ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হতে পারে ১৪ মার্চ, বাসের অগ্রিম টিকিটও পাওয়া যাবে
Published: 7th, March 2025 GMT
আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঘরমুখী যাত্রীদের জন্য রেল ও সড়ক পরিবহন খাতে নানা তৎপরতা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রেলওয়ে অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রাথমিক তারিখ নির্ধারণ করেছে ১৪ মার্চ। বাসে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে টিকিট বিক্রির তারিখ নির্ধারণ করা হয় না। তবে কয়েকটি বড় বাস কোম্পানি চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে ঈদের টিকিট বিক্রি করবে। সরকারের পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি বিশেষ সেবা ‘ঈদ স্পেশাল’ চালু করবে মার্চের শেষ সপ্তাহে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটি এবার ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর তারিখ প্রাথমিকভাবে ১৪ মার্চ ঠিক করেছে। ১ এপ্রিল ঈদুল ফিতর হবে ধরে নিয়ে তারা এই তারিখ নির্ধারণ করেছে। আগামীকাল রোববার দুপুরে ঈদ উপলক্ষে ‘সড়ক ও রেলপথে যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন’ করার লক্ষ্যে সভা ডেকেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত ওই সভা থেকেই রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। ওই বৈঠক থেকে বেসরকারি বাস সেবা এবং বিআরটিসির বাস চলাচলের বিষয়েও কিছু সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমানে যাত্রার ১০ দিন আগে আন্তনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়। ঈদ যাত্রার টিকিটও ১০ দিন আগে বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া এবারও ঈদের শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হবে। কাউন্টারে কোনো ঈদের টিকিট বিক্রি করা হবে না। ফলে এবার বাড়তি আয়োজন নেই।
ঈদ প্রস্তুতির লক্ষ্যে ৪ মার্চ রেলের মহাপরিচালক আফজাল হোসেনের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই আসন্ন ঈদে টিকিট বিক্রির সম্ভাব্য তারিখ, বিশেষ ট্রেন পরিচালনা এবং অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রোববার তা ঘোষণা করতে পারেন।
রেলের নেওয়া প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুসারে, আন্তনগর ট্রেনের ২৪ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৪ মার্চ; ২৫ মার্চের টিকিট বিক্রির জন্য নির্ধারিত তারিখ ১৫ মার্চ; ২৬ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৬ মার্চ; ২৭ মার্চের টিকিট পাওয়া যাবে ১৭ মার্চ; ২৮ মার্চের টিকিট বিক্রি পাওয়া যাবে ১৮ মার্চ; ২৯ মার্চের টিকিট বিক্রি হবে ১৯ মার্চ এবং ৩০ মার্চের টিকিট পাওয়া যাবে ২০ মার্চ।
রেলের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তারা ১৪ মার্চ টিকিট বিক্রি শুরুর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছেন। রোববারের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, এবার ঈদযাত্রায় বিভিন্ন পথে ৫ জোড়া বা ১০টি বিশেষ ট্রেন চালুর পরিকল্পনা আছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত বছর ঈদুল ফিতরে ঢাকা থেকে আন্তনগর ট্রেনের কমবেশি ৩০ হাজার আসনের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। এবার আসন সংখ্যা ৩৫ হাজারের বেশি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ট্রেনে বাড়তি কামরা যুক্ত করা হবে। উত্তরবঙ্গের পথে লাইনের সক্ষমতা না থাকায় বিশেষ ট্রেন চালানো কঠিন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ওই দিকে নতুন ট্রেনও চালু হয়নি। এবার ঈদে উত্তরের পথের ট্রেনগুলোতে বাড়তি কামরা যুক্ত করে আসনসংখ্যা বাড়ানো হবে।
বাসের যাত্রা
ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি যাত্রী যাতায়াত করে বাসে। মূল ভরসা বেসরকারি পরিবহন। অতীতে সরকার ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন মিলে একটি নির্দিষ্ট দিন থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হতো। এতে হট্টগোল, বাড়তি ভাড়া আদায়সহ নানা অভিযোগ পাওয়া যেত। এখন সরকার আর বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রির তারিখ নির্ধারণ করে না। ফলে কিছু কোম্পানি ঘটা করে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করে, কেউ কেউ অন্যান্য সময়ের মতোই টিকিট বিক্রি করে। ছোট কোম্পানি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন অনেক বাসের মালিকেরা অগ্রিম টিকিট বিক্রিই করেন না। তাঁরা শেষ মুহূর্তে টিকিট বিক্রি করেন। এতে যেসব দিনের টিকিটের চাহিদা বেশি থাকে, সেসব টিকিট বাড়তি দামে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।
