সংখ্যালঘু আক্রমণকারীদের দ্রুত সাজা চায় ভারত
Published: 7th, March 2025 GMT
ভারত বাংলাদেশ সরকারকে আরও একবার মনে করিয়ে দিল, তারা চায় সে দেশের সরকার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত সাজা দিক। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সব বিষয়ের নিষ্পত্তি করুক।
আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের জীবন, সম্পত্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষার দায়িত্ব সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের। সেই দায়িত্ব তারা পালন করুক।
এই প্রথম ভারতের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর ‘নির্যাতনের’ একটি খতিয়ানও দেওয়া হয়। মুখপাত্র সেই খতিয়ান দিয়ে বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট থেকে এই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ৩৭৪টি ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে সে দেশের পুলিশ ১ হাজার ২৫৪টি ঘটনা যাচাই করেছে। এসব ঘটনার ৯৮ শতাংশ ‘রাজনৈতিক’। তিনি বলেন, ভারত চায়, প্রতিটি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত শেষে অপরাধীদের সাজা দেওয়া হোক।
সম্প্রতি ওমানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর দেশে ফিরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এক মন্তব্যে বলেছিলেন, সংখ্যালঘুদের রক্ষার বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কারণ নেই। সেই প্রশ্নের উত্তরেই জয়সোয়াল ‘নির্যাতনের’ খতিয়ান তুলে ধরে এই মন্তব্য করেন।
জয়সোয়াল দাবি করেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। গুরুতর অপরাধে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী এবং উগ্রপন্থীদের ছেড়ে দেওয়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
বাংলাদেশের আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজ সম্প্রতি রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। সে বিষয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে দল গঠন নিয়ে জয়সোয়াল কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন, ভারত সব সময় স্থিতিশীল, প্রগতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের সমর্থক। ভারত চায়, তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সব বিষয়ের নিষ্পত্তি করুক।
শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের ঋণ ও সেই ঋণভিত্তিক প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য সম্প্রতি সে দেশের একটি প্রতিনিধিদল ভারতে এসেছিল বলেও মুখপাত্র জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে সেই আলোচনার উল্লেখ করে জয়সোয়াল বলেন, উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে সম্প্রতি দিল্লিতে দুই দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে।
জয়সোয়াল বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সংক্রান্ত উদ্ভূত পরিস্থিতি, নিরাপত্তাহীনতা ও বহুদিন ধরে চলা স্থানীয় বিষয়ের কারণে প্রকল্পগুলোর গতি ব্যাহত হয়েছে।
