Samakal:
2025-04-07@12:27:17 GMT

ন্যায্যতা ও সমতার লড়াই

Published: 7th, March 2025 GMT

ন্যায্যতা ও সমতার লড়াই

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন/ নারী ও কন্যার উন্নয়ন’ একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে, যা বিশ্বব্যাপী নারী ও কন্যার জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করার আহ্বান জানায়। এই প্রতিপাদ্য শুধু নারীর অধিকারের প্রতি সমর্থনই নয়; বরং একটি বৈষম্যহীন, সমতাভিত্তিক ও ন্যায়সংগত সমাজ গঠনের দিকে অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই প্রতিপাদ্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, কারণ এদেশ জেন্ডার সমতা অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করলেও নারীরা এখনও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এর ফলে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য অব্যাহত রয়েছে, যা তাদের ক্ষমতায়ন ও সমঅধিকারের পথে বড় বাধা। আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশ নারীর রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় অগ্রগামী দেশগুলোর মধ্যে একটি। দীর্ঘ তিন দশক ধরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নারী, যা বৈশ্বিকভাবে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি (২০১১) এবং পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন (২০১০) নারীর সুরক্ষা ও অধিকারের জন্য একটি আইনি কাঠামো তৈরি করেছে। তবে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। নারীরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করলেও, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি তাদের। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নারীর প্রতিনিধিত্ব এখনও সীমিত এবং নারী নেতৃত্বের বিকাশে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা বিদ্যমান।
২০২৪ সালে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় নারীরা আন্দোলন, নীতিগত আলোচনা এবং তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠিত হওয়ার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা সহিংসতা ও হুমকির মুখেও গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা এবং মানবাধিকারের জন্য লড়াই করেছে। জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এ একটি স্বৈরাচারী সরকার অপসারিত হওয়ার পর নারীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অংশগ্রহণের সুযোগ বেড়ে গেছে। তবে নারীর স্বাধীন চলাফেরা ও জনপরিসরে অবস্থান এখনও হুমকির সম্মুখীন। রাজনৈতিক নেতৃত্বে নারীকে গ্রহণ করার মানসিকতা এখনও সমাজে অনুপস্থিত। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথ সুগম করা এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশে নারীরা এখনও ব্যাপকভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বিবিএস এবং ইউএন উইমেন পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, সবচেয়ে প্রচলিত সহিংসতার ধরন হলো পারিবারিক সহিংসতা। এছাড়া ধর্ষণ, বাল্যবিয়ে এবং কর্মস্থলে হয়রানির হারও উদ্বেগজনক। নারীর সুরক্ষার জন্য বিদ্যমান আইনগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জেন্ডার সংবেদনশীল প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর জন্য সুরক্ষা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন থাকলেও তাদের নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা সীমিত। স্থানীয় সরকারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। নারীর রাজনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। পাশাপাশি রাজনৈতিক শিক্ষা প্রদান এবং নেতৃত্ব বিকাশের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন গোটা সমাজের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ, যেখানে নারীরা বিশেষভাবে বেশি প্রভাবিত হয়। উপকূলীয় ও নদীভাঙনপ্রবণ অঞ্চলে বসবাসকারী নারীর বাসস্থান হারানো, জীবিকা সংকট এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবারের জন্য খাদ্য, পানি ও জ্বালানির সংস্থান করতে গিয়ে নারীরা অতিরিক্ত চাপের মুখোমুখি হয়। তবে, নারীরা এই সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। স্থানীয় পর্যায়ে তারা কৃষি, মাছ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব জীবিকা গড়ে তুলছে। কিন্তু তাদের এই অবদান নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পর্যাপ্ত স্বীকৃতি পাচ্ছে না। জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নারীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। নারী নেতৃত্বাধীন জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্পগুলোর সম্প্রসারণ প্রয়োজন, যাতে তারা এই সংকট মোকাবিলায় আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত নীতিমালায় সমতা ও ন্যায্যতাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এছাড়া, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো গড়ে তোলা, নারীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং অভিযোজন কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন। নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণভাবে সম্পৃক্ত করা গেলে তা কেবল তাদের ক্ষমতায়নই নয়, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সামগ্রিক সাফল্যও নিশ্চিত করবে। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক বাজেটিং অপরিহার্য। 

বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও তারা এখনও বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে গার্মেন্টস খাতে নারীরা কম মজুরি, অনিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ থাকা দরকার। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে নারীর জন্য পৃথক তহবিল গঠন করা উচিত। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তার জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, প্রশিক্ষণ ও বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করতে হবে। নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সমান কাজের জন্য সমান মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। নারীকে কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ ও সম্মান দেওয়া হলে, তা শুধু নারীর ক্ষমতায়নই নয় বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত নারীরা সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে আসছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী নারী, কৃষি ও উদ্যোক্তা খাতে কর্মরত নারীরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নারীর নেতৃত্ব ও সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের পথ সুগম করা সম্ভব।
নারীর অধিকার সংরক্ষণে পরিবার ও সমাজের মনোভাব পরিবর্তন জরুরি। স্কুল পর্যায়ে জেন্ডার সমতাবিষয়ক পাঠ্যক্রম চালু করা এবং গণমাধ্যমের দ্বারা নারীবান্ধব সচেতনতা বাড়ানো দরকার। নারীর শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়নের পথ সুগম করা সম্ভব।
নারীকে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে হবে, যাতে তারা তথ্য ও সেবা সহজে পেতে পারে। ডিজিটাল মাধ্যমে নারী নেতৃত্ব এবং সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে অনলাইন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নারীর ক্ষমতায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে, যদি তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ নারীর অগ্রগতিতে অনেক দূর এগিয়েছে, কিন্তু ন্যায্যতা ও সমতার লড়াই এখনও অসমাপ্ত। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম, যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে একটি ন্যায়সংগত সমাজ গঠনের জন্য, যেখানে প্রত্যেক নারী সমান মর্যাদায় ও নিরাপত্তায় জীবনযাপন করতে পারবে। 

লেখক

নির্বাহী পরিচালক
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ক ষমত য ন ন শ চ ত কর র র জন ত ক ন র জন য র জন য স ন য য যত র র জন য ব যবস থ পর য য ক ত কর গ রহণ জলব য

এছাড়াও পড়ুন:

নির্মাতা না হয়েও তিনি আমাদের সময়ের নায়ক

আমাদের সময়ে একজন সুপারস্টার নির্মাতা ছিলেন। পুরো শৈশব-কৈশোর রাঙিয়ে দিয়েছিলেন বহুবার, বারবার। যাঁর নাম শুনে সিনেমা হলে দৌড়ে যেতাম। যাঁর সিনেমা প্রথম দিন না দেখতে পারলে, কবে যাব, এই নিয়ে বুক হাঁসফাঁস করত। আমাদের দেখা সেই ‘লড়াকু’ দিয়ে শুরু। এই লড়াকুর লড়াই আজীবন চলছে, আর থামাথামি নেই। কতদিন স্বপ্নে দেখছি তাঁকে! নায়ক রুবেলের সঙ্গে তাঁর নাম সমানভাবে উচ্চারিত হতো। অদ্ভুত জুটি। সিনেমায় জুটি হয় নায়ক-নায়িকার সঙ্গে, আর রুবেলের জুটি একজন পরিচালক। কী দুর্দান্ত সব কাজ, বুঁদ হয়ে থাকা আর উল্লাস নিয়ে তাদের ভিউ কার্ড কেনা, পোস্টার কেনা। কিনে যত্ন করে পড়ার টেবিলের সামনে টাঙিয়ে রাখা, পড়তে পড়তে দেখা, দেখতে দেখতে পড়া। এমন উন্মাদনা এনে দিয়েছিলেন যিনি, তিনি শহীদুল ইসলাম খোকন। 

