‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নারীর বীরত্ব অসামান্য’
Published: 7th, March 2025 GMT
রোকেয়া সুলতানা, প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। দেশ-বিদেশের নানা চিত্রপ্রদর্শনীতে তাঁর চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। সম্প্রতি একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর নিবিষ্ট শিল্পচর্চায় নারী, মাতৃত্ব, প্রকৃতি, জলবায়ু, সংগ্রাম, সম্পর্ক বর্ণাঢ্য হয়ে ধরা দেয়। তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।
আপনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই?
১৯৫৮ সালে আমার জন্ম। রাওয়ালপিন্ডি গেলাম। আমার বয়স যখন দুই বছর, তখন বাবার পোস্টিং সূত্রে আমরা অনেক দূরে চলে গেলাম। পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে, ১৯৬০ সালে। ওখানে আমরা অনেকদিন ছিলাম, প্রায় ১০ বছর। সেটা এমন একটা জায়গা ছিল যেখানে একদম গাছপালা ভরা। এমনকি আমাদের বাসার সামনে বড় বড় মাঠ ছিল, যেখানে গলফ খেলতে আসতেন দূতাবাসের লোকেরা। আমি বিদেশিদেরও দেখেছি তখন। বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনীর লোকেরাও খেলতেন। এ জন্যই বড় বড় সবুজ মাঠ। আমি তো প্রকৃতি ভালোবাসি, মানে প্রকৃতি আমার সঙ্গে কথা বলে। এটা আমার সবসময় বলাও হয়ে উঠে না– আমি সবচেয়ে বেশি ইনফ্লুয়েন্সড হয়েছি বা হই প্রকৃতি দ্বারা। প্রকৃতির পরিবর্তনগুলো আমাকেও পরিবর্তন করতে থাকে। কাজেও এটার ছাপ পড়ে আর বাংলাদেশ তো সবুজ শ্যামলী মা, আমার নদীমাতৃক বাংলাদেশ।
আপনার নামের মধ্যে ‘রোকেয়া’ এবং ‘সুলতানা’– রোকেয়ার চিন্তা বা সৃষ্টিকর্ম। এই নাম কে রেখেছেন?
বাবা। আমার বাবা কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ছিলেন তখন। এখন সেটা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ কলেজ। সেখান থেকে তিনি তার ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স করেন। তিনি একটা গ্রামে বড় হয়েছেন এবং ম্যাট্রিকে ফার্স্ট ডিভিশন পান এবং আমার ধারণা, স্ট্যান্ড করা লেভেলে তিনি গিয়েছিলেন। কিন্তু শুনতাম, কলেজে পড়াকালীন লেখক শওকত ওসমান তাঁর বন্ধু ছিলেন। ‘সওগাত’সহ আরও কিছু পত্রিকায় লিখতেন।
শুনেছি, আমার বাবা যখন গ্রামে আসতেন তখন মহিলাদের যে গীতি থাকে প্রচলিত, সেগুলো তিনি সংগ্রহ করতেন।
আমাদের ছোটবেলায় পশ্চিম পাকিস্তানে কিছু বাঙালি পরিবার খুব শক্তভাবে বাংলা সংস্কৃতি ধরে রেখেছিল। আমরা বাংলা মিডিয়ামে পড়েছি সেখানে। আমার বাবা পুলিশ বিভাগে চাকরি করতেন। আমার সুযোগ হয়েছিল বাবার একটা ডায়েরি পড়ার। ডায়েরির লেখা ছিল এমন– ‘আজ ভাষা দিবস, সবাই শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাবে; কিন্তু আমি আমার চাকরির কারণে যেতে পারছি না।’ খুবই দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তিনি তা লিখেছিলেন। আমরা ভাইবোনরা যখন কাজ করেছি, সাবজেক্ট বেছে নিয়েছি, আমার বাবা আমাদের অনেক উৎসাহ দিয়েছেন।
আপনার শিল্পকর্ম ‘ম্যাডোনা’ সিরিজ ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। এর শুরুটা কীভাবে?