মুখপাত্র বলেন, এসব উন্নয়ন কর্মসূচি ভারতের অগ্রাধিকার। কিন্তু নানা কারণে অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ায় দুই দেশ ঠিক করেছে, প্রকল্পগুলো যুক্তিযুক্ত করে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। তবে সেই সঙ্গে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুত সমর্থন ও প্রকল্প রূপায়ণে প্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়ার ওপর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প জয়স য় ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে ক্রীড়া সংবাদিকতা: নেশা থেকে পেশা
প্রায় পাঁচ দশক ক্রীড়া সাংবাদিকতা করেছেন অজয় বড়ুয়া। দীর্ঘদিন ছিলেন ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকার ক্রীড়া সম্পাদক। চাকরির সুবাদে আমার স্পোর্টস এডিটর ছিলেন অজয়দা। ১৯৬০-এর দশকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণিতের ছাত্র ছিলেন। ওই সময় ঢাবিতে অঙ্কের মতো বিষয়ে পড়তেন ক’জন? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোনো সরকারি চাকরি নিদেনপক্ষে নামি কলেজে অঙ্কের শিক্ষক হওয়াটা ব্যাপার ছিল না অজয়দা’র জন্য। সারাক্ষণ হাসিমুখে থাকা অজয়দা’র সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ঠিক বলে বুঝানো যাবে না। আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দাদার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা। বলে রাখা ভালো আমার ক্রীড়া সাংবাদিকতা ক্যারিয়ারের শুরু দৈনিক ‘আজকের পত্রিকা’ দিয়ে। ফুটবলে কোনো একটা বিশেষ লেখা লিখলে অজয়দা অফিসে ফোন দিতেন। বলাবাহুল্য দাদার সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠতার কারণেই সংবাদ পত্রিকায় যোগ দেই। ঢাবিতে গণিতের মতো বিষয়ে পড়ে কেন পেশা হিসাবে ক্রীড়া সাংবাদিকতা বেছে নিলেন? এই প্রশ্নের জবাবে অজয়দা বলতেন, নিজে ফুটবল খেলতাম। খেলার বাইরে আসলে অন্য কিছু ভাবতে পারিনি। তাই ক্রীড়া সংবাদিকতাকেই পেশা হিসাবে নিলাম। ক্যারিয়ার হয়ত তেমন কিছু হয়নি, তবে খেলা দেখা, স্টেডিয়াম পাড়ার আড্ডা, মোট কথা খেলার সঙ্গে জীবন কাটানো- ভালোই তো আছি! হাসতে হাসতে আরো বলতেন, এই যে তোমাদের সঙ্গে আছি, ভালোই তো চলছে সবকিছু।
এই যে, ভালোই তো আছি, ভালোই তো চলছে সর্বোপরি খেলাধুলার সঙ্গে আছি, ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে নেশা হিসাবে নেয়ার জন্য এর থেকে বড় সত্যি আর হয় না। খেলার প্রতি তীব্র আকর্ষণ- এ এক ভিন্ন নেশা। আর এই নেশা থেকে ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে নেয়ার সুযোগ আসলে সেটা লুফে নিতে অনেকেই দ্বিতীয়বার ভাবেন না।
বাংলাদেশে খেলার সংবাদকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে খুবই বড় নাম উৎপল শুভ্র। ১৯৮০-এর দশকে পড়েছেন খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। খ্যাতনামা ক্রীড়া সাংবাদিক পবিত্র কু-ু পড়েছেন কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ে। মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়াও বিশ^বিদ্যালয়ের উপরের দিকের সাবজেক্টে পড়–য়ারা ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নেয়ার কারণ একটাই- খেলাধুলার প্রতি তীব্র আসক্তি। মোট কথা খেলার নেশা থেকে ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নাই। তবে এটাও যে রাতারাতি হয়েছে বিষয়টা এমন নয়। এর একটা ধারাবাহিকতা আছে। বাংলাদেশে সুদীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আজকের ক্রীড়া সাংবাদিকতা। যাদের নিষ্ঠা, ত্যাগের বিনিময়ে আজকের ক্রীড়া সাংবাদিকতা সেদিকে একটু চোখ ফেরানো যাক।
