‘নব্বইয়ের দশকের পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা এই প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারেনি’
Published: 7th, March 2025 GMT
২৯ বছর পর কোনো বৈশ্বিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে গিয়ে ছয় দিনেই বিদায়—আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাকিস্তানের গল্পটা এমনই। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ও ভারতের কাছে বাজেভাবে হেরেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে।
যেখানে পান থেকে চুন খসলেই ক্রিকেটারদের দিকে সমালোচনার তির ছোড়া হয়, সেখানে ঘরের মাঠে এত বড় টুর্নামেন্টে রিজওয়ান-বাবর-আফ্রিদিদের বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পর সাবেকদের ক্ষুব্ধ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতারের মতো কিংবদন্তিরা টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোতে পাকিস্তান দলের সমালোচনা করছেনও। এমনকি দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান জেলে থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কিন্তু পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার ও সাবেক প্রধান কোচ মোহাম্মদ হাফিজ ঢালাওভাবে বাবর-রিজওয়ানদের সমালোচনার পক্ষে নন। হাফিজের মনে হচ্ছে, পাকিস্তানের বর্তমান দল ব্যর্থ হওয়ায় যাঁরা বাবর-রিজওয়ানদের একহাত নিচ্ছেন, তাঁরা দেশের হয়ে কিছুই জেতেননি, যা দেখে এই প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়েছে স্বাগতিক পাকিস্তান.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রৌমারীতে নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করলেন প্রকৌশলী
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার নদী ভাঙন কবলিত এলাকা খেদাইমারী, সুখেরবাতি, ঘুঘুমারী, সোনাপুর ও নামাজের চর পরিদর্শন করেছেন রংপুর পানি উন্নয়ন (বাপাউবো) সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব। সোমবার দুপরে এসব ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি।
প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, ‘রৌমারী ও রাজীবপুর খুবই ভাঙন কবলিত এলাকা। ফলে স্বাভাবিকভাবে আমাদের একটা নজরদারিতে থাকে এই অঞ্চলগুলো। বন্যার আগে কোন এলাকাগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেগুলো পরিদর্শন আমরা মাঝে মাঝে করি। তারপরও বন্যার সময়ে সব জায়গা পরিদর্শন করা হয়। পাশাপাশি বরাদ্দ-চাহিদা পাঠানো হয়। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে কিছু কিছু কাজ করেছি। এবারও একইভাবে নিয়মিত পরিদর্শনের আওতায় কোন জায়গাগুলোতে আগামী বন্যায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, এই তথ্য সংগ্রহ করছি।
তিনি বলেন, ‘এর বাইরেও এলাকাব্যাপী একটি প্রকল্প দেওয়া আছে। পুরো রৌমারী ও রাজীবপুরকে ঘিরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার, ২৬ কিলোমিটার রৌমারী ও রাজীবপুরে। আর ৪ কিলোমিটার জিঞ্জিরাম নদী তীর সংরক্ষণ দেওয়া আছে। এ প্রকল্পটি যদি পাস হয় তাহলে পুরো এলাকাটাই ভাঙন থেকে মুক্তি পাবে।’ পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান, সহকারী প্রকৌশলী আ.কাদের, রৌমারী নদী রক্ষা সংগঠক মহিউদ্দিন মহির, ট্রোসা-২ প্রকল্পের প্রজেক্ট অফিসার খায়রন্নেসা সরকার ও প্রভাষক আক্তারুজ্জামান প্রমুখ।
ভুক্তভোগী স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়া ও কমার সঙ্গে সঙ্গে রৌমারী উপজেলায় দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। এতে খেদাইমারী, সুখেরবাতি, ঘুঘুমারী, সোনাপুর ও নামাজের চর, উত্তর খাউরিয়া, ঘুঘুমারী, চর ইটালুকান্দা, চর খেদাইমারীর প্রায় ৫০০ মানুষের ভিটেমাটি, হাজার হাজার একর আবাদি জমি, পাঁচটির বেশি শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় বাজার, মসজিদসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে কিংবা অন্যের ভিটায় ঠাঁই নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয় ভাঙন কবলিত মানুষদের। নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় নদী তীরবর্তী বাড়ির বাসিন্দাদের। কখন যে ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায় তা নিয়ে দুচিন্তায় থাকতে হয় তাদের। ভিটেমাটি হারানো তাদের প্রতিবছরের দুঃখ গাথা। তবে শুষ্ক মৌসুম ছাড়া সারা বছর কমবেশি ভাঙতে থাকে নদী।
রৌমারী নদী রক্ষা সংগঠক মহিউদ্দিন মহির বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের বাতাস এখন ভাঙন কবলিত মানুষদের কান্নায় ভারি। টানা বর্ষণে খোলা আকাশের নিচে না করতে পারে রান্না, না থাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই। প্রাকৃতিক ক্রিয়াদির ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত নারীরা। খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে রাত নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। নদীপাড়ের বাসিন্দা ছলেমন অন্যের বাড়িতে কাজ করে চরের মধ্যে দুই কাঠা জমি কিনে ঘর তুলেছিলেন। সেটাও এবার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবু দাবি একটাই- ত্রাণ নয়, নদী ভাঙন থেকে পরিত্রাণ চান তিনি।
২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের বাম তীর রক্ষার নামে সরকারিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার ডিপিপি প্রণয়ন হলেও, তার সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রতিবছর ভাঙনের তালিকায় আসছে নতুন নতুন এলাকা। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে এ অঞ্চলের নিঃস্ব, অসহায় মানুষ বারবার লিখিতভাবে জানানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এতেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
রৌমারীকে বাঁচাতে হলে নদী ভাঙন প্রতিরোধের পাশাপাশি ঘরবাড়ি, জমিহারা মানুষের পুনর্বাসন প্রয়োজন। সরকারকে ভাঙন কবলিত মানুষদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। এই অভাবী জনপদের বেশির ভাগ মানুষকে বছরের ছয় মাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়াতে হয়। এলাকায় কর্মসংস্থান হলে তাদের ছিন্নমূল জীবনের অবসান ঘটবে।