সিডনিতে মসজিদে হামলার হুমকির অভিযোগে কিশোর গ্রেপ্তার, পরে শর্ত সাপেক্ষে জামিন
Published: 7th, March 2025 GMT
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির একটি নতুন মসজিদে হামলার হুমকির অভিযোগে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে সে শর্ত সাপেক্ষে জামিন পায়।
গত মঙ্গলবার মসজিদ আল-বাইত আল-ইসলামির অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম পেজে হুমকিমূলক মন্তব্য পোস্ট করা হয়। মন্তব্যে বলা হয়, ‘আমি এ জায়গাকে ক্রাইস্টচার্চ ২.০ বানাতে যাচ্ছি।’
২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। এ হামলায় প্রাণ হারান ৫১ জন মুসল্লি। এ ঘটনার প্রসঙ্গই হুমকিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবারই মসজিদ কর্তৃপক্ষ হুমকির বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে দ্রুত তদন্ত শুরু করে। হুমকির ঘটনায় পুলিশ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে বসবাসকারী ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরকে গত বুধবার গ্রেপ্তার করে।
পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, হুমকির ঘটনাটিকে তারা অভিযোগ হিসেবে নথিভুক্ত করেছে। এ অভিযোগে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার সে শর্ত সাপেক্ষে জামিন পায়। আগামী মাসে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার একটি শিশুকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এখন আর কোনো হুমকি নেই।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। মসজিদে নিরাপদে নামাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তারা নিশ্চয়তা পেয়েছে।
মসজিদ কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাজহার হাদিদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা এ হুমকিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আমাদের সম্প্রদায়ও এ দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতো নিরাপদ ও সুরক্ষিত বোধ করার অধিকার রাখে।’
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজধানী সিডনি। রাজ্য সরকারের প্রধান ক্রিস মিনস বলেছেন, এ ধরনের হুমকি তাঁরা সহ্য করবেন না। আইনের পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করে এ ধরনের ঘটনা মোকাবিলা করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ছড়া লেখায় কড়া শাস্তি
ছড়া লিখে কড়া শাস্তির মুখে পড়েছেন ঢাকা ওয়াসার কমন সার্ভিস বিভাগের উপসচিব শহিদুল ইসলাম। গত মঙ্গলবার তাঁকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে এবং উপব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার (প্রশাসন) দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও হয়েছে।
শহিদুল ইসলাম নিজের লেখা একটি ছড়া তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। ছড়ার বিষয় ছিল রাজধানীর আলোচিত সেই ঈদ শোভাযাত্রার নাসিরুদ্দিন হোজ্জা, যিনি গাধার পিঠে উল্টো দিকে ফিরে বসেছিলেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এই শোভাযাত্রা আয়োজন করে। হোজ্জারূপী ওই চরিত্রটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা হয়।
শহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘লেখালেখি পুরোনো অভ্যাস। এর দু-একটি ফেসবুকে শেয়ারও করি। ঈদের পর একটি ছড়া লিখে ফেসবুকে দিয়েছিলাম। হঠাৎ মঙ্গলবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমাকে তাঁর কক্ষে ডেকে পাঠান। সেখানে গেলে জিজ্ঞেস করেন, ছড়াটি আমার লেখা কিনা? হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলে, কেন লিখেছি জানতে চান তিনি। আমি স্যারকে বলি, অভ্যাস থেকে মাঝেমধ্যে একটু-আধটু লেখালেখি করি। ছড়াটি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে লিখিনি।’
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এর পর এমডি স্যার বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ে নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে কী লেখা যাবে, আর যাবে না– তা উল্লেখ রয়েছে। আমি বলি, স্যার, আমি তো কাউকে উদ্দেশ করে লিখিনি। ছড়াতে অপরাধ কী হয়েছে, তাও বুঝতে পারছি না।’
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিকেলে অফিস ছাড়ার সময় একটি অফিস আদেশ আমাকে দেওয়া হয়। সেখানে দেখি, আমাকে ওএসডি করা হয়েছে।’
ছড়া লেখায় কর্মকর্তাকে ওএসডি করার খবরে ঢাকা ওয়াসায় নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে তা গণমাধ্যমের নজরে আসে। কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি চাকরি করে অনেকেই সাহিত্যচর্চা করছেন। অতীতে অনেক কবি-সাহিত্যিক সরকারি চাকরিজীবী হয়েও ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে কবিতা, গল্প ও গান লিখেছেন। কিন্তু শহিদুল ইসলামের নিছক রসাত্মক ছড়াকে পুঁজি করে এমন শাস্তি দেওয়া ঠিক হয়নি।
জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুর রহমান সমকালকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবী কী লিখতে পারবেন, কী পারবেন না, সে নিয়ে নির্দেশনা রয়েছে। তাঁর লেখা ছড়ায় সে নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটেছে বলে মনে হয়েছে। ওয়াসা সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। দেখা যাক, কমিটি কী প্রতিবেদন দেয়।
ছড়ায় যা আছে
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা
পেয়ো নাকো লজ্জা
ঘোড়ায় চড়িয়া তুমি হাঁটিয়া চলো
রসিকতায় শত কথা সত্যি বলো
গাঁধা নাকি ঘোড়া সে
কি করে কে বলে যে
গাঁধা হাঁটে চার পায়ে টগবগ
তোমার মত নয় সে অযথাই বকবক
কেউ বলে তুর্কি কেউ বলে ইরানী
কখনও কি স্বাদ পেলে সুলতানী বিরানী
ঈদ এলে হেঁটেছ কি মুঘলের ঢাকাতে
কাণ্ড কি ঘটিয়েছ অযথাই হাসাতে
বহুকাল বাদে আজ তুমি দেখা দিলে
ঢাক ঢোলের তালে তালে
গাঁধার পশ্চাতে মুখ করে চলিলে উল্টো
আজব এক ঈদ গেলো ঘটনাটি ভুল তো?
যাই হোক জানি কম নাসিরুদ্দিন হোজ্জা
এতে তুমি পেয়ো না গো এতটুকু লজ্জা।
শহিদুলের ছড়াটি পড়ার পর কবি মোহন রায়হান সমকালকে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি বাকস্বাধীনতা ও স্বাধীনভাবে লেখালেখি করার জন্য। বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সমালোচনা সহ্য করতে পারেনি। ছড়াটিতে সরকারের সমালোচনা আছে বলে মনে হয়নি। বরং গাধার পিঠে নাসিরুদ্দিন হোজ্জাকে যে অবয়বে তুলে ধরা হয়েছে, তা জামায়াতের এক নেতার প্রতিকৃতি মনে হতে পারে।’
একসময় আবু করিম নামে এক কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক লেখা লিখেছিলেন। পরে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের পিএস হয়েছিলেন। যদিও শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হলে আবু করিমকে চাকরিচ্যুত করেন।
মোহন রায়হান বলেন, ‘আমি মনে করি না শহিদুলের এ ছড়ার মধ্যে এমন কিছু আছে, যার জন্য তাঁর পেশাগত জীবনে কোনো শাস্তি আরোপ হতে পারে। বরং শাস্তি দিলে তাঁর সৃষ্টিশীলতা বাধাগ্রস্ত হবে।’