এ বছর আমরা এমন একটি সময়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছি যখন নারী অধিকারের পক্ষে কথা বলার চমৎকার একটি গণতান্ত্রিক জায়গা তৈরি হয়েছে। নারী অধিকারের পক্ষে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন এমন কয়েকজন বরেণ্য নারী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। তাই আমরা খুবই আশাবাদী দীর্ঘদিন ধরে নারী-পুরুষ সমতায়নে যে বৈষম্য বা প্রতিবন্ধকতা দেখে আসছি, বিশেষ করে ভূমিতে নারীর অধিকারহীনতার ক্ষেত্রে, সে বিষয়ে বর্তমান সরকার দ্রুতই কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য– ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন, নারী ও কন্যার উন্নয়ন’। এই প্রতিপাদ্য বিশ্লেষণে প্রথমেই যেটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হলো, নারীর ক্ষমতায়নই নারীর উন্নয়ন। কিন্তু আমরা দেখেছি অধিকার ও সমতার উন্নয়ন ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। এর সঙ্গে আমরা যেটি যোগ করতে চাই তা হলো, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে তার অর্থনৈতিক ক্ষমতাকে বাদ দিয়ে তা সম্ভব নয়। অন্যদিকে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রশ্নে ভূমিতে তাদের অধিকার ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণ মানুষের ভূমি অধিকার নিয়ে এএলআরডির দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সমতায়নের পথে একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা হলো ভূমিতে নারীর অধিকারহীনতা। ভূমিতে নারীর মালিকানা না থাকায় তার অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথটিও দুরূহ হয়ে পড়ে। নারী একদিকে সমানাধিকার পাচ্ছে না, অন্যদিকে প্রাপ্য যেটুকু তা পেতেও নারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
গ্রামাঞ্চলে কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ নারীই ভূমিহীন। বেসরকারি গবেষণা অনুযায়ী এ দেশে পুরুষরা ৯৬ শতাংশ জমির মালিক, যেখানে নারীর মালিকানায় রয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ জমি। ভূমি অধিকারে নারীর এই দুর্বল পরিস্থিতির পেছনে রয়েছে পিতৃতান্ত্রিকতা, ভূমি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব, ভূমিদস্যুর প্রভাব, দুর্নীতি, বৈষম্যমূলক আইন, নীতি ইত্যাদি। এই বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন নারীর ভূমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্যতম মাধ্যম হলো খাসজমি।
দরিদ্র কৃষিজীবীদের ভূমিহীনতা দূর করার ক্ষেত্রে কৃষি খাসজমি বিতরণ ছিল সরকারের একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। ২০১৪ সাল থেকে অঘোষিতভাবেই কৃষি খাসজমির স্থায়ী বরাদ্দ ও একসনা বন্দোবস্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক পরিপত্র জারি হয়নি; বরং ‘ওপরের নির্দেশে’ অর্থাৎ কেবল মৌখিক নির্দেশনার মাধ্যমে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলমান নীতিমালা স্থগিত রাখা হয়েছে। উন্নয়নের অজুহাত দেখিয়ে দরিদ্র ভূমিহীনদের বন্দোবস্ত দেওয়া বন্ধ থাকলেও সংরক্ষিত খাসজমি কিন্তু অব্যবহৃত পড়ে নেই; প্রভাবশালীরা ঠিকই সেগুলো ব্যবহার করছে। গৃহহীনদের টেকসই গৃহ প্রদানের যে আশ্রয়ণ প্রকল্প, তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গ্রামের প্রান্তিক কৃষিজীবীদের কাছে কৃষিজমির কোনো বিকল্প হতে পারে না। আমরা অনতিবিলম্বে কৃষি খাসজমি বিতরণ পুনরায় চালু করার দাবি জানাচ্ছি। কৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালার (১৯৯৭) অগ্রাধিকার তালিকায় বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীর আবেদনের ক্ষেত্রে সক্ষম পুত্রসন্তান থাকার বিধান রয়েছে; যা নারীর জন্য খুবই অসংবেদনশীল, অবমাননাকর। এই নীতিমালায় উল্লিখিত শর্তাবলির কারণে বিধবা বা একক নারী ভূমি অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পূর্ববর্তী সব সরকারের নীতিনির্ধারকরা নীতিগতভাবে এই শর্ত বাতিলের বিষয়ে একমত পোষণ করলেও দাপ্তরিকভাবে তা কার্যকর হয়নি। আমরা মনে করি, এই বিধান বাতিলে