১ ঘণ্টার বাজারে কোটি টাকার দুধের বাণিজ্য
Published: 7th, March 2025 GMT
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের গোপালপুরে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বড় দুধের বাজার। পরিচিতি পেয়েছে ‘এক ঘণ্টার বাজার’ নামে। ধলেশ্বরী নদীর পূর্বপাড়ের এই গোপালপুর বাজারে বিক্রি হয়ে শ’ শ’ মণ দুধ। আয়ও চমকে ওঠার মতো। ২৫০ থেকে ৩০০ মণ দুধ বিক্রি থেকে মাসে আয় হয় দুই কোটি টাকা। এই দুধ বেচাবিক্রির সঙ্গে যুক্ত ১৫ গ্রামের প্রায় ৩০০ ছোটবড় খামারি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল ৯টায় কর্মচঞ্চল থাকে এই বাজার। ১০টা পর্যন্ত চলে দুধ কেনাবেচা। যদিও বাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে বেশ কষ্ট পোহাতে হয় দুধ বিক্রেতাদের। নদীর পশ্চিমপাড়ের রাজৈর, বরাইদ, কাকরাইদ, গালা, তিল্লির চর, নাটুয়াবাড়ীসহ আশপাশের গ্রাম থেকে আসতে হয় খেয়া পারাপারে। তারপর তাদের দেখা যায় দুধ ভর্তি সিলভারের কলস মাথায় নিয়ে হাঁটতে।
এই অঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি হলেও গাভি পালন এখন অন্যতম আয়ের উৎস। প্রায় প্রতিটি কৃষকের বাড়িতেই পাঁচ থেকে ১০টি করে গাভি রয়েছে। বাজারে পাইকাররা সেই দুধ কিনে প্লাস্টিকের ড্রামে সংরক্ষণ করে মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন।
সম্প্রতি গোপালপুর গ্রামের রাজৈর এলাকার কয়েকজন ক্ষুদ্র খামারির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভোরবেলা থেকেই তারা গোয়ালঘরে দুধ দোয়ানোতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। কেউ গাভির বাট পরিষ্কার করে তেল মাখিয়ে দিচ্ছেন, আবার কেউ দুধ দোহন করে কলসিতে ভরছেন। এই দুধ বাজারে লিটারপ্রতি বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।
উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের কাকরাইদ গ্রামের সোরাব মিয়া জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে গাভি লালন-পালন করছেন। তার খামারে পাঁচটি গরু রয়েছে, যার মধ্যে চারটি দুধ দেয়। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ কেজি দুধ সংগ্রহ করেন। বাজারে এই দুধ ৬০ থেকে ৭০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হয়, যা দিয়েই চলে তার সংসার।
রাজৈর গ্রামের তোবারক হোসেনের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। তার খামারে চারটি গাভি রয়েছে, যেগুলো প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কেজি দুধ দেয়। দুধ বিক্রির টাকাই তার পরিবারের একমাত্র উপার্জন।
ঢাকা থেকে আসা পাইকারি দুধের ক্রেতা আব্দুল করিম জানান, তিনি গোপালপুর বাজার থেকে নিয়মিত দুধ কেনেন। প্রতিদিন ভোরেই তিনি তার কর্মচারীদের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানে এসে বাজারে পৌঁছান।
আব্দুল করিম বলেন, “আমি প্রায় পাঁচ বছর ধরে গোপালপুর বাজার থেকে দুধ কিনি। এখানকার দুধের মান ভালো। তাই প্রতিদিন আমাদের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মণ দুধ কেনা হয়। এই দুধ ঢাকায় মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকান আর হোটেলগুলোতে সরবরাহ করি।”
গোপালপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো.
তবে, বাজারটি দেশের অন্যতম বড় দুধের বাজার হলেও এখানে বেশ কিছু সমস্যাও রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ধলেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাব। কৃষকদের খেয়া নৌকায় দুধ আনতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ এবং কষ্টকর।
লুৎফর মিয়া দুধ নিয়ে এই বাজারেই আসেন। তিনি বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে একটা ব্রিজের দাবি জানিয়ে আসছি। ব্রিজ হলে আমাদের জীবন-যাপন অনেক সহজতর হতো।’’
সেতু নির্মাণ ও বাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন হলে এই অঞ্চলের দুধ ব্যবসা আরও প্রসারিত হবে বলে মনে করেন স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী ( এলজিইডি) মো. ইমরুল হাসান বলেন, “ব্রিজের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টেন্ডারের কাজও সম্পন্ন হলে কয়েক মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে।”
মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, “ওই এলাকায় গবাদি পশুর উন্নয়নে উঠান বৈঠক, ঘাস উৎপাদন, খামারিদের প্রশিক্ষণসহ একাধিক কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। ফলে গোপালপুর দুধের বাজার গুণগত মানের দুধ বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি বাড়িতেই গাভী পালন করে সবাই সাবলম্বী হচ্ছেন।”
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে টেকসই অর্থায়ন জরুরি : ওয়েবিনারে বক্তারা
“জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত” প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০২৫।
বুধবার (৯ এপ্রিল) দিবসটি উপলক্ষে অ্যাডভোকেসি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) উদ্যোগে “জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত” শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ। মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ দায়ী হলেও এটি মোকাবেলায় অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪.২ শতাংশ। বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ খাতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো অপরিহার্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে ৮০ ভাগ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে (সরকারি এবং বেসরকারি উভয়ই) অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা।
প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার অংশ হিসেবে অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও এ খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারে সাফল্য দেখাতে পারেনি।
ওয়েবিনারে আরও জানানো হয়, উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে বিনামূল্যে এ রোগের ওষুধ প্রদানের কাজ শুরু হলেও উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য টেকসই অর্থায়ন প্রয়োজন।
ওয়েবিনারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) এর লাইন ডিরেক্টর ডা. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, “সরকার উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। এই মুহূর্তে ওষুধের কিছুটা ঘাটতি আছে তবে আমরা দ্রুতই তা কাটিয়ে উঠতে পারব।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, “উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ যেন না বাড়ে সে জন্য খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি বাজেট বৃদ্ধির বিষয়ে বিশেষভাবে জোর দিতে হবে।”
ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর অধ্যাপক ডা. মলয় কান্তি মৃধা বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে অঞ্চল, বয়স, শিক্ষা এবং লিঙ্গভেদে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপের পার্থক্য আছে। গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রতিকার এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”
জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, “বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।”
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন প্রজ্ঞা’র কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই ওয়েবিনারে অংশ নেন।
ঢাকা/হাসান/টিপু