আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের ভুল অনুবাদ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলছেন, ‘দলের আর্থিক বিষয়ে আমি বলেছিলাম যে সমাজের সচ্ছল মানুষ, আমাদের সচ্ছল সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষী যাঁরা আছেন, তাঁরা মূলত আমাদের সহযোগিতা করেন। আমরা অনলাইন ও অফলাইনে একটা ক্রাউড ফান্ডিংয়ের (গণচাঁদা সংগ্রহ) দিকে যাচ্ছি, যে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে আমরা দলের কার্যালয় স্থাপনসহ নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ করব। আমার এই কথার একটা ভুল অনুবাদ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে।’

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এনসিপির এক সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। গতকাল রয়টার্সে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশজুড়ে অনেক ‘সম্পদশালী’ (অ্যাফ্লুয়েন্ট) ব্যক্তি তাঁদের দলকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এখনো পুরোপুরি জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি এবং এ বছর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে—এ কথাও নাহিদের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছিল। ওই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, গতকাল রয়টার্সের সাক্ষাৎকারে কিছু মিসকোট হয়েছে বা ভুল অনুবাদ হয়েছে। এটা সংশোধনের জন্য তাদের অনুরোধ থাকবে।

দলের আর্থিক বিষয় ছাড়াও নির্বাচন আয়োজন নিয়ে তাঁর বক্তব্য ভুলভাবে গণমাধ্যমে এসেছে বলে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ বছর নির্বাচন করা সম্ভব নয়—কথাটা তিনি রয়টার্সকে এভাবে বলেননি বলে দাবি করেন তিনি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, এখন দেশে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ যে রকম নাজুক অবস্থায় আছে, এ রকম অবস্থায় নির্বাচন করাটা অনেক বেশি কঠিন হবে এবং এই পুলিশ-প্রশাসনের একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার সক্ষমতার পরীক্ষা দীর্ঘদিন ধরে হয়নি। সেই জায়গা থেকে আমি বলেছি, আমাদের নির্বাচনের আগে দেশের পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা অবশ্যই উন্নত করতে হবে। সেটার জন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সামাজিক শক্তিকেও এগিয়ে এসে সহযোগিতা করতে হবে।’

নির্বাচনের জন্য এনসিপির মানসিকতা ও প্রস্তুতি রয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে বলেছি, আমরা গণপরিষদ নির্বাচন দেখতে চাই জাতীয় সংসদের পাশাপাশি। কেবল নির্বাচনই এই মুহূর্তে এনসিপির একমাত্র দাবি নয়। আমরা গণপরিষদ বা জাতীয় নির্বাচনের কথা বলছি, কিন্তু তার আগে আমরা দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম দেখতে চাই।’

এই সংবাদ সম্মেলনের আগে আজ জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রথম সাধারণ সভা হয়। এই সভায় দলের কিছু কর্মসূচি ঠিক করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির কথা জানান এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১০ মার্চ জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইফতার মাহফিল করবে এনসিপি। আর ১১ মার্চ বিদ্যমান রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এনসিপির পক্ষ থেকে ইফতার পার্টি করবে সদ্য আত্মপ্রকাশ করা দলটি। তবে এই ইফতার পার্টি কোথায় হবে, তা জানাননি আখতার।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারওয়ার নিভা, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ল অন ব দ এনস প র রয়ট র স আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে পশ্চিম তীরে ধর্মঘট

গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলা বন্ধের দাবিতে দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ধর্মঘট করেছেন ফিলিস্তিনিরা। সোমবার পশ্চিম তীরজুড়ে দোকানপাট, বিদ্যালয় এবং বেশির ভাগ প্রশাসনিক ভবন বন্ধ ছিল। পূর্ব জেরুজালেমের ব্যস্ত সালাহেদ্দিন সড়কও ছিল খালি।

‘ফিলিস্তিনিদের ওপর জাতিগত নিধন ও চলমান হত্যাকাণ্ডের’ প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল ফাতাহ, হামাসসহ ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর জোট। ইসরায়েলের দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড, শরণার্থীশিবির এবং ফিলিস্তিনিদের সমর্থকদের এই ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানায় তারা।

সোমবার বেথলেহেমে ফাদি সাদি নামের এক দোকানদার এএফপিকে বলেন, ‘আজ আমি শহরের ভেতর দিয়ে হেঁটে গিয়েছি। তবে এমন একটি জায়গাও খুঁজে পাইনি, সেটি খোলা ছিল।’ আর জেরুজালেমের এক দোকান মালিক ইমাদ সালমান বলেন, ‘গাজায় আমাদের পরিবারের জন্য, আমাদের শিশুদের জন্য আজ আমরা (দোকান) বন্ধ রেখেছি।’  

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। দীর্ঘ ১৫ মাস পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে উপত্যকাটিতে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। পরে ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা দখলের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ধর্মঘটে অংশ নেওয়া আহমেদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ট্রাম্প বা নেতানিয়াহু, ইসরায়েল সরকার বা মার্কিন সরকার যে–ই হোক, ফিলিস্তিনিদের ওপর যে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে এবং গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সোমবার এই ধর্মঘট পালন করেন তাঁরা।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ১৮ মাস ধরে চলা সহিংসতায় উপত্যকাটিতে অন্তত ৫০ হাজার ৬৯৫ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নারী ও শিশু বেশি। এই সময়ে আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ জন। আর গাজার জনসংযোগ কার্যালয়ের হিসাবে, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০। তাঁদের মধ্যে নিখোঁজ ফিলিস্তিনিরাও রয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