প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “নারীদের সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতাকে উৎপাদনমুখী কাজে সম্পৃক্ত করে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”

উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের নারীরা- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের নারী সমাজের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।”

‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উপলক্ষে শুক্রবার (৭ মার্চ) দেওয়া এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ঢাবিতে সেমিনার

রাবিপ্রবিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। নারী অধিকার রক্ষায় এই দিনটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতি বছর উদযাপিত হয়। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন-নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষায় ছাত্র-শ্রমিক-জনতা যে গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত করেছিল গত জুলাই-আগস্টে তার সম্মুখ সারিতে ছিল নারী। লক্ষ লক্ষ ছাত্রী বিভিন্ন ক্যাম্পাসে দমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়েছে। একাধিক নারী এই গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদত বরণ করেছেন। আমি এই গণ-অভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারীদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।”

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। তারা এগিয়ে যাচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। নারীদের অধিকার ও ক্ষমতায়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।”

তিনি বলেন, “নির্যাতিত, দুস্থ ও অসহায় নারীদের জন্য শেল্টার হোম, আইনি সহায়তা দিতে  ‘মহিলা সহায়তা কেন্দ্র’, কর্মজীবী মহিলাদের আবাসন ও নারীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সহায়তা ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের অদম্য মেয়েরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বমহিমায় এগিয়ে যাচ্ছে। নারীর অর্জনকে স্বীকৃতি দিতে ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ ও ‘বেগম রোকেয়া পদক’ প্রদানসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।”

