Samakal:
2025-04-28@09:22:21 GMT

পিছিয়ে পাহাড়ের আদিবাসী নারী

Published: 7th, March 2025 GMT

পিছিয়ে পাহাড়ের আদিবাসী নারী

একজন ক্ষুদ্র কাঁচা তরকারি ব্যবসায়ী মুন্নি চাকমা (৩৮)। চার বছর আগে তাঁর স্বামী মারা গেছেন। এর পর সংসারের যাবতীয় ভার তাঁকে একাই সামলাতে হচ্ছে। রাঙামাটি শহরের কল্যাণপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ফুটপাতে পসরা বসিয়ে তরকারি বিক্রি করেন মুন্নি। দিনে যা আয়, তা দিয়ে চলে কোনোক্রমে সংসার। তাঁর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজে ডিগ্রিতে, আর ছোট মেয়ে রাঙামাটি সরকারি কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী। তাঁর আশা দুই মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে পরিবারের দুঃখ ঘোচাবে। 
কল্যাণপুর এলাকায় মুন্নির পাশে কাঁচা তরকারি বিক্রি করেন সান্ত্বনা চাকমা (৪০)।  তিন বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে গেছে সান্ত্বনার স্বামীর। বর্তমানে পঙ্গু অবস্থায় ঘরে পড়ে রয়েছেন।  কাঁচা তরকারি বিক্রির আয় দিয়েই তাঁর সংসার চলে। তাঁরও দুই সন্তান। দু’জনকেই লেখাপড়া করাচ্ছেন। কর্মজীবী নারী মুন্নি ও সান্ত্বনার বিশ্ব নারী দিবস সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। শুধু তারা জানেন, তরিতরকারি বিক্রি করে দুই পয়সা আয় করে কীভাবে সংসার চালাবেন।
এমনই অবস্থায় পাহাড়ে আজ (শনিবার) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এবারে পাহাড়ে নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘নারী সমাজে ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে অধিকতর ভূমিকা রাখি’।
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এই তিনটি পার্বত্য জেলা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। এই অঞ্চলে রয়েছে এগারো ভাষাভাষী ১৫টি জাতিসত্ত্বা। পাহাড়ি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ভাষা, ঐতিহ্য, ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। আদিকাল থেকে এসব আদিবাসী জনগোষ্ঠী পাহাড়ে জুম চাষ করে এলেও কালের পরিবর্তনের সঙ্গে চাষ পদ্ধতি ও পেশার পরিবর্তন ঘটেছে। পুরুষের পাশাপাশি পাহাড়ি নারীরাও  পরিবারের আয়-উপার্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। 
বহুবিধ অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত পাহাড়ি নারীরা যেমন কর্মঠ, তেমনি সম্পৃক্ত হতে পারেন বিভিন্ন পেশা ও কাজকর্মে। গৃহস্থালির দৈনন্দিন কাজকর্মসহ পারিবারিক আয় থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, হস্ত ও ক্ষুদ্রশিল্প, আউটসোর্সিং, চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় জড়িত হয়ে উপার্জন করছেন। 
একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ৮০ শতাংশের বেশি নারী ঘরের বাইরে কাজ করে থাকেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পাহাড়ি নারীদের সম্পত্তির অধিকার, ক্ষমতায়ন, সমতা, শ্রমের মজুরি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে এখনও পেছিয়ে রয়েছেন। 
বাঘাইছড়ি ইউপির নারী ওয়ার্ড মেম্বার রাশিকা চাকমা জানান, তিনি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলেই হয়তো সমাজে তাঁর অবস্থান ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু গ্রামে যারা সাধারণ নারী রয়েছেন, পরিবারে তাদের সিদ্ধান্ত বা মতামত গ্রহণসহ সবকিছুতেই পিছিয়ে রাখা হয়েছে। 
উইমেন্স রিসোর্স নেটওয়ার্কের (ডব্লিউ আর এন) কোর মেম্বার নুকু চাকমা মনে করেন, পাহাড়ি সমাজে নারী-পুরুষের সমান অধিকার না থাকায় নারীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার নেই। এ অধিকার পেলে নারীদের ক্ষমতায়ন হতো। 
সিএইচটি নারী হেডম্যান-কার্বারি নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া ত্রিপুরা বলেন, নারী হেডম্যান-কার্বারিদের অংশগ্রহণ বাড়লেও একজন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য ভূমির অধিকার ও বিয়ের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হয়নি। 
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, দেশে নারী সহিংসতা ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও তা কার্যকর নয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এখনও নারীরা পথেঘাটে পোশাক-আশাক, স্বাধীনতা নিয়ে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। সারাদেশে নারীদের যেখানে অবস্থা খারাপ, সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে নারীদের আরও অবস্থা খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তরক র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না: প্রধান উপদেষ্টা

জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে  কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে
  • জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না
  • জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না: প্রধান উপদেষ্টা
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে: ড. ইউনূস
  • অন্তর্বর্তী সরকারকে মানুষ এখনও ভালো সমাধান মনে করছে: আল জাজিরাকে
  • চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষা আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে
  • মালদ্বীপে বিদেশি কর্মীরা চলতি মাসের মধ্যে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন না করলে বহিষ্কার
  • ফাইনালে অনিশ্চিত এমবাপ্পে, বড় ধাক্কা রিয়ালের
  • কুয়েটের অচলাবস্থা কাটেনি
  • খায়রুল হক ও আসাদুজ্জামান এখনও কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে না, প্রশ্ন রিজভীর