l l এমনিতে কারণটা খুবই সিম্পল, আমরা যদি আর্টের ইতিহাস দেখি তাহলে প্রায় প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী ম্যাডোনা নিয়ে কাজ করেছেন; বিশেষ করে রেনেসাঁর সময়কালে। যখন আমার মেয়ের জন্ম হলো, তখন আমারও মনে হচ্ছিল যে একটা কালজয়ী ম্যাডোনা আমাকে রচনা করতে হবে। আমি যদি আমার শিল্পকলার জীবনকে ভাগ করি ৩০-৩৫ বছর তাহলে আমি চার-পাঁচটা সিরিজের কথা যদি বলি তার মধ্যে ম্যাডোনা সিরিজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত ’৯১-এ আমি আমার লিভিং রুমে পেন্সিল চারকোল ইত্যাদি দিয়ে আঁকিবুঁকি করছিলাম, তখন ম্যাডোনাটা চলে আসে। যে একটা মা তার মেয়ের হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এই যে রাস্তাটা এটা কি ঢাকার রাস্তা নাকি অন্য কোথাকার রাস্তা সেটা। এখানে আমি একটা মেটাফরিক ট্রিক ইউজ করেছি, এটা আসলে আমার একটা কাজেরই অংশ। আমার পুরো কাজ বলে দিতে ইচ্ছে করে না, যেন দর্শকরাও কিছুটা ভেবে নিতে পারেন। এভাবেই আমার ম্যাডোনা সিরিজের শুরু।
ম্যাডোনা সিরিজে নারীর সংগ্রাম এবং নারীর অধিকার ক্ষমতায়নের একটা চিত্র আমরা দেখতে পাই। এ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে আনলেন আপনার শিল্পতে?
l l ছোটবেলা থেকে নারী হিসেবে একটা পারিপার্শ্বিক ব্যাপার সমাজ আমাকে বুঝিয়েছে। তাই আমার মধ্যে একটা অস্তিত্বের সংকট থেকে লড়াই বহিঃপ্রকাশ হয়েছে, যত বড় হয়েছি সেটি আরও প্রকট হয়েছে। ছোটবেলা থেকে আমাদের মাকে বাসায় কাজ করতে দেখেছি। তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টিও আমি দেখেছি। সেখান থেকে আমার ম্যাডোনার মা আর তখন বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের বিকাশটাও শুরু হয়। তখন থেকে আমি দেখেছি বাংলাদেশের নারীরা অর্থনীতিতে একটা বিশাল ভূমিকা রেখে চলেছেন। গ্রাম থেকে তারা এসে গার্মেন্টসে কাজ করতেন এবং তখন আসলে মানে প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় গার্মেন্টস ছিল– এমন একটা বিকাশ হয়েছিল বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের। তো এগুলো আমরা দেখতাম, নারীরা টিফিনের বাক্স হাতে নিয়ে কাজে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের মতো কনজারভেটিভ একটা রাষ্ট্রে কাজ করছেন, মেসে থাকছেন। তখন আমি মা ও মেয়েকে এক্সপ্রেস করলাম। এটা শুধু একটি মা-মেয়ের গল্পই থাকল না, এটাকে আপনি নারীর স্বাধীনতা বলতে পারেন, তার অর্থনৈতিক মুক্তি বলতে পারেন, তার মনের বিকাশের জায়গাটা বলতে পারেন। তার যে পাওয়া না পাওয়া। এই পাওয়া না পাওয়া বলতে অস্তিত্ব রক্ষার যে মানুষ হিসেবে নিজেকে রক্ষার যে পাওয়া না পাওয়া সেই পর্যায়ে যেন মেয়েটি যেতে পারে তার মায়ের হাত ধরে। যেখানে হ্যাঁ বা না বলার যেন তার রাইট থাকে। আরও একটা বিষয় যেটা হচ্ছে আমি একজন মা এবং সন্তানের জীবনে মায়ের একটা বিরাট ভূমিকা থাকে। তবে মা কিন্তু একজন মানুষও। এই মানুষ বিষয়টা একটা মেয়ে যখন মা হয়, তখন আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। এখনও আমার একটা say ছিল যে মা আমি একটা ম্যাজেন্টা রঙের শাড়ি পরিয়েছি, তার গালে আমি একটা স্কার দিয়েছি, একটা আঁচড় দিয়েছি– কারণ আমি এখানে একটা যুদ্ধ দেখাতে চেয়েছি, আমি এখানে স্ট্রাগল দেখাতে চাইনি ও কিন্তু দুঃখ-দুর্দশায় নুয়ে পড়ছে না, মিছমার হয়ে যাচ্ছে না। ও কিন্তু ফাইট করছে। তার মেয়েকে নিয়ে সে আনন্দিত। ও বাসে যাচ্ছে, নৌকায় যাচ্ছে; তবে ও যে একটা মানুষ ও যে কোনো দেবী নয়, তাই আমি ওকে একটা ম্যাজেন্টা রঙের শাড়ি পরিয়েছি। সবসময় এটা আমি মেটাফোরিকালি রাখতাম।
এই ম্যাডোনাতে তো আপনাকেও খুঁজে পাওয়া যায়?
