Samakal:
2025-04-11@23:02:36 GMT

প্রতিপাদ্য কার্যকর হউক

Published: 7th, March 2025 GMT

প্রতিপাদ্য কার্যকর হউক

আজিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও জাতিসংঘ স্বীকৃত দিবসটি উদযাপিত হইতেছে। রমজানের কারণে অন্যান্য বৎসরের ন্যায় আড়ম্বর না থাকিলেও এই বৎসর দিবসটি উদযাপনের গুরুত্ব কিছুমাত্র কম নহে। বিশেষ করিয়া একদিকে যখন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এই বার নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করিয়াছে–‘অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়ন/ নারী ও কন্যার উন্নয়ন’ এবং অন্যদিকে অনেকাংশে সরকারেরই জোরদার ভূমিকার অনুপস্থিতে শহরে-গ্রামে নারীর বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ বিভিন্ন প্রকার সহিংসতা চলিতেছে, তখন নারী দিবস চিরাচরিত আনুষ্ঠানিকতার ঊর্ধ্বে উঠিয়া আমাদের নিকট বিশেষ তাৎপর্য লইয়া হাজির হয়। আমাদের জানাইয়া দেয় সংবিধানস্বীকৃত নারীর অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করিবার জন্য এখনও বহু পথ পাড়ি দিতে হইবে।

সন্দেহ নাই, এই দেশে বিশেষত গত তিন দশকে রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি বিশ্বের সমপর্যায়ের তো বটেই, আর্থিক বা অন্যান্য বিবেচনায় অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রেরও নিকট রীতিমতো ঈর্ষার বিষয়। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে নেতৃস্থানীয় ভূমিকাও লক্ষণীয়। প্রশাসনের সর্বস্তরে নারীর উপস্থিতি উক্ত সময়ে উত্তরোত্তর বাড়িয়াছে। সেবা খাতসহ অন্যান্য চাকুরিতেও তাহারা আগাইয়া যাইতেছে। আমাদের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প বলিতে গেলে নারীরই উপর দাঁড়াইয়া আছে। কৃষিতেও নারীর অংশগ্রহণ অতীতের যে কোনো সময় অপেক্ষা বেশি। প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ কন্যাশিশুর অংশগ্রহণ ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাইয়াছে। মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে নারী শিক্ষার্থীরা সাফল্য দেখাইতেছে। ছেলেদের পাশাপাশি নারীরা খেলাধুলায় যে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখিতেছে উহাও বিশ্বে অন্যতম আলোচনার বিষয়। কিন্তু ইদানীং খোদ রাজধানীতে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে কতিপয় ধর্মীয় বিভ্রান্তির শিকার মহল কর্তৃক নারীরা যেই সকল বাধা ও নিপীড়নমূলক ঘটনার শিকার হইতেছে, ইহাতে এই সন্দেহ পোষণ অমূলক নহে যে, নারীর অগ্রগতি বুঝি অচিরেই থামিয়া যাইবে, এমনকি নারী বুঝি সেই শত বৎসর পূর্বের পুরুষতন্ত্রের সৃষ্ট ঘেরাটোপেই আটকা পড়িবে। দেশে গত কয়েকদিন যাবৎ বাধা ও হুমকির মুখে একের পর এক নারীকেন্দ্রিক আয়োজন বন্ধ হইবার ঘটনা ঘটিয়াছে। কথিত তৌহিদি জনতা নামক গোষ্ঠীর হুমকির মুখে জয়পুরহাট, দিনাজপুরসহ বহু স্থানে নারীদের ফুটবল খেলা বন্ধ করিয়া দিতে হইয়াছে। অতি সম্প্রতি অনুরূপ গোষ্ঠীর হুমকির মুখে ঢাকা, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন স্থানে বিনোদন জগতের নারীরা তাহাদের নির্ধারিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হইতে পারেন নাই। প্রতিষ্ঠার পর হইতে জাতির বাতিঘর রূপে অভিহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় প্রতিষ্ঠানেও নারী শিক্ষার্থীর পোশাক পছন্দের স্বাধীনতা ওই একই গোষ্ঠীর দ্বারা লঙ্ঘিত হইয়াছে।

