নাহিদ আবারও বললেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নির্বাচন ‘সম্ভব নয়’
Published: 7th, March 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আবারও বলেছেন, দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নির্বাচন ‘সম্ভব নয়’। গত বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। আজ শুক্রবার তা প্রকাশ করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো পুরোপুরি জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি এবং এ বছর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে।
তবে রয়টার্সে দেওয়া সাক্ষাৎকারের বিষয়ে আজ বিকেল সাড়ে চারটার পর বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ বছর নির্বাচন করা সম্ভব নয়—কথাটা তিনি রয়টার্সকে এভাবে বলেননি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, এখন দেশে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ যে রকম নাজুক অবস্থায় আছে, এ রকম অবস্থায় নির্বাচন করাটা অনেক বেশি কঠিন হবে এবং এই পুলিশ প্রশাসনের একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার সক্ষমতার পরীক্ষা দীর্ঘদিন ধরে হয়নি। সেই জায়গা থেকে আমি বলেছি, আমাদের অবশ্যই নির্বাচনের আগে দেশের পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা অবশ্যই উন্নত করতে হবে। সেটার জন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সামাজিক শক্তিকেও এগিয়ে এসে সহযোগিতা করতে হবে।’
এর মধ্যে আজ বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে এএফপির প্রতিবেদনে নাহিদ ইসলামের ওই বক্তব্য প্রকাশিত হলো। এএফপিকে তিনি বলেন, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে এখনো সমস্যার মুখে পড়ছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই নির্বাচন বিলম্বের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়। তবে এটা সত্যি নয়।’
গত বছরের জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের সবচেয়ে পরিচিত মুখগুলোর একটি নাহিদ ইসলাম। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেন তিনি। গত সপ্তাহে সরকার থেকে পদত্যাগ করেন নাহিদ। এরপর তাঁর নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ হয় তরুণদের নতুন দল এনসিপির।
বাংলাদেশে সুদূরপ্রসারী সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহে ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এমনকি তরুণেরা যে কারণে জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেসব সংস্কারেও আগ্রহী নয় তারা।’ তিনি আরও বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান এবং এর পরবর্তী সময়ে আমরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা বাস্তবায়নে আমাদের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে আমরা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
নাহিদ ইসলাম মনে করেন, তিনি ও তাঁর দলের নেতারা যদি আগামী সরকার গঠন করতে না-ও পারেন, তারপরও তাঁরা এমন একটি রাজনৈতিক শক্তির সূচনা করেছেন, যা আগামী কয়েক দশক ধরে প্রভাব বজায় রাখবে। তিনি বলেন, ‘কেউই জানতেন না, একটি অভ্যুত্থান হবে। তবে এটি হয়েছে। আমি আন্তরিকতার সঙ্গে আশা করি এবং বিশ্বাস করি যে আমরা এবার বিজয়ী হতে চলেছি। তবে এই নির্বাচনই পৃথিবীর শেষ নয়.
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে এনসিপির। বিএনপির যুক্তি—জনগণের ম্যান্ডেটের একটি সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করেন—এমন সব মতাদর্শের মানুষের জন্য নিজেদের দলকে উন্মুক্ত রেখেছে এনসিপি। তবে গত মাসের প্রতিষ্ঠার পর দলের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় আলোচনার সৃষ্টি করেছে। দল গঠনের পর ডানপন্থীদের দাবির মুখে এনসিপির কমিটি থেকে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা সবার অন্তর্ভুক্তিতে বিশ্বাস করি। তবে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক রীতিনীতির কারণে সুনির্দিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’ এনসিপিতে এখনো প্রশংসা করার মতো বৈচিত্র্য রয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা (দলে) নারীদের সামনে এনেছি এবং সব বর্ণ ও ধর্মের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। সব নাগরিক যেন তাঁদের অধিকার ভোগ করতে পারেন, আমরা সে চেষ্টা করব।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত ত র জন ত ক আম দ র র একট ক ষমত সরক র এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
দলীয় শৃঙ্খলারক্ষায় কোনো ছাড় দেওয়া হবে না
দলীয় বিভিন্ন কার্যক্রম, রাজনৈতিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা করেছেন সিলেট জেলা ও নগর বিএনপির নেতারা। আজ শনিবার দুপুরে নগরীর জিন্দাবাজারে একটি অভিজাত হোটেলের মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা জানান, দলীয়শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। কেউ যদি বিএনপির নাম ব্যবহার করে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ায়, তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় কারও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডকে পুরো দলের ওপর চাপিয়ে না দিয়ে ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশন করার অনুরোধ জানান নেতারা।
বিএনপি নেতারা চা-শ্রমিকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন, দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত চা শিল্প বর্তমানে চরম সংকটে। চা-শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় মালিকপক্ষ, সরকার ও শ্রমিক সংগঠনকে একযোগে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। রমজানে চা-শ্রমিকদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয় বলে তারা জানান।
সভায় আরও জানানো হয়, গত বছর গণআন্দোলনে নিহত ও আহত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে সিলেট বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে নেতারা বলেন, ঈদ উপলক্ষে সিলেট নগর ও জেলার প্রতিটি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল। এজন্য পুলিশ, র্যাব, ট্রাফিক বিভাগ, হাইওয়ে ও রেলওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও একটি নতুন আগামীর স্বপ্নে জনগণের যে প্রত্যাশা রয়েছে, তা তারা সরাসরি উপলব্ধি করতে পেরেছেন।
সভায় বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
সভায় বক্তারা বলেন, পবিত্র রমজানে জেলার প্রতিটি উপজেলা-পৌরসভায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে এবং মহানগরীর থানার ওয়ার্ড-পাড়াগুলোতে দোয়া ও ইফতার মাহফিল করায় সাধারণ জনগণের সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের যোগাযোগ আরও গভীর হয়েছে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন আশুক পিপি, শাহজামাল নুরুল হুদা, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি জিয়াউল গনি আরেফিন জিল্লুর, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি নাজিম উদ্দিন লস্কর ও সামিয়া বেগম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ডা. আশরাফ আলী ও রহিম মল্লিক, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নজিবুর রহমান নজিব, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন।