এক ভাইয়ের দাফন শেষ না হতেই আসে আরেক জনের মৃত্যুর খবর
Published: 7th, March 2025 GMT
ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আবু জাফর সিদ্দিকের বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। সেজন্য বাড়ি সংস্কার ও সজ্জার কাজ শুরু হয়েছিল। কিছু স্যানিটারি জিনিসপত্র কিনতে চাচাতো ভাই মুসা হায়দারকে নিয়ে রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে গিয়েছিলেন আবু জাফর। সেখানে হঠাৎ গ্যাস বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারা যান তিনি। ৯০ শতাংশ পোড়া দেহ নিয়ে মুসা হায়দায়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আবু জাফর সিদ্দিকের দাফন করা হয় গ্রামের বাড়িতে। তার দাফন শেষ হতে না হতেই আরেক দুঃসংবাদ পান স্বজনরা। মারা যান মুসা হায়দারও।
২০২৩ সালের ৭ মার্চ রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে একটি ভবনে গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ২৬ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে আবু জাফর সিদ্দিক (৩২) এবং মুসা হায়দারও (৪০) ছিলেন।
আবু জাফরের খালাতো ভাই রাশেদুল হাসান জানিয়েছেন, আবু জাফর সিদ্দিক এবং মুসা হায়দার আপন চাচাতো ভাই। আবু জাফর ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করেছে। মুসা হায়দার ছিলেন কোরআনের হাফেজ। তার একটা রেস্তোরাঁ ছিল। আবু জাফরকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এজন্য বাড়ি সংস্কারের কাজ করা হচ্ছিল। কিছু স্যানিটারি জিনিসপত্র কিনতে মুসা হায়দারকে নিয়ে সিদ্দিকবাজারে যান আবু জাফর। বিস্ফোরণে আবু জাফর ঘটনাস্থলেই মারা যান। এক দিন পর মুসা হায়দার মারা যান।
তিনি বলেন, “বিস্ফোরণে মুসার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে যায়। কথা বলতে পারছিল না সে। কেমনে যেন তার বন্ধু নাইমকে ফোন দেয়। নাইম তার পরিবারকে বিষয়টা জানায়। আমি ঢাকাতে থাকি। তারা বিষয়টি আমাকে জানায়। আমি সরাসরি হাসপাতালে যাই। মর্গে গিয়ে আবু জাফরকে পাই। মুসাকে পাই না। পরে বার্ন ইউনিটে খুঁজে মুসাকে পাই। আবু জাফরের জানাজা পরিয়ে গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার বালুয়াকান্দি গ্রামে সকাল ৮টায় দাফন করা হয়। সেখানে যাওয়ার আগে মুসা ঘুমাচ্ছিল। এ কারণে তার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। জানাজা শেষে আবার ঢাকায় ফিরে আসি। একটার পর একটা ওষুধ লাগছিল তার। রাতে তার মাথা থেকে বালিশ সরিয়ে ফেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তখন আমার সন্দেহ হয়, মুসা আর নেই। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করে না। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে জানানো হয়, মুসা মারা গেছে। পরদিন একই জায়গায় তাকেও দাফন করা হয়।”
রাশেদুল হাসান বলেন, “আমি যখন মুসাকে দেখতে যাই, সে এমনভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল, সে রেগে আছে দেরিতে আসার কারণে। শেষ সময়ে তার সাথে কথা বলতে পারিনি। এই কষ্টটা সারাজীবন থেকে যাবে। আমাদের আর্থিক অবস্থা অতটা ভালো না হলেও আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। যাদের কারণে এতগুলো মানুষের প্রাণ গেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। সন্তান হারিয়ে দুই খালা স্বাভাবিক নেই। দোষীদের বিচার হলে কিছুটা হলেও শান্তি পাব।”
২০২৩ সালের ৭ মার্চ বিকেলে সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে প্রাণ হারান ২৬ জন। এ ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে ওই বছরের ৯ মার্চ মামলা দায়ের করেন বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক পলাশ সাহা। থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পর এখন মামলার তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
ঢাকা/মামুন/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ফর স দ দ ক
এছাড়াও পড়ুন:
পহেলগাম হামলা: পাঁচ সন্দেহভাজনের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ভারত
পেহেলগামে ২৬ জন পর্যটককে হত্যার কয়েক দিন পর গতকাল শুক্রবার রাতে জম্মু ও কাশ্মিরজুড়ে পাঁচ সন্দেহভাজনের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। তবে হামলার ঘটনার পর এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি তারা।
কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, শোপিয়ান, কুলগাম ও পুলওয়ামা জেলায় অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। গত কয়েক দিনে সন্দেহভাজনদের ওপর দমন অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে।
শোপিয়ানের চোপোটিপোরা গ্রামে শাহিদ আহমেদ কুট্টের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে লস্কর কমান্ডার বলে দাবি করছে ভারত। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুট্টে গত তিন-চার বছর ধরে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ সমন্বয় করার ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
কুলগামের মাতালম এলাকায় আরেক সন্দেহভাজন জাহিদ আহমেদের বাড়িও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলওয়ামার মুররান এলাকায় বিস্ফোরক দিয়ে আহসান উল হক নামে একজনের বাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতের দাবি, আহসান ২০১৮ সালে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং সম্প্রতি উপত্যকায় ফিরে আসেন।
এহসান আহমেদ শেখ নামে একজন সন্দেহভাজনের দোতলা বাড়িও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য বলে দাবি করা হচ্ছে, যিনি ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে সক্রিয় ছিলেন।
পঞ্চম সন্দেহভাজন হারিস আহমেদের বাড়িও বিস্ফোরক পেতে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলওয়ামার কাচিপোরা এলাকার ওই বাসিন্দা ২০২৩ সাল থেকে সক্রিয় বলে দাবি করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে, পেহেলগাম হামলার মূল সন্দেহভাজন আদিল হুসেন ঠোকর এবং আসিফ শেখের বাড়ি বিস্ফোরণে ধ্বংস করা হয়।
বৃহস্পতিবার অনন্তনাগ পুলিশ পেহেলগাম হামলায় জড়িত সন্দেহে ঠোকর এবং আরও দুইজনের স্কেচ প্রকাশ করেছিল। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অন্য দুই সন্দেহভাজন—হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আলি ভাই ওরফে তালহা আপন ভাই। তারা পাকিস্তানি নাগরিক এবং তাদের গ্রেপ্তারের জন্য ২০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের পেহেলগামের বৈসরণ তৃণভূমিতে পর্যটকদের ওপর অতর্কিতে গুলি চালায় একদল সন্ত্রাসী। এই হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে একজন নেপালি নাগরিকও ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলির শব্দ শুনে পর্যটকরা প্রাণে বাঁচার জন্য ছুটোছুটি শুরু করেন, কিন্তু খোলা প্রান্তরে কোথাও লুকানোর সুযোগ ছিল না।
হামলার পর, সেনাবাহিনী, সিআরপিএফ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ যৌথভাবে ওই এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে।
পহেলগাম হামলার কঠোর জবাবে ভারত সরকার ইন্দাস পানি চুক্তি স্থগিত করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা এই বর্বর হামলার পেছনে রয়েছে, তাদের এবং তাদের মদতদাতাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।