l l আসলে আমরা যে কোনো কাজই করি না কেন, আমাদের সেই কাজে নিজেদের একটা আয়না থাকে, যেখানে আমরা নিজেরা প্রতিফলিত হই। তাই আমার শিল্পকর্ম ম্যাডোনাতে আমি প্রতিফলিত হয়েছি।
২০২৫ সালের নারী দিবস আমরা এমন একটা সময় পার করতে যাচ্ছি, যখন এর আগের বছরই একটা গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি, নারী নির্যাতন তো কমেনি। আগেও চলছিল, এখনও চলছে।
l l আসলে গণঅভ্যুত্থানের যে ভিডিও ক্লিপগুলোতে আমরা যা দেখছিলাম, রাস্তায় তাদের অগ্নিকন্যা বলে সম্বোধন করা হচ্ছে। তারা কিন্তু পুরুষের ঢাল হয়ে এগিয়ে এসেছে। নারীদের বলা হয় মায়ের জাতি। তারা তাদের সন্তানদের রক্ষা করতে সবকিছু করতে পারে। গণঅভ্যুত্থানে এই মেয়েদের মধ্যে রক্ষা করার যে বিষয়টি, সেটি অনেকাংশে ফুটে উঠেছে। তারা খুবই অসাধারণ কাজ করেছে। গণঅভ্যুত্থানে নারীর বীরত্ব, সাহস, ডেডিকেশন ছিল অসামান্য। আমার মনে হয়, এবার সেটির মূল্যায়ন হবে। এবারের নারী দিবসে নারীর যে দেশমাতৃকার প্রতি ভূমিকা, তাঁর যে সাহস– এটাই মুখ্য হয়ে উঠুক।
নারীর পোশাক নিয়ে সম্প্রতি কটূক্তি শোনা যাচ্ছে.
..
l l সৌন্দর্য একেকজনের কাছে একেকরকম। সংস্কৃতি, সৌন্দর্য দেশ ও কাল ভেদে ভিন্ন হয়। পোশাকও একইরকম। একেকজনের কাছে একেক রকম পোশাক পছন্দ হতে পারে। পোশাকের পছন্দ অবশ্যই নারীর অধিকার। কেউ ভুল বা অন্যায় করেছে মনে করলে তার প্রতিকার চাইতে হবে। আমি কাউকে সঠিক মনে করি না বলে আরেকজনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এমন তো নয়। আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়াটা সমাধান নয়। সরকারের কাজ সরকার করছে। সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে, নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে। স্বাধীনতা উদযাপন যখন সুন্দর থাকে না, তখন সেটা আর স্বাধীনতা থাকে না। আমার দেশে সেই স্বাধীনতা নারী-পুরুষ সবারই আছে। আবার রাতারাতিই তো সব বদল হবে না। এজন্য সময় লাগবে। সেই অনুযায়ী কাজও করতে হবে।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
l l সমকালকেও ধন্যবাদ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন আম র ব ব আম দ র জ কর ছ ক জ কর আম র ম ব ষয়ট আপন র র একট
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তায় বরাদ্দ আগামী অর্থবছরে আড়াই গুণ বেড়ে ৫৯৩ কোটি টাকা হচ্ছে। অর্থবছরের শুরু থেকেই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা দেওয়ার পাশাপাশি এককালীন অর্থ এবং চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ খাতে বরাদ্দের বিষয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে শহীদ পরিবারের জন্য এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে মোট ২৪৮ কোটি টাকা, আহত ব্যক্তিদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা, অনুদান ও পুনর্বাসনে ৩৯০ কোটি টাকাসহ মোট ৬৩৯ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হয়। অর্থ বিভাগ জানায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাকি ৪০৫ কোটি টাকা আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেওয়া হবে। তবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় পরে জানায়, এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে আগামী অর্থবছরে সর্বমোট ৫৯৩ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাড়তি বরাদ্দের এ প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরীর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বর্তমানে এককালীন কিছু নগদ অর্থ এবং চিকিৎসায় অনুদান দেওয়া হচ্ছে। নতুন বাজেটে এর পাশাপাশি মাসিক সম্মানী ভাতা