ভারতীয় খাসিয়াদের সঙ্গে চোরাচালান দ্বন্দ্ব, নিহত বাংলাদেশি যুবক
Published: 7th, March 2025 GMT
ভারতীয় খাসিয়াদের সঙ্গে চোরাচালান দ্বন্দ্বে সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তে বাংলাদেশি এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত যুবক শাহেদ মিয়া (২৫) কানাইঘাট উপজেলার মঙ্গলপুর গ্রামের মোশাহিদ মিয়ার ছেলে।
শুক্রবার সকালে মেঘালয় রাজ্যের লাইজুরী বাঁশকোনা এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় বিএসএফ।
গুলিতে নাকি মারামারিতে তিনি মারা গেছেন এ নিয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে।
শুক্রবার বিকেলে বিজিবি-১৯ জানিয়েছে, ভারতীয় খাসিয়াদের সঙ্গে চোরাচালান নিয়ে বিরোধের কারণে তাদের হামলায় মারা যান তিনি।
বিজিবি জানিয়েছে, শুক্রবার ভোররাতে জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (১৯ বিজিবি) এর আওতাধীন সীমান্ত এলাকায় নিহত হন শাহেদ মিয়া। রাতে তিনি ভারতীয় খাসিয়া চোরাকারবারীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন ও তাদের হামলায় মারা যান। বিষয়টি জানার পর বিএসএফকে অবগত করা হয়। পরে বিএসএফ মৃত ব্যক্তির ছবি পাঠায়। ছবি দেখে শাহেদ মিয়ার পরিবার নিশ্চিত হয়।
মরদেহ গ্রহণে বিএসএফের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন ১৯-বিজিবি অধিনায়ক মোহাম্মদ এমদাদুল হক।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শাহেদসহ কয়েকজনের সঙ্গে মেঘালয় রাজ্যের লাইজুরি এলাকার খাসিয়া চোরাকারবারীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সেই দ্বন্দ্বের জেরে খাসিয়ারা তাদের ওপর গুলি ছোড়ে। এতে শাহেদ গুলিবিদ্ধ হন। লাইজুরি বাঁশকোনা এলাকার ১৩১৯ নম্বর পিলারের পাশে তার মরদেহ পড়ে থাকে। সকালে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় বিএসএফ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ বন দ ব ব এসএফ ক রব র মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে হত্যা, অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে ভারতের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিএসএফের সদস্যদের পিটুনিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আহত অবস্থায় ওই যুবককে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মুরাদুল ইসলাম ওরফে মুন্না (৪০) বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের সেজামুড়া সীমান্তের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। সেজামুড়া গ্রামটি ভারতের সীমান্তঘেঁষা। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ভারতের বিএসএফ সদস্যরা মুরাদুলকে ডেকে ভারতের সীমান্তের ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মারধরসহ নির্যাতন করা হয়। পরে তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়।
তবে নিহত মুরাদুলের পরিবারের অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ সম্পর্কে গতকাল রাতে ২৫ বিজিবির সরাইল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহতের পরিবার ও স্বজনেরা নানা কথা বলতেই পারেন। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, সেটি হলো ওই ব্যক্তি (মুরাদুল) দুই দেশের সীমান্তের কাঁটাতার অতিক্রম করে অবৈধভাবে ভারতের সীমানায় প্রবেশ করেন এবং সুস্থভাবেই বাংলাদেশে ফেরত আসেন। সীমান্তের বিজিবির টহল দলের সদস্যরা তাঁকে দেখতে পান। জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন। তবে ভারতের অভ্যন্তরে গিয়েছেন বলে স্বীকার করেননি। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। তিনি আহত হয়েছিলেন কি না বা কোনো চোরাকারবারির সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে কি না জানা যায়নি।’
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীমান্তের কাঁটাতার থেকে ১৫০ থেকে ৩০০ গজের ভেতরে বিজয়নগর উপজেলার সেজামুড়ায় মুরাদুলের পরিবারের ফসলি জমি রয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মুরাদুল সেখানেই বসবাস করেন। গতকাল দিনভর মুরাদুল নিজের লিচুগাছে পানি দেন। দুপুরে ঘরে ভাত খেয়ে জমি দেখতে যান মুরাদুল। বিকেল পাঁচটা পরও তিনি বাড়িতে ফেরেননি। স্ত্রী রত্না আক্তার বাড়ি থেকে বের হয়ে সীমান্তে খোঁজাখুঁজি করেও স্বামীর সন্ধান পাননি। একজন ফোন দিয়ে তাঁকে জানিয়েছিলেন, মুরাদুলকে বিএসএফের সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছেন। সন্ধ্যার দিকে ফসলি জমিতে মুরাদুল পড়ে ছিলেন। তাঁকে উদ্ধার করে চম্পকনগর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা। অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
রত্না বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালে নেওয়ার সময় আমার স্বামী জানিয়েছেন, তাঁকে বিএসএফের সদস্যরা ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করা হয়। বিএসএফ তাঁকে ফেরত দেওয়ার পর বিজিবির সদস্যরা তাঁকে ধানের জমিতে ফেলে রেখে চলে যান। আমার স্বামী কোনো দিন কোনো খারাপ কাজ করেনি। আমি হত্যার বিচার চাই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সফিউল্লাহ আরাফাত বলেন, গতকাল রাতে অজ্ঞান অবস্থায় তাঁকে (মুরাদুল) হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ১০টা ২১ মিনিট সময়ে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে।
২৫ বিজিবির সরাইল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘নিহত মুরাদুল ভারতের অভ্যন্তরে কীভাবে গিয়েছেন, কেন গিয়েছেন বা কী উদ্দেশ্যে গিয়েছেন, তাঁকে কে মারধর করেছে কিংবা চোরাকারবারির সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এসব আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে বিস্তারিত জানানো হবে।’