ঢাকা/হাসান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

সোনারগাঁয়ে কারুপণ্যের বৈশাখী মেলা

গ্রামবাংলার চিরচেনা রূপ ফুটে উঠেছে বাংলার প্রাচীন রাজধানী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে। পক্ষকালব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলছে এ মেলা। এবারের বৈশাখী মেলায় লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ফাউন্ডেশনের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত রং-বেরঙের বাতি ও বিভিন্ন প্রাচীন মোটিফ দিয়ে সাজানো হয়েছে ফাউন্ডেশন চত্বর।
২৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এ মেলা। প্রতিদিন মেলার লোকজ মঞ্চে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই চলছে বাউল গান ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুতুল নাচ, হালখাতা, বায়োস্কোপ, সাপ ও বানর খেলা, নাগরদোলাসহ গ্রামীণ বিনোদনের নানা আয়োজন। হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলা তিন গুটি, সাত গুটি, বাঘবন্দি, কানামাছি, গোল্লাছুট, বউচি ও কপাল টোক্কা প্রদর্শন। রসনা তৃপ্তির জন্য থাকছে মুখরোচক সব বাঙালি খাবার।
ফাউন্ডেশনের বৈশাখী মেলা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, বৈশাখী মেলা ও জাদুঘরের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের বৈচিত্র্যময় কারুপণ্যের সমাহার রাখা হয়েছে। লোকসংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে কারুশিল্পীদের কেউ নিপুণ হাতের তৈরি কারুপণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। দেখা গেছে, এ মেলায় এবার শুধু কারুপণ্যের শিল্পীরা স্থান পেয়েছেন। তারা তাদের বরাদ্দকৃত স্টলগুলোয় সাজিয়েছেন উৎপাদিত কারুপণ্য দিয়ে। সব স্টল সাজানো হয়েছে অতীতের শণ দিয়ে তৈরি ঘরে। সেখানে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে খুঁজে পাওয়া যায়। এ মেলা আমাদের নিয়ে যায় নিজেদের শিকড়ের কাছে। নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করে দিচ্ছে আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতির সঙ্গে। মেলায় কোনো ধরনের প্লাস্টিক পণ্য দেখা যায়নি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জামদানি, শতরঞ্জি, নকশিকাঁথা, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, পাঁটজাতশিল্প, নকশি হাতপাখা, কাঠখোদাইশিল্প, পটচিত্রশিল্প, ঝিনুকশিল্প, লোক বাদ্যযন্ত্রশিল্প, মণিপুরি তাঁতশিল্প, শোলাশিল্প, বাঁশ-বেতশিল্প এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারুশিল্পীদের সৃষ্টিশীল কর্মের উপস্থাপন এবং বিপণন করছেন। 
শিল্পীরা এক স্টলে বসে তাদের কারুপণ্য তৈরি করছেন। একই নামে অপর স্টলে কারুপণ্য প্রদর্শন ও বিপণন করছেন। রাজশাহীর শখের হাঁড়িশিল্পী সুশান্ত  কুমার পাল ও সঞ্জয় কুমার পাল, কুমিল্লার রিকশা পেইন্টিং শিল্পী মো. নুহু খন্দকার, রাজশাহীর মৃৎশিল্প টেপা পুতুল শিল্পী সুবোধ কুমার পাল, কিশোরগঞ্জের মৃৎশিল্প টেপা পুতুল শিল্পী সুনীল চন্দ্র পাল, নীলফামারীর পাঁটজাত কারুশিল্পী একাব্বর হোসেন, সোনারগাঁয়ের নকশি হাতপাখা শিল্পী বাসন্তী রানী সূত্রধর, কুমিল্লার রীতা রানী সূত্রধর, সোনারগাঁয়ের কাঠখোদাই শিল্পী আউয়াল মোল্লা ও রফিকুল ইসলাম, কাঠের চিত্রিত কারুশিল্পী বীরেন্দ্র চন্দ্র সূত্রধর ও আশুতোষ সূত্রধর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নকশিকাঁথা শিল্পী পারভীন আক্তার, রাঙামাটির আদিবাসী তাঁতশিল্পী মাচাচিং মারমা ও সীমা চাকমা, শতরঞ্জি শিল্পী আনোয়ার হোসেনসহ প্রথিতযশা কারুশিল্পীরা।
মৃৎশিল্পী সুশান্ত কুমার পাল জানান, তাদের স্টলে মেলায় আসা দর্শনার্থী ভিড় করছেন। তাদের হাতের তৈরি শখের হাঁড়ি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে। এবারের মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শুধু কারুশিল্পীরাই স্টল পেয়েছেন। স্টল পেয়েছেন দুটি করে। একটি স্টলে কারুপণ্য তৈরি করছেন আর অন্য স্টলে প্রদর্শন ও বিপণন হচ্ছে। 
নকশিকাঁথা শিল্পী হোসনে আরা জানান, তাদের মতো শিল্পীদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রি, বিপণন ও জাতীয় পর্যায়ে সর্বসাধারণের সামনে তুলে ধরার জন্য লোককারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। কয়েক বছর ধরে আমি এ মেলায় পণ্য নিয়ে আসি। তবে অন্যবারের চেয়ে এবার আয়োজন ছিল ভিন্ন। ক্রেতাও এসেছে অনেক। এখানে আমাদের তৈরি নকশিকাঁথা পেয়ে অনেকেই খুশি হয়েছেন।
রাঙামাটির আদিবাসী তাঁতশিল্পী মাচাচিং মারমা ও সীমা চাকমা বলেন, ‘ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ আমাদের হাতের তৈরি পণ্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আরও বেশি শুধু কারুপণ্যের মেলার আয়োজন করলে এসব পণ্যের প্রতি লোকজন আকৃষ্ট হবেন।’ 
মেলায় কুমিল্লা থেকে এসেছেন আতাউর রহমান রাজু ও তাঁর স্ত্রী। আতাউর রহমান জানান, মেলায় এসে নতুন বউয়ের জন্য সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি কিনেছেন। আরও কিনেছেন হাতের তৈরি কাঠ ও তাঁতের বিভিন্ন কারুপণ্য। নারায়ণগঞ্জ শহরের উকিলপাড়া থেকে বৈশাখী মেলায় আসা নাজমা আক্তার নামে এক তরুণী বলেন, ‘বছর ঘুরে আমরা আবারও বৈশাখী মেলায় ঘুরতে সুযোগ পেয়েছি। এখানে ঐতিহাসিক বিভিন্ন পণ্যের স্টল বসানো হয়েছে। ঘুরে ঘুরে দেখছি। সব কয়টি পণ্য আমাকে মুগ্ধ করেছে।’
শরীফুল ইসলাম নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, ‘আমার কাছে বৈশাখী মেলা মানে হরেকরকম সুস্বাদু খাবারের সমাহার, যেসব খাবারের স্বাদ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাই নিজে খাওয়ার পাশাপাশি মেলা থেকে বাসার জন্যও মুখরোচক কিছু খাবার কিনেছি।’
মেলায় শিশুকিশোরের সংখ্যা ছিল বেশি। বেড়ানোর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নাগরদোলা-চরকিতে চড়ে তারা উচ্ছ্বসিত। 
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন; যা সোনারগাঁ জাদুঘর নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোক ও কারুশিল্পের সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমাদের দেশজ যে লোক ও কারুপণ্য, এগুলোর বাজারজাতকরণের একটা বড় জায়গা এ ধরনের মেলা। আমরা এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে দেশজ পণ্যের প্রচার-প্রসারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি এ মেলায়। এবারের আয়োজনটি একটু ভিন্ন। আমাদের এ ফাউন্ডেশনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের পাশাপাশি পক্ষকালব্যাপী ভিন্ন আঙ্গিকে এবার বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই এবার একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়েছে। দেশের আনাচে-কানাচে থাকা লোকজ ও কারুশিল্পের শিল্পীদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী উৎপাদন, বিপণনসহ সর্বসাধারণের সামনে তুলে ধরার জন্য এ বৈশাখী মেলার মূল উদ্দেশ্য। এ মেলার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশজ পণ্যের যে একটি বাজার গড়ে ওঠে, সেটি দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখে।’ v

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন
  • এমডব্লিউ বাংলাদেশের উদ্যোগে মায়া বেঙ্গল ইন মোশন : টাইমলেস টেগোর
  • বর্ণিল আয়োজনে রাইজিংবিডির যুগপূর্তি উদযাপন
  • সোনারগাঁয়ে কারুপণ্যের বৈশাখী মেলা
  • নারী আন্দোলনকে সামাজিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে