রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং তাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চক্রের হাত ধরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় তাণ্ডব চালাচ্ছে মাটিখেকোরা। এমনটাই দাবি স্থানীয়দের। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করায় ফসলহানির শঙ্কা বাড়ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
শীতের শুরু থেকে বিভিন্ন হাওর, সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে শুরু হয়েছে মাটি লুটের উৎসব। এর মাঝে সবচেয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ার প্রবণতা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এক্সক্যাভেটরের মাধ্যমে এসব জমি থেকে কেটে নেওয়া মাটি ইটভাটা ও বসতভিটার জমি ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কৃষিজমি নষ্টসহ জমির ফসল উৎপাদনের উপযোগিতা হারিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আর্থিকভাবে সামান্য লাভের আশায় মাটিখেকো চক্রের প্রলোভনে পড়ে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছেন অনেক কৃষক নিজেই। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপকহারে কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তারা বলছে, এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিই উর্বর পলিমাটিসমৃদ্ধ। এসব জমিতে বছরে দুটি মৌসুমে ধান রোপণ করা হয় আউশ ও আমন। তবে এভাবে ফসলি জমি নষ্ট করা হলে ভবিষ্যতে সংকটের মুখে পড়বে।
উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে দুই ও তিন ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। বড় বড় ট্রাকে এসব মাটি পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও। নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এসব রাস্তায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীদের একটি চক্র প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে দেড় ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে ইটভাটায় বিক্রি করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকতা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, টপ সয়েল জমির প্রাণ। জমির ওপর থেকে ৬ ইঞ্চিই হলো টপ সয়েল। ওই অংশেই থাকে মূল জৈবশক্তি। কৃষকরা জমির টপ সয়েল বিক্রি করে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গাজার জন্য ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির ডাক এলো কোথা থেকে?

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে চলছে বিক্ষোভ। 'নো ওয়ার্ক, নো স্কুল' কর্মসূচির সাথে সংহতি জানিয়ে পালন করা হচ্ছে সাধারণ ধর্মঘট। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই কর্মসূচি কোথা থেকে শুরু হলো, তা জানেন না অনেকেই। 

শনিবার (৫ এপ্রিল) প্রথম এই কর্মসূচির আহ্বান করা হয় 'ট্রান্সলেটিং ফালাস্তিন' নামের একটি ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট থেকে। একাউন্টটি সাধারণত গাজায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কনটেন্ট পোস্ট করে থাকে। শনিবার তারা একটি ছবি পোস্ট করে যাতে ফিলিস্তিনের পতাকাসহ লেখা থাকে "দ্য ওয়ার্লড স্টপস ফর গাজা। নো ওয়ার্ক। নো স্কুল। আনটিল দ্য জেনোসাইড স্টপস।'

৭ এপ্রিল সাধারণ ধর্মঘটে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে পোস্ট করা হয় ইংরেজি এবং আরবি দুই ভাষাতেই। পৌনে চার লাখ ফলোয়ারের এই ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট থেকে দ্রুতই ছড়িয়ে যায় এই ধর্মঘটের আহ্বান। সংহতি জানিয়ে সেই পোস্টের কমেন্টে অনেকেই জানান, তারা নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখবেন এবং কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকবেন। 

বাংলাদেশেও 'দ্য ওয়ার্লড স্টপস ফর গাজা' কর্মসূচির সাথে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে সোমবার তাদের কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ এবং মিছিল করছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

গাজার জন্য 'নো ওয়ার্ক, নো স্কুল' কর্মসূচিটি অবশ্য একেবারেই নতুন নয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর ওই বছরই ১১ ডিসেম্বর এমন একটি ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাপী এই ধর্মঘটের মূলমন্ত্র ছিল 'নো ওয়ার্ক, নো স্কুল, নো শপিং।' শুধু ক্লাস বা অফিস বর্জন নয়, সেদিন কোনোরকম কেনাকাটাও করতে নিরুৎসাহিত করা হয়। কর্মসূচিতে অংশ নিতে হলে সেদিন অফলাইন বা অনলাইনে কোনো কেনাকাটা করা যাবে না, নিজের ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করা যাবে না, ফেইসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট ডিএক্টিভেট করতে হবে, এবং 'স্ট্রাইকফরগাজা' হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে হবে টুইটারে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