পবিত্র রমজানের প্রথম জুমায় আজ শুক্রবার বাগেরহাটের ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদে মুসল্লিদের ঢল নামে। প্রতিদিনের মতো পর্যটকের আনাগোনা কিছুটা কম থাকলেও ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ভিড় করেন। জুমার নামাজের আগে ইমামের খুতবার আগেই পরিপূর্ণ হয়ে যায় মসজিদ।

আজ ষাটগম্বুজ মসজিদে জুমার নামাজে ইমামতি করেন ভারপ্রাপ্ত ইমাম মাওলানা মো.

নাসির উদ্দিন। নামাজ শেষে দেশ, জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, সুলতানি আমলের তুঘলকি (তুরস্ক) স্থাপত্যশৈলীতে চুন, সুরকি, কালো পাথর ও ছোট ইটে এই মসজিদ হজরত খানজাহান (রহ.) নির্মাণ করেন। ষাটগম্বুজ মসজিদে কোনো শিলালিপি না থাকলেও এর নির্মাণশৈলী এবং এই অঞ্চলের তাঁর তৈরি অন্যান্য মসজিদ ও স্থাপনা বিবেচনায় এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।

৬০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদে প্রতিদিনই দেশ-বিদেশের অসংখ্য দর্শনার্থী ঘুরতে ও দেখতে আসার পাশাপাশি নামাজ আদায় করতে আসেন। বিশেষ করে জুমার দিনে মসজিদ পূর্ণ হয়ে বাইরেও দুই-তিন কাতার দিতে হয়। দুই থেকে তিন হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন এখানে।

খুলনা থেকে আসা তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘রমজানের প্রথম জুমায় এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে ভালো লাগছে। বন্ধুরা একসঙ্গে খুলনা থেকে এসেছি। মসজিদের পবিত্রতা ও পরিবেশ যেমন মুগ্ধ, এখানে আসতে পেরে আত্মতৃপ্তি লাগছে।’

জুমার নামাজ পড়তে আসা আশরাফ আলী বলেন, ‘প্রতিবছর অন্তত একবার ষাটগম্বুজ মসজিদে আসার চেষ্টা করি। কিন্তু রমজানের প্রথম জুমায় আসতে পারা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। এখানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে একধরনের আধ্যাত্মিক প্রশান্তি অনুভব করি। তাই চট্টগ্রাম থেকে এত দূর আসা।’

ষাটগম্বুজ মসজিদের ভারপ্রাপ্ত ইমাম মাওলানা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, রমজানের প্রথম জুমায় প্রতিবছরই মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। তারাবিহর নামাজের জন্য দুজন স্বনামধন্য হাফেজ দিয়ে খতম তারাবিহ পড়ানো হচ্ছে। প্রতিদিন দেড় শ থেকে দুই শ মানুষ ইফতার করেন। কখনো কখনো এই সংখ্যা আরও বাড়ে। রমজানে দূরদূরান্ত থেকে অনেক মুসল্লি আসেন। তাঁরাও তাঁদের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: রমজ ন র প রথম জ ম য়

এছাড়াও পড়ুন:

চলমান ঋণের শর্ত পর্যালোচনায় বৈঠক আজ

চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ৪৭০ কোটি ডলার চলমান ঋণের শর্ত পর্যালোচনায় আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি গতকাল শনিবার ঢাকায় পৌঁছে। আজ রোববার থেকে টানা দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করবে তারা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সঙ্গে তাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকটি হবে বলে জানা গেছে। 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরে। তবে এখনও তা পায়নি বাংলাদেশ। সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল গত ডিসেম্বরে ঢাকায় আসে। এর পর ঋণের এ কিস্তি অনুমোদনের জন্য আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের সভায় ওঠার কথা থাকলেও দু’দফায় তা পিছিয়ে যায়।

এদিকে ঋণের অন্যতম শর্ত কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরকার অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়েও সংস্থাটির প্রত্যাশা অনুসারে অগ্রগতি হয়নি। তবে অন্যান্য শর্ত পূরণ হওয়ায় আগামী জুনেই ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের আশা করছে সরকার। এ অবস্থায় ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ফের ঢাকায় আসছে আইএমএফ মিশন।

আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৬ সাল নাগাদ পুরো অর্থ পাওয়ার কথা। ইতোমধ্যে তিন কিস্তি বাবদ ২৩০ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। এ ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিটি কিস্তি পেতে কিছু শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে। চতুর্থ কিস্তির সাড়ে ৬৪ কোটি ডলারের জন্য গত বছরের জুনভিত্তিক বিভিন্ন শর্ত বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল।

চতুর্থ কিস্তির জন্য দেওয়া শর্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখতে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ঢাকা সফরে আসে আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। গত ৫ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে এ প্রস্তাব ওঠার কথা ছিল। পরে তারিখটি পিছিয়ে করা হয় ১২ মার্চ। ওই তারিখেও প্রস্তাব ওঠেনি। আবার তা পিছিয়ে গেছে আগামী জুনে।

এদিকে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার ও আইএমএফের যৌথ সম্মতিতে চতুর্থ ও পঞ্চম দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাজেট সাপোর্ট প্রোগ্রামের আওতায় যে সব সংস্কার কার্যক্রম নেওয়া হয় তার মধ্যে কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন হতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কিছু শর্ত পূরণ না হলেও আগের কয়েকটি কিস্তি তারা বাংলাদেশের অনুরোধে দিয়েছে। তবে সর্বশেষ ঢাকা সফর করে যাওয়া আইএমএফ প্রতিনিধি দল কর অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে। শর্ত অনুসারে, চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। বাড়তি রাজস্ব আহরণের কৌশল হিসেবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই গত জানুয়ারিতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। অবশ্য পরে কিছু পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর কমানো হয়।

জানা গেছে, আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসেবে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কর আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা থেকে ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি পিছিয়ে ছিল সরকার। এর আগে গত বছরের জুন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হয়নি। মূলত কর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া এবং মুদ্রার বিনিময় হার আপাতত পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করতে রাজি না হওয়ায় ঋণের চতুর্থ কিস্তি পিছিয়ে যায়। তবে দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করেছে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আগের মতো কিছুটা ছাড় দিলে এবং নতুন করে কোনো শর্ত না এলে আগামী জুনে অর্থ ছাড়ের আশা করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন শর্তের বাস্তবায়ন পর্যালোচনায় ঢাকায় আসছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক শেষে আগামী ১৭ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করবে আইএমএফ মিশন। এর আগে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে তারা আরও একটি বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মির্জাপুরে একসঙ্গে চার সন্তান প্রসব, জীবিত ৩ নবজাতক
  • নাটক নয়, মিরাক্কেলের জামিল সত্যিই বিয়ে করলেন
  • জিম্মির পর জয়ার ‘তাণ্ডব’
  • দাম্পত্য সম্পর্ক নতুনভাবে রাঙিয়ে নেওয়ার চার উপায়
  • পুষ্টির অধিকার নিশ্চিতে কাজ করতে হবে একসঙ্গে
  • রক্তের সম্পর্ক অস্বীকার করে দূরে থাকা যায় না...
  • চলমান ঋণের শর্ত পর্যালোচনায় বৈঠক আজ
  • শর্ত পূরণ হলেই জুনে পাওয়া যাবে আইএমএফ ঋণের দুই কিস্তি
  • নদী পাড়ের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি, ভোগান্তি
  • আজ ঢাকা আসছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল