মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এক দিনে একটি গবাদিপশুর খামারের দেশীয় জাতের ৯টি ষাঁড় গরুর মৃত্যু হয়েছে। খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে গরুগুলোকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খামারের মালিক। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রমজান মিয়া ও মনির মিয়া নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার পশ্চিম রামনগর এলাকায় সুলেমান মিয়ার খামারে এ ঘটনা ঘটে। খামারের মালিক সুলেমান মিয়া বলেন, ‘কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আমি আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ষাঁড় গরুগুলো লালন–পালন করছিলাম। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে হঠাৎ খামারের গরুগুলো একে একে অসুস্থ হতে থাকে। প্রথমে সকালে দুটি গরু মারা যায়। এরপর সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মোট ৯টি গরু ছটফট করতে করতে মারা গেছে। এতে আমার প্রায় ৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অবলা জীবদের এভাবে বিষ দিয়ে মেরে কী লাভ হলো? গরুর সঙ্গে এ কেমন শত্রুতা। এখন আমি কীভাবে এত লোকসান পুষিয়ে পরিবারের খরচ বহন করব, তা নিয়ে বড় টেনশনে আছি।’

এ ঘটনায় সুলেমান মিয়া শ্রীমঙ্গল থানায় অভিযোগ করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি সরকার ও প্রশাসনের কাছ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেছেন এবং আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন।

খামারমালিক সুলেমানের বাবা মাসুক মিয়া বলেন, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে এলাকার সবজি ব্যবসায়ী রমজান মিয়ার বিরোধ চলছিল। ৪ মার্চ রমজান মিয়া তাঁদের বাড়িতে এসে প্রকাশ্যে জানমালের ক্ষতি করার হুমকি দেন। তাঁদের খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ২২টি গরু ছিল।

শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আটক দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসায় সুযোগ কতটা


যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসার বার্ষিক আবেদনের মৌসুম শুরু হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, ২০ হাজারের বেশি নিয়োগকর্তা তাদের ব্যবসায় এক বা একাধিক বিদেশি নাগরিককে স্পনসর করার অনুমতি পেতে পারেন। প্রতিবছর মোট ৮৫ হাজার এইচ-১বি ভিসা ইস্যু করা হয়। যেগুলো মূলত বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীদের জন্য বরাদ্দ, যাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ভিসা সবার জন্য উন্মুক্ত এবং ২০ হাজার ভিসা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স বা তার ঊর্ধ্বতন ডিগ্রিধারী বিদেশিদের জন্য সংরক্ষিত। বাংলাদেশিরাও এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।


২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত মানুষ ছিল ১৭ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি, সেই হিসাবে এই উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীরা কর্মশক্তির অর্ধশতাংশেরও কম। এদের সবাইকে বাজারমূল্য অনুযায়ী বা তার চেয়ে বেশি বেতন দেওয়া হয়। ২০২২ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এইচ-১বি কর্মীদের গড় বেতন ৫২ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে সব মার্কিন কর্মীর গড় বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ এইচ-১বি কর্মীরা সস্তা বিকল্প কর্মী নন, বরং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীদের বেতন হ্রাসে অবদান রাখেন না।


এইচ-১বি ভিসাধারীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অবদান রাখেন এবং প্রায় প্রতিটি শিল্প ক্ষেত্রে উদ্ভাবনে সহায়তা করেছেন। তারা চিকিৎসক, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, অধ্যাপক, হিসাবরক্ষক, আর্থিক বিশ্লেষক, গবেষক, জেনেটিসিস্ট, কোয়ান্টাম পদার্থবিদ, ডেটা সায়েন্টিস্ট এবং আরও অনেক কিছু। এই দক্ষ কর্মীদের অনেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তির অগ্রভাগে আছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তিতে নেতৃত্ব বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


প্রকৃতপক্ষে ২৩ জানুয়ারির নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প প্রশাসন স্বীকার করেছে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং সঠিক নীতির মাধ্যমে দেশটি বৈশ্বিক নেতৃত্ব বজায় রাখতে পারবে। এ ছাড়া গবেষণায় নিয়মিত দেখা গেছে, এইচ-১ বি প্রোগ্রামের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রম চাহিদার ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দুটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো পেশায় এইচ-১ বি কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে ওই পেশায় বেকারত্বের হার হ্রাস পেয়েছে।
অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, এইচ-১বি ভিসার ওপর বিধিনিষেধ এবং উচ্চ প্রত্যাখ্যানের হার যুক্তরাষ্ট্রের বহু জাতীয় কোম্পানিকে বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে এবং দেশে চাকরির সংখ্যা কমাতে বাধ্য করেছে। ২০২২ সালের গবেষণা বলছে, যেসব খাতে এইচ-১বি কর্মীদের উপস্থিতি বেশি, সেসব খাতে পেটেন্ট আবেদনের সংখ্যাও বেশি। এই পেটেন্টের একটি বড় অংশ আসে ওই রাজ্য ও খাত থেকে, যেখানে এইচ-১ বি কর্মীরা বেশি সংখ্যায় রয়েছেন।


