ঈদের কেনাকাটা করতে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে নগরের ভিআইপি শপিং সেন্টারে এসেছেন চাকরিজীবী রোখসানা বেগম। এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরেও কিছু কিনতে পারেননি। জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে এসে বিপাকে পড়েছি। ছোট দুই ছেলের জন্য পাঞ্জাবি কিনতে বেশ কয়েকটি দোকানে গেছি। কিন্তু দাম অনেক বেশি। গতবার শিশুদের যেসব পাঞ্জাবি ৫০০ টাকায় কিনেছি, এবার তার দাম চাচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। একইভাবে গতবার যেসব জিন্সের প্যান্ট ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনেছি, এবার সেগুলোর দাম চাচ্ছে ১ হাজারের ওপরে। এত দাম দিয়ে আমার মতো নিম্ন-মধ্যবিত্তের পক্ষে ঈদের কেনাকাটা সম্ভব না। চাল, ডাল, তেলের মতো এবার ঈদ পোশাকের দামও বাড়তি।’
এমন অবস্থা কেবল রোখসানা বেগমেরই নয়; তাঁর মতো আরও অনেক ক্রেতা ঈদের কেনাকাটা করতে এসে পড়ছেন এ বিড়ম্বনায়। এর অন্যতম কারণ হলো, ভোগ্যপণ্যের মতো ঈদ পোশাকেও এবার বাড়তি দামের খড়্গ!
চট্টগ্রামের ঈদবাজারে গতবারের চেয়ে এবার দাম বাড়তি ছোট-বড়দের পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে শাড়ি, থ্রিপিসসহ প্রায় সব পোশাকের। এই অবস্থায় নির্দিষ্ট বাজেটে ঈদের কেনাকাটা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেককেই। ব্যবসায়ী ও সমিতির নেতারা বলছেন, এক বছরের ব্যবধানে সুতাসহ বেশির ভাগ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। তাছাড়া ভারতের ভিসা জটিলতার কারণে অনেক পণ্যও নির্ধারিত সময়ে চট্টগ্রামে পৌঁছায়নি। এসবের নেতিবাচক প্রভাবে গতবারের তুলনায় এবার কারখানা থেকেই প্রায় দ্বিগুণ দামে পোশাক কিনতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের থান কাপড়ের জন্য ঐতিহ্যবাহী টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান সমকালকে বলেন, গতবারের তুলনায় এবার প্রায় সব পোশাকের দাম বাড়তি। এর বড় কারণ, সুতাসহ বেশির ভাগ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। তাছাড়া এখানকার পোশাকের বাজারের একটি বড় অংশ ভারতনির্ভর। কিন্তু ভিসা জটিলতাসহ নানা কারণে আশানুরূপ পোশাক ভারত থেকে আসেনি। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দামের ওপর।
ভিআইপি টাওয়ারের পোশাক বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান শাওন ফ্যাশনের মালিক মাহমুদুর রহমান শাওন বলেন, ‘গত বছর আমরা পাইকারিতে ছোটদের যেসব পাঞ্জাবি ৪৫০-৫০০ টাকায় কিনেছি, এবার একই পাঞ্জাবি কিনতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। এভাবে এবার থ্রিপিস থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম প্রায় দ্বিগুণ। তবে দাম বেশির বিষয়টি মানতে নারাজ ক্রেতারা। অনেকেই এ জন্য আমাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।’
এবার ঈদের পোশাকের মধ্যে বিভিন্ন রঙের জর্জেট ও সিল্কের থ্রিপিস, গাউন, ওয়ান পিস, সিল্কের ওপর বিভিন্ন রঙের ডিজিটাল প্রিন্টের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া পুঁতি, পাঁড় বসানো ভারী কাজ করা জর্জেটের কামিজও কিনছেন অনেকে। বাটিক, সুতি, হাফসিল্ক, তাঁত ও জর্জেটের ওপর কাজ করা শাড়ির চাহিদাও বেশ। সুতি, ভয়েল, লিনেন, কটন কাপড়ের পোশাক, টি-শার্ট, বাটিকের ফতুয়া, শার্ট ও পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্টে বিভিন্ন প্রিন্ট আর টি-শার্টে বিভিন্ন লেখা ও কার্টুন চরিত্রের পোশাক বেশি কিনছেন। বিক্রেতারা জানান, এখন কামিজের সঙ্গে শিশুরা গাউন, মেঝে ছোঁয়া ফ্রকগুলোও পরছে। গতবারের চেয়ে এবার পোশাকের দাম বাড়তি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেইন, সানমার ওশান সিটি, মিমি সুপারমার্কেট, আফমি প্লাজা, সানমার ওশান সিটি, ফিনলে স্কয়ার, আমিন সেন্টার, আখতারুজ্জামান সেন্টার, ইউনেস্কো সেন্টার, বালি আর্কেড, সেন্ট্রাল প্লাজাসহ ছোট-বড় মার্কেট, শপিং সেন্টারগুলোর ব্যবসায়ী ও সমিতির নেতারা।
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ সাগির বলেন, এবার ছোট-বড় সব বয়সীর পোশাকের দাম কিছুটা বাড়তি। বড় গার্মেন্ট, কারখানা থেকে পোশাক কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই চাল, ডাল, তেলসহ অনেক পণ্যের দাম চড়া। এর মধ্যে রমজানকে টার্গেট করে
আরেক দফায় দাম বেড়েছে কিছু পণ্যের। ভোগ্যপণ্যের বাড়তি দামের মতো এবারের ঈদ পোশাকের বাজারও চড়া। এই
অবস্থায় স্বস্তিতে কেনাকাটাও করতে পারছেন না বেশির ভাগ ক্রেতা।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ ব জ র ঈদ র ক ন ক ট ব যবস য় গতব র র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
‘প্রত্নকথা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন তিন উপদেষ্টার
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রকাশিত ভ্রমণ বই ‘প্রত্নকথা’র মোড়ক উন্মোচন করলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। গতকাল সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জেলার উন্নয়ন-সংক্রান্ত এক গুরুত্বপূর্ণ সভা শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর উপস্থিতিতে বইটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
ভ্রমণ বইটি প্রকাশনার বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুল জান্নাত বলেন,
তিনি অত্যন্ত আনন্দিত যে, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রত্ননগরী খ্যাত মুন্সীগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখা, জেলার পর্যটনকে সমৃদ্ধ করা ও আগামী প্রজন্মের কাছে এগুলোকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এ ধরনের একটি ভ্রমণ বই প্রকাশ করতে পেরেছেন।
ভ্রমণ বইটিতে মুন্সীগঞ্জের প্রত্নতাত্ত্বিক ও দর্শনীয় ৬২টি স্থানের সচিত্র বর্ণনা, অবস্থান, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকের কথা বিবেচনায় বইটির সব তথ্য
এবং বর্ণনা বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায়
লিখিত হয়েছে।
বইটি সম্পাদনা করেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফ উল্যাহ। তিনি জানান, বইটি মূলত দেশি-বিদেশি পর্যটকের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলার একটি ভ্রমণ গাইড হিসেবে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব নিজাম উদ্দিন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মফিদুর রহমান, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল্লা, ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাবিনা আলম প্রমুখ।