ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমাজে নারী ও পুরুষের বৈষম্যের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও নারীদের প্রতি বৈষম্য চলছেই। নারী-পুরুষ সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশে দেশে সুশাসন ও ন্যায়বিচারের অভাবের কারণে নারীদেরমুক্তি মিলছে না।

নারীর জন্য প্রচলিত ক্ষতিকর প্রথা, পারিবারিক আইনসহ বৈষম্যমূলক অন্য আইন, ধর্মের নামে নানা বিধিনিষেধ ও নারীবিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণায় প্রতিনিয়ত নারীর মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদা লঙ্ঘিত হ”েছ। ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্যের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করা গেছে।

তবে দেশে যে গণতন্ত্রের চর্চা চলছে এখন তাতে করে কোনো রাজনৈতিক শক্তিই বিকশিত হতে পারছে না। সমাজে সুশাসন-ন্যায়বিচারের অভাব রয়েছে। এতে নারী সমাজের মুক্তি মিলছে না।

নারীর প্রাপ্য, নারীর অধিকার : পুরুষের তুলনায় নারী নিম্নতর ভুল ভাবনার অবসান শুরু হয় মাত্র শ খানেক বছর আগে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেও নারীদের শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিম্নতর ভাবা হতো পৃথিবীর বহু দেশে। এই যুদ্ধে তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এমন ধারণা কিছুটা দূর করে। দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে তাই ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোয় নারীদের সর্বজনীন ভোটাধিকার স্বীকৃত হতে থাকে; তবে তা পুরুষদের তুলনায় অনেক পরে।

যেমন ফ্রান্সে পুরুষেরা প্রথম সর্বজনীনভাবে ভোটাধিকার পান ১৭৯২ সালে, অথচ সেখানে নারীরা সর্বজনীন ভোটাধিকার পান ১৯৪৪ সালে।

সর্বশেষ ইউরোপীয় দেশে (লিখটেনস্টেইন) নারীদের এই ভোটাধিকার দেওয়া হয় ১৯৮৪ সালে, স্বাধীন বাংলাদেশের ১২ বছর পরে। ভোটাধিকার একটি নাগরিক অধিকার। এ রকম নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলোর ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালের বৈশ্বিক চুক্তির পর।

এসব অধিকার নারীদের দিলে রাষ্ট্রের তেমন কোনো অর্থসম্পদের প্রয়োজন হয় না, সমাজে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিকতাও খুব একটা হোঁচট খায় না। যেমন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় নারীদের ভোটাধিকার, এমনকি নেতৃত্ব, নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে খুব একটা ভূমিকা রাখেনি। তুলনায় কর্মসং¯’ান, উপযুক্ত পারিশ্রমিক, স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা—এসব অর্থনৈতিক অধিকার নারীদের সমানভাবে দিলে রাষ্ট্রের অর্থসংস্থানের প্রয়োজন হয়।

পুরুষতান্ত্রিকতা ও নারীর বিকাশবিরোধী সমাজের ভিত নড়ে ওঠে। কারণ, স্বাবলম্বী নারীর স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদাবোধ থাকে অনেক বেশি। হয়তো এসব কারণে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে ভোটাধিকার এবং অন্য নাগরিক-রাজনৈতিক অধিকারগুলো (যেমন সমাবেশ, ধর্ম পালন ও বাক্ধসঢ়;স্বাধীনতা, গ্রেপ্তার ও বিচারকালীন অধিকার) নারীদের জন্য প্রায় অবারিত করে দেওয়া হলেও অর্থনৈতিক অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাস্তব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে অনেক বেশি।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ, অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথে অন্যতম বাধা হ”েছ অর্থসং¯’ান। জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হলে বছরে ৩৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, কিš‘ এতে লাভ হবে বহুগুণে বেশি। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি বিভিন্ন বৈষম্য তুলে ধরা হ”েছ নারী দিবসের এই আহ্বানের মধ্যে।

একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকারের সর্বশেষ জরিপ বলছে, ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ নারী তাদের নির্যাতনের কথা কখনই অন্যদের জানায় না। কথা হলো কি করে জানাবে?। আর কেনইবা জানাবে?। যেখানে মেয়েদের নিয়ে বছরের পর বছর শুধু জরিপ কওে সংবাদের শিরোনাম বানিয়ে কিছু কর্মসূচির মাধ্যমেই দায়িত্ববোধ শেষ করা হয়। কারণ আমাদের মেয়েদের চোখে, মনে অনেক স্বপ্ন আছে, আছে এগিয়ে যাওয়ার দুর্বার ই”ছাশক্তি। 

তবুও আমরা মার খাই, মরে যাই এবং বারবার জেগে উঠি। আমাদের দেশের মেয়েদের সর্বপ্রথম সমস্যা আর্থিক দুর্বলতা। আমাদের দরকার সহজভাবে শিক্ষাগ্রহণের অধিকার। যে মেয়েরা সন্তানের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বামীর নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করে, আমাদের দরকার সেসব মেয়ের সন্তানদের দায়িত্ব রাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়ে সহজভাবে কাজ করার একটি সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য অধিকার। তবেই মেয়েরা শঙ্কা কাটিয়ে বলতে পারবে তার প্রতি অত্যাচার এবং অন্যায়ের কথা।

লেখক : নারী কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

তৃতীয় পক্ষের অ্যাপে মোবাইল প্যাকেজ ওভার চার্জিং

বিকাশের মতো তৃতীয় পক্ষের প্ল্যাটফর্মে উচ্চ মূল্যে মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ বিক্রির অভিযোগ এসেছে। ‘মোবাইল প্যাকেজ ওভার চার্জিং: এ কল ফর রেগুলেটরি অডিট অ্যান্ড কনজিউমার প্রোটেকশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে মোবাইল অপারেটর অ্যাপে তালিকাভুক্ত দাম এবং বাহ্যিক চ্যানেলের মাধ্যমে চার্জ করা মূল্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।

প্রধান উপদেষ্টার তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব এ তথ্য ফেসবুকে জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্যাকেজগুলো অনুমোদিত মূল্যের চেয়ে ২০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি হারে বিক্রি হয়েছিল। মোবাইল অপারেটরের নিজস্ব অ্যাপে ৩০ দিনের ৪৫ জিবি ডেটা প্যাকের দাম ছিল ৪৯৭ টাকা, কিন্তু একই প্যাকটি বিকাশের মাধ্যমে ৫৯৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি।

১৯৮ টাকায় তালিকাভুক্ত একটি ৭ দিনের ২৫ জিবি প্যাক বিকাশের মাধ্যমে একই দামে ২০ জিবি প্যাক হিসাবে বিক্রি হয়েছিল, যা ৮০ শতাংশ ওভারচার্জ।

২২৭ টাকা মূল্যের একটি সাত দিনের ৪০ জিবি প্যাক বিকাশে একই মূল্যের জন্য ৩৫ জিবি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিত্তি মূল্যের তুলনায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি।

৭  দিনের ১০ জিবি এবং ৩-দিনের ৫ জিবি বিকল্পগুলোসহ অন্যান্য প্যাকেজগুলোও ৫৫ শতাংশ থেকে ৫৮ শতাংশ অতিরিক্ত চার্জে বিক্রি হয়েছে।
ফয়েজ আহমেদ লেখেন, বিটিআরসিতে সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের অধীনে একটি সুষ্পষ্ট প্রাইসিং রেগুলেশন রয়েছে। তার তোয়াক্কা না করে ২০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত প্রাক্কলন অতিরিক্ত মূল্য আদায় গ্রাহকস্বার্থ ও রাষ্ট্রের সার্বিক স্বার্থবিরোধী বলেই বিবেচিত হওয়া উচিত। বিষয়টি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের রেগুলেটরি শাস্তির মুখোমুখি করা দরকার বলে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