নতুন ছয়তলা দুটি ভবন। পরিপাটি একেকটি কক্ষ। কোনোটিতে চার, কোনোটাতে দুই, কোনোটিতে একক শয্যা। নামমাত্র খরচে ৯১০ জন কর্মজীবী নারীর বসবাস করার কথা। কিন্তু, রহস্যময় কারণে ফাঁকা পড়ে আছে সব ঘর। চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাট শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের ৫৮ কোটি টাকার প্রকল্পে মিলছে না সুফল।
নারীদের বসবাসের জন্য এখানে রয়েছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। থাকা-খাওয়ার জন্য রয়েছে পৃথক ডাইনিং, শ্রমিক প্রশিক্ষণ, বিনোদন ও পরিবারকল্যাণ সেবা সুবিধা। পাশে আরেক ভবনে ৫ শয্যার হাসপাতাল। চিকিৎসা দিতে নিয়োজিত আছেন চিকিৎসক ও নার্স।
এ বিষয়ে শ্রম অধিদপ্তরের প্রকল্প কর্মকর্তা মো.
তবে গণপূর্ত চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কিউ এম শাহজালাল মজুমদার বলেন, শ্রম অধিদপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো চিঠি আমি পাইনি। এ সম্পর্কে জানিও না।
গণপূর্তের প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজমল হক বলেন, শ্রম অধিদপ্তর থেকে এ ধরনের চিঠি এসেছে কিনা, মনে করতে পারছি না। প্রকল্প ও নকশা শ্রম অধিদপ্তরের, আমাদের কেন মান দেখতে হবে তা বুঝতে পারছি না। তাদের নকশা বিভাগ মান যাচাই করতে পারে। আমাদের কাছে আসার বিষয়টি বুঝতে পারছি না।
গত বুধবার নগরের কালুরঘাট বিএফআইডি রোডের শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, গেটে কোনো পাহারাদার নেই। ভেতরে ঢুকতে বাঁ পাশের ভবনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ধুলা ও ময়লা দেখা গেছে। শৌচাগারে ফিটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। তবে ফ্লোরে পড়া রং পরিষ্কার করা হয়নি। অন্য ভবনে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করায় প্রতিটি কক্ষ ধুলোয় একাকার।
শ্রম কল্যাণ সংগঠক মোহাম্মদ এমদাদুর রহমান জানান, হোস্টেল ভবনের নির্মাণকাজ অনেক আগে শেষ হয়েছে। শৌচাগারসহ ফিটিং ও ছোটখাটো কাজ ৬-৭ মাস আগে শেষ হয়েছে। কাজের মান ঠিক নাই এমন সন্দেহে নারীদের হোস্টেলে তুলতে সময় লাগছে।
চট্টগ্রাম শহরে ব্যাচেলর ফ্ল্যাট কিংবা বাসা ভাড়া পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় কর্মজীবী নারীদের। অনেককে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। এ বিষয়ে কালুরঘাট এপ্লিকা গার্মেন্টের কোয়ালিটি অফিসার নাজিয়া আফরোজ বলেন, শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র আমাদের জন্য হোস্টেল করেছে এ রকম তথ্য জানা নেই। হোস্টেলে ব্যয় কম ও পরিবেশ ভালো হলে অবশ্যই থাকব।
চট্টগ্রাম শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, দিনে তারা অফিস করলেও রাতে ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নেশাখোরদের নিরাপদ আড্ডার স্থানে পরিণত হয়ে এটি। ইদানীং আশপাশে চুরি বেড়েছে। হোস্টেলগুলো চালু না করলে ভেতরের পরিবেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে না।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) চট্টগ্রামের সভাপতি তপন দত্ত বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় হোস্টেলগুলো চালু করতে না পারাটা এক ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি। এভাবে ভবনগুলো কয়েক বছর পড়ে থাকলে জিনিসপত্র নষ্ট হবে, চুরি হবে, এর পর পরিত্যক্ত হয়ে সরকারের টাকা অপচয় হবে। কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে সুন্দর উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প গণপ র ত আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
জনমত জরিপগুলো কী বার্তা দেয়
সম্প্রতি নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে দেশের নাগরিক সমাজের ‘মূলধারা’ নির্বাচনের পক্ষে ভাষ্য তৈরি করছে। যুক্তি– গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্বাচনের বিকল্প নেই। সুতরাং অচিরেই নির্বাচন লাগবে। মজার বিষয়, সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন জরিপে দেশের ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ লোক সংস্কারের পর নির্বাচনের পক্ষে। জরিপগুলো পরিচালনা করেছে দৈনিক যুগান্তর, কালবেলা, খালেদ মুহিউদ্দীনের জানতে চাইসহ একাধিক সংবাদমাধ্যম।
নির্বাচন
কালবেলা পত্রিকার একটি অনলাইন জরিপে প্রশ্ন ছিল: ‘নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে গেলে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, সতর্ক করল বিএনপি। আপনিও কি তাই মনে করেন?’ ৮০ হাজার লোক এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। ৮২ শতাংশ ‘না’ এবং ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ। ২ শতাংশের মন্তব্য নেই।