পরিবহনমালিকদের সূত্র বলছে, এখন অনেক বড় বাস কোম্পানি অনলাইনে বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি করে ফেলে। এ জন্য তারা ঘটা করে ঈদের অগ্রিম টিকিট কাউন্টারে বিক্রি করে না।
সোহাগ পরিবহনের স্বত্বাধিকারী ফারুক তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, নির্দিষ্ট দিন ঘোষণা করে টিকিট বিক্রি করতে গেলে অনলাইন হোক আর কাউন্টার—সর্বত্রই চাপ পড়ে যায়। ফলে সুবিধার চেয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগই বেশি হয়। তারা অন্য সময়ের মতো স্বাভাবিকভাবেই ঈদের টিকিটও বিক্রি করবেন। তিনি বলেন, সব সময়ই ঈদেই আগের দু-তিন দিনের টিকিটের চাপ থাকে। ঘোষণা না দিলেও শেষের দিকের টিকিটের চাহিদাই বেশি থাকে।
এদিকে সরকারের পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি ২৭ মার্চ থেকে ‘ঈদ বিশেষ সেবা’ চালুর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঈদযাত্রার বাসের অগ্রিম টিকিট ২০ মার্চ থেকে বিক্রির পরিকল্পনা আছে সংস্থাটির।
বিআরটিসির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) অপারেশন শুকদেব ঢালী প্রথম আলোকে বলেন, বিআরটিসি যেসব রুটে বাস পরিচালনা করে তা অব্যাহত থাকবে। কিছু বাস বাড়ানো এবং নতুন কিছু রুটে বাস চালুর চিন্তা আছে। ঈদ সেবায় সব মিলিয়ে ৮০০–এর বেশি বাস চলাচল করবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১৪ ম র চ ব আরট স পর বহন র লওয় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হজ ফ্লাইট শুরু
চার শতাধিক যাত্রী নিয়ে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে চলতি বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট। এ বছর হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৮৭ হাজার ১০০ জন।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাত ২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশি হজযাত্রী বহনকারী প্রথম বিমানটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জেদ্দার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাচ্ছেন ৫ হাজার ২০০ জন; আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছেন ৮১ হাজার ৯০০ জন। এরইমধ্যে ৭৩ শতাংশ যাত্রীর ভিসা হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের (১৪৪৬ হিজরি) হজ ৫ জুন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
অন্যান্যবারের মত এবারো সব হজযাত্রীর সৌদি আরব অংশের ইমিগ্রেশন হচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দরে। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত ফ্লাইট চলবে।
এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১১৮টি, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স ৮০টি, আর ফ্লাইনাস ৩৪টি ফ্লাইট চালাবে।
এরআগে সোমবার হজযাত্রীদের সেবা সহজীকরণের জন্য প্রস্তুতকৃত মোবাইল অ্যাপ ‘লাব্বাইক’ উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, “হজযাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে ধর্ম-কর্ম পালন করতে পারেন সেজন্য এই অ্যাপ বিরাট ভূমিকা রাখবে।”
তিনি জানান, ধর্ম পালনে সহায়ক হওয়ায় এবং স্বাস্থ্য সেবাসহ নানা ফিচার থাকায় এই অ্যাপ হাজীদের একাগ্রচিত্তে হজ পালনে মস্তবড় অবদান রাখবে।
চলতি বছর পবিত্র হজব্রত পালনের শুরু থেকে হজযাত্রীরা এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারলেও আগামী বছর থেকে যেন মানুষ হজে যাওয়ার চিন্তাভাবনার পর্যায় থেকে এই অ্যাপ ব্যবহার করে হজযাত্রাকে সহজ করতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ বছরও বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়া যাত্রীরা ‘মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের’ অধীনে সেবা পাবেন বলে জানিয়েছিলেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ার।
সৌদি ভিশন ২০৩০-এর অন্যতম কর্মসূচি ‘পিলগ্রিম এক্সপেরিয়েন্স প্রোগ্রামের’ অংশ হিসেবে মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ বাস্তবায়ন করছে সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এই উদ্যোগে বাংলাদেশ, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক ও আইভরি কোস্ট- এই ৭টি দেশের ১১টি বিমানবন্দরে ডেডিকেটেড লাউঞ্জ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের লক্ষ্য সুবিধাভোগী দেশগুলো থেকে সৌদি আরবে হজযাত্রীদের জন্য উচ্চমানের পরিবহন পরিষেবা দেওয়া।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮জন হজযাত্রী নেওয়ার কোটা নির্ধারণ করে দেয় সৌদি আরব। তবে আগের বছরের মত এবারও প্রায় ৩৩ শতাংশ কোটা পূরণ হয়নি। ২০২৪ সালে হজে যান ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। এবার তা কিছুটা বেড়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা