সাতক্ষীরায় অপরিকল্পিতভাবে মরিচ্চাপ নদ খনন করায় এর ওপর নির্মিত পাঁচটি সেতু ভেঙে পড়েছে। এতে সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার বাসীন্দাদের তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এছাড়া যারা নৌকায় পারাপার হচ্ছেন তারাও ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছেন।

জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ জানান, জনসাধারণের চলাচলের জন্য একটি কাঠের তৈরি সেতু নির্মাণে করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা ও আশাশুনি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিস সূত্রে জানা গেছে, মরিচ্চাপ নদ সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর সঙ্গে মিশেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার। সাতক্ষীরার বাঁকাল থেকে আশাশুনির শোভনালি পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মরিচ্চাপ নদের ওপর নয়টি সেতু ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নির্মাণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা

দুই বছর আগে মরিচ্চাপ নদী খননের কারণে বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি সেতু ভেঙে পড়ে। এরপর এসব স্থানে আর কোনো সেতু নির্মাণ করা হয়নি।

সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ জাতয়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। তবে সেতু গুলো ভেঙে পড়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। তাদের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থী মরিয়াম খাতুন, তানিয়া, জুঁই ও শ্রিপরা পাল জানায়, সব সময় তাদের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। বিশেষ করে অনেক সময় জোয়ারের সময় ভিজে যেতে হয়। নদী পারাপারের সময় কেউ না কেউ প্রতিদিন নদীতে পড়ে আহত হয়। তারা দ্রুত সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানিয়েছে। 

বাঁকড়া ও কামালকাটিতে নির্মিত সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে আছে

সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য মমতাজ বেগম বলেন, “আশাশুনি উপজেলার শোভনালি ইউনিয়নের মরিচ্চাপ নদের ওপর নির্মিত বাঁকড়া ও কামালকাটিতে নির্মিত সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে আছে।”

তিনি আরও বলেন, “এর মধ্যে বাঁকড়া সেতুর দুই পাশে বাঁশের পাটাতন ও মাঝখানে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করছে। এই সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দ্রুত নতুন করে সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।”

সেতুগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নির্মাণ করা

সাতক্ষীরার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

কামরুজ্জামান বলেন, “সেতু গুলো আমাদের অধীন নয়। সেতুগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নির্মাণ করা। যাতয়াতের কথা চিন্তা করে আমরা সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।”

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, “মরিচ্চাপ নদীর উপার নির্মাণ করা সেতু ভেঙ্গে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরাসহ মানুষ চলাচল করছে এমন খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নির্বাহী প্রকৌশলী সাথে সেতু নির্মাণের জন্য কথা হয়েছে। তবে চলাচলের জন্য দ্রুত কাঠের তৈরি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

ঢাকা/শাহীন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র ম ণ কর উপজ ল র ব যবস থ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থবছরের আট মাসে অর্ধেক বাজেটও বাস্তবায়ন হয়নি

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ৮ মাসে বাজেটের অর্ধেকও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অর্থবছরের মূল বাজেট বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, সংশোধিত বাজেটও অর্ধেক বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে এর আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার কিছুটা বেড়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজেট বাস্তবায়ন প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই ’২৪-ফেব্রুয়ারি ’২৫) বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে অর্ধেকের চেয়ে কম। আলোচ্য সময়ে মূল বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের প্রায় ৪৩ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।

এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়ন হার ছিল মূল বাজেটের প্রায় ৩৭ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের প্রয় ৪০ শতাংশ। সে হিসাবে উভয় ক্ষেত্রেই চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হার প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, আট মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ২ কোটি টাকা। এর আগে, গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা।

এদিকে, গত অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ও সংশোধিত বাজেটের আকার ছিল ৭৮৫ কোটি টাকা এবং মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রকৃত ব্যয় দাঁড়ায় ৬ লাখ ১১ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত অর্থবছরের ৮ মাসে বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে ৪৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, অর্থবছরের ৮ মাসে মোট পরিচালন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এটি সংশোধিত পরিচালন ব্যয়ের ৫১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত পরিচালন ব্যয়ের আকার হচ্ছে ৫ লাখ ৬ হাজার ২ কোটি টাকা। মূল বাজেটে এর আকার ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।

এদিকে, আলোচ্য সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে সংশোধিত বাজেটের ২৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। চলতি অর্থছরের মূল বাজেটে এডিপি’র আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে কাটছাঁট করে এর আকার ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে আট মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ৫৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি-তে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরর আট মাসে এনবিআর আওতাধীন মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ২০২ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে অর্থনীতি এক ধরনের স্থবিরতা চলে এসেছিল। এটি নভেম্বর মাস পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, যার জন্য এডিপি বাস্তবায়নসহ বাজেট বাস্তবায়নে একটি নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি যেভাবে এগুচ্ছে তাতে বছর শেষে সংশোধিত বাজেটের বড়জোর ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, “রাজস্ব আদায়ের হারও ভালো না, অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি ৮০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে।”

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ
  • ৩ মাসে ১৪৫ কোটি টাকা মুনাফা পদ্মা অয়েলের
  • প্রথম প্রান্তিকে লোকসানের ধারায় সিঙ্গার, বেড়েছে অনেকটা
  • অর্থবছরের আট মাসে অর্ধেক বাজেটও বাস্তবায়ন হয়নি