ফরিদপুরের বেইলি ব্রিজ, স্থানীয়দের কাছে ‘লোহার ব্রিজ’ নামে পরিচিত। শহরের নিউ মাকেট ও হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা কুমার নদের ওপর স্থাপিত এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। বর্তমানে অবৈধ দখল ও অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে সেতুটি এখন যাতায়াতের ক্ষেত্রে দুর্ভোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, ১৯৩৫ সালে কুমার নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় সেতুটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এরপর অস্থায়ীভাবে বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়, যা ৩৭ বছর ধরে চলছে। অবৈধ দখল ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কারণে এটি এখন স্থানীয়দের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরো পড়ুন:

‘সেতুর অভাবে ঘুরতে হয় ২০ কিলোমিটার’

বেইলি সেতুর পাটাতন ভেঙে সুনামগঞ্জ-দিরাই সড়কে যান চলাচল বন্ধ

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, “এটি ফরিদপুরের পুরাতন সেতু। এখন এটি শুধু সমস্যার কারণ। এই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় আমরা বাইপাস সেতু ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা চাই এখানে যাতে একটি নতুন ও স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়।”

পথচারী সুমি আক্তার বলেন, “একটি অস্থায়ী ব্রিজ ৩৭ বছর ধরে চলছে। সেতুটি ওপরে দখল করে দোকান বসানো হয়। যে কারণে সেতুতে হাঁটা কঠিন হয়ে পড়ছে। এছাড়া, সেতুর অনেক স্থানই এখন ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা চাই দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হোক।”

ফরিদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বলেন, “বেইলি ব্রিজটির সংস্কার প্রয়োজন। এটি বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই সেতু ব্যবহার করেন। ইতোমধ্যে সেতুটি সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শিগগিরি কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া, নতুন সেতু নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।”

ঢাকা/তামিম/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

মুনাফার লোভে টাকা দিয়ে মূলধন নিয়ে টানাটানি

রোকেয়া বেগম প্রতি লাখে মাসে ২ হাজার টাকা মুনাফার খবর শুনে তেলিয়াপাড়া নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটিতে ১০  লাখ টাকা জমা করেছিলেন। টাকা জমা রাখার প্রমাণ হিসেবে এনজিওটি তাঁকে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে দলিল সম্পাদন করে দেয়। চুক্তিনামা অনুযায়ী মাসে মাসে মুনাফা পেতেন রোকেয়া।

ভালো মুনাফার খবর শুনে রোকেয়ার মতো ছোট-বড় তিন হাজার বিভিন্ন পেশার মানুষ ওই এনজিওতে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার আমানত রাখেন। গত কয়েক মাস ধরে এনজিওটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করছে। এর মধ্যে কয়েকজন পরিচালক পালিয়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। 

কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনজিওটির সব কার্যক্রম ঠিকমতোই চলছিল। গত ডিসেম্বর মাস থেকে হঠাৎ বিপত্তি দেখা দেয়। হঠাৎ করে এনজিওটিতে অর্থ সংকট দেখা দেয়। খবর চাউর হলে হাজারো গ্রাহক টাকা ফেরত পেতে নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির প্রধান কার্যালয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তখন উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে বৈঠকে ওই এনজিওর পরিচালকরা আমানতকারীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, এপ্রিল মাস থেকে লভ্যাংশ ও জুলাই মাস থেকে গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দেবেন। কিন্তু এর মধ্যে ওই এনজিওর তিনজন পরিচালক এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে এনজিওটির চেয়ারম্যান বেলাল মিয়া অফিসে আছেন। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। এতে  টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে ভরসা পাচ্ছেন না আমানতকারীরা। 

নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, সারাদেশে তাদের ২৮ শাখা ছিল। প্রায় দেড় লাখ সদস্য ছিলেন। কয়েক কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু গত ডিসেম্বর মাস থেকে গোলযোগের কারণে সবগুলো শাখা সমিতি বন্ধ হয়ে গেছে। সমিতির সদস্যরা কয়েক কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় নিশানের বাগান, জমি, বহুতলবিশিষ্ট ভবনসহ অনেক সম্পদ রয়েছে। ইচ্ছে ছিল সম্পদ বিক্রি করে ধীরে ধীরে মানুষের টাকা ফেরত দেব। কিন্তু আমানতকারীদের বিশৃঙ্খলার কারণে এখন সহায়-সম্পদ বিক্রি করা যাচ্ছে না। তবু আমরা চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের টাকা ফেরত দেওয়ার। টাকার পরিবর্তে নিশানের সম্পদ কেউ কেউ নিজেদের দখলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ভুক্তভোগী জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে এনজিওটি মানুষের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়েছে। বিনিময়ে প্রতি মাসে মুনাফা দিয়ে আসছে। এই প্রলোভনে পড়ে ধনী-গরিব সবাই সেখানে টাকা বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু বেশি মুনাফার লোভে সেখানে টাকা জমা রেখে তারা নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছেন। 

নুরুল ইসলাম নামে এক আমানতকারী জানান, জমি বিক্রি করে মুনাফার আশায় নিশান এনজিওতে তিনি টাকা জমা করেছিলেন। এখন তাঁর মতো শত শত লোক নিজেদের অর্থ ফিরে পেতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। যতই দিন যাচ্ছে গ্রাহকরা টাকা জমা করে হতাশায় ভুগছেন। অনেক গরিব মানুষ জমি ও সহায়-সম্পদ বিক্রি টাকা জমা করেছিলেন। সবাই এখন দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন। 

এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ বিন কাশেম বলেন, আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটিকে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। এর পরও তারা টাকা ফেরত না দিলে আমানতকারীরা ওই এনজিওর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