নারী অধীকার খর্ব করিবার এহেন ঘটনাবলি এমন সময়ে ঘটিতেছে যখন স্বাধীনতার ৫৪ বৎসর পরও নারীদের রাষ্ট্র ও সমাজের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যজাত নানাপ্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে হইতেছে। ২০২২ সালে ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নারীদের অপুষ্টির দুষ্টচক্রে আটকা পড়িবার কথা জানাইয়াছিল। ইহাতে উন্নতি ঘটিয়াছে বলিয়া কোনো তথ্য নাই। সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার প্রশ্নেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নাই। বেসরকারি বিভিন্ন চাকুরিতে এবং এমনকি ফুটবল ও ক্রিকেটের ন্যায় ক্রীড়াক্ষেত্রেও সতীর্থ পুরুষ খেলোয়াড়দের তুলনায় নারীর বেতন কম। বিশেষত নগরীতে নারীর জন্য নিরাপদ শৌচাগারের ব্যবস্থা নাই, ট্রেনে-বাসে নারী ও কন্যাশিশুদের ধর্ষণের ঘটনা কম নহে। স্কুল-কলেজ বা কর্মস্থলগামী নারীর জন্য গণপরিবহন যেন এক আতঙ্কের নাম। বাল্যবিবাহের ব্যাপকতাও উদ্বেগ ছড়াইয়া যাইতেছে।

অদ্যাবধি ক্ষমতাসীন প্রায় সকল সরকারই অন্তত মৌখিকভাবে স্বীকার করিয়াছে, নারীর জন্য বিনিয়োগ কার্যত দেশ ও জাতির জন্য বিনিয়োগ। উপরন্তু, প্রতি বৎসর ৮ মার্চের আলোচনা সভায়ও সকল স্থানে নারীর নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। তাই প্রত্যাশা, এই বারের নারী দিবসে কথার ফুলঝুরির পরিবর্তে দিবসটির প্রতিপাদ্য কার্যকর হউক।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন য ন য র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করুন

দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ কিছুতেই বন্ধ হইতেছে না। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মঙ্গল ও বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত পাঁচটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়াছে। যাহার মধ্যে তিনটিই ঘটিয়াছে এক দিনে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নরসিংদীর রায়পুরায় দুই স্কুলছাত্রী ঘুরিতে গিয়া আটজন দ্বারা দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হইয়াছে। একই দিন মধ্যাহ্নে নরসিংদীরই শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের কুন্দারপাড়া গ্রামে এবং রাত্রিকালে নেত্রকোনার আটপাড়ায় ১২ বৎসর বয়সী দুই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়। বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চকলেটের প্রলোভন দেখাইয়া ৫ বৎসরের এক শিশুকে ধর্ষণ করা হইয়াছে বলিয়া অভিযোগ। একই দিনে পিরোজপুরের নাজিরপুরে পুত্রবধূকে ঘুমের ঔষধ খাওয়াইয়া ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুরের বিরুদ্ধে মামলা হইয়াছে। শুধু ধর্ষণ নহে; পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাতিলাখালী এলাকায় বুধবার ১১ বৎসরের শিশুকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে আইয়ুব আলী নামে একজনকে গণপিটুনির পর পুলিশে সোপর্দ করিয়াছেন এলাকাবাসী। একই দিন সকালে মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় বান্দুটিয়া গ্রামে এক মুয়াজ্জিনের বিরুদ্ধে ৭ বৎসরের শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠিয়াছে। আমরা কিছুদিন পূর্বে আছিয়া নামে এক শিশুকে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াইতে গিয়া ধর্ষণের শিকার ও মৃত্যুবরণ করিতে দেখিয়াছি। একই সময়ে পটুয়াখালী, নোয়াখালীসহ আরও কয়েক স্থানে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়াছে।

