কর্তৃপক্ষের সাথে বছরের পর বছর আইনি লড়াইয়ের পর থাইল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা এখন তাদের মাথার চুল বড় রাখার সুযোগ পাচ্ছে। বুধবার, থাইল্যান্ডের সুপ্রিম অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৫০ বছরের পুরনো একটি নির্দেশনা বাতিল করেছে। ওই নির্দেশনায় স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য চুলের স্টাইলের নিয়ম নির্ধারণ করেছিল: ছেলেদের জন্য ছোট চুল এবং মেয়েদের জন্য কান পর্যন্ত লম্বা বব। শুক্রবার বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।

বাস্তবে অনেক স্কুলে চুলের স্টাইলের নিয়ম ধীরে ধীরে শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কোনো স্কুল ১৯৭৫ সালের জান্তার জারি করা নির্দেশিকাকে ব্যবহার করত এবং যারা তা মেনে চলত না তাদের চুল কেটে দিত।

আদালত জানিয়েছে, ১৯৭৫ সালের নির্দেশিকা সংবিধানে সুরক্ষিত ব্যক্তি স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে এবং আজকের সমাজের সাথে এর সম্পর্ক নেই।

আদালতের এই সিদ্ধান্তটি ২০২০ সালে ২৩ জন সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীর দায়ের করা একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে। তাতে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে ১৯৭৫ সালের নির্দেশিকা অসাংবিধানিক।

শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে চুলের স্টাইলের নিয়ম শিথিল করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। তারা বলছেন যে এটি তাদের মানবিক মর্যাদা এবং তাদের শরীরের উপর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে।

প্রচারণা চালানো এই শিক্ষার্থীদের একজন হলেন প্যান্থিন অ্যাডাল্টানানুসাক, যিনি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, “আমাদের মতো বাচ্চাদের চোখে তখন.

.. যদিও এটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছিল, আমরা কিছু করতে চেয়েছিলাম। যদি থাই ইতিহাসের কোন ছাত্র আমাদের দমনকারী প্রাপ্তবয়স্কদের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য উঠে না দাঁড়ায়, তাহলে তা হবে আজীবন লজ্জার।”

এই ধরনের প্রচারণার প্রতিক্রিয়ায়, ২০২০ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের লম্বা চুল রাখার অনুমতি দেয়। তবে কিছু বিধিনিষেধ রয়ে গিয়েছিল। ছেলেদের চুল তাদের ঘাড়ের নীচের অংশ ঢাকতে পারত না, আর লম্বা চুলের মেয়েদের চুল বেঁধে রাখতে হত।

২০২৩ সালে সেই নিয়মগুলো বাতিল করা হয়েছিল। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ত্রিনুচ থিয়েনথং ঘোষণা করেছিলেন যে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে তাদের স্কুলে চুলের স্টাইলের জন্য কী গ্রহণযোগ্য তা তাদের নিজস্ব সাধারণ ভিত্তির ওপর আলোচনা করা উচিত।

কিন্তু এই সব পরিবর্তনের মধ্যেও, কিছু স্কুল ১৯৭৫ সালের মূল নির্দেশিকায় বর্ণিত মান অনুসরণ করে চলছিল।

ঢাকা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বিএসইসি লাভে ফিরলেও ভোগাচ্ছে বিপণন দুর্বলতা

টানা তিন বছর লোকসান দেওয়ার পর লাভে ফিরেছে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি)। বিএসইসি সূত্র বলছে, গত অর্থবছরে (২০২৩–২৪) তারা ৭৮ কোটি টাকা লাভ করেছে। তবে বিপণন দুর্বলতার কারণে করপোরেশনটির তিনটি কারখানা এখনো লোকসানে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষার ২৮ বছরের (১৯৯৬–৯৭ থেকে ২০২৩–২৪ অর্থবছর) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই সময়ের শুরুর দিকে বিএসইসি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান ছিল। ১৯৯৯–২০০০ সালে করপোরেশনটি প্রথম লাভে আসে। তারপর টানা ২১ বছর তারা লাভে ছিল। ২০২০–২১ অর্থবছরে এসে এটি লোকসানে পড়ে। টানা তিন বছরে (২০২০–২১ থেকে ২০২২–২৩ অর্থবছর) ২৬ কোটি টাকা লোকসান দেয় তারা। অবশ্য সেই লোকসান কাটিয়ে এবার লাভে ফিরল করপোরেশনটি।

বিএসইসির চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়েছে, বিপণন ব্যবস্থাপনায় পেশাদারি আনা, কারখানার জন্য কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করা, ক্রয়–বিক্রয়সহ অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা ও তদবির ঠেকাতে পারায় লাভে ফেরা সম্ভব হয়েছে।

বিএসইসির অধীন বর্তমানে নয়টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। মূলত এসব কারখানার লাভ–লোকসানের ওপরই বিএসইসির সাফল্য–ব্যর্থতা নির্ভর করে।যেভাবে লাভে ফিরল

বিএসইসির অধীন বর্তমানে নয়টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। মূলত এসব কারখানার লাভ–লোকসানের ওপরই বিএসইসির সাফল্য–ব্যর্থতা নির্ভর করে। দীর্ঘ সময় লাভে থাকা অবস্থায় ২০২০–২১ অর্থবছরে বিএসইসি যখন লোকসানে পড়ে, তখন তাদের নয়টির মধ্যে চারটি কারখানা লোকসান দেয়। গত অর্থবছর যখন লাভে ফিরল, তখন তাদের লোকসানি কারখানার সংখ্যা কমে তিনটি হয়েছে। লোকসানে থাকা কারখানাগুলোর লোকসানের পরিমাণও কমেছে।