খালেদ মুহিউদ্দীনের আরেকটি অনলাইন জরিপের প্রশ্ন ছিল: ‘ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন, এমন দাবি সামনে রেখে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। প্রিয় দর্শক, এই উদ্যোগ সমর্থন করেন কি?’ এই প্রশ্নের জবাবে ৭৭ শতাংশ ‘না’ ভোট দিয়েছে। ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে ২৩ শতাংশ। দৈনিক যুগান্তরের একটি অনলাইন জরিপের প্রশ্ন ছিল: ‘নববর্ষে জাতির আকাঙ্ক্ষা দ্রুত ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। রুহুল রিজভীর এই বক্তব্যকে কি সমর্থন করেন?’ ৮৫ শতাংশ ভোটার এই প্রশ্নের জবাবে ‘না’ ভোট দিয়েছে। ১৩ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ এবং ২ শতাংশ ‘মন্তব্য নেই’ জানিয়েছে।
শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শরিকদের প্রধান দাবি– শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা এবং আওয়ামী লীগের বিচার করা। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করছে। কালবেলা পত্রিকার এ সংক্রান্ত একটি অনলাইন জরিপের প্রশ্ন ছিল: ‘মোদির কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছেন ড. ইউনূস। ভারত কি শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে বলে মনে করেন?’ ৪৪ হাজার ভোটারের মধ্যে ৮৪ শতাংশ মনে করে– ‘ফেরত দেবে না’। ১৩ শতাংশ মনে করে– ‘ফেরত দেবে’। মাত্র ৩ শতাংশ ভোটারের মন্তব্য নেই। এতে দুই দেশের সম্পর্কের জটিলতার চিত্রই উঠে আসে, যেখানে হাসিনার বিচার করা দুরূহ বলেই মনে হচ্ছে।
সরকারের মেয়াদ
বর্তমানে রাজনীতিতে নির্বাচন ও সংস্কার বিতর্কে নতুনভাবে যোগ হয়েছে ড. ইউনূসের সরকার প্রসঙ্গ। গত সপ্তাহে ‘মার্চ ফর ড. ইউনূস’ লেখা ব্যানারযোগে এক ঝাঁক তরুণ ও কয়েকজন প্রবীণকে মাঠে তৎপর দেখা গেছে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন দিয়ে জনমত যাচাই করেছে দৈনিক যুগান্তর। জরিপের প্রশ্ন ছিল: ‘সাধারণ মানুষ চাচ্ছে এই সরকার আরো পাঁচ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাক। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের এই মন্তব্যের সাথে কি আপনি একমত?’ ৯০ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ ভোট দিয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাপারে এ ধরনের ফলাফল মূলত বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে জনঅসন্তোষের প্রতিফলন।
ভোটারের মনোভাব
অনলাইন জরিপের ভোটারদের মনোভাব বোঝার জন্য যুগান্তর পত্রিকার একটি জরিপ গুরুত্বপূর্ণ। এতে ভোটাররা কোনোভাবে পক্ষপাতদুষ্ট কিংবা হুজুগে কিনা, তার ইঙ্গিতও পাওয়া যায়। যেমন, ‘বিক্ষোভে গিয়ে যারা জুতার দোকানে লুটপাট করেছে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন?’ ৯৪ হাজার লোক এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। মুসলিমবিশ্বে ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে তীব্র মনোভাব গড়ে উঠেছে। দেশে সম্প্রতি একটি অংশ এই সুযোগে ইসরায়েলি পণ্যের কথা বলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে দোকান লুটপাট করেছে। সাধারণ মানুষ এ ধরনের হুজুগেপনার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে, যা জরিপেও উঠে এসেছে। ৯৪ শতাংশ ভোটার জড়িতদের শাস্তি দিতে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছে। মাত্র ৪ শতাংশ ভোটারের অবস্থান ‘উচিত না’। ২ শতাংশের মন্তব্য নেই।
সমাপনী বিশ্লেষণ প্রতিটা জরিপের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তেমনি অনলাইন জরিপেরও কিছু ঘাটতি থাকে। এখানে উপস্থাপিত জরিপগুলোর ফলাফল শেষ পর্যায়ে কমবেশি হতে পারে। তবে সম্ভাব্য ফলাফল স্পষ্ট। এ ধরনের জরিপের সঙ্গে সরাসরি স্মার্টফোন ব্যবহার ও ইন্টারনেটের সম্পর্ক রয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত থাকে ওই জনগোষ্ঠীর মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা, বয়স এবং সাম্প্রতিক আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ।
২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত জরিপমতে, দেশের ৭০ শতাংশ বা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি পরিবার একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে। তবে অর্ধেক পরিবার এখনও ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে না। দেশের ২ হাজার ৫৬৮টি এলাকার ৬১ হাজার ৬৩২টি পরিবার থেকে এসব তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে এই ফলাফল জানা গেছে। দেশের একটি সাংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ফোন ও ব্রডব্যান্ড মিলিয়ে দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি, যা গত জুনে ছিল ১৪ কোটি ২২ লাখ।
সর্বোপরি, এখানে উপস্থাপিত জরিপের ভিত্তিতে বলা যায়, দেশের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক অবস্থার মৌলিক পরিবর্তনের পক্ষে। একই সঙ্গে জরিপে পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে।
ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল
iftekarulbd@gmail.com