রংপুর সিটিতে সেবা পেতে পদে পদে হয়রানি
Published: 7th, March 2025 GMT
রংপুর সিটি করপোরেশনের সেবা নিতে এসে নাগরিকদের পদে পদে হয়রান হতে হচ্ছে। দিনের পর দিন নগরভবনে ঘুরেও প্রশাসক না থাকাসহ নানা জটিলতায় বাধ্য হয়ে তারা ফিরে যাচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিন তালাবদ্ধ থাকছে সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কার্যালয়। এ ছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা দাপ্তরিক কাজের চাপে সময় দিতে পারছেন না।
২০৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ৩৩টি ওয়ার্ড সংবলিত এই সিটি। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা শওকত আলী গত বুধবার দুপুরে নাগরিক সনদের জন্য রংপুর সিটি করপোরেশনে আসেন। ফরম কিনে রিকশাভাড়া করে তাঁকে যেতে হয় পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে। তাঁর ওয়ার্ডের নাগরিকসেবার দায়িত্বে রয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষার পরে তিনি সনদ হাতে পান।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কামাল কাছনার হোসনে আরা বেগমের কিছু জরুরি কাগজপত্র
সত্যায়িত করার প্রয়োজন পড়ে। তাঁর ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলেন এলজিইডির উপপরিচালক। তিনি তিন দিন ঘুরেও কাগজপত্র সত্যায়িত করতে পারেননি। কারণ, ওই কর্মকর্তা অন্য কাজে অফিসের বাইরে ছিলেন।
২০ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা। গুড়াতিপাড়ার বাসিন্দা শোভন মিয়া জন্মনিবন্ধনের জন্য গিয়েছিলেন। সিটি করপোরেশন থেকে ফরম নিয়ে রিকশা ভাড়া দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে তিন ঘণ্টা বসে থাকার পর তাঁর কাজ হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ ৩৩টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে প্রশাসক ও বিভিন্ন দপ্তরের ১৫ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ৩৩টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়া কর্মকর্তারা হলেন– রংপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড), স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (২০ ও ২৫), বিটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (২৯ ও ৩০), গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (২ ও ১৬)। সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (৫ ও ১০), জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (৪, ৫ ও ৬), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (১ ও ২৪), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (২১ ও ৩১), স্বাস্থ্য বিভাগের উপপরিচালক (১ ও ১০), ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক (৭, ১৭ ও ৩৩), পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (১০, ২২ ও ২), বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (১১, ১২ ও ১৪), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (২৬ ও ২৭), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (১৫ ও ২৮) এবং সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা (২০ নম্বর ওয়ার্ড)। এর মধ্যে বিটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মালেক ও এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুল ওহাব খান স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের দাপ্তরিক ব্যস্ততার কারণে সিটি করপোরেশনে অফিস করেন না। এ কারণে জন্ম, মৃত্যু, ওয়ারিশ, নাগরিকত্ব সনদ ও এনআইডি সংশোধনসহ জরুরি সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী।
গত বুধবার সিটি করপোরেশনে নাগরিক সনদ নিতে আসেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বুড়িরহাটের সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, নাগরিক সনদের জন্য তিন দিন সিটি করপোরেশনে এসে কাউকে না পেয়ে ফিরে গেছেন। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে নাগরিক সনদের ফরম কিনে রিকশাভাড়া খরচ করে যেতে হয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে। তাঁর ওয়ার্ডের নাগরিকসেবার দায়িত্বে রয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজাদ হোসেন। প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি সনদ হাতে পান।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহাদেবপুরের আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় কাউন্সিলর না থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পেছনে ছুটতে সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তার পরও সময়মতো সেবা মিলছে না। সেবার নামে নাগরিকদের সঙ্গে প্রহসন চলছে।’
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, সিটি করপোরেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সবাই সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। তাদের দাপ্তরিক কাজের বাইরে নাগরিক সেবার কাজ সঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব নয়। তারা যতটুকু সেবা দিচ্ছেন, তা একেবারে অপ্রতুল।
সিটি করপোরেশনের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধক মোহাম্মদ আলী জানান, প্রতিদিন ভিড় লেগে থাকছে। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যয়ন না থাকায় সনদ দিতে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া সার্ভার সমস্যা তো আছেই। প্রতিদিন অন্তত ২০০ সনদ দেওয়ার কথা, অর্ধেকও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
রংপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং নগরীর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ হোসেন বলেন, কোনো নাগরিকের সেবা প্রয়োজন হলে অফিস সময়ে আমার কার্যালয়ে আসতে হবে। আমার পক্ষ থেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। দাঁড়িয়ে থাকা সেবাপ্রার্থীরা হয়তো সঠিক তথ্য না জানার কারণে সিটি করপোরেশনে অপেক্ষা করেছেন। দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনে বাড়তি দায়িত্ব পালনে খুব কষ্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি।
৯, ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের সচিব উম্মে ফাতিমা বলেন, ‘প্রথম দিকে কিছু সমস্যা হয়েছিল। বর্তমানে জন্মনিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদসহ সার্বিক বিষয়ে দ্রুত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। দাপ্তরিক কাজের চাপে সশরীরে ওয়ার্ডগুলোতে যাওয়ার সুযোগ না হলেও ওয়ার্ডভিত্তিক উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সমন্বয় করে কাজ করছি।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রশাসক দিয়ে জনপ্রতিনিধির কাজ চালানো সম্ভব নয়। প্রশাসকদের আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে, জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে তা নেই। তার পরও আমরা কোনো কাজ ফেলে রাখি না।
আর কাজ করতে গেলে এ রকম কিছু সমস্যা তো হতেই পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হয়র ন কর মকর ত র র জন য সমস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশের ওপর হামলা করে আটক ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিল জনতা, গ্রেপ্তার ৩
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় পুলিশের ওপর হামলা করে আটক এক ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুই নারীসহ তিনজনকে। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) তানভীর মেহেদী, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) খোকন হোসেন ও রিংকু বড়ুয়া, কনস্টেবল জাহাঙ্গীর হোসেন ও মুজিবুর রহমান। তাঁদের ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন জয়নাল আবদীন (২০), রুজিনা আক্তার (৩২) ও মোসাম্মৎ রূপধন (৪৮)। তাঁরা জয়নগর গ্রামেরই বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, রাতে ওই এলাকায় মোহাম্মদ আলমগীর নামের এক মাদক কারবারিকে ধরতে তারা অভিযান চালায়। আলমগীরকে আটক করা হলে স্থানীয় প্রায় অর্ধশত বাসিন্দা জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, এ ঘটনায় আহত এসআই তানভীর মেহেদী বাদী হয়ে ছাগলনাইয়া থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।