ভারতীয় নাগরিকরা এইচ-১বি ভিসা সবচেয়ে বেশি পায়। এ জন্য এটি প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার একটি বিষয় হয়ে ওঠে, তবে এই ভিসা প্রায় সব দেশের নাগরিকদেরই দেওয়া হয়। দুঃখজনকভাবে, প্রতিবছর এইচ-১বি ভিসা প্রোগ্রামটি সমালোচনার মুখে পড়ে। সমালোচকরা বলেন, এটি মার্কিন নাগরিকদের চাকরি কেড়ে নেয় এবং বেতন হ্রাস করে, যদিও বাস্তবে প্রধান পেশাগত শ্রেণিতে কর্মীস্বল্পতা এবং উচ্চ বেতন বিদ্যমান।


তথ্য বলছে, এইচ-১বি কর্মীরা অত্যন্ত দক্ষ, বাজারমূল্যের (এবং অনেক সময় তার চেয়ে বেশি) বেতন পান এবং যারা শুধু তাদের নিয়োগকর্তাদেরই নয়, বরং তাদের ক্লায়েন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকেও সমর্থন করেন। বর্তমানে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন এবং কংগ্রেস উভয়ই এইচ-১ বি প্রোগ্রামের ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা করতে পারে। সিনেটর চাক গ্রাসলি (রিপাবলিকান-আইওয়া) ও ডিক ডারবিন (ডেমোক্র্যাট-ইলিনয়), যারা সিনেট বিচার বিভাগীয় কমিটির সদস্য, তারা কয়েক দশক ধরে এই প্রোগ্রামের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পক্ষে।


প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রোগ্রামটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করতে চেয়েছিলেন– উচ্চ বেতনের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার প্রদান, বেতন বাড়ানো, ফি বৃদ্ধি ইত্যাদি প্রস্তাব করেছিলেন। যদিও ফেডারেল আদালত প্রস্তাবিত বেশির ভাগ পরিবর্তন আটকে দেয়। তবুও ২০১৭ সালের ‘বাই আমেরিকান, হায়ার আমেরিকান’ বা ‘আমেরিকান কিনুন, আমেরিকান ভাড়া করুন’ নির্বাহী আদেশের ফলে এইচ-১ বি আবেদনগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়। প্রত্যাখ্যানের হার ২০ শতাংশে পৌঁছায় এবং ২০১৮ সালে আরও তথ্যের জন্য অনুরোধের হার বেড়ে যায়, যা ব্যবসাগুলোর জন্য অনিশ্চয়তা ও ব্যয় বৃদ্ধি করে।


এ বছরের শুরুতে এইচ-১ বি প্রোগ্রাম নিয়ে বার্তা দেওয়ার ধরনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়। তবে এর প্রকৃত অর্থ বুঝতে গভীরে যেতে হবে। ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক প্রোগ্রামের প্রশংসা করার পর ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এইচ-১বির একজন সমর্থক। আমি এটি বহুবার ব্যবহার করেছি। এটি একটি চমৎকার প্রোগ্রাম।’ অথচ তাঁর প্রথম মেয়াদে তিনি নির্দিষ্ট ব্যবসাগুলোর সুবিধার্থে নিয়ম পুনর্লিখনের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াকে একপক্ষীয় করে তুলেছিলেন। যেসব ব্যবসা, হাসপাতাল, স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এই প্রোগ্রামের ওপর নির্ভর করে, তারা প্রায় প্রতিটি রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। প্রস্তাবিত বিধিনিষেধ কার্যকর হলে দীর্ঘ মেয়াদে প্রযুক্তিবিদ, উদ্ভাবক প্রকৌশলী, বিজ্ঞান ও ভাষা শিক্ষক এবং স্থানীয় চিকিৎসকদের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।


যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক বাজারে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী আকৃষ্ট করতে লড়ছে। যদি দেশটি দক্ষ বিদেশি কর্মীদের আকৃষ্ট ও ধরে রাখতে না পারে, তবে তারা অন্য কোথাও চলে যাবে। এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মশক্তিতে যে ‘দক্ষতার ঘাটতি’ রয়েছে, তা আগামী বছরগুলোতে আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এইচ-১বি প্রোগ্রাম যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে ও বাড়াতে সহায়তা করে। এই প্রোগ্রামের ওপর পরিবর্তন আনতে গেলে ট্রাম্প প্রশাসন ও কংগ্রেসের উচিত পরিণতি ভেবে দেখা। এইচ-১বি ভিসা প্রোগ্রাম দক্ষ শ্রমশক্তি আকৃষ্ট ও ধরে রাখতে অত্যন্ত কার্যকর একটি ব্যবস্থা, যা একই সঙ্গে মার্কিন কর্মীদের স্বার্থও রক্ষা করে।

ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