আইনগত জটিলতা নেই এবং এটি একটি নির্বাহী আদেশেই বাতিল করা সম্ভব এবং তার জন্য সংসদীয় বৈঠকের প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশে কর্মক্ষম নারীর মধ্যে কৃষিকাজে সবচেয়ে বেশি নারী নিয়োজিত। যা দিন দিন আরও বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের (২০২২) তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশের কৃষি শ্রমশক্তির ৫৮ শতাংশই নারী এবং মোট নারী শ্রমশক্তির সিংহভাগই (৭৪%) কৃষিতে নিয়োজিত। কিন্তু কৃষিতে নারীর এ অবদান খুব একটা স্বীকার করা হয় না। এমনকি জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১– এ দুটি নীতিমালায় নারী কৃষককে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি, বরং সেখানে নারীকে কৃষিশ্রমিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির অভাব এবং পিতৃতান্ত্রিক আচরণের কারণেই সরকারি সেবাসমূহ ও কৃষিঋণ পাওয়াতে নারীর অন্তর্ভুক্তি বাধাগ্রস্ত হয়। মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা বিশ্বাস করি, নারী কৃষকের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান কৃষিতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জরুরি। তাই আমরা নারীকে কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ইউনিয়ন-উপজেলাভিত্তিক সমতল ও পাহাড়ে জুম চাষে নিয়োজিত আদিবাসী নারীসহ সব নারী কৃষকের তালিকা প্রণয়ন করে তা প্রকাশ করা এবং ওই তালিকা অনুযায়ী সরকারি সেবায় নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
নারী কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন। নারীর উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য প্রতিটি স্থানীয় বাজারে একটি নিরাপদ বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা দরকার। এ উদ্যোগ সমাজের বিভিন্ন দিক থেকে নারীর প্রতি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। এর মাধ্যমে নারীর সামাজিক মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
নারী ও কন্যার উন্নয়নের জন্য অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়নের যে প্রতিপাদ্য এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সরকার গ্রহণ করছে তার সঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক হলো সিডও সনদ-এর অনুচ্ছেদ ২ এবং ১৬ (১)(গ) থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার। কেননা সিডও সনদ-এর উল্লিখিত অনুচ্ছেদ থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করলে নারীর প্রতি সমতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকার আরও বাধ্যবাধকতার আওতায় আসবে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে সিডও সনদে অনুস্বাক্ষর করলেও এর অনুচ্ছেদ-২ এবং ১৬ ( ১)( গ) থেকে এখনও সংরক্ষণ প্রত্যাহার করেনি। সিডও কমিটি বাংলাদেশ-এর ওপর ৮ম পিরিয়ডিক রিপোর্টের (২০১৬) কনক্লুডিং অবজারভেশনে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিতে– এ দুটি ধারা থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করে। আমরা আশাবাদী যে, উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান সরকার নারী ও কন্যার উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
রওশন জাহান মনি: উপনির্বাহী পরিচালক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র র জন য উল ল খ সরক র খ সজম
এছাড়াও পড়ুন:
আজ টিভিতে যা দেখবেন (৮ এপ্রিল ২০২৫)
আইপিএল ও চ্যাম্পিয়নস লিগে আছে দুটি করে ম্যাচ।টেনিস
মন্তে–কার্লো মাস্টার্স
বিকেল ৩টা, সনি স্পোর্টস টেন ৫
কলকাতা নাইট রাইডার্স–লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস
বিকেল ৪টা, টি স্পোর্টস ও স্টার স্পোর্টস ২
পাঞ্জাব কিংস–চেন্নাই সুপার কিংস
রাত ৮টা, টি স্পোর্টস ও স্টার স্পোর্টস ১
জার্মানি–স্কটল্যান্ড
রাত ৯–৩০ মি., ফিফা+ ওয়েবসাইট
আর্সেনাল–রিয়াল মাদ্রিদ
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস টেন ২
বায়ার্ন মিউনিখ–ইন্টার মিলান
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস টেন ১