আমাদের উপমহাদেশে ব্রিটিশ ভারতে সূচনা ঘটে ক্রীড়া সাংবাদিকতার। একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় ১৮৫৪ সালের এপ্রিলের একটি ফুটবল ম্যাচের খবর প্রকাশ হয়। ছোট্ট এই সংবাদটির প্রভাব হয় মারাত্মক। এ যেন, বিন্দুর বুকে সিন্ধুর ছায়াপাত সম, শঙ্খ বাজে সমুদ্র তরঙ্গের আভাষের মতো।
কলকাতাকেন্দ্রীক ফুটবল জমজমাট হয়ে ওঠে ১৯৩০-এর দশক থেকে। মোহামেডান, মোহনবাগান, ইস্ট বেঙ্গলের নামে আবেগে ভাসত এ অঞ্চলের ফুটবলপ্রেমীরা। মাঠে ভিড় উপচে পড়ত। গড়ের মাঠে থাকত উৎসবের মেজাজ। শহর কলকাতা তো বটেই, শহরতলি, গ্রামাঞ্চল থেকে কাতারে কাতারে মানুষ ছুটে আসতেন ময়দানে। আশির দশকে আমরা স্কুলে নিচের ক্লাসে পড়ার সময়, রেডিওতে খেলার ধারাভাষ্য শুনতাম। এটা দেখে আমার বাবা বলতেন, আমরাও রেডিওতে ফুটবলের ধারাবিবরণি শুনতাম। মোহামেডান-মোহনবাগান খেলার সময় এগিয়ে এলে হাজার হাজার রেডিও বিক্রি হতো। গোলরক্ষক ওসমান রক্ষণভাগে জুম্মা খাঁ, মাঝমাঠে নুর মহম্মদ আর আক্রমণভাগে হাফিজ, রশিদদের নাম বাবা-চাচাদের মুখে অনেক শুনেছি। বাংলা সংবাদপত্রেও তার প্রতিফলন ঘটে। সে সময় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হতো অসংখ্য পত্র-পত্রিকা। তাতে গুরুত্ব পেতে থাকে খেলার সংবাদও। ব্রিটিশদের সঙ্গে ভারতীয়দের ফুটবল ম্যাচ হয়ে ওঠে ক্রীড়া সাংবাদিকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। ম্যাচ রিপোর্টের পাশাপাশি ছাপা হয় সাদাকালো ছবি। তবে সব কিছুই ছিল কলকাতাকেন্দ্রীক। ঢাকা তথা পূর্ব বাংলায় সংবাদপত্রে খেলার সংবাদ সেভাবে আসত না। সে সময় ঢাকায় পত্র-পত্রিকাও ছিল খুব অপ্রতুল। হাতে গোনা যে কয়েকটি পত্রিকা ছিল তাতে খেলাধুলার জায়গা ছিল না।
১৮৫৬ সালে ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘ঢাকা নিউজ’, ১৮৬০ সালে ‘বেঙ্গল টাইমস’ এবং একই বছর প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক ‘কবিতাকুসুমালী’ প্রকাশিত হয়। ১৮৬১ সালে আলোর মুখ দেখে ‘ঢাকা প্রকাশ’। খেলাধুলার সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে এ পত্রিকাটিই সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। ১৯১৬ সালে সর্বপ্রথম ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় দৈনিক ‘দ্য হেরাল্ড’। এই পত্রিকায় খেলার খবর প্রকাশিত হতো অনিয়মিতভাবে। আর তাই ব্রিটিশ আমলে ঢাকায় ফুটবল লিগ আয়োজিত হলেও সেই সংবাদ মিডিয়াতে সেভাবে আসেনি। অবশ্য কলকাতা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় ঢাকার খেলাধুলার সংবাদ মাঝেমধ্যে ছাপা হতো।
১৯৩৬ সালের ৩১ অক্টোবর ‘দৈনিক আজাদ’ প্রকাশিত হওয়ার পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। ঢাকাস্থ প্রতিনিধির পাঠানো খেলার খবর মাঝেমধ্যে দেখা যেত পত্রিকাটিতে। আজাদ-এর পাশাপাশি দৈনিক ইত্তেহাদ, ডেইলি মর্নিং নিউজ ঢাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার পর খেলার সংবাদও জায়গা করে নিতে থাকে একটু একটু করে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘সওগাত’ পত্রিকা ক্রীড়া সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। মোহামেডান ক্লাবের খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে এ পত্রিকাটি রাখে অনন্য ভূমিকা। খেলোয়াড়দের ছবি ও প্রোফাইল প্রকাশ করে বেশ পাঠকপ্রিয়তা পায় পত্রিকাটি।