দেওয়া হবে। এসব কারণেই বাড়তি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের কাজ এখনও শুরু হয়নি। তাদের চাকরি দেওয়ার পরিবর্তে অন্য কর্মসংস্থানের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ছাড়াও বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার আহত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছে। পুনর্বাসনের কাজে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহতদের মাসিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাসিক সম্মানী ভাতা, এককালীন নগদ সহায়তা-সংক্রান্ত হওয়ায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার নীতিগত অনুমোদন প্রয়োজন।
এতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত ও শহীদদের বিষয়ে সব ধরনের কাজ পরিচালনার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ অধিদপ্তর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করবে।
অর্থ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গেজেটভুক্ত জুলাই শহীদ পরিবার ৮৩৪টি। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর ৮২৬ পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে এককালীন সহায়তা দেওয়ার জন্য বাজেটে ৮২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আট পরিবারকে সমান হারে সহায়তা দিতে আরও ৮০ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এসব পরিবারকে এককালীন আরও ২০ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। এ জন্য নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ থাকছে ১৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
চলতি বাজেটে প্রায় ২০ হাজার আহত ছাত্র ও গণমানুষের এককালীন চিকিৎসা সহায়তা বাবদ অনুদান খাতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। নতুন বাজেটে এ খাতে আরও প্রায় ১৪০ কোটি টাকা রাখা হবে। চলতি বাজেটে শহীদ পরিবারের জন্য মাসিক সম্মানী ভাতা বাবদ কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ জন্য ৮৩৪ পরিবারের জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২০ কোটি টাকা। প্রতি পরিবারকে মাসিক দেওয়া হবে ২০ হাজার টাকা করে।
আহতদের জন্য মাসিক সম্মানী বাবদ কোনো অর্থ চলতি বাজেটে রাখা হয়নি। তবে আগামী বাজেটে এ খাতে মোট ১৫৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ৪৯৩ জনকে মাসিক সম্মানী দেওয়া হবে ২০ হাজার টাকা করে। যারা পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বা শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন, তাদের অতি গুরুতর বা ‘এ’ ক্যাটেগারি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ‘বি’ ক্যাটেগরির ৯০৮ জনকে দেওয়া হবে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে। একই সঙ্গে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে পাবেন ‘সি’ ক্যাটেগরির ১০ হাজার ৬৪৮ জন।
এ ছাড়া ২ হাজার ৪১৬ জন আহতের ক্যাটেগরিভিত্তিক তালিকা না পাওয়ায় তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশকে এ ক্যাটেগরি বিবেচনায় এককালীন ৩ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। এতে ব্যয় হবে ৩৬ কোটি টাকা। বাকি অর্ধেক ‘বি’ ক্যাটেগরি বিবেচনায় এককালীন ২ লাখ টাকা করে দেওয়ার জন্য ব্যয় হবে ২৪ কোটি টাকা। একইভাবে ‘এ’ ক্যাটেগরি বিবেচনায় প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা এবং ‘বি’ ক্যাটেগরি বিবেচনায় ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে ক্যাটেগরিবিহীন ২ হাজার ৪১৬ আহত যোদ্ধার জন্য আগামী বাজেটে ব্যয় হবে ১১১ কোটি টাকার কিছু বেশি।