আছিয়ার ঘটনায় রাজধানীসহ সমগ্র দেশে আমরা এহেন পাশবিক নির্যাতন বন্ধের দাবিতে জনগণের বিভিন্ন অংশকে ফুঁসিয়া উঠিতে দেখিয়াছি। যাহার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারও অতি তৎপরতার সহিত সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ও তাহার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করিয়াছে। কিন্তু দুঃখজনক, উক্ত প্রতিবাদ থামিয়া যাইবার পরপর যেন সকল কিছুই পূর্ববৎ চলিতেছে। যাহার প্রতিফলস্বরূপ আলোচ্য ধর্ষণের ঘটনাগুলি ঘটিয়াছে। শুধু উহাই নহে; নরসিংদীর দুই স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা প্রভাবশালী বিধায় যথারীতি ভুক্তভোগী দরিদ্র পরিবার দুইটি আইনের আশ্রয় গ্রহণের পরিবর্তে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়। তদুপরি ঘটনা প্রকাশ হইবার পর স্থানীয় জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলি মামলা করিলেও অদ্যাবধি কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয় নাই। এই ঘটনায় প্রমাণ হয়– আছিয়ার মৃত্যু জনগণকে বিক্ষোভে শামিল হইতে তাড়িত করিলেও অন্তত পুলিশের চৈতন্যোদয় ঘটাইতে পারে নাই। এই বিষয়ে সরকারও যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে অপরাধীদের মনে ভীতি সঞ্চার এবং ভুক্তভোগীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইনের দ্বারস্থ হইতে উদ্বুদ্ধ করিতে সক্ষম হয় নাই। প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, অতীতের বহু ঘটনার ন্যায় এই ঘটনায়ও ভুক্তভোগী পরিবারদ্বয় সামাজিক কলঙ্ক হইতে কন্যাসন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষাকল্পে ধর্ষণের ঘটনা চাপিয়া যাইবার চেষ্টা করিয়াছে। ইহাতে স্পষ্ট, যেই কোনো নারী নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগীকে দোষারোপের যেই অপসংস্কৃতি সমাজে শিকড় গাড়িয়াছে, উহার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারাভিযানও উচ্চকণ্ঠে শুরু করা যায় নাই।

অনস্বীকার্য, ধর্ষণের ন্যায় জঘন্য অপরাধ দেশে দীর্ঘকালব্যাপী চলমান। এই ক্ষেত্রে পূর্বের সরকারসমূহের অসংবেদনশীলতা এবং অপরাধীদের প্রশ্রয়দানের মানসিকতা ইন্ধন জোগাইয়াছে। সুতরাং সমাজকে রজনীকালেই এহেন অপরাধ হইতে মুক্ত করা অসম্ভব। কিন্তু রায়পুরার ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করিতে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদিচ্ছাই যথেষ্ট। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ যেই সকল প্রভাবশালী মামলা না করিবার জন্য ভুক্তভোগীদের পিতার উপর চাপ প্রয়োগ করিয়াছিলেন, তাহাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণও জটিল কিছু নহে। প্রতিবেদনমতে, আসামিরা দুই কন্যার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিতেছে। ফলে পরিবার দুইটি এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করিতেছে। আসামি ও উক্ত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করিলে আলোচ্য পরিবার দুইটি অন্তত বল-ভরসা পাইত। ইহা অন্যদেরও ভবিষ্যতে একই রকম প্রতিকূলতা মোকাবিলা করিতে সাহস জোগাইত। আমাদের প্রত্যাশা, ধর্ষণের ন্যায় গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে সরকার প্রকৃতই শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করিবে। অপরাধী মাত্রকেই দ্রুত আইনের আওতায় আনিবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করুন