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের ক্রীড়াঙ্গনে বেজে ওঠে নতুন সুর। এর প্রভাব পড়ে ক্রীড়া সাংবাদিকতাতেও। যদিও তখন সংবাদপত্রের সংখ্যা ছিল খুবই কম- আজাদ, মর্নিং নিউজ, অবজারভার, সংবাদ, ইত্তেফাক- এই পত্রিকাগুলো ছিল বেশ প্রভাব বিস্তারকারী। মূলত এ পত্রিকাগুলোর মাধ্যমে এগিয়ে যেতে থাকে ক্রীড়া সাংবাদিকতা। ওই সময় থেকেই প্রথমে পার্টটাইম ও পরবর্তীতে ফুল টাইম ক্রীড়া সাংবাদিক নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রথম ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে মনে করা হয় দৈনিক আজাদ-এর সৈয়দ জাফর আলীকে। তিনি ছিলেন এ পত্রিকার চিফ রিপোর্টার। পাশাপাশি করতেন স্পোর্টস রিপোর্টিং। তখন পর্যন্ত বাংলা পত্রিকায় খেলাধুলার খবরকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এক কলামের বেশি নিউজ প্রকাশ হওয়াটা ছিল অনেক বড় ব্যাপার। অধিকাংশ দিন কোনো খবরই ছাপা হতো না। তবে ইংরেজি পত্রিকাগুলোতে বেশ একটা জায়গাজুড়ে থাকত খেলার খবর। ১৯৪৯ সালের ১৯ মার্চ প্রকাশিত ‘অবজারভার’ প্রথম খ-কালীন স্পোর্টস রিপোর্টার হিসাবে নিয়োগ দেয় নুরুল কবির ওরফে কানু কবিরকে। ১৯৫৪ সালে সার্বক্ষণিক স্পোটস রিপোর্টার হিসেবে কুতুবউদ্দীনকে নিয়োগ দেয় ‘মর্নিং নিউজ’। প্রাতিষ্ঠানিকতার দিকে এগিয়ে যায় ক্রীড়া সাংবাদিকতা।
এ সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের সাফল্য বাড়িয়ে তোলে ক্রীড়া সাংবাদিকতার পরিসর ও গুরুত্ব। ভারতের মাটিতে নিজেদের দ্বিতীয় টেস্টেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। পত্রিকাগুলোতে জায়গা করে নেয় এই জয়। এমনকি প্রথম পাতায় ছবিসহ সবিস্তারে ছাপা হয় এই টেস্ট জয়ের খবর। এরপর ১৯৫৫ সালে ভারত, নিউজিল্যান্ড, ১৯৫৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, ১৯৬২ সালে ইংল্যান্ড, ১৯৬৯ সালে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে পাকিস্তানের টেস্ট ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। ক্রিকেটের টানে স্টেডিয়ামমুখো হয় মানুষ। ক্রীড়া সাংবাদিকতাও পায় নতুন মাত্রা।
এরপর ধীরে ধীরে পত্রিকাগুলোতে জায়গা করে নিতে থাকে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগের খবর। পাকিস্তান আমলে ফুটবলের তীর্থকেন্দ্র হয়ে ওঠে ঢাকা। ঘরোয়া ফুটবলে তখন জোয়ার। পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানিদের খেলা হলে উত্তাপ-উত্তেজনা নিত চরম মাত্রা। এর প্রভাব এড়ানোর সুযোগ ছিল না পত্রিকাগুলোর। পঞ্চাশ দশকের শেষ দিকে ‘মর্নিং নিউজ’ আর ‘অবজারভার’-এ খেলার জন্য এক পাতা বরাদ্দ করা হয়। ক্রীড়া সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যা ছিল মাইলফলক। সে সময় আলাদাভাবে নিয়োগ দেয়া হয় স্পোর্টস এডিটর। সবার আগে সাপ্তাহিক খেলার পাতা চালু করে ‘মর্নিং নিউজ’। ষাটের দশকের শুরুতে বাংলা পত্রিকার মধ্যে প্রথম এই কাতারে শামিল হয় ‘দৈনিক আজাদ’। ১৯৫৪ সালে ঢাকা স্টেডিয়াম গড়ে উঠলে ক্রীড়াঙ্গনের পালে লাগে নতুন হাওয়া। ক্রীড়া সাংবাদিকদের আনাগোনা, গল্প-আড্ডায় মুুখর হয়ে ওঠে স্টেডিয়াম এলাকা। আর এতে করে সংবাদপত্রের পাতায় খেলার খবর হয়ে ওঠে আবশ্যকীয়। ফুটবল প্রধান আকর্ষণ হলেও অন্য খেলাগুলোও গুরুত্ব পেতে থাকে পত্রিকার পাতায়। ১৯৫৫ সালে ঢাকায় অ্যাথলেট জিনাত আহমেদ এবং ১৯৫৬ সালে লাহোরে লুৎফুন্নেছা হক বকুলের স্বর্ণ জয় ছাপা হয় সবিস্তারে।