২০২০–২১ অর্থবছরে বিএসইসির যে পাঁচ কারখানা লাভ করেছিল, তাদের লাভের পরিমাণও ছিল সীমিত, যা টাকার অঙ্কে ছিল পাঁচ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে কারখানাগুলোর লাভও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি লাভ বেড়েছে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের, যারা গাড়ি উৎপাদন করে থাকে। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের ২০২০–২১ অর্থবছরে লাভ ছিল প্রায় ২ কোটি টাকা, সেখানে কারখানাটি গত অর্থবছরে লাভ করেছে প্রায় ৭৩ কোটি টাকা। মূলত এই কারখানাই বিএসইসিকে বড় লাভে নিয়ে এসেছে।

যেকোনো প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়তে পারে। তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে সেই লোকসান কাটিয়ে লাভে ফেরা সম্ভব। অধ্যাপক আলী আক্কাস, সাবেক চেয়ারম্যান, ব্যবসায় গবেষণা ব্যুরো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনা ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে গাড়ি বিক্রি কমে যায়। মূলত এ কারণে তাদের লাভ ব্যাপকভাবে কমে যায়। লাভ বাড়ানোর জন্য তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেয়, উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেয় এবং বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছেও গাড়ি বিক্রির উদ্যোগ নেয়। এতেই তাদের লাভ অনেক বেড়েছে।

২০২২–২৩ অর্থবছরে ন্যাশনাল টিউবস প্রায় ২ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছিল। এটি গত অর্থবছর লাভ করেছে ৮ কোটি টাকার বেশি। এই কারখানায় এমএস, জিআই, এপিআই পাইপ তৈরি করা হয়। বিএসইসি চেয়ারম্যান দপ্তর জানায়, কাঁচামালের অভাবে এই কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যে প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল আমদানির দায়িত্ব পেয়েছিল, তারা যোগ্য ছিল না এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। একপর্যায়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দেড় কোটি টাকার বেশি জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং নতুন আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। ন্যাশনাল টিউবসের মতো বিএসইসির অন্য কোনো কারখানায় কাঁচামালের অভাবে যেন উৎপাদন বন্ধ না হয় বা দেরি না হয়, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিএসইসি কর্মকর্তারা বলছেন, লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্য বিএসইসি ও বাইরের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে দল গঠন করা হয়। তারা লোকসানের কারণ অনুসন্ধান করেছে এবং সমাধান সুপারিশ করেছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে কাজ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্রয়–বিক্রয়, কারখানায় কী পরিমাণ পণ্য আছে ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ কাজ নিজস্ব সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনা গেছে। তদবিরের ভিত্তিতে নয়, কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় বিএসইসিকে লাভে ফেরাতে সহযোগিতা করেছে।

সামগ্রিকভাবে বিএসইসি লাভে ফিরলেও গত অর্থবছরে তাদের তিনটি কারখানা লোকসান দিয়েছে। সেগুলো হলো গাজী ওয়্যারস, ইস্টার্ন টিউবস ও এটলাস বাংলাদেশ।বিপণন দুর্বলতায় তিন কারখানা লোকসানে

সামগ্রিকভাবে বিএসইসি লাভে ফিরলেও গত অর্থবছরে তাদের তিনটি কারখানা লোকসান দিয়েছে। সেগুলো হলো গাজী ওয়্যারস, ইস্টার্ন টিউবস ও এটলাস বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এসব কারখানা লোকসানে পড়েছে।

বিএসইসির উৎপাদনে থাকা নয়টি কারখানার বাইরে বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড নামের আরও একটি কারখানা রয়েছে। যারা সোর্ড ব্র্যান্ডের ব্লেড উৎপাদন করে। তবে কারখানার আধুনিকায়ন কাজের জন্য ২০১৯ সাল থেকে এর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবু সাঈম প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর নাগাদ তাদের বাণিজ্যিক উৎপাদনের আশা রয়েছে। উৎপাদনে গেলে তাদের লাভে ফেরা সম্ভব।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতে লাভে ফেরা সম্ভব

বিএসইসির লোকসান থেকে লাভে ফেরার বিষয়টি ইতিবাচক উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় গবেষণা ব্যুরোর সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী আক্কাস প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়তে পারে। তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে সেই লোকসান কাটিয়ে লাভে ফেরা সম্ভব।

কোনো প্রতিষ্ঠান লাভে থাকলে কর্মসংস্থান হয়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটায় এবং আমদানির প্রয়োজনীয়তা কমায়, যা একটি দেশের জন্য ভালো বলেও উল্লেখ করেন আলী আক্কাস।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিপি: তারুণ্যের উত্থান, নাকি জাসদের ছায়া
  • ঝালকাঠিতে অস্ত্র মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির ১৪ বছর কারাদণ্ড
  • নতুন শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রে অস্থিরতা, দেশবাসীকে ‘অনমনীয়’ হতে বললেন ট্রাম্প
  • বিএসইসি লাভে ফিরলেও ভোগাচ্ছে বিপণন দুর্বলতা