ইয়েমেন উপকূলে নৌকা ডুবে ১৮০ অভিবাসী নিখোঁজ
Published: 7th, March 2025 GMT
জিবুতি এবং ইয়েমেনের মধ্যবর্তী এলাকায় অভিবাসী বহনকারী চারটি নৌকা ডুবে ১৮০ জনেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছে। শুক্রবার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছে।
নৌকায় থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য জানায়নি অভিবাসন সংস্থা। তবে ইথিওপীয়রা প্রায়ই উপসাগরীয় দেশগুলোতে কাজ খুঁজে পেতে বা সংঘাত থেকে বাঁচতে এই পথটি ব্যবহার করে।
অভিবাসন সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, “গত রাতে জিবুতি এবং ইয়েমেন উপকূলে চারটি নৌকা ডুবির ঘটনায় ১৮০ জনেরও বেশি অভিবাসী নিখোঁজ রয়েছেন।”
সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুসারে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অভিবাসী রুটগুলোর মধ্যে একটি। ২০২৪ সালে ইয়েমেনে এই পথ ব্যবহার করে ৬০ হাজারেরও বেশি অভিবাসীর আগমনের তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে।
জানুয়ারিতে ইয়েমেনের উপকূলে নৌকা ডুবে ২০ জন ইথিওপীয় নিহত হন। ২০২৪ সালে এই পথে ৫৫৮ জন মারা গেছেন।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শাহাদাতের ক্ষমতা বাড়লেও গুরুত্ব কমেছে দলে
কথা ছিল নগর বিএনপির আহ্বায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও দলে মূল্যায়ন করা হবে ডা. শাহাদাত হোসেনকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান অথবা যুগ্ম মহাসচিব করা হতে পারে তাকে, এমন আলোচনাও ছিল নেতাকর্মীদের মধ্যে। কিন্তু সেটা হয়নি।
২০২৪ সালের ১৩ জুন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করার পর ১০ মাস পার হলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি তাকে। ২০২৪ সালের ৭ জুলাই দুই সদস্যবিশিষ্ট মহানগর বিএনপির কমিটি এবং পরবর্তীতে একই বছরের ৪ নভেম্বর ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে সাবেক আহ্বায়ক হিসেবে পদাধিকার বলে এক নম্বর সদস্য করা হলেও উপেক্ষা করা হয় তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ বিএনপি নেতাকে। সেই কমিটিতে স্থান হয়নি তাদের। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হাতাশা রয়েছে এই বলয়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে। ফলে দলে একপ্রকার নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন তারা।
তবে আদালতের রায়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার পর করপোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে দিন-রাত সমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। মাঝেমধ্যে অনুসারী নেতাকর্মীদের বিচ্ছিন্ন কিছু কর্মসূচিতে অংশ নিলেও নেতৃত্বে না থাকায় দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় কম তিনি। দলীয় বলয়ে আলোচনা আছে, মেয়র হওয়ার কারণে ক্ষমতা বেড়েছে ডা. শাহাদাত হোসেনের, তবে দলে তার গুরুত্ব কমেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন সিনিয়র নেতা সমকালের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন ডা. শাহাদাত হোসেন। ফলে দলের হাইকমান্ড দলকে নতুন করে সাজাতে তাকে সরিয়ে নগর বিএনপিকে পুনর্গঠন করেছে। তবে একইসঙ্গে তাকে মূল্যায়ন না করায় বিষয়টি নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন আছে। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে রদবদল আসতে পারে। বিভিন্ন পদে নতুন মুখ আসতে পারে। তখন তাকে মূল্যায়ন করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই এ বিষয়ে চূড়ান্ত নেবেন।
দলের দুঃসময়ের কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত ডা. শাহাদাত হোসেন। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নগরীতে টানা ১৬ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এ সময়ে অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে, জেলও খেটেছেন। ২০২১ সালের গত ২৯ মার্চ নগরীর কাজির দেউড়ী এলাকায় সমাবেশ চলাকালে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় দুটিসহ তিনটি মামলায় আসামি করার পাশাপাশি সেদিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৫২ দিন কারাগারে থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে পুলিশের হাতে কয়েক দফা লাঞ্ছিত হয়েছেন। এমনকি শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগে কয়েকজন বিএনপি নেতার বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেই সময় নগরীর বাদশা মিয়া রোডে ডা. শাহাদাতের বাসায়ও দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং আরও আটটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সুসময়ে দলে তাকে মূল্যায়ন করা হবে— এমনটিই আশা করেছিলেন তিনি ও তার সমর্থকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগর বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর দলে নতুন করে মূল্যায়ন না করায় রাজনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারছেন না ডা. শাহাদাত হোসেন। ফলে রাজনীতির মাঠ থেকে নিজেকে তিনি কিছুটা দূরে সরিয়ে রেখে মেয়র হিসেবে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।
২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রয়াত এএফ হাসান আরিফ মেয়র হিসেবে ডা. শাহাদাতকে শপথবাক্য পাঠ করান। এরপর সিটি করপোরেশনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। এর আগে আদালত চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীর পরিবর্তে তাকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, নগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি গঠনকালে ডা. শাহাদাতের নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটির ২৩ জনকে বাদ দেওয়া হয়। তাদের বেশিরভাগই তার অনুসারী। ডা. শাহাদাত ও বক্করের নেতৃত্বাধীন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা ও মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা নেতাদের মধ্যে বর্তমান কমিটিতে স্থান পাননি নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, সদস্য শামসুল আলম, হাজী মোহাম্মদ আলী, চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুব আলম, মোহরা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন আহমেদ। ফলে ডা. শাহাদাতের সঙ্গে পদবঞ্চিত অনুসারী নেতাকর্মিরাও মাঠের রাজনীতিতে অনেকটাই নিস্ক্রিয়।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজিমুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘বিএনপি বড় একটি রাজনৈতিক দল এবং দলটির নগর বিএনপি শাখাও একটি বড় এলাকা ও অঞ্চল নিয়ে গঠিত। সেখান থেকে মাত্র ৫৩ জন সুযোগ পেয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে দলের জন্য অনেকেরই ত্যাগ থাকার পরও তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা যায়নি। তবে নানাভাবে তাদের মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দল পুনগর্ঠনকালে এসব ত্যাগী নেতাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে মূলয়ান করা হবে।’
জানা যায়, ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বে গঠন করা হয় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি। সেই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর সেই দুইজনকে নেতৃত্বে রেখে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় কেন্দ্র থেকে। ২০২৪ সালের জুনে আবার সেই কমিটি বিলুপ্ত করে এরশাদ উল্লাহকে সভাপতি ও নাজিমুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৬ সালের ৬ আগস্টের আগে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে যে কমিটি ছিল সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ডা. শাহাদাত। বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আমীর খসরু।