১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত সাঁতারে ব্রজেন দাস ছয় বার ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে সাড়া জাগান। এই অর্জনগুলো ক্রীড়া সাংবাদিকতার কাজটিকে করে আরও বেগবান। তবে বিদেশি খেলার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে বেগ পোহাতে হতো যথেষ্ট। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে পাকিস্তানের করাচি হয়ে সংবাদগুলো পাওয়া যেত। পঞ্চাশের দশক থেকে পত্র-পত্রিকায় খেলার ছবিও প্রকাশিত হতে শুরু করে। যদিও আলাদাভাবে ক্রীড়া বিষয়ক কোনো ফটো জার্নালিস্ট ছিল না। পত্রিকায় কাজ করা অন্য ফটোজার্নালিস্টরা নিজেদের কাজের ফাঁকে যেতেন খেলার মাঠে।
স্বাধীনতার পর অন্যসব সেক্টরের মতো বড় হয় ক্রীড়া সাংবাদিকতার পরিসর। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন আবর্তিত হতে থাকে আবাহনী ও মোহামেডানকে কেন্দ্র করে। ফুটবলের বাইরেও হকি, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিক্স, সাঁতারের খবরগুলো ছাপা হতে থাকে পত্রিকার পাতায়। গুরুত্বপূর্ণ কিছু খেলা সম্প্রচার করতে থাকে বিটিভি। ১৯৮০ সালে মোহাম্মদ আলী-ল্যারি হোমসের বক্সিং প্রতিযোগিতা সরাসরি সম্প্রচার করে বিটিভি। এর আগে বাংলাদেশ সফরে আসেন কিংবদন্তী এই বক্সার। বলাবাহুল্য আমাদের উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তানের আগেই বাংলাদেশ সফর করেন আলী। সর্বকালের সেরা বক্সারের আগমনকে কেন্দ্র করে এক অভূতপূর্ব ঘটনার সৃষ্টি হয়। স্পোর্টস রিপোর্টারদের বাইরেও অনেক সাংবাদিক হাজির হন পুরান বিমানবন্দরে, নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে। এদিকে সাফ গেমসের সাফল্য আমাদের ক্রীড়াবিদদের হিরো হওয়ার সুযোগ করে দেয়। ১৯৮৫ সালে ঢাকা সাফ গেমসে একাই ছয় ছয়টি স্বর্ণ জেতেন সাঁতারু মোশারফ। এদিকে আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় ঝড় তোলেন নিয়াজ মোরশেদ। উপমহাদেশের প্রথম দাবাড়ু হিসাবে দাবার সর্বোচ্চ অর্জন গ্রান্ড মাস্টার খেতাব পান নিয়াজ। তারপরও একটা গতানুগতিক ঘেরাটোপের মধ্যেই বন্দী হয়ে ছিল দেশের ক্রীড়া সাংবাদিকতা। নির্দিষ্ট সংখ্যক পত্রিকায় অল্প কয়েক জন ক্রীড়া সাংবাদিক চেষ্টা করেছেন ভালো কিছু করার। তবে পাঠকদের মনের খোরাক মেটানোর জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। ১৯৮৬ সালের বিশ^কাপে রঙিন টিভিতে প্রথমবারের মতো খেলা উপভোগ করার সুযোগ পায় দেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা। দিয়েগো ম্যারাডোনার খেলা দেখে আপ্লুত হন দেশের মানুষ। কিন্তু ক্রীড়া সাংবাদিকতা তত দিনেও আধুনিক হতে পারেনি। ব্যক্তিগতভাবে কারো কারো উদ্যোগ ও উৎসাহ ছিল নজর কাড়ার মতো। বিশেষত সাপ্তাহিক, পাক্ষিক পত্রিকাগুলোও স্পোর্টসকে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে ক্রীড়া বিষয়ক পত্রিকা।