বহু গুণে গুণান্বিত এ পরিচালক তাঁর সময়ের সেরা তো ছিলেনই, আমি মনে করি, এখনও সেরা। সেই সময়ের প্রভাব এখনও বিদ্যমান, কারণ তাঁকে অতিক্রম করে যেতে পারেনি কেউ। ডেঞ্জারাস সব কাজ করে গেছেন, মার্শাল আর্টকে গল্পের সঙ্গে এমনভাবে মিশিয়েছে, যা আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। এই উপমহাদেশে তাঁর মতো সফল পরিচালক (অ্যাকশন জনরা) দ্বিতীয়টি নেই, এখনও নেই। আরেকজন খোকন আসেননি, আরেকজন রুবেল আসেননি, আরেকজন সোহেল রানা আসেননি। ভারতে জ্যাকিপুত্র টাইগার শ্রফসহ আরও দু-একজন যে ধরনের অ্যাকশন করে গেছেন, বিশ্বাস করেন, রুবেলের ধারেকাছেও নেই। আর এই অ্যাকশন সিনেমা নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছিল এই খোকন। 

খোকনের অন্য অনেক গুণের মধ্যে দুটো বড় দিক হলো– রুবেল আর হুমায়ুন ফরিদীকে বিচিত্র চরিত্রে উপস্থাপন করা এবং মারাত্মক সফল হওয়া। আর বাণিজ্যের কথা বাদ দিলাম। কোন সিনেমার নাম নেব, লড়াকুতো সব ভাসিয়ে দিয়ে গেছে, যে জোয়ার সৃষ্টি করেছিল, তা এখনও বিদ্যমান আমাদের মনে। আমরা ভিসিআর সেট আর ক্যাসেট ভাড়া করে এনে কতবার যে দেখেছি, তার হিসাব নেই। নৌকার গলুইয়ে দু-পা দিয়ে ক্যাঁচকি মেরে শরীরটা পানিতে ভাসিয়ে দিয়ে যে শট রুবেল নিছে! মাগো মা! তখন তো বুঝতাম না, এখন শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে। এই দৃশ্যে কোনো রকম ডামি ব্যবহার করে নাই, কোনো রকম প্রটেক্ট করে নাই। পা ফসকে গেলে সোজা মাছধরা ট্রলারের নিচে, প্রপেলারে দেহ টুকরা টুকরা হয়ে যেতে পারত। কোনো রকম প্রটেক্ট ছাড়া এমন সব মরণঝুঁকি দৃশ্য জ্যাকিচান ছাড়া আর কারও করতে দেখিনি। 
বিচিত্র গল্পের, বিচিত্র চরিত্রের সিনেমা আমাদের মুগ্ধ করেছে বারবার। কোনটা বলব? বজ্রমুষ্ঠি, বিষদাঁত, সন্ত্রাস, বীরপুরুষ, টপ রংবাজ, ঘাতক, ম্যাডাম ফুলি, কমান্ডার, বিপ্লব, বিশ্বপ্রেমিক, ভন্ডসহ ৩০টার বেশি সিনেমা আমাদের সম্মোহিত করে রেখেছিল। (অবশ্য শেষের ২০০৫ এর পর কয়েকটা সিনেমা বাদ দিতে হবে, যখন খোকন ভাই অসুস্থতাসহ নানাবিধ জটিলতায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন।) খোকনের সবগুলো সিনেমা সুপার হিট। তাঁর সিনেমা সুপার হিট হবে, এটা সবাই জানত। আর আমরা অপেক্ষা করতাম।

ভাবা যায়, শৈশবে আমরা সিনেমার গল্প অডিও ক্যাসেটে শুনতাম। টপ রংবাজের গল্প কতবার যে শুনেছি, মনে করতে পারব না। কী সংলাপ! ওই ওই নাটকির পো, মান্দার পো, এই সংলাপ তখন মানুষের মুখেমুখে। কী ক্যারেক্টারাইজেশন, কী গান.. বর্ণনা করার মতো না। শহীদুল ইসলাম খোকনকে নিয়ে আলাদা গবেষণা হওয়া উচিত। এই বঙ্গে একজন সুপারস্টার পরিচালক ছিলেন, যিনি দুটি প্রজন্মের (১৯৮৫ থেকে পরিচালনা শুরু ২০১২ তে শেষ) প্রতিনিধিত্ব করেছেন। নির্মাণ করেছেন প্রায় ৪০টির মতো সিনেমা। 
খোকনের গুরুভক্তি কেমন, একটা গল্প জানি, তাঁর সিনেমার গুরু সোহেল রানা অসুস্থ হয়ে পড়লে সিনেমার শুটিং রেখে গুরুর সঙ্গে বিদেশ চলে যান। বর্তমানে সোহেল রানার বাসার ড্রইংরুমে মোজাইকের যে ছবিটি আছে, সেটি খোকন বানিয়ে দিয়েছেন। সোহেল রানা বেশির ভাগ ইন্টারভিউ এই ছবিকে পেছনে রেখে দেন, এটাও তাঁর শিষ্যের প্রতি ভালোবাসা। 

আমার স্বপ্ন ছিল, শহীদুল ইসলামের সহকারী হওয়ার। খোঁজ নিয়ে একদিন গেলাম তাঁর অফিসে। কয়েকবারের চেষ্টায় তাঁর দেখা পেলাম। দেখি, অভিনেতা খলিলের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। আমি সোজা তাঁর সামনে। 
বললেন, কী চান?
ডিগ্রি পরীক্ষা দিছি, পড়াশোনা খারাপ না। ফিল্ম নিয়ে আমার ধারণা শক্ত। ইতোমধ্যে ছায়াছন্দ পত্রিকায় দু-একটা লেখাও ছাপছে। আমি ভয়ে ডর দমিয়ে শরীরের চিকন ঘাম লুকিয়ে সহজ করে বললাম, আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই। আপনার টিমে।
খোকন ভাঙা কণ্ঠে চড়া গলায় বললেন, আমার তো এখন প্রয়োজন নেই।
আমি বললাম, আমি আপনার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ চাই।
তিনি আবারও চড়া গলায় বললেন, আমার প্রয়োজন না হলে কেন নেব? 

তিনি নেননি, কিন্তু আমি তাঁকে এখনও ছাড়িনি। আজও মনে পড়ে খোকন স্যার। আপনাকে মনে রেখেছি। মনে রেখেছি, একদিন বাংলা একাডেমির এক অনুষ্ঠানে আপনি গিয়েছিলেন এবং আমার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ সিনেমা, শিল্প সাহিত্য নিয়ে তুমুল আড্ডা হয়েছিল, আপনি অসুস্থ ছিলেন, তারপরও আমার সঙ্গে কথা চালিয়ে গেছেন এবং আরও কিছুক্ষণ থাকতে চেয়েছিলেন। সিনেমা নিয়ে আমার বোঝাপড়া দেখে আপনি খুবই খুশি হয়েছিলেন। আপনার সেই হাসিখুশি মুখটুকু আমি মনে রাখব। এখনও মনে পড়ে। আজ আপনার চলে যাওয়ার দিন। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল, মাত্র ৫৮ বছর বয়সে চলে গেছেন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে। আমরা আপনার নাম লইয়া এখনও মন খারাপ করি, মন ভালো করি। আপনি আমাদের সময়ের নায়ক। 

লেখক: মোস্তফা মনন
নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার
 

 

 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জিম্মির পর জয়ার ‘তাণ্ডব’
  • ওষুধ ও সেবা মিলছে না শিশু, মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি
  • বন্দর নগরীতে ৫৪ বছরেও নেই বিশেষায়িত হাসপাতাল
  • অবসর নিয়ে গুঞ্জনে যা বললেন ধোনি
  • আমরা এখনও এশিয়ায় শীর্ষে
  • মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩,৩৫৪
  • অ্যাথেন্সের অ্যাক্রোপলিস ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী
  • ভালোবাসাই ধরে রেখেছে বিষ্ণুরামের পুতুল নাচ
  • নির্মাতা হয়েও তিনি আমাদের সময়ের নায়ক
  • নির্মাতা না হয়েও তিনি আমাদের সময়ের নায়ক