখান থেকে মোস্তাক আহমেদের ভাই সাব্বির বাবুকে গ্রেপ্তার করে।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, মোস্তাককে না পাওয়ার জন্য সাবেক যুবদল নেতা মারুফ হোসেন জীবনকে দায়ী করেন লাভলী। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মারুফের লোকজন শুক্রবার সন্ধ্যায় দড়িখড়বোনা এলাকায় লাভলীর বাড়িতে হামলা করেন। পরে লাভলীর অনুসারীরা দড়িখড়বোনা রেল লাইনের পাশে মারুফের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এরপর দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

হামলায় মহিলা দলের নেত্রী লাভলী, তাঁর আড়াই বছরের মেয়ে, এসবি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন ও রেলওয়ের কর্মচারী মো.

রনি আহত হয়েছেন। তাঁরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে সংঘর্ষের সময় দড়িখড়বোনা এলাকায় তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেল আজকের পত্রিকার রাজশাহীর মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার জাহিদ হাসানের। তিনি ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন।

দীর্ঘ সময় ধরে দড়িখড়বোনা, উপশহর মোড়, রেলগেট, সপুরা ও শালবাগান এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এ সময় অনেকের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে। কয়েকটি হাতবোমারও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সংঘর্ষ চলার অনেক সময় পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি।

এদিকে সংঘর্ষের পর রাত সাড়ে ১১টায় নগরের মিয়াপাড়া এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন মহিলা দলের নেত্রী লাভলী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদের ভবন ঘেরাও করা এবং তাঁর ভাইকে পুলিশে তুলে দেওয়ায় বিএনপির লোকজন তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন।

লাভলী আরও বলেন, সাব্বিরকে পুলিশে তুলে দেওয়ার পর মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্যসচিব মারুফ হোসেন তাকে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে তিনি যেন এটা নিয়ে ঝামেলা না করেন। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর বাসায় একই প্রস্তাব আনা হয়েছিল। সেটি ফিরিয়ে দেওয়ার পর তাঁর বাসায় হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মারুফ হোসেনের মোবাইলে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তাঁর ছোটভাই পরিচয় দিয়ে সনি নামের এক ব্যক্তি ফোন ধরেন। তিনি বলেন, লাভলীর ভাই তাঁতী লীগ আর ছেলে যুবলীগ করত। তাদের ধরার জন্য ছাত্রদলের ছেলেরা গিয়েছিল। তারপর মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটেনি।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এলাকার পরিস্থিতি এখন থমথমে আছে।

এ বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এটা বিএনপির দুই গ্রুপের কোনো সংঘর্ষের ঘটনা নয়। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম স ত ক আহম দ ব এনপ র দ ই স ঘর ষ র এল ক য় র ঘটন আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

জবির লংমার্চে পুলিশের বাধা, স্মারকলিপি দেবে প্রতিনিধিদল

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিনের সমর্থনে আয়োজিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে তাঁতীবাজার মোড় থেকে তারা লংমার্চ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। 

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে ক্যাম্পাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের দূতাবাসের উদ্দেশ্যে এ পদযাত্রা শুরু করেন তারা।

তবে আজ থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার কথা উল্লেখ করে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে অনুরোধ করে। পুলিশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিষয়টির গুরুত্‌ব অনুধাবন করে বিক্ষোভকারীরা তাঁতীবাজার মোড় থেকে রায়সাহেব বাজার দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। 

এ সময় ‘ফ্রম দ্যা রিভার টু দ্যা সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘ইসরাইলের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘ইসরাইলি আগ্রাসন, বন্ধ করো করতে হবে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা। এ ছাড়াও তাদের হাতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মার্কিন দূতাবাস ও সৌদি আরবের দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদান করবে প্রতিনিধিদল। স্মারকলিপিগুলো বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় লেখা হয়েছে। 

ইসলামী ছাত্রশিবিরের জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “আমরা মুসলিম জাতি, খালিদ বিন ওয়ালিদের উত্তরসূরি। কিন্তু আমরা তা ভুলে গেছি। আজ আমরা শুধু ফতোয়াবাজিতে ব্যস্ত। এরই সুযোগে ইহুদি-খ্রিস্টানরা মুসলিম ভাই-বোনদের হত্যা করছে। আমি মুসলিম যুবকদের জাগরণের আহ্বান জানাচ্ছি।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, “যদি গাজার ফিলিস্তিনদের উপর বর্বরতা বন্ধ না হয়, তাহলে জাতিসংঘের অফিসে পরের সপ্তাহে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। আমরা শিক্ষক সমিতি গাজায় গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”

এর আগে গত সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’র প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সংহতি সমাবেশে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।

তিন দফার মধ্যে রয়েছে—গাজায় বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানো, মার্কিন দূতাবাসের উদ্দেশে লংমার্চ ও স্মারকলিপি দেওয়া এবং দেশে ইসরায়েলি পণ্য নিষিদ্ধ করা।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