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল পুরো দেশকেই মাতোয়ারা করে তোলে। ম্যারাডোনার খবর নিয়মিতভাবে আসতে থাকে পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায়। একটা গ্লোবাল ক্রীড়া সংস্কৃতির মধ্যে ঢুকে পড়ে দেশের ক্রীড়াপিয়াসীরা। এর আগে ১৯৮৫ সালে এশিয়া কাপ হকির আয়োজক হয় বাংলাদেশ। তখনও বিশ^ হকির পরাশক্তি উপমহাদেশের দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান। এই আয়োজনকে ঘিরে পুরো দেশ হয়ে ওঠে হকিময়। ওই আসরে উজ্জীবিত খেলা উপহার দেয় বাংলাদেশ হকি দল। জুম্মন লুসাইরা হয়ে ওঠেন হিরো। বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে হকি। গাছের ডাল ভেঙে স্টিক বানিয়ে গ্রামের বালক- কিশোররা মেতে ওঠে হকি খেলায়।
ফুটবল হকির এমন জমজমাট সময়ে ক্রিকেটেও আসে জোয়ার। ১৯৮৮ সালে উইলস এশিয়া কাপ ক্রিকেটের আসর বসে ঢাকায়। ঘরের উঠোনে ভারত, পাকিস্তান আর লঙ্কান ক্রিকেটারদের মনমাতানো খেলা পুরো দেশেই সৃষ্টি করে ভিন্ন এক ব্যঞ্জনা। ক্রিকেটের খবর গোগ্রাসে গিলতে থাকে ক্রীড়াপ্রেমীরা। এশিয়া কাপের আয়োজনের ঢেউ এসে পড়ে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে। ফুটবলের মতো ক্রিকেটেও বিদেশীদের নিয়ে দল তৈরী করে আবাহনী-মোহামেডান। অর্জুনা রানাতুঙ্গা, অথুলা সামারাসেকারা, মরভ্যান আতাপাতুরা খেলতে আসেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেদের সৌকর্য দেখান সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম, বিশ^কাপ মাতানো নেইল ফেয়ারব্রাদাররা।
আন্তর্জাতিক দাবায় প্রতিষ্ঠিত নাম নিয়াজ মোরশেদ। এরকম একটা সময়ে কমনওয়েলথ দাবায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব দেখান রানী হামিদ। সব কথার এক কথা, ১৯৮০-এর দশকে একটা নীরব বিপ্লব ঘটে যায় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে। লাগে বিশ্বায়নের ছোঁয়া। বলতে দ্বিধা নাই, ওই সময় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে যে পরিবর্তনের ঢেউ লাগে তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকতা। খেলাকে ঘিরে মানুষের উন্মাদনা ও আকর্ষণ দুইই বেড়েছে কিন্তু তার কোনো প্রতিফলন বাংলাদেশের মিডিয়াতে দেখা যায়নি। বিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী, প্রকৃতি শূন্যতা পরিহার করে। প্রকৃতির নিয়মেই শূন্যস্থান বেশি দিন থাকে না। বাস্তÍবে হলোও তাই।
এরই মধ্যে ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটে এরশাদ সরকারের। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায়ও আসে পালাবদল। এরকম একটা সময়ে আবির্ভাব ঘটে দৈনিক ‘আজকের কাগজ’ পত্রিকার। জন্মলগ্ন থেকেই তারুণ্যের চাওয়ার সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠে পত্রিকাটি। বড় বদল আসে খেলার পাতায়। লেখার ধরন, শিরোনাম, পাতার সাজসজ্জা সব কিছুতেই আসে নতুনত্ব। আর বাংলাদেশে নতুন ধারার এই ক্রীড়া সাংবাদিকতার স্বপ্নের কারিগর ফরহাদ খান টিটো। লিখতেন ফরহাদ টিটো নামে। এক দল তরুণকে নিয়ে খেলার পাতার আদল পুরোপুরি বদলে দিলেন ফরহাদ টিটো। স্পোর্টস রিপোর্টিংয়ে ট্রাডিশনাল জার্নালিজমের ধারা আগেই ভেঙেছে কলকাতার দৈনিকগুলো, বিশেষত ‘আনন্দবাজার’। আজকের কাগজ পত্রিকায় একটা স্বাতন্ত্র্য ধারা তৈরি করলেন ফরহাদ টিটো। আনন্দবাজার পত্রিকার ক্রীড়া প্রতিবেদনে যতটা না তথ্য