শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার দাবিতে মাগুরা সদরে মহাসড়ক অবরোধ ও থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্র–জনতা। এ সময় থানার মূল ফটক ঘেরাও করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি তোলেন। পরে সেনাবাহিনী এসে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর এ ঘটনা ঘটে।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর মাগুরা শহরের চৌরঙ্গীর মোড়ে জড়ো হয়ে শিশু ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবিতে মিছিল বের করেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। প্রথমে তাঁরা শহরের ভায়না মোড় দখল করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় ঢাকা–খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা আড়াইটার দিকে ওই রাস্তা দিয়ে পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যান আটকে সেখানে ধর্ষণে অভিযুক্ত কেউ আছে কি না, দেখতে চান বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। এ সময় সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দেখা যায়।

বেলা তিনটার দিকে ভায়নার মোড় ছেড়ে মিছিল নিয়ে সদর থানার সামনে যান বিক্ষোভকারীরা। সেখানে থানার মূল ফটক ঘেরাও করে ধর্ষণে অভিযুক্তদের বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা। এ সময় পুলিশ বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলেও বিক্ষোভকারীরা আধা ঘণ্টার বেশি সময় মূল ফটক আটকে রাখেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আসামিকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিও জানান। পরে সেনাবাহিনী এসে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.

মিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) আট বছরের এক শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে যে দুজনের নামে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের পুলিশ আটক করেছে। আমরা আমাদের আইনি পদক্ষেপ যথাযথভাবে নিয়েছি। আজ দুপুরে জুমার নামাজের পর হঠাৎ করে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক থানা ঘেরাও করেন। তাঁরা সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেননি। আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তাঁরা একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেন। পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।’

এর আগে গতকাল মাগুরা শহরে বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে আট বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে গতকালই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় শিশুটির দুলাভাই ও তাঁর বাবাকে আটক করেছে পুলিশ। শিশুটির মামাতো ভাই আজ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। এখনো সে অচেতন অবস্থায় আছে। তাকে শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অবস্থা আরও খারাপ হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হবে।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে আনা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির সঙ্গে কী ঘটেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শিশুটি অচেতন অবস্থায় ছিল। যে বাসায় সে বেড়াতে এসেছিল, ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেই ঘটনা ঘটেছে। শিশুটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তার দুলাভাই ও দুলাভাইয়ের বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তার পরিবারের সবাই ঢাকায় হাসপাতালে। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেননি।

শিশুটির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায়। শিশুটি কয়েক দিন আগে তার বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। গতকাল বেলা ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে আসেন।

ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করে দেখা গেছে শিশুটির গলায় একটা দাগ আছে। মনে হচ্ছে, কিছু দিয়ে চেপে ধরা হয়েছিল। শরীরের বেশ কিছু জায়গায় আঁচড় আছে। তার মাসিকের পথে রক্তক্ষরণ হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পর ব র র ঘ র ও কর গতক ল এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

বজ্রপাতে ঝরে গেল ১৮ প্রাণ

প্রচণ্ড তাপদাহের পর বৃষ্টি প্রশান্তি না এনে যেন বজ্রপাতের আতঙ্ক নিয়ে এসেছে। গতকাল সোমবার এক দিনেই ১১ জেলায় বজ্রাঘাতে চার শিক্ষার্থীসহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় পাঁচজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, নেত্রকোনায় দু’জন এবং খুলনা, শরীয়তপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর ও চাঁদপুরে একজন করে মৃত্যুর খবর 
পাওয়া গেছে।

বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সরকারি নানা উদ্যোগ আছে। একে দুর্যোগও ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও মৃত্যু কমছে না। ভুল প্রকল্প, বড় গাছ কাটা বন্ধ না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরির চেষ্টা না থাকায় মৃত্যু রোধ হচ্ছে না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টি হওয়ার কারণ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নদী শুকিয়ে যাওয়া, বায়ুদূষণ, জলাভূমি ভরাট হওয়া আর গাছ ধ্বংস হওয়ায় দেশে তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে বজ্রঝড়ের সৃষ্টি হচ্ছে।

গতকাল কুমিল্লার বরুড়া, মুরাদনগর ও দেবিদ্বারে বজ্রাঘাতে তিন স্কুল শিক্ষার্থী ও দুই কৃষকের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন– ফাহাদ হোসেন (১৩), মোহাম্মদ জিহাদ (১৪), নিখিল দেবনাথ (৫৫), জুয়েল ভূঁইয়া (৩২) ও মীম আক্তার (১০)। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলার তিন হাওরে বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় মারা গেছেন ইন্দ্রজিৎ দাস (৩৫), স্বাধীন মিয়া (১৬) ও ফুলেকা বেগম (৬৫)। নেত্রকোনার দুই উপজেলায় বজ্রাঘাতে মাদ্রাসাশিক্ষক দিদারুল হক (২৫) ও শিশু আরাফাত (১০) নিহত হন। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে মারা যান দূর্বাসা দাস (৩৫) নামের এক কৃষক। সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হাওর থেকে গরু আনার সময় বজ্রাঘাতে মারা যান কলেজছাত্র রিমন আহমদ তালুকদার (২৪)। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামের এক চা শ্রমিক মারা গেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বজ্রপাতে মারা গেছেন মানিক মিয়া (৬৫) নামের এক কৃষক। চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতে মারা যান বিশাখা সরকার (৩৫) নামে কিষানি। খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি গ্রামে বজ্রপাতে নিহত হন যুবক আরিফুল ইসলাম। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে বজ্রপাতে সেফালী বেগম (৩৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। যশোরের শার্শায় বাড়ির আঙিনায় ধান মাড়াইকালে বজ্রপাতে আমির হোসেন (৪৫) নামের এক কৃষক মারা গেছেন।
কৃষকের মৃত্যুই বেশি

দেশের বজ্রপাত পরিস্থিতি এবং হতাহতের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরাম। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৮৭০ জনের, অর্থাৎ প্রতিবছর ২৭৬ জনের বেশি। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ২০২১ সালে– ৩৮১ জন। চলতি বছর গতকাল পর্যন্ত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কাল থেকে শুরু মে মাসজুড়ে বজ্রপাত ও কালবৈশাখীর পূর্বাভাস আছে।
দুর্যোগ ব‍্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং ডিজাস্টার ফোরামের তথ‍্য বলছে, সারাবিশ্বে বজ্রপাতে যে সংখ্যায় মানুষ মারা যায়, তার এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে। দেশের হাওর, বাঁওড় ও বিলপ্রবণ জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই মাঠে থাকা কৃষক, সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ি ফেরার পথে আর ১৩ শতাংশ গোসল কিংবা মাছ শিকারের সময়। শহরের ভবনগুলোতে বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, আকাশে যখন কালো মেঘ হয়, তখনই মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া উচিত। পায়ে জুতা থাকতে হবে। উঁচু গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। খোলা জায়গায় বা মাঠে থাকলে কী করতে হবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া আছে। 
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