থাকে, তার চেয়ে বেশি থাকে গল্প। অনেক বেশি সাহিত্য নির্ভর আনন্দবাজারের খেলার সংবাদ। আজকের কাগজের ক্রীড়া পাতায় একটা ভারসাম্য আনলেন ফরহাদ টিটো। তথ্য আর গল্পের মিশেল ঘটালেন। তথ্যকে বাদ দিয়ে স্পোর্টস রিপোর্টিং হয় না, আবার মাঠের বাইরে কিংবা ভেতরের গল্পগুলোর প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। এই দুইয়ের মধ্যে একটা যোগসূত্র আনলেন ফরহাদ টিটো। নতুন ধারার এ ক্রীড়া সাংবাদিকতাকেই অনুসরণ করে আসছে সবাই। আরো সহজ করে বললে, ফরহাদ টিটোর বেধে দেয়া সুরেই এখনও গাইছে বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাকিদতা।
পরবর্তীতে ফরহাদ টিটো সেটেল করেন কানাডায়। ১৯৯৯ সালে দৈনিক ‘ভোরের কাগজ’ পত্রিকার ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে ফেরেন দেশে। সেসময় টিটো ভাইয়ের সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ঠতা হয়। তবে তিনি ভোরের কাগজ পত্রিকায় বেশি দিন চাকরি করেননি। ফিরে যান কানাডায়। তবে তার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা এতটুকুও কমেনি। কথায় কথায় একদিন টিটো ভাই বলছিলেন, আমরা যখন স্পোর্টস জার্নালিজম শুরু করি তখন আসলে কিছুই ছিল না। মূল পত্রিকায় কোনো গুরুত্বই ছিল না স্পোর্টসের। আর এখন যারা শুরু করছে তাদের সামনে স্পোর্টস রিপোর্টিংয়ের ফিল্ড পুরো বিশ্ব। পত্রিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ এখন স্পোর্টস। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকতায় এমন একটা দিন আসবে যখন ফুটবল, ক্রিকেটের মতো সাঁতার, অ্যাথলেটিক্সও আলাদা বিট হবে। ১২-১৪ জন স্পোর্টস পাতায় কাজ করছে, এমনটাও দেখা যাবে। ফরহাদ টিটোর কথা একটা পর্যায়ে ভালোই মিলেছিল। শীর্ষ প্রিন্ট দৈনিকগুলো দুই পাতা রাখে খেলার সংবাদ। দু’একটা দৈনিকের খেলার পাতা চলে যায় চার পাতায়।
স্থায়ী কোনো ফরম্যাটে যে সাংবাদিকতাকে ফেলা যায় না, সেটা অনুধাবন করতে বেশি দিন লাগেনি। আমরা এখন বিশ্বায়নের বাসিন্দা। গ্লোবাল যুগের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ তথ্য। আর অবাধ তথ্যের যুগে সবচেয়ে বড় প্রভাবটা পড়েছে মিডিয়াতে। প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন মাধ্যম হয়ে উঠেছে অনেক বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ। সঙ্গে যোগ হয়েছে মাল্টিমিডিয়া। একটা মিডিয়া আর একটা মিডিয়ার যতটা না পরিপূরক তার চেয়েও অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী। আর এতে করে স্পোর্টস রিপোর্টিং হয়ে উঠেছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। ধরা যাক বাংলাদেশের কথা। আলাদা স্পোর্টস টিভি চ্যানেল হয়েছে। ম্যাচ শুরুর আগ থেকেই লাইভ রিপোর্টিং করা হচ্ছে। মাঠ কেমন, ক্রিকেট হলে উইকেট কেমন, অবহাওয়া কেমন পক্ষে না বিপক্ষে এগুলো নিয়ে কথা বলছেন অধিনায়করা। বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন চুলচেরা বিশ্লেষণ। পুরো ম্যাচের খুঁটিনাটি, রেকর্ড তথ্য-উপাত্ত কিংবা টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ করছেন এক্সপার্টরা। ম্যাচ শেষ হতে না হতেই অধিনায়ক, সেরা পারফরমাররা হার-জিতের কারণ ব্যাখ্যা করছেন। এতসব টাটকা খবরের পর প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য আর কতটুকুই-বা বাকি থাকে!
এখানে রেডিওর কথা না বললেই নয়। আমি প্রায় দশ বছর স্পোর্টস এডিটর হিসাবে চাকরি করেছি ‘বণিক বার্তা’ পত্রিকায়। অফিসের ভেতরেই ছিল ক্যান্টিন। ক্যান্টিনে টিভি ছিল না। ক্যান্টিন বয়রা রেডিও শুনতো।
২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চলছে বাংলাদেশ- ইংল্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। রেডিওর ধারাবিবরণি আগে আসে। টিভিতে খেলা দেখা যায় কয়েক সেকেন্ড পর। রেডিও শুনে ক্যান্টিন বয়রা চিৎকার করছে, রুবেল উইকেট পেয়েছে, রুবেল উইকেট পেয়েছে! এর কয়েক সেকেন্ড পর আমরা টিভিতে দেখলাম। অনেক ম্যাচেই আমাদের চোখ থেকেছে টিভি পর্দায় আর কান ক্যান্টিনের দিকে। আসলে রেডিওর প্রতিটি খেলার খবরই যেন ব্রেকিং নিউজ! এফএম রেডিওগুলো কে কার আগে সংবাদ পরিবেশন করবে সেই পাল্লা দিচ্ছে। মোদ্দা কথা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে যে কোনো খেলা হোক না কেন, মিডিয়ার কল্যাণে তার সর্বশেষ তথ্য সবার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে সহজেই। বিশেষ কোনো সাক্ষাৎকার কিংবা মাঠ ও মাঠের বাইরের আলাদা কোনো ঘটনা তুলে ধরছে মাল্টিমিডিয়ার স্পোর্টস রিপোর্টাররা। সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলতে হচ্ছে ক্রীড়া সাংবাদিকদের। তরতাজা সংবাদের সঙ্গে ভিন্ন কিছু করার চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে প্রিন্ট মিডিয়াকে। ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টিভির এই রমরমা সময়ে সত্যিকারের চ্যালেঞ্জটা প্রিন্ট মিডিয়ার। দিনকে দিন কমছে সংবাদপত্র। স্পোর্টস পাতা কমছে। নতুন প্রজন্মের কাছে আবেদন কমছে ছাপার অক্ষরের সাংবাদিকতা।
খেলাধুলা প্রতি তীব্র আসক্তি, ভালো জানাশোনা, সুন্দর করে গুছিয়ে লেখা ক্রীড়া সাংবাদিকতার মূল। কিন্তু হালে এই গুণগুলোই যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দ্রুত সংবাদ পরিবেশন, উপস্থাপন শৈলী, বাচনভঙ্গি এগুলো। এ সময়ের ক্রীড়া সাংবাদিকতা মানে রেডিও, টিভি, পোর্টাল, প্রিন্ট মিডিয়া ও মাল্টিমিডিয়ার একটা